আবূ মুয়াবিয়া লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
আগের লেখাটি পড়ে নিন- খেলাফতে মুয়াবিয়া রাঃ
ইয়াযিদের শাসনামল
আমীরে মুয়াবিয়া রাঃ এর ইন্তেকালের সময় ইয়াযিদ ছিল হিমসের হাওয়ারীন দূর্গে। সেখান থেকে মৃত্যুর সংবাদ শুনে দ্রুত রাজধানী দামেশকে চলে আসে। ইয়াযিদ আসার আগেই হযরত মুয়াবিয়া রাঃ এর দাফন সম্পন্ন হয়ে যায়। [সিয়ারু আলামিন নুবালা-৩/১৬২]
ইয়াযিদের প্রথম খুৎবা
ইয়াযিদ রাষ্ট্রের সভাসদ এবং দামেশবাসীর উদ্দেশ্যে শোকবার্তা বক্তব্যে হামদ ও সানার পর বলেন,
“মুয়াবিয়া রাঃ নিঃসন্দেহে আল্লাহর বান্দাদের মধ্য থেকে একজন বান্দা ছিলেন। আল্লাহ তাআলা তার উপর অনুগ্রহ বর্ষণ করেছেন। তারপর নিজের কাছে নিয়ে গিছেন। তিনি পূর্ববর্তীদের থেকে মর্যাদার দিক থেকে কম হলেও পরবর্তীদের থেকে উত্তম ছিলেন। আমি তাকে আল্লাহর কাছে তাঁর পক্ষে সাফাই গাইছি না। কেননা, আল্লাহ তাআলাই তার ব্যাপারে ভালো জানেন। যদি তার ক্ষমা হয়, তাহলে এটা আল্লাহর রহমাত। আর যদি পাকড়াও হন, তাহলে তা নিজের পদস্খলনের কারণে। তারপর যিম্মাদারী আমাকে দেয়া হয়েছে। কোন কিছুর অন্বেষণে আমি ব্যথিত নই এবং কোন কিছুর বর্জনে আমি কৈফিয়ত দানকারী নই। কিন্তু যা আল্লাহ তাআলা মঞ্জুর করেন, তা’ই হয়। [আলবিদায়া ওয়াননিহায়া-৮/১৪৩, ইফাবা-৮/২৭২]
ইয়াযিদের এ খুতবা প্রমাণ করে, সে খলীফা হবার সময় প্রকাশ্য ফাসিক ছিল না। যা আমভাবে মনে করা হয়ে থাকে। বক্তৃতায়ও সে ছিল বেশ পারদর্শী।
বাইয়াতের জন্য বার্তাবাহক প্রেরণ
আমীরে মুয়াবিয়া রাঃ এর শেষ জমানায় কুফায় নু’মান বিন বশীর রাঃ, বসরায় উবায়দুল্লাহ বিন যিয়াদ এবং মদীনায় ওলীদ বিন উতবা গভর্ণর ছিল।
ইয়াযিদ খলীফা হবার পর তাদের স্বপদে বহাল রাখেন। নিঃসন্দেহে এটা তার বুদ্ধিমত্তা এবং দূরদর্শিতার পরিচায়ক। [আলবিদায়া ওয়াননিহায়া-৮/১৪৬, ইফাবা-৮/২৭৭]
দায়িত্বগ্রহণের পর ইয়াযিদ পুরো মুসলিম মিল্লাতের মাঝে হযরত মুয়াবিয়া রাঃ এর ইন্তেকাল এবং নিজের খিলাফতের বাইয়াত গ্রহণের আহবান করে বার্তাবাহক প্রেরণ করেন। [তারীখে তাবারী-৫/৩৪৭]
হযরত হুসাইন রাঃ ইয়াযিদের হাতে বাইয়াত হননি কেন?
হযরত মুয়াবিয়া রাঃ এর জীবদ্দশায়ই হযরত হুসাইন রাঃ এবং তার সাথে হযরত আব্দুল্লাহ বিন যুবায়ের রাঃ এর অবস্থান এই ছিল যে, পৈত্রিক রাজত্ব পদ্ধতি পরিহার করে খোলাফায়ে রাশেদীনের জমানার শুরায়ী নিজামে খলীফা নির্ধারণ পদ্ধতি অনুসরণ করা উচিত। আর এ দায়িত্ব উম্মতের গুরুত্বপূর্ণ ও সেরা ব্যক্তিদের অধীনত হওয়া উচিত।
এ কারণেই তারা উভয়ে ইয়াযিদকে ‘পরবর্তী খলীফা নির্ধারণ’ বাইয়াত থেকে বিরত ছিলেন।
তাদের উভয়ের ইয়াযিদের কাছে বাইয়াত হয়ে যাওয়ার বিষয়টি ‘রুখসত’ তথা ছাড় দেয়া হিসেবে করার সুযোগ ছিল। কিন্তু ‘আযীমত’ বা দৃঢ়তা এটাই ছিল যে, পৈত্রিকসূত্রে খলীফা হবার এ পদ্ধতিকে বাতিল করার চেষ্টা করা, যাতে করে এ প্রচলনের হাত ধরে পরবর্তীতে বড় কোন ফিতনা তৈরী না হয়।
তারা উভয়ে আযীমতের উপর আমল করে প্রাথমিক পদ্ধতি হিসেবে ইয়াযিদের হাতে বাইয়াত গ্রহণ থেকে নিজেকে বিরত রাখেন। যাতে করে অন্যরাও ইসলামী রাষ্ট্রনায়ক নির্বাচনের পূর্বের পদ্ধতির যথার্থতা অনুধাবনে সচেতন থাকেন।
হযরত হুসাইন রাঃ কি বিদ্রোহ করতে চেয়েছিলেন?
প্রাথমিকভাবে হযরত হুসাইন রাঃ এবং হযরত আব্দুল্লাহ বিন যুবায়ের রাঃ এর মানসিকতা এতোটুকুই ছিল যে, তারা ইয়াযিদের হাতে বাইয়াত হবেন না। ব্যস, এতটুকুই।
এমন কোন বিশুদ্ধ বর্ণনা পাওয়া যায় না, যার মাধ্যমে একথা বুঝা যায় যে, তারা ইয়াযিদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের প্রস্তুতি নিয়েছেন।
অথচ হযরত হুসাইন রাঃ এর কাছে মুয়াবিয়া রাঃ এর জীবদ্দশা থেকেই কুফার পত্র আসছিল। যেন তিনি সেখানে চলে যান এবং উম্মতে মুসলিমার নেতৃত্ব নিজ কাঁধে তুলে নেন। [আলমু’জামুল কাবীর, তাবারানীকৃত-৩/৭০]
কিন্তু এমন কোন বিশুদ্ধ বর্ণনা নেই, যাতে প্রমাণ হয় যে, হযরত হুসাইন রাঃ সেসব পত্রের জবাব দিয়েছেন বা তাদের আহবানের প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছেন।
বরং প্রাথমিক ঘটনাপ্রবাহ পরিস্কার জানায় যে, ইয়াযিদ খলীফা হবার পরও হযরত হুসাইন রাঃ কুফায় যাবার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেননি। মদীনায়ই পুরো জীবন কাটিয়ে দিতে চেয়েছেন। সেই সাথে নিজের ফাতওয়া অনুপাতে বাইয়াত থেকেও বিরত থাকতে মনস্থির করেছিলেন।
কিন্তু যখন ইয়াযিদের হাতে বাইয়াত হতে তাকে চাপ সৃষ্টি করা হল। তখন তিনি বাধ্য হয়ে মদীনা ছাড়লেন। কুফায় যাবার বিষয় নিয়েও ভাবতে শুরু করলেন। [আনছাবুল আশরাফ-৩/১৫৫-১৫৬]
ইয়াযিদের রাজনৈতিক প্রথম ভুল পদক্ষেপ
ইয়াযিদের জন্য উচিত ছিল যে, যারা বাইয়াত হতে চাননি, সেসব নেতৃস্থানীয় বড় ব্যক্তিদের বিষয়ে নাক না গলানো। হযরত আলী রাঃ ও তার খিলাফতের জমানায় বাইয়াত হতে না চাওয়া নেতৃস্থানীয় কারো উপর চাপ সৃষ্টি করেননি। বাইয়াত না হবার কারণে তাদের সাথে দুর্ব্যবহার করেননি। সম্মান প্রদর্শনে কোন কমতি করেননি।
ঠিক তেমনি হযরত মুয়াবিয়া রাঃ তার জমানায় যারা ইয়াযিদকে পরবর্তী খলীফা হিসেবে বাইয়াত হতে অস্বিকৃতি জানিয়েছেন, তাদের প্রতি বিরূপ ছিলেন না। তাদের সাথে কঠোরতা করেননি। বাইয়াত হতে বাধ্য করেননি।
কিন্তু ইয়াযিদ তার খিলাফাতের জমানায় প্রথম যে মারাত্মক ভুলটি করে, তাহলো সে মুরব্বী ও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গকে দ্রুত বাইয়াত গ্রহণে চাপ সৃষ্টি করতে থাকে। [আলবিদায়া ওয়াননিহায়া-৮/১৪৬-১৪৭, ইফাবা-৮/২৭৭-২৭৮]
এর মাধ্যমে তার মরহুম পিতার সেই অমূল্য নসিহতকে অগ্রাহ্য করে, যাতে ছিল যে, ‘নেতৃস্থানীয় মুরব্বীদের সাথে কঠোরতা করবে না। এবং তাদের উপর নিজের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে জোরাজুরি করবে না’। [আলবিদায়া ওয়াননিহায়া-৮/২৫১-২৫২]
এই মূল্যবান ওসিয়ত ভুলে গিয়ে ইয়াযিদ মারাত্মক ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। যার ফলে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে খারাপের দিকে মোড় নেয়।
বিশুদ্ধ বর্ণনা মোতাবিক ইয়াযিদ সিংহাসনে আরোহণের পর হযরত মুয়াবিয়া রাঃ এর আযাদকৃত গোলাম রুযাইককে মদীনার গভর্ণর ওলীদ বিন উতবার নিকট প্রেরণ করে। এই মর্মে হুকুম দেয় যে, ওলীদ যেন হযরত হুসাইন রাঃ, হযরত আব্দুল্লাহ বিন যুবায়ের রাঃ কে তরিৎ তার নিজের কাছে ডেকে আনে এবং তাদের থেকে বাইয়াত নেয়।
এই বার্তাবাহকই হযরতে মুয়াবিয়া রাঃ এর ইন্তেকালের সংবাদও নিয়ে যায়।
পত্রবাহক যখন মদীনায় পৌঁছে, তখন রাত হয়ে গিয়েছিল। সে অনেক চেষ্টা মেহনত করে গভর্ণর ওলীদ বিন উতবার সাথে সাক্ষাৎ করে গুরুত্বপূর্ণ সংবাদটি পৌঁছায়। [তারীখে খলীফা বিন খাইয়্যাত-২৩২, আলইকদুল ফরীদ-৫/১২৫] আব্দুল্লাহ বিন যুবায়ের এবং হুসাইন রাঃ এর মদীনা থেকে মক্কা রওনা
ওলীদ বিন উতবা সংবাদ পাবার সাথে সাথেই প্রথমে হযরত আব্দুল্লাহ বিন যুবায়ের রাঃ এবং তারপর হযরত হুসাইন রাঃ কে গভর্ণর ভবনে তলব করে। বাইয়াত হবার জন্য অনুরোধ করে।
হযরত আব্দুল্লাহ বিন যুবায়ের রাঃ জবাবে বলেন,
“বাইয়াত হবার এটা কোন সময় নয়। তাছাড়া আমার মত ব্যক্তি একাকী লুকিয়ে বাইয়াত হবো না। আপনি কালকে মিম্বরে বসে আমার বাইয়াত গ্রহণ করুন”।
এরই মাঝে হযরত হুসাইন রাঃ উপস্থিত হলেন। ওলীদ বিন উতবা নরম স্বভাবের মানুষ ছিলেন। তিনি যখন হযরত আব্দুল্লাহ বিন যুবায়ের রাঃ এর যুক্তিকে সঠিক মনে করে কালকে বাইয়াত হবার সিদ্ধান্ত নিলেন। তখন হযরত হুসাইন রাঃ কে বাইয়াত হবার জন্য কোন চাপ সৃষ্টি করলেন না। উভয়কে বাইয়াত ছাড়াই যাবার অনুমতি দিয়ে দিলেন। তবে খবর রাখার জন্য সাথে কিছু লোককে পাঠালেন।
তারা উভয়ে বুঝে গেলেন যে, বাইয়াত না হলে তাদের উপর রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে কঠোরতা করা হবে। তা’ই রাতের শেষ প্রহরে আব্দুল্লাহ বিন যুবায়ের রাঃ অপ্রসিদ্ধ একটি রাস্তা দিয়ে মদীনা থেকে বের হয়ে মক্কা রওনা হয়ে গেলেন। [তারীখে খলীফা বিন খাইয়্যাত-২৩২]
ওলীদ যখন সকালে তার অনুপস্থিতির কথা জানতে পারলো, তখন তার খোঁজে ৩০ বা ৮০ জন ঘোরসওয়ার প্রেরণ করল। কিন্তু তারা আব্দুল্লাহ বিন যুবায়ের রাঃ এর টিকিটাও খুঁজে পেল না। [আনছাবুল আশরাফ-৫/৩০০, বালাজুরীকৃত, তারীখে তাবারী-৫/৩৪১]
এক দুইদিন পর হযরত হুসাইন রাঃ তার পরিবারসহ মদীনা থেকে মক্কা রওনা হবার প্রস্তুতি গ্রহণ করলেন। [ তারীখে তাবারী-৫/৩৪১]
মদীনা থেকে মক্কাকে নিরাপদ আশ্রয় মনে করার কারণ এই ছিল যে, একেতো মক্কা পবিত্র শহর। রাষ্ট্রপক্ষীয় দায়িত্বশীলরা ক্ষমতা প্রয়োগ করে উক্ত পবিত্র ভূমির পবিত্রতা বিনষ্ট করার সাহস করবে না। দামেশক থেকে মদীনা কাছে। কিন্তু মক্কা বেশ দূরে। তাছাড়া মদীনার তুলনায় মক্কা ছিল পাহাড়ে ঘেরা শহর। যাতে সহজেই রাষ্ট্রীয় সেনাদের থেকে নিজেকে লুকিয়ে রাখা সহজতর ছিল।
এসকল কারণে হযরত হুসাইন রাঃ এবং আব্দুল্লাহ বিন যুবায়ের রাঃ মদীনা ছেড়ে মক্কায় নিজেদের অধিক নিরাপদ মনে করলেন।
হুসাইন রাঃ এর মদীনা রওনা হবার সময় আব্দুল্লাহ বিন উমর রাঃ এর সাথে সাক্ষাৎ
হুসাইন রাঃ মক্কা রওনা হবার পূর্বে আব্দুল্লাহ বিন উমর রাঃ এর সাথে সাক্ষাৎ করেন। ইবনে উমর রাঃ পরামর্শ দিলেন যেন তিনি কোথাও না যান। কিন্তু হুসাইন রাঃ কুফা থেকে পাওয়া পত্রগুলো দেখালেন।
পত্রগুলো দেখে হযরত ইবনে উমর রাঃ মন্তব্য করলেন, “হুসাইন! আপনি তাদের কাছে যাবেন না”।
কিন্তু হুসাইন রাঃ কুফাবাসীকে বিশ্বাস করে ইবনে উমরের কথা মানলেন না।
ইবনে উমর রাঃ বিদায় মুহুর্তে হযরতে হুসাইন রাঃ এর গলা জড়িয়ে ধরে অনেক কাঁদলেন। কেঁদে কেঁদে বললেন, “হে শহীদ! তোমাকে আল্লাহর কাছে সোপর্দ করলাম”। [মাযমাউয যাওয়ায়েদ, হাদীস নং- ১৫১৩০, আলমু’জামুল আওসাত, হাদীস নং-৫৯৭, তারীখে দামেশক-৪/২০২]
হযরত হুসাইন রাঃ মদীনা থেকে মক্কা রওনা হয়ে গেলেন। পথিমধ্যে হযরত আব্দুল্লাহ বিন মুতী’ রাঃ এর সাথে সাক্ষাৎ হয়। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, “কোথায় যাচ্ছেন”? তখন হযরত হুসাইন রাঃ জবাবে বললেন যে, আপাতত মক্কা যাচ্ছি, তারপর ভবিষ্যতে কী করবো? সেখানে গিয়ে এ বিষয়ে ইস্তিখারা করবো। [আনছাবুল আশরাফ-৩/১৫৫-১৫৬]
এর মাধ্যমে বুঝা যায় যে, হযরত হুসাইন রাঃ মক্কায় যাবার সময়ও কুফায় যাবার দৃঢ় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেননি। যদি তা’ই করতেন, তাহলে মক্কায় গিয়ে ইস্তিখারা করে সিদ্ধান্ত নেবার কথা বলতেন না। তাছাড়া মদীনা থেকে কুফা তুলনামূলক কাছে। যদি কুফায় যাবারই দৃঢ় সিদ্ধান্ত থাকতো, তাহলে তিনি মক্কায় না গিয়ে খুব সহজে মদীনা থেকেই কুফায় চলে যেতে পারতেন।
প্রসিদ্ধ বর্ণনা অনুপাতে ২৭ বা ২৮ রজব রবিবার দিন হযরত হুসাইন রাঃ মদীনা থেকে রওনা হন। তারপর দ্রুত সফর করে ৩ বা ৪ শাবান মক্কায় আগমন করেন। মক্কায় তিনি ৬০ হিজরীর ৮ই জিলহজ্জ পর্যন্ত তথা ৪ মাস ৫ দিন অবস্থান করেন। এই সময়ের মাঝে সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে ছিলেন। [তারীখে তাবারী-৫/৩৮১, আনছাবুল আশরাফ-৩/১৬০]
হুসাইন রাঃ এর আন্দোলনের আসল রহস্য
হযরত হুসাইন রাঃ ঐ ব্যক্তিত্ব যিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তত্বাবধানে উচ্চতর ঈমানী শক্তি এবং চারিত্রিক উৎকর্ষতা অর্জন করেছেন। হযরত আবূ বকর রাঃ, হযরত উমর রাঃ এবং হযরত উসমান রাঃ এর স্নেহ মোহাব্বতই শুধু পাননি, বরং তাদের সংশ্রবে আত্মিক শক্তি অর্জন করেছিলেন।
পুরো উম্মতে মুসলিমার মাঝে সবচে’ উঁচু বংশ নবীর বংশীয় ছিলেন। আলী রাঃ এর মত হায়দারে কাররারের ইলম, ফাকাহাত, জ্ঞান, রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ইত্যাদিরও জানেশীন ছিলেন।
দ্বীনী বিষয়ে অগাধ পাণ্ডিত্ব, ইলমী গভীরতা, দ্বীনদারী, আমানতদারী, খুলুসিয়্যাত, লিল্লাহিয়্যাত, নির্ভীকতা, এককথায় তৎকালিন সময়ে তিনি অদ্বিতীয় যোগ্য ও মহান ব্যক্তিত্ব ছিলেন । অনভিজ্ঞ, রক্ত গরম আবেগী কোন যুবক ছিলেন না হযরতে হুসাইন রাঃ। ছষ্ঠ দশক পেরিয়ে ৭ম দশকে পৌঁছার নিকটবর্তী ছিল বয়স।
এমন ব্যক্তিত্ববান মানুষের ক্ষেত্রে এমন ধারণা করা মোটেও যুক্তিসঙ্গত নয় যে, তিনি কেবল ইয়াযিদের ব্যক্তিগত দুর্বলতা এবং তার পাপাচারের প্রোপাগা-া শুনে তার হাতে বাইয়াত নিতে অস্বিকৃতি জানিয়েছেন। বরং এর পেছনে নিশ্চয় কোন বড় কারণ ছিল।
সেটা হল, তিনি তার দূরদৃষ্টির মাধ্যমে একথা উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন যে, যদি এভাবে শাসকের সন্তান শাসক হবার প্রথা চালু হয়ে যায়, তাহলে তা পরবর্তীতে মুসলিম মিল্লাতের জন্য বিরাট ক্ষতির কারণ হতে পারে। অনেক অযোগ্য ও অথর্ব সন্তানও কেবল বাবা শাসক ছিল বলে শাসনক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে যাবে।
ফলে মুসলিম জাহানের অপূরণীয় ক্ষতি সাধিত হবে।
তিনি একথার দাবী একবারও করেননি যে, ইয়াযিদ শাসক হবার যোগ্য নয়। এমনকি ইয়াযিদ ফাসিক, পাপাচারী এমন অভিযোগও হযরতে হুসাইন রাঃ থেকে কোন বিশুদ্ধ সনদে প্রমাণিত নয়। বরং তার মূল দাবী ছিল, ইয়াযিদের খলীফা নিযুক্তকরণ পদ্ধতি সঠিক ছিল না। এটা পরবর্তীতে ইসলামী সালতানাতে রাজতন্ত্রের অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে উম্মতে মুসলিমাকে বিশাল মুসিবতে নিপতিত করবে।
উম্মতে মুসলিমাকে আগত সেই মুসিবত থেকে রক্ষাকল্পে নিজের জানের বাজী লাগাতে প্রস্তুত হয়ে যান নবীজীর দৌহিদ্র মর্দে মুমিন হযরতে হুসাইন রাঃ।
যদিও তার এ মতামতের সাথে তার নিকটতম ব্যক্তিবর্গের মাঝে অনেকেই বিরোধীতা করেছেন। যেমন ছোট ভাই মুহাম্মদ বিন আলী রাঃ, বোন জামাতা হযরত উবায়দুল্লাহ বিন যা’ফর রাঃ হুসাইন রাঃ এর অবস্থানের সাথে একমত ছিলেন না।
তাছাড়া মুয়াবিয়া রাঃ এর ইন্তেকালের পূর্বে তিনি যখন ইয়াযিদকে পরবর্তী খলীফা নির্বাচনের বাইয়াত গ্রহণ করছিলেন, তখন হযরত আব্দুল্লাহ বিন উমর রাঃ এবং হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাঃ বিরোধীতা করলেও ইয়াযিদ খলীফা হয়ে যাবার পর তারা তাকে খলীফা হিসেবে মেনে নেন। তার বিরোধীতা করাকে পছন্দ করতেন না।