প্রচ্ছদ / ইতিহাস ও ঐতিহ্য / ইসলামের ইতিহাস পাঠ [পর্ব-৯] খেলাফতে মুয়াবিয়া রাঃ ও পরবর্তী খলীফা নির্ধারণ

ইসলামের ইতিহাস পাঠ [পর্ব-৯] খেলাফতে মুয়াবিয়া রাঃ ও পরবর্তী খলীফা নির্ধারণ

আবূ মুয়াবিয়া লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

আগের লেখাটি পড়ে নিন- হযরত হাসান রাঃ এর খিলাফত

হযরত হাসান রাঃ এর ইন্তেকাল এবং শিয়া ষড়যন্ত্র

হযরত হাসান বিন আলী রাঃ এর ঐতিহাসিক সন্ধিচুক্তির পর ভরপুর শান্তি শৃংখলা ফিরে আসে। তিনি ও হযরত হুসাইন রাঃ হযরত মুয়াবিয়া রাঃ এর কাছ থেকে অনেক হাদিয়া তোহফা সন্তুষ্টচিত্তে গ্রহণ করেন।
অবশেষে ৪৯/৫০হিজরীতে মদীনা মুনাওয়ারায় ৫৭ বছর বয়সে হযরতে হাসান রাঃ ইন্তেকাল করেন। তার ইন্তেকালের মাধ্যমে খেলাফতে রাশেদা যুগের অবসান হয়। যিনি তাক্বওয়া পরহেযগারী, দ্বিনদারী, হিম্মত ও দুনিয়াবিমূখতার বেনজীর দৃষ্টান্ত ছিলেন।
হযরত আলী রাঃ এর ইন্তেকালের পর ইলমে, আমলে, বংশে সর্বদিক থেকে তিনি খিলাফতের উপযুক্ত হবার পরও, শুধুমাত্র মুসলমানদের পারস্পরিক বিভেদ দূর করে একতার জন্য নিজের খিলাফতের দাবী পরিত্যাগ করেন। মুসলমানদের মাঝে সৌহার্দ ও শান্তি ফিরিয়ে আনতে অনুপম আখলাকের পরিচয় দেন।
হযরত মুয়াবিয়া রাঃ এর সাথে সন্ধিচুক্তির মাধ্যমে মিল্লাতে ইসলামিয়া এক প্লাটফর্মে চলে আসে। সর্বত্র শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়। দিকদিগন্তে ইসলামের বিজয় পতাকা উড্ডিন কল্পে মুসলিম মুজাহিদ বাহিনী গমণ করতে থাকে।
ইসলামের এ সমৃদ্ধি দেখে ইসলামের দুশমনদের তর সইছিল না। নতুন ষড়যন্ত্রের ফাঁদ পাততে শুরু করে।
হযরত হাসান রাঃ এর ইন্তেকালের পর হযরত হুসাইন রাঃ কে খেলাফেতের দাবীতে মুয়াবিয়া রাঃ এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে সাবায়ীরা প্রলুব্ধ করতে থাকে। কিন্তু হযরত হুসাইন রাঃ তাদের ষড়যন্ত্রের জালে পা দেননি। তাদের এ ষড়যন্ত্র বুঝতে পেরে শক্তভাবে তা রদ করে দেন।

শিয়াদের গ্রহণযোগ্য গ্রন্থ ‘আলইরশাদ’ এর মাঝে এসেছেঃ

لما مات الحسن عليه السلام تحركت الشيعة بالعراق وكتبوا إلى الحسين عليه السلام فى خلع معاوية والبيعة له فامتنع عليهم وذكر أن بينه وبين معاوية عهدا وعقدا لا يجوز له نقضه حتى تمضى المدة (الإرشاد للمفيد-২০০، كشف الغمة-২/৪৩২)

যখন হযরত হাসান রাঃ এর ইন্তেকাল হয় তখন ইরাকের শিয়ারা নড়েচড়ে বসে। তারা হযরত হুসাইন রাঃ এর কাছে পত্র প্রেরণ করে হযরত মুয়াবিয়া রাঃ এর সাথে কৃত সন্ধি ভঙ্গ করার জন্য। কিন্তু হযরতে হুসাইন রাঃ তা থেকে বিরত থাকেন। বলে দেন যে, আমাদের এবং মুয়াবিয়ার মাঝে সন্ধিচুক্তি রয়েছে। নির্দিষ্ট সময়সীমার আগে তা ভেঙ্গে ফেলা আমাদের জন্য জায়েজ নয়। [আলইরশাদ, শিয়া শায়েখ মুফীদকৃত-২০০, কাশফুল গুম্মাহ, শিয়া শায়েখ ইরবিলীকৃত-২/৪৩২]

খেলাফতে আমীরে মুয়াবিয়া রাঃ

৪১ হিজরীর জমাদিউল উলায় হযরত আমীরে মুয়াবিয়া রাঃ হুকুমতের আসনে সমাসীন হন। হযরত হাসান রাঃ ও হযরতে হুসাইন রাঃ এর খিলাফতের দায়িত্ব হস্তান্তর ও সন্ধিচুক্তির মাধ্যমে ইসলামী রাষ্ট্রের এক নবযুগের সূচনা হয়। মুখলিস মুসলমানদের সকল দল রাজনৈতিকভাবে একতাবদ্ধ হয়ে যান।
অপরদিকে ইসলামের দুশমন শক্তি। যারা মুসলমানদের পারস্পরিক মতভেদ, গৃহযুদ্ধ দেখে খুশিতে আটখানা ছিল, তাদের ঘুম হারাম হয়ে যায়। ইসলামী রাষ্ট্রের রাজধানী সে সময় দামেশক হয়। এরপর থেকে প্রায় এক শতাব্দী পর্যন্ত খিলাফতের কেন্দ্রবিন্দু শামে থাকে। [তারীখে তাবারী-৫/৩২৪, ফাতহুল বারী-১৩/৬৩]

খিলাফতের দায়িত্বপ্রাপ্তির পর থেকে অত্যান্ত নিষ্ঠা ও যোগ্যতার সাথে আমীরে মুয়াবিয়া রাঃ তা পরিচালনা করেন।
শরয়ী হুকুম প্রতিষ্ঠা। আরব নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা। শান্তি, নিরাপত্তা এবং ন্যায়পরায়নতা প্রতিষ্ঠা। রাষ্ট্র পরিচালনায় নতুন ও উত্তম শৃংখলা আনয়ন। সেই সাথে অভ্যান্তরীণ অসন্তোষ ও বিদ্রোহ দমনে আন্তরিকতা, সহনশীলতার পাশাপাশি যুৎসহই পদক্ষেপ গ্রহণ। বাহ্যিক ও রাজনৈতিক একতাকে কাজে লাগিয়ে ইসলামের ঝাণ্ডা পৃথিবীর প্রান্তে প্রান্তে পৌছে দেবার মহান দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে আঞ্জাম দেয়া।
খুব অল্প সময়ের মাঝেই অত্যান্ত দক্ষতার সাথে তিনি রাষ্ট্রকে একটি সুবিন্যাস্ত ও সুশৃঙ্খল সালতানাতে পরিণত করেন।

বিজিত এলাকা

৪৪ হিজরীর দিকে পাকিস্তানের লাহোর পর্যন্ত ইসলামের বিজয় নিশান উড্ডিন হয়। [তারীখে খলীফা বিন খাইয়্যাত-২০৬] ৪৮ হিজরীতে বেলুচিস্তান বিজয় হয় মুয়াবিয়া রাঃ নিযুক্ত সেনাপতি সিনান বিন সালাবা রহঃ বিজয় করেন। [তারীখে খলীফা বিন খাইয়্যাত-২১২-২১৩, ফুতুহুল বুলদান-৪১৮] আফগানিস্তানের কাবুল, কান্দাহার, রাশিয়ার বুখারা, সমরকন্দ, তিরমিজ পর্যন্ত ইসলাম বিজয়ী বেশে প্রবেশ করে। [ফুতুহুল বুলদান, তারীখে খলীফা বিন খাইয়্যাত, তারীখে তাবারী, তবক্বাতে ইবনে সাদ] আফ্রিকা, রোমক সাম্রাজ্য পর্যন্ত ইসলামের বাণী পৌঁছে যায় মুয়াবিয়া রাঃ এর আমলে। বিজিত হয় সুদান, কনষ্টান্টিনোপল। [ফুতুহুল বুলদান, তবকাদে ইবনে সাদ, আলকামেল ফিততারীখ, আলবিদায়া ওয়াননিহায়া, তারীখে খলীফা বিন খাইয়্যাত, আলবয়ানুল মাগরিব, ফুতুহে মিসর ওয়ালমাগরিব]

৬৪ লাখ বর্গমাইলব্যাপী ইসলামী সালতানাতের সীমানা বৃদ্ধি পায়।

পরবর্তী খলীফা নির্ধারণ

হযরত উসমান রাঃ এর শহীদ হওয়া পরবর্তী সময় থেকে নিয়ে মুসলমানদের পরস্পরে বিবাদমান রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হযরত মুয়াবিয়া রাঃ এবং হযরত হাসান রাঃ এর সন্ধিচুক্তির মাধ্যমে সমাপ্য হয়।
এরপর থেকে ২০ বছর পর্যন্ত হযরত মুয়াবিয়া রাঃ এর অধীনে মিল্লাতে ইসলামিয়া একতাবদ্ধ থাকে। গৃহযুদ্ধের বদলে পারস্পরিক সৌহার্দ ও ভ্রাতৃত্ব বজায় থাকে।
মুয়াবিয়া রাঃ যখন বৃদ্ধ বয়সে উপনীত হলেন। তখন তিনি চিন্তা করলেন যে, তার মৃত্যুর পর না জানি পরবর্তী খলীফা নিযুক্তকরণ নিয়ে মুসলমানদের মাঝে আবার গৃহযুদ্ধ লেগে যায়। তাছাড়া বর্তমানে ইসলামী রাষ্ট্র বনী উমাইয়াদের অধীন। যদি পরবর্তী খলীফা ভিন্ন বংশ থেকে করা হয়, তাহলে একটি বড় অংশ বিরোধীতা করে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ বেঁধে যাবার সমূহ শংকা রয়েছে।

হযরত মুয়াবিয়া রাঃ এর এ শংকা পরবর্তীতে অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়িত হয়েছে। যখন হযরত আব্দুল্লাহ বিন যুবায়ের রাঃ যখন খলীফা হলেন। তখন সবাই মেনে নিলেও বনু উমাইয়ারা কেবল তাদের বংশীয় না হবার কারণে তার হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেনি।

তাই তিনি তার জীবদ্দশায় পরবর্তী খলীফা নির্ধারণ করাকে ইসলামী রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতার জন্য খুবই জরুরী বলে মনে করলেন। এক্ষেত্রে তার ইজতিহাদী ভুল ছিল এই যে, তিনি তার ছেলে ইয়াযিদকে পরবর্তী খলীফা নির্ধারণ করেছেন।
তার এ সিদ্ধান্ত বিষয়ে অনেক সাহাবা, তাবেয়ী ও উমরায়ে বনু উমাইয়াগণের সমর্থন ও পরামর্শ ছিল।

তার এ কাজটি পূর্ববর্তী খলীফায়ে রাশেদগণের মুখলিসানা পদ্ধতির খানিক বিপরীত ছিল। যদিও এক্ষেত্রে মুয়াবিয়া রাঃ এর নিয়ত ছিল পরিশুদ্ধ। উম্মতকে ফিতনা ও গৃহযুদ্ধ থেকে মুক্ত রাখাই ছিল প্রকৃত ইচ্ছা।

ইয়াযিদের মাঝে তখন এমন কোন কিছু প্রকাশিত ছিল না, যার ফলে মুয়াবিয়া রাঃ তাকে অযোগ্য হিসেবে মনে করবেন। বরং কনস্টান্টিনোপল অভিযানে নেতৃত্ব প্রদান ও আমীরে হজ্জ্বের দায়িত্ব পালন করে নিজের নেতৃত্ব যোগ্যতা তিনি প্রমাণ করেছিলেন।

একথা সত্য যে, হযরত হুসাইন রাঃ, হযরত আব্দুল্লাহ বিন যুবায়ের রাঃ, হযরত আব্দুল্লাহ বিন উমর রাঃ, হযরত আব্দুর রহমান বিন আবু বকর রাঃ গণের মত প্রথম সারীর যোগ্যতা সম্পন্ন সাহাবীদের জীবদ্দশায় ইয়াযিদের মত কম বয়সী এবং তাদের তুলনা তাক্বওয়া ও পরহেযগারীতে কম ব্যক্তিকে খলীফা নিযুক্তকরণ কতোটা সঠিক তা অবশ্যই আপত্তিযোগ্য।

সে সময় মক্কা মদীনায় হযরত হুসাইন রাঃ, হযরত আব্দুল্লাহ বিন যুবায়ের রাঃ, হযরত আব্দুল্লাহ বিন উমর রাঃ, হযরত আব্দুর রহমান বিন আবু বকর রাঃ, হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাঃ সহ আকাবির সাহাবাগণ ইয়াযিদকে পরবর্তী খলীফা নির্ধারণের বিরোধীতা করেন।

তাদের বক্তব্য ছিল এই ছিল যে, এভাবে নিজের সন্তানকে পরবর্তী খলীফা নির্ধারণ পূর্ববর্তী খলীফাগণের নীতি বিরোধী। এটা ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থায় রাজতন্ত্র প্রথার অনুপ্রবেশ।

ইয়াযিদ নেতৃত্ব দেবার যোগ্য ছিল না, কিংবা সে ফাসিক, মদখোর, পাপাচারী এমন অভিযোগ কেউ করেনি। বরং তার চেয়ে উত্তম ব্যক্তিরা তখনো জীবিত ছিলেন এবং এভাবে নির্ধারণটা পূর্ববর্তী কোন খলীফা করেননি সেটাই ছিল আপত্তির মূল বিষয়।
কিন্তু হযরত মুয়াবিয়া রাঃ মনে করতেন যে, যদি আসল মাকসাদ হয় শরীয়তে ইসলামিয়াকে প্রতিষ্ঠিত রাখা, তাহলে বংশীয় শাসনের সুযোগ ইসলামে রয়েছে। কারণ, কুরআন ও হাদীসের মাঝে এ বিষয়ক সুষ্পষ্ট কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। এছাড়া সুলাইমান আলাইহিস সালাম দাউদ আলাইহিস সালামের রাজত্বের ওয়ারিস হয়েছিলেন বিষয়টি এ বিষয়ে সুযোগ সৃষ্টি করে।

আল্লামা ইবনে খালদূন রহঃ মুয়াবিয়া রাঃ এর সিদ্ধান্তের বিষয়ে পর্যালোচনা করতে গিয়ে লিখেনঃ

والّذي دعا معاوية لإيثار ابنه يزيد بالعهد دون من سواه إنّما هو مراعاة المصلحة في اجتماع النّاس واتّفاق أهوائهم باتّفاق أهل الحلّ والعقد عليه حينئذ من بني أميّة إذ بنو أميّة يومئذ لا يرضون سواهم وهم عصابة قريش وأهل الملّة أجمع وأهل الغلب منهم فآثره بذلك دون غيره ممّن يظنّ أنّه أولى بها وعدل عن الفاضل إلى المفضول حرصا على الاتّفاق واجتماع الأهواء الّذي شأنه أهمّ عند الشّارع.

যে বিষয় হযরত মুয়াবিয়া রাঃ কে অন্যের তুলনায় নিজের ছেলে ইয়াযিদকে পরবর্তী খলীফা বানানোর প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছে তাহল, উম্মতের একতা ও ভ্রাতৃত্ব রক্ষা। বনু উমাইয়ার নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ এতে ঐক্যমত্ব ছিল। যেহেতু সেসময় বনু উমাইয়ারা তাদের ছাড়া অন্য কারো নেতৃত্ব মানতে নারাজ ছিল। তারা কুরাইশের সবচে’ শক্তিশালী গোত্র ছিল। উম্মত ছিল ঐক্যবদ্ধ এবং অধিকাংশই তাদের সাথে সম্পৃক্ত। এ কারণেই মুয়াবিয়া রাঃ ইয়াযিদকে প্রাধান্য দিয়েছেন, এবং তিনি উত্তম ব্যক্তিদের [আকাবির সাহাবাগণ] উপর তাদের চেয়ে নিম্ন স্তরের ব্যক্তির [ইয়াযিদ] দিকে ধাবিত হয়েছেন। এ কারণে ইয়াযিদকে প্রাধান্য দেননি যে, ইয়াযিদ আকাবির সাহাবাগণ থেকে উত্তম। যেমনটি কেউ কেউ ধারণা করে থাকেন। কারণ ছিল এটাই যে, যেন উম্মতের মাঝে একতা ও ভ্রাতৃত্ব অটুট থাকে। যা শরীয়তে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। [তারীখে ইবনে খালদূন, মুকাদ্দিমা-১/২৬৩]

পরবর্তী খলীফা ইয়াযিদকে ঘোষণা করার পরও হযরত আমীরে মুয়াবিয়া রাঃ জুমআর খুতবায় একদিন এভাবে দুআ করলেন-

عَنْ مُعَاوِيَةَ أَنَّهُ قَالَ يَوْمًا فِي خُطْبَتِهِ: اللَّهُمَّ إِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنِّي وَلَّيْتُهُ لِأَنَّهُ فِيمَا أَرَاهُ أَهْلٌ لِذَلِكَ فَأَتْمِمْ لَهُ مَا وَلَّيْتُهُ، وَإِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنِّي إِنَّمَا وَلَّيْتُهُ لِأَنِّي أُحِبُّهُ فَلَا تُتْمِمْ لَهُ مَا وَلَّيْتُهُ

হে আল্লাহ! যদি তুমি জানো যে, আমি ইয়াযিদকে এ পদের যোগ্য মনে করেই দায়িত্বভার দিয়েছি, তাহলে তুমি তা পরিপূর্ণ কর। আর যদি তুমি জানো যে, আমি তাকে মোহাব্বতের কারণে এ পদে অধিষ্ঠিত করেছি, তাহলে তুমি তা পূর্ণ হতে দিও না। [আলবিদায়া ওয়াননিহায়া-১১/৩০৮]

এ দুআ ইয়াযিদকে পরবর্তী খলীফা নির্ধারণ বিষয়ে মুয়াবিয়া রাঃ এর ইখলাস ও লিল্লাহিয়্যাতের প্রমাণবাহী।
এছাড়া তিনি ইয়াযিদকে মৃত্যুর পূর্বে অসিয়ত করেন যে,
১- আল্লাহকে ভয় পাবে। আমি তোমার জন্য খিলাফতকে নির্ধারণ করলাম। তোমাকে এর দায়িত্বভার দেয়া হল।
২- যদি ভালোভাবে থাকো, তাহলে এটা আমার জন্য সৌভাগ্য। আর যদি এমনটি না করো, তাহলে এটা তোমার পোড়া কপাল।
৩- লোকদের সাথে নম্র আচরণ করবে।
৪- তোমার ব্যাপারে কোন সমালোচনা ও নিন্দাবাদ শুনলে তা উপক্ষো করে চলবে।
৫- বড় ও অভিজাত ব্যক্তিদের সাথে কঠোরতা করবে না। তাদের সম্মানহানী থেকে নিজেকে দূরে রাখবে। তাদের নিজের নিকটস্থ রাখবে।
৬- যখনি কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আসবে, তখন মুরব্বী, অভিজ্ঞ, নেক ও পরহেযগার ব্যক্তিদের পরামর্শ নিবে। তাদের সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করবে না।
৭- নিজের সিদ্ধান্তে কখনো একগুঁয়েমী করবে না। কারণ, এক ব্রেইনে আসা বিষয় সঠিক হয় না।
৮- নিজের নফসের ইসলাহে সচেতন থাকবে। লোকেরাও তোমার সাথে ভালো ব্যবহার করবে।
৯- মানুষকে আপত্তি করার সুযোগই দিবে না। কারণ, মানুষ খারাপ বিষয় খুব দ্রুত ছড়ায়।
১০- জামাতে নামায পড়ার পাবন্দ থাকবে।
যদি এ নসিহতগুলোর উপর আমল কর, তাহলে লোকেরা তাদের উপর তোমার হক বুঝতে পারবে। সেই সাথে তোমার শাসন শক্তিশালী হবে। [আলবিদায়া ওয়াননিহায়া-১১/৬৪৪-৬৪৫]

হযরত মুয়াবিয়া রাঃ এর মৃত্যুর আগেই হযরত আয়শা রাঃ, হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ, হযরত আব্দুর রহমান বিন আবূ বকর রাঃ ইন্তেকাল করেন।

একজন খাঁটি মুমিনের মত মুয়াবিয়া রাঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আশেক ছিলেন। মৃত্যুর সময় পরিবারের সদস্যগণকে বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে একটি জামা পড়িয়েছিলেন। আমি তা সযত্নে রেখেছিলাম। একবার আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নখ কেটেছিলাম। তাও আমি একটি শিশিতে আবদ্ধ করে রেখে দিয়েছি। আমি মারা গেলে আমাকে উক্ত জামা দিয়ে কাফন দিও। আর ঐ কর্তিত নখগুচ্ছ পিশে আমার চোখ ও মুখে ছিটিয়ে দিও। আশা করি আল্লাহ তাআলা এর বরকতে আমার উপর রহম করবেন। [তারীখে উম্মতে মুসলিমা, মাওলানা ইসমাঈল রেহানকৃত-২/৪৩২]

খোদাভীতির অবস্থা এই ছিল যে, তিনি মৃত্যুর পূর্বে তার অর্ধেক সম্পদ বাইতুল মাল তথা সরকারী কোষাগারে জমা দিয়ে দেন। যদি অজান্তে বাইতুল মালের সম্পদে কোন কমবেশি হয়ে থাকে, তাহলে এর ক্ষতিপূরণ হয়ে যাবে। [তারীখে তাবারী-৫/৩২৭]

শেষ মুহুর্তে পরিবারের সদস্যদের বলেন, মহান আল্লাহকে সর্বদা ভয় পাবে। যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় পায়, আল্লাহ তাআলা তাকে হেফাযত করেন। আর যে আল্লাহকে ভয় পায় না, তাকে রক্ষা করার কেউ নেই। [তারীখে তাবারী-৫/৩২৭] এর কিছুক্ষণ পরেই তিনি রফীকে আ’লার ডাকে সাড়া দেন।

হযরত মুয়াবিয়া রাঃ বিশ বছর গভর্ণর এবং বিশ বছর খিলাফতের দায়িত্ব পালন করেন। বিশুদ্ধ বক্তব্য অনুপাতে ৬০ হিজরীর ৪ঠা রজব তিনি ইন্তেকাল করেন।

পরবর্তী লেখাটি পড়তে ক্লিক করুন

আরও জানুন

আখেরি চাহার শোম্বা কি উদযাপনের দিবস?

মাসিক আলকাউসার পত্রিকার ‘প্রচলিত ভুল’ থেকে সংগৃহিত সর্বপ্রথম একটি দৈনিক পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পেরেছি যে, …

2 comments

  1. মোঃরুহুল আমিন

    অনেকে বলে হযরত হাসান (রা)কে বিষপ্রয়োগে হত্যা করা হয়েছে কথা টা কতটুকু সঠিক?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আহলে হক্ব বাংলা মিডিয়া সার্ভিস