প্রচ্ছদ / আহলে হাদীস / ওরা আহলে হাদীস না আহলে তাকলীদ? [৩য় পর্ব]

ওরা আহলে হাদীস না আহলে তাকলীদ? [৩য় পর্ব]

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

২য় পর্ব পড়ে নিন

ইমাম বুখারীর তাকলীদ

ইমাম বুখারীর মত হল, সেজদায়ে তেলাওয়াত অজু ছাড়া করা জায়েজ। {আউনুল বারী-২/৫৫৪}

এ বক্তব্যকে দুর্বল আখ্যায়িত করে গায়রে মুকাল্লিদ আলেম মাওলানা হাফেজ আব্দুস সাত্তার সাহেব লিখেছেনঃ “ইমাম বুখারীর এমতটি দুর্বলতাহীন নয়। {মুখতাসার সহীহ বুখারী-১/৩৭১}

মাওলানা সাহেব ইমাম বুখারী রহঃ এর মতকে দুর্বলতাহীন নয় মন্তব্য করে উক্ত মতকে দুর্বল বলে স্বীকার করেছেন। কিন্তু তিনি এবং তার সম-মতবাদের গায়রে মুকাল্লিদ মাযহাব যেহেতু ইমাম বুখারীর মুকাল্লিদ, তাই তাকলীদের পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করে বলে দিলেন যে, “অজু ছাড়া সেজদায়ে তেলাওয়াত দেয়া জায়েজ”। {ফাতাওয়া নজীরিয়া-১/৫৭১}

নাসায়ীর ১ম খন্ডের ১০৭ নং পৃষ্ঠায় হাদীস এসেছে যে, রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, “যখন কিরাত পাঠ করা হয়, তখন তোমরা চুপ থাক”।

এ হাদীস দ্বারা প্রমানিত হয় যে, ইমামের উপর আবশ্যক হল, কিরাত পড়া, আর মুক্তাদীর উপর আবশ্যক হল চুপ থেকে ইমামের কেরাত শ্রবণ করা।

ইমাম বুখারী রহঃ এ হাদীসের উপর অভিযোগ উত্থাপন করে বলেন যে, উক্ত হাদীসটির বর্ণনাকারী আবু খালেদ আলআহমার মুফরাদ তথা একা। {জুযউল কেরাত-৫৬}

অর্থাৎ আবু খালেদ আহমার এ হাদীস এককী বর্ণনা কারার কারণে উক্ত হাদীসটি গ্রহণযোগ্য নয়।

গায়রে মুকাল্লিদ আলেম মাওলানা আব্দুর রহমান মুবারকপুরী সাহেব তাহকীক করা ছাড়াই ইমাম বুখারী রহঃ এর বক্তব্যের উপর তাকলীদ করে লিখে দিলেন যে, এ হাদীস বর্ণনাকারী আবু খালিদ মুতাফাররিদ এবং একা। {আবকারুস সুনান-১৫২, আহসানুল কালাম-১/১৬৯}

মুবারকপুরী সাহেব ইমাম বুখারী রহঃ যে বক্তব্যের উপর তাকলীদ করেছেন। উক্ত বক্তব্যটি শুধু দুর্বলই নয়, বরং এটি দলীলহীন একটি মত। এ হাদীসের বর্ণনাকারী আবু খালেদ একা নয়, বরং এ হাদীস আরো বর্ণনা করেছেন মুহাম্মদ বিন সাদ আলআনসারী। {দলীলুত তালেব-২৯৪}

আব্দুর রহমান মুবারকপুরী সাহেব যদি ইমাম বুখারীর অন্ধ তাকলীদ না করে তাহকীক করতেন, তাহলে আবু খালেদের হাদীস দেখার পর পরই নাসায়ীতেই বর্ণিত মুহাম্মদ বিন সাদ আনসারীর হাদীসও তার নজরে আসতো। আর তিনি এটাকে মুতাফাররিদ মন্তব্য করতে পারতেন না। সুতরাং বুঝা গেল যে, দলীলের ভিত্তিতে তিনি এ কাজটি করেন নি। বরং ইমাম বুখারীর তাকলীদ করেছেন।

হয়তো ইমাম বুখারী রহঃ এর কাছে মুহাম্মদ বিন সাদের হাদীসটি পৌঁছেনি। বা তিনি ভুলে গিয়েছিলেন, তাই তিনি বলে দিয়েছেন আবু খালেদ উক্ত হাদীসে মুতাফাররিদ। কিন্তু বর্তমানে সিহাহ সিত্তার কিতাব যখন সর্বত্র পাওয়া যায়, তারপরও একথা বলা যে, আবু খালিদ উক্ত হাদীসের ক্ষেত্রে মুতাফাররিদ। এটি তাহকীক না করে তাকলীদ নয়তো কি?

মুফাসসিরীনদের তাকলীদ

মুফাসসিরীনগণ তাফসীরের ক্ষেত্রে মূলনীতি নির্ধারন করেছেন। একটি মূলনীতির ক্ষেত্রে তারা বলেন যে, কুরআনের শব্দ শুধু তার খাস বিষয়ের উপর সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং এর হুকুমটি আমভাবে সকলের উপর প্রযোজ্য হবে। যেমন সূরা বাকারা ২০৪ নং আয়াতে কাফের আখনাস বিন শুরাইকের বিষয়ে আয়াতটি নাজিল হয়েছে। কিন্তু উক্ত আয়াতের শব্দ আম হওয়ার কারণে সেটি আমভাবে ঐ সকল মানুষকে শামিল করবে, যারা আখনাসের মত আচরণ করবে।

গায়রে মুকাল্লিদ আলেম মাওলানা সালাহউদ্দীন ইউসুফ লিখেছেনঃ “শব্দের উমুম তথা ব্যাপকাতা গ্রহণ করা হবে। শানে নুজুলের খুসুসের উপর নির্ভর করা হবে না। সুতরাং আখনাস বিন শুরাইক [যার উল্লেক ইতোপূর্বে হয়েছে] মন্দ কাজের একটি নমুনা মাত্র। যে ব্যক্তিই এমন কাজ করবে, তার ক্ষেত্রেও একই হুকুম আরোপিত হবে। {তাফসীরী হাওয়াশী-৮৩}

এ মূলনীতিটি গায়রে মুকাল্লিদদের সকলের কাছেই গ্রহণীয়। এ মূলনীতিটির অবস্থা কি? গায়রে মুকাল্লিদদদের আলেম মাওলানা আবু সাঈদ শরফুদ্দীন দেহলবী সাহেবের ভাষায় দেখুনঃ

খাস শব্দকে আম হিসেবে মেনে নেয়াও কিয়াস। {ফাতাওয়া সানাবিয়্যাহ-২/৩৩৮}

তাহলে গায়রে মুকাল্লিদরা যখনি এ উসুলকে মেনে নিবে, তখনি মুফাসসিরীনদের কিয়াসকে মানছে। আর কিয়াসী মাসআলা মানা মানেইতো তাকলীদকে মানা। অথচ এ গায়রে মুকাল্লিদরাই প্রচার করে থাকে যে, কিয়াস হল ইবলিসের কর্মকান্ড। আর এ কথিত ইবলিসী কর্মকান্ডকেই মানছে তারা দ্বিধাহীন চিত্তে।

কিয়াসী মাসআলায় উলামায়ে কেরামের তাকলীদ

আহলে হাদীস নামধারী ভাইয়েরা যদিও সারাদিন প্রচার করে বেড়ায় যে, তারা শুধু কুরআন ও হাদীসের স্পষ্ট বিধানকেই মানেন। কিয়াসের অনুসরণ করেন না। কিন্তু সত্য কথা হল, কার্যত তারা অনেক মাসআলায় তারা কেবল কিয়াসের উপর ভিত্তি করে আমল করে থাকেন। এছাড়া কোন গতি নেই।

এ বিষয়ের বিশাল সমুদ্রতুল্য মাসআলা ভান্ডারের মাঝে কয়েকটি মাসআলা নিচে উদ্ধৃত হল-

গায়রে মুকাল্লিদ মাওলানা মুবাশশির রাব্বানী সাহেব লিখেছেনঃ

বিতিরের কুনুতের সময় হাত উঠানো রাসূল সাঃ এর কোন সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমানিত নয়। যেসব আহলে হাদীসরা হাত উঠিয়ে দুআ করে থাকেন, এর উপর কিয়াস করে তারা এটাকে কুনুতে নাজেলা এর উপর কিয়াস করে এমনটি বলে থাকেন। {আহকাম ওয়া মাসায়েল-২৫৯}

গায়রে মুকাল্লিদ ডক্তর শফীকুর রহমান সাহেব লিখেছেনঃ “আগের কাতার থেকে পিছনের কাতারে কোন মুসল্লিকে টেনে নিয়ে আসা কোন সহীহ হাদীস দিয়ে প্রমানিত নয়। তবে এক ইমাম ও এক মুক্তাদীর মাসআলার উপর কিয়াস করে এটা জায়েজ বলে প্রতিপন্ন হয়। {নামাযে নববী-১৩০}

গায়রে মুকাল্লিদ হাফেজ নাঈমুল হক মুলতানী সাহেব লিখেছেনঃ

“কিয়াসে শরয়ী যতক্ষণ পর্যন্ত কোন শরয়ী ইবারতের বিপরীত না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তা শরয়ী দলীল হিসেবে গৃহিত হবে। {ভয়েস কি কুরবানী কা তাহকীকী জায়েজাহ-৯১}

গায়রে মুকাল্লিদ মাওলানা ওহীদুজ্জামান সাহেব লিখেছেনঃ

“আহলে হাদীসরা শুকর ও কুকুরকেও মৃতের উপর কিয়াস করেছেন। এবং বলেছেন যে, হাদীসটি আম। তাই শুকর ও কুকুরের চামড়া দাবাগত করালে তা পাক হয়ে যাবে। {তাইসীরুল বারী-৭/৩৭৭}

গায়রে মুকাল্লিদ মাওলানা সানাউল্লাহ উমরতাসরী সাহেব লিখেছেনঃ

“এসব হাদীসের উপর কিয়াস করে যদি কেউ মৃতের পক্ষ থেকে কাযা নামায আদায় করে, তাহলে সওয়াব পৌঁছার আশা করা যায়। {হাশিয়ায়ে ফাতাওয়া সানাবিয়্যাহ-২/৩৮}

গায়রে মুকাল্লিদ মাওলানা শরফুদ্দীন দেহলবী সাহেব লিখেছেনঃ

“যে পশুর গোস্ত খাওয়া যায়, তার হাড্ডির ব্যাপারে কোন মতভেদ নেই। আর যেসব পশুর গোস্ত খাওয়া জায়েজ নয়, সেসব ব্যবহার করা এবং বিক্রির বিষয়টি হাতির দাঁতের উপর কিয়াস করে জায়েজ হওয়া দলীল সমৃদ্ধ বলে মনে হচ্ছে।”

গায়রে মুকাল্লিদ মাওলানা হাফেজ আব্দুস সাত্তার হাম্মাদ সাহেব লিখেছেনঃ

“সফরের সময় ‘আলবিদা’বলা সুন্নত। চাই মুসাফির মুকীমকে বলুক, বা মুকীম মুসাফিরকে বলুক। হাদীসের মাঝে প্রথম সুরতের কথা বর্ণিত। দ্বিতীয় সুরতটিকে এর উপর কিয়াস করা যেতে পারে। {মুখতাসার সহীহ বুখারী-২/৭৩}

গায়রে মুকাল্লিদ মাওলানা মীর মুহাম্মদ ইবরাহীম শিয়ালকুটি সাহেব লিখেছেনঃ

“সন্ধানহীন ব্যক্তির স্ত্রীকে অক্ষম ব্যক্তির স্ত্রীর উপর কিয়াস করা সহীহ বরং উত্তম। {ফাতাওয়া সানাবিয়্যাহ-২/২৬৬}

আল্লামা শাওকানী রহঃ লিখেছেনঃ

“সুতরাং এটি প্রমাণ করে যে, আম বিষয়কে কিয়াস দ্বারা খাস করা যায়। {নাইলুল আওতার-৪/৮}

এই হল গায়রে মুকাল্লিদ আলেমদের কিয়াসী মাসআলার সামান্য ঝলকমাত্র।

এবার লক্ষ্যণীয় বিষয় হল, তাদের এসব কিয়াসী মাসআলার অবস্থান কি?

জামাআতুল মুসলিমীনের প্রতিষ্ঠাতা জনাব মাসউদ সাহেব বলেন, “কোন ব্যক্তির ইজতিহাদ এবং কিয়াস না আল্লাহর পক্ষ থেকে নাজিলকৃত না এসব আসল দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত”। {জামাআতুল মুসলিমীন আওর আহলে হাদীস-৪}

আমাদের জানা মতে আহলে হাদীস ফিতনা থেকে প্রসব হওয়া দল জামাআতুল মুসলিমীন প্রতিষ্ঠাতার মত গায়রে মুকাল্লিদ ভাইয়েরাও কিয়াস ও ইজতিহাদকে মুনাজ্জাল মিনাল্লাহ তথা কুরআন ও হাদীস সাব্যস্ত করে না।

যখন অবস্থা হল তাই, তাহলে গায়রে মুকাল্লিদদের আলেমদের কিয়াসী মাসআলা সাধারণ গায়রে মুকাল্লিদরা মানা কি তাকলীদ নয়? গায়রে মুকাল্লিদ তথা নামধারী আহলে হাদীসরা তাদের কিতাবে এসব কিয়াসী মাসআলা লিখে পরোক্ষভাবে তাদের তাকলীদ করার দাওয়াত কি দিচ্ছে না? আর এসব মাসআলা দলীল ছাড়া সাধারণ আহলে হাদীস দাবিদাররা মানার মাধ্যমে সুষ্পষ্টভাবে মুকাল্লিদে পরিণত হচ্ছে। তবে মুজতাহিদের মুকাল্লিদ তারা হচ্ছেন না বরং গায়রে মুজতাহিদ অজ্ঞ ব্যক্তির মুকাল্লিদ হচ্ছেন। এই হল চার ইমাম মুজতাহিদের তাকলীদ আর গায়রে মুকাল্লিদ কথিত আহলে হাদীসদের তাকলীদের মাঝে পার্থক্য। চার ইমামর মুকাল্লিদরা মুজতাহিদের তাকলীদ করছেন। আর কথিত আহলে হাদীসরা গায়রে মুজতাহিদ তথা সাধারণ ব্যক্তির তাকলীদ করছেন।

কথিত আহলে হাদীস মাযহাব জিন্দাবাদ?!

সারা দিন যারা তাকলীদকে শিরক বিদআত বলে বেড়ায় তাদের তাকলীদের হাল হল এই। অনেকের হয়তো ধারণা হতে পারে যে, গায়রে মুকাল্লিদ দাবিদাররা শুধু মাসায়েলের ক্ষেত্রেই কেবল তাকলীদ করে থাকেন, আক্বিদার ক্ষেত্রে তারা কারো তাকলীদ করেন না। এ ভুল ধারণাও আপনাদের থাকবে না ইনশাআল্লাহ। লক্ষ্য করুন-

আশায়েরা ও মাতুরিদীয়্যার তাকলীদ

প্রসিদ্ধ গায়রে মুকাল্লিদ আলেম মাওলানা আব্দুল জলীল সামাওয়ারদী সাহেব লিখেছেনঃ “আহলে হাদীসদের মাঝে আহলে হাদীস আক্বিদা নিয়ে মতপার্থক্য রয়ে গেছে। শুনে আশ্চর্য লাগা স্বাভাবিক। কিন্তু বাস্তবতা জানার পর এটি আর আশ্চর্য বিষয় থাকবে না”। {ফাতাওয়া সেতারিয়া-৩/২৩]

গায়রে মুকাল্লিদদের কাছেতো এটা আশ্চর্যজনক মনে হবেই। কারণ যেখানে শাখাগত মাসায়েলে চার ইমামের মাঝে মতভেদ হওয়াকে তারা ফিরক্বাবাজী, দ্বীনকে বিভক্ত করা বলে মন্তব্য করে থাকে। সেখানে আক্বিদার মত মৌলিক বিষয়ে তাদের আলেমদের মাঝের মতভেদ কেন ফিরক্বাবাজী আর ফিতনা বলে সাব্যস্ত হবে না?

যাইহোক। মাওলানা সামাওয়ারদী সাহেব এ বিষয়কে আরো স্পষ্ট করে বলেনঃ

“আহলে হাদীস ও দুই প্রকার। একদল হল খালিস আহলে হাদীস। যারা উসূল ও ফুরু তথা মৌলিক ও শাখাগত সকল বিষয়ে আহলে হাদীস। আরেক দল হল উসুলের দিক থেকে গায়রে আহলে হাদীস মাতুরিদী এবং আশআরী। {ফাতাওয়া সেতারিয়া-৩/২৪}

 

উল্লেখিত বক্তব্য দ্বারা একথা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হচ্ছে যে, আহলে হাদীসরা আক্বিদার দিক থেকে দুই প্রকার। এক প্রকার হল, যারা তাদের উলামায়ে আহলে হাদীসের পাবন্দ। আর আরেক দল মাতুরিদী আর আশআরী রহঃ এর মুকাল্লিদ।

মাওলানা সামাওয়ারদী সাহেব কয়েক লাইন পর লিখেনঃ

“আহলে হাদীসদের মাদরাসায় খালিস আহলে হাদীস আক্বিদার কোন ছোট বা বড় কিতাব দরসে না ছিল কখনো। না বর্তমানে আছে। সেই দরসে নেজামী আর আকায়েদে নাসাফী ইত্যাদিই আছে। একথা সর্বজন বিদিত যে, যে বৃক্ষ্য রূপন করা হবে, ফল তেমনি হবে। কাঁকড় গাছ লাগিয়ে আম ফল কিভাবে আশা করা যায়?মোদ্দাকথা, বড় উলামাগণই আসল আহলে হাদীস আক্বিদা থেকে অনবহিত। খারাপ মনে করবেন না, সেখানে সাধারণ মানুষ সহীহ আক্বিদা কোত্থেকে শিখবে? আর বড় আলেমদেরই বা দোষ দিয়ে লাভ কি? তাদের তালীমতো এর থেকেই শিখেছে। তারা তাদের তালীমের পাবন্দ হয়ে থাকে। জন্মসূত্রেতো মুসলমান সবাই হয়। কিন্তু পিতা-মাতা ইহুদী-নাসারা, পৌত্তলিক ইত্যাদি বানিয়ে দেয়। এটি তাদের রূহানী পিতা-মাতার দোষ। বড় আহলে হাদীসরা না এটি অনুভব করেছেন, না উলামায়ে কেরাম এ ব্যাপারে সতর্ক করেছেন”। {ফাতাওয়া সিতারিয়া-৩/২৪}

গায়রে মুকাল্লিদ আলেম মাওলানা সামাওয়ারদী সাহেবের বক্তব্য থেকে কয়েকটি বিষয় বুঝা যাচ্ছে।

যথা-

কথিত আহলে হাদীসদের মাদরাসায় আহলে হাদীস আক্বিদার কোন কিতাব নিসাবে শামিল নেই। বড় কিতাবতো দূরে থাক, ছোট কিতাবই পড়ানো হয়নি। বরং ঐ ব্যক্তিদের কিতাবই পড়ানো হয়েছে, যাদের আক্বিদাকে আহলে হাদীস ভাইয়েরা কুরআন ও হাদীসের বিপরীত বলে বেড়ান। কিন্তু আহলে হাদীস মাদরাসাগুলোতে তাদের আক্বিদাকেই গ্রহণ করে তাদেরই মুকাল্লিদ হয়ে রইল।

মাতুরিদী আর আশায়েরার আক্বিদাকে কাঁকড়ের সাথে তুলনা করা হয়েছে। অর্থাৎ অবাক কান্ড হল, তারা মুখে দিয়ে চাবায় কাঁকড় ফল, কিন্তু মুখ দিয়ে বলে যে, তারা আম খাচ্ছে।

অন্য শব্দে বললে বলতে হয়, আহলে হাদীস মাদরাসায় আহলে হাদীসী আক্বিদা রেখে আশায়েরা এবং মাতুরিদী আক্বিদা পড়ানো হচ্ছে, যা তাদের ভাষায় কুরআন ও হাদীস বহির্ভূত আক্বিদা। অথচ মানুষের কাছে প্রচার করে বেড়ায় যে, “গায়রে মুকাল্লিদরা স্বীয় আমল এবং আক্বিদায় কিতাবুল্লাহ এবং হাদীসে নববীর উপর আমল করে”। {তরীকে মুহাম্মদী-১১৮, উদ্ধৃতি-মাসায়েলে গায়রে মুকাল্লিদীন-৩৪৫}

উলামায়ে আহলে হাদীসরা আশায়েরা এবং মাতুরিদীর মুকাল্লিদ এ কারণে হয়েছে, যেহেতু তাদের মাদরাসায় শুধ্ ুএরই তালীম দেয়া হয়ে থাকে। আর তাদের রূহানী পৈত্রিকসূত্রে তাদের কাছে এটিই এসেছে। আফসোস তাদের জন্য, তারা কুরআনের আয়াত “মা ওয়াজাদনা আবাআনা”এর দিকে ভ্রুক্ষেপ করলো না। অথচ এটিকে তারা তাকলীদের বিপক্ষে উপস্থাপন করে থাকে। অথচ নিজেরাই বাপ-দাদার পদ্ধতির তাকলীদ করাকে তাহকীকের উপর প্রাধান্য দিয়ে বসে আছে।

যেখানে আহলে হাদীস আলেমদের আক্বিদাই সহীহ নেই। সেখানে সাধারণ আহলে হাদীসদের আক্বিদা কি করে সহীহ হবে?

একথা দ্বারা এটিই প্রতিয়মান হয় যে, সাধারণ আহলে হাদীসরা উলামায়ে আহলে হাদীসের মুকাল্লিদ।

মাওলানা সামাওয়ারদী সাহেব স্বীয় বক্তব্যকে শক্তভাবে চ্যালেঞ্জের সাথে বলে ঘোষাণা দেন-

“আমি আমার সময়কার সকল উলামায়ে কেরামকে চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি যে, তারা আমার কথাকে ভুল প্রমাণিত করে সত্য প্রকাশিত করে দিন। আপনারা কি আশআরী কাদীম এবং মাতুরিদীর আক্বিদার পাবন্দ নন? তারপরও নিজেদের খাঁটি আহলে হাদীস বলতে লজ্জা করে না? সূর্যের মাঝে মাটি ঢালতে চাও, আর চাঁদকে ঢাল দিয়ে আলোহীন করতে চাও?”। [ফাতাওয়া সেতারিয়া-৩/২৬}

শুধু কি তাই? গায়রে মুকাল্লিদ আলেম মাওলানা ওহীদুজ্জামান সাহেব স্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা দেন-

ايمان المقلد صحيح ولا يتكلف العامى بمعرفة الدلائل

মুকাল্লিদের ঈমান সহীহ। আর সাধারণ লোকদের দলীল জানাকে আবশ্যক করা যাবে না। {হাদিয়াতুল মাহদী-১১৩}

গায়রে মুকাল্লিদ কথিত আহলে হাদীস আল্লামা ওহীদুজ্জামান সাহেবের বক্তব্য অনুপাতে ব্যক্তি দলীল চাওয়া ছাড়া শুধু তাকলীদ করে মুমিন হয়ে যেতে পারে। তার জন্য দলীল চাওয়ার কোন দরকার নেই।

কিন্তু আফসোস, মুর্খ-জাহিলদের জন্যও মাসআলা মানতে বিজ্ঞ আলেমের তাকলীদ করা তাদের মতে জায়েজ নয়। কিন্তু মুমিন হওয়ার জন্যও তাদের কাছে আক্বিদার দলীল জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন নেই। একেই বলে, অন্যের বেলা ধর্ম যায়, আর নিজের বেলা সবই রয়।

শেষ পর্ব

0Shares

আরও জানুন

বাউল সম্প্রদায় সম্পর্কে একথাগুলো কি আমরা জানি?

সংগৃহিত  আমরা জানি না লালন আসলে কে? লালন ছিলেন বাউল সম্প্রদায়ের গুরু।আমরা কি জানি কারা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *