প্রশ্ন:
আসসালামু আলাইকুম! মুহতারাম আমার একটা বিষয় বহুদিন থেকে জানার ইচ্ছে, একজন বক্তা বয়ানে বলেছিলেন যে, যে ব্যক্তি ইসলামের দশ শতাংশ আকড়ে ধরবে সে নাজাত পাবে। জানার বিষয় হলো, এর দ্বারা ইসলামের কোন কোন আমলের কথা বলা হয়েছে? যদি দলিলসহকারে বলতেন? উপকৃত হতাম।
প্রশ্নকর্তাঃ জালাল আহমাদ,
লালমাই, কুমিল্লা।
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
উত্তর:
প্রিয় ভাই! সম্ভবত আপনি সুনানে তিরমিজির ২২৬৭ নং হাদিসের কথা বলেছেন।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ” إِنَّكُمْ فِي زَمَانٍ مَنْ تَرَكَ مِنْكُمْ عُشْرَ مَا أُمِرَ بِهِ هَلَكَ ثُمَّ يَأْتِي زَمَانٌ مَنْ عَمِلَ مِنْهُمْ بِعُشْرِ مَا أُمِرَ بِهِ نَجَا
হযরত আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, নবী (ﷺ) বলেছেনঃ তোমরা এমন এক যুগে আছ যে, তোমাদের কেউ যদি নির্দেশিত বিষয়ের এক দশমাংশও ছেড়ে দেয় তবে সে ধ্বংস হয়ে যাবে। এরপর এমন এক যুগ আসছে যে, কেউ যদি নির্দেশিত বিষয়ের এক দশমাংশ আমল করে তবুও সে নাজাত পেয়ে যাবে। (সুনানে তিরমিজি, হদিস নং ২২৬৭)
হাদীসের শাস্ত্রীয় আলোচনাঃ
এ হাদীসটি গারীব। নু‘আয়ম ইবনে হাম্মাদ–সুফিয়ান ইবনে উয়াইনা (রাহঃ)–এর সূত্র ছাড়া এটি সম্পর্কে আমরা কিছু জানি না। এ বিষয়ে আবু যর ও আবু সাঈদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকেও হাদীস বর্ণিত আছে্।
ব্যাখ্যাঃ
إِنَّكُمْ فِي زَمَانٍ مَنْ تَرَكَ مِنْكُمْ عُشْرَ مَا أُمِرَ بِهِ هَلَكَ
উল্লেখিত হাদিসে নবীজি (সা) এরশাদ করেন, নিশ্চই তোমরা (সাহাবায়ে কেরাম) এমন সময় অতিবাহিত করছো যা আদম আ. এর সময়ের পর উত্তম সময়। যে সময় আল্লাহ তা‘আলা ইসলামকে সম্মানিত করেছেন। শক্তিশালী করেছেন। যমিনের রাজত্ব দান করেছেন। এবং দ্বীন ও ইসলামের সমর্থক অনেক। সুতরাং তোমাদের কেউ যদি আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দেশিত বিষয়ের এক দশমাংশও ছেড়ে দেয় (সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ, উদ্দেশ্য সমস্ত নির্দেশিত বিষয়/ফরজ নয়। কারণ বিনা ওজরে ইচ্ছেকৃত শরীয়তের নির্দেশিত বিষয় ছাড়লে কাল কেয়ামতের দিন শাস্তির সম্মূখিন হতে হবে। এবং মু্ক্তিও পাওয়া যাবেনা।) তবে সে ধ্বংস হয়ে যাবে। (কারণ সাহাবায়ে কেরাম নবীজী (সা) এর সান্যিধ্য লাভ করেছেন। তার সংশ্রব পেয়েছেন এমন অবস্থায় যখন আল্লাহ তা‘আলা দ্বীন ও ইসলামকে সম্মানিত ও শক্তিশালী করেছেন। এর সমর্থকও অনেক। এবং এর সত্য হওয়ার বিষয়টি সুস্পষ্ট। সুতরাং এমতাবস্থায় দ্বীন ও ইসলামের কোন বিষয় ছেড়ে দেওয়া তার প্রতি অবহেলার পরিচায়ক। এজন্য ক্ষমা করা হবে না।
ثُمَّ يَأْتِي زَمَانٌ مَنْ عَمِلَ مِنْهُمْ بِعُشْرِ مَا أُمِرَ بِهِ نَجَا
কিন্তু এরপর এমন এক সময় আসবে, যখন ইসলাম দূর্বল হবে, জুলুম, অন্যায় পাপাচার বেড়ে যাবে। এর সমর্থক কমে যাবে। সে সময়ে যারা আল্লাহর নির্দেশিত বিষয় (সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ ) গ্রহণ করবে, সে অনুপাতে আমল করবে তারা কিয়ামতের দিন আল্লাহর আযাব হতে মুক্তি লাভ করবে। কারণ সে যা করেছে তার চেয়ে বেশি কিছু করতে পারে না; তারা এটি পরিত্যাগ করার জন্য অজুহাত পায়। সামর্থ্যের অভাবের কারণে, এতে অবহেলার কারণে নয়। আল্লাহ তা‘আলার বিধান হলো, সামর্থের বাইরে তিনি কাউকে কোন বিষয় চাপিয়ে দেন না। (সূরা বাক্বারা ২৮৬) এই হাদিস আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ হতে উম্মাতে মুহাম্মাদির উপর করুণার বর্ণনা।
আল-আমালিল মুতলাক্বাহ, পৃ. ১৪৬। (ইবনে হাজর আসক্বালানী)।
সুতরাং উল্লেখিত আলোচনা থেকে এই কথা প্রতিয়মান হয় যে, এক দশমাংশ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ। এবং এটি ব্যপক একটি বিষয়। শরীয়তের যাবতীয় বিষয় এতে অন্তর্ভুক্ত।
উত্তর লিখনে
মুহা. শাহাদাত হুসাইন , ছাগলনাইয়া, ফেনী।
সাবেক শিক্ষার্থী: ইফতা বিভাগ
তা’লীমুল ইসলাম ইনস্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
সত্যায়নে
মুফতী লুৎফুর রহমান ফরায়েজী দা.বা.
পরিচালক– তা’লীমুল ইসলাম ইনস্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা
উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া ইসলামিয়া দারুল হক লালবাগ ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা: কাসিমুল উলুম আলইসলামিয়া, সালেহপুর আমীনবাজার ঢাকা।
পরিচালক: শুকুন্দী ঝালখালী তা’লীমুস সুন্নাহ দারুল উলুম মাদরাসা, মনোহরদী নরসিংদী।
শাইখুল হাদীস: জামিয়া ইসলামিয়া আরাবিয়া, সনমানিয়া, কাপাসিয়া, গাজীপুর।