প্রচ্ছদ / ইসলাহী/আত্মশুদ্ধি / মুসা আলাইহিস সালামের বৃষ্টির দুআ এবং ৪০ বছরের গোনাহগারের তওবা সম্পর্কিত ঘটনা

মুসা আলাইহিস সালামের বৃষ্টির দুআ এবং ৪০ বছরের গোনাহগারের তওবা সম্পর্কিত ঘটনা

প্রশ্ন

আস্সালামুআলাইকুম

নাম- নূর ইসলাম

জেলা- নোয়াখালী

মুসা আ: এর এই ঘটনা টি কি সত্য ?

জাজাকাল্লাহ

তৎকালীন মিশরের জমিতে অনেক দিন বৃষ্টি নেই তীব্র খরা উত্তাপ রোদে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পরে।মিশরবাসী কোন উপায় না দেখে নবী মুসা আলাইহিসালাম এর নিকট আসলেন এবং বললেন হে আল্লাহর পয়গম্বর আপনি বৃষ্টির জন্য প্রতিপালকের নিকট দোয়া করেন না হলে তীব্র খরা অনাবৃষ্টিতে মানুষের পাশাপাশি গবাদিপশু গুলোও মারা যাবে।

মুসা নবী কান্নাকাটি করে আল্লাহর কাছে দোয়া করেন বলেন আল্লাহ মিশরের জমীনে অনেক দিন বৃষ্টি নেই তুমি বৃষ্টি দাও আল্লাহ তুমি বৃষ্টি দাও দয়া করো।

হঠাৎ__ ওহী নাজিল হলো…..
আল্লাহ বললেন হে মুসা বৃষ্টি হবে কিন্তু তোমার ঐ মজলিশে লোকেদের ভীড়ে একজন পাপিষ্ঠ জেনাকারি লোক আছে। তাকে মজলিশ থেকে বের করে দাও। যতক্ষন ঐ জেনাকারি মজলিশে অবস্থান করবে তোমার দোয়া কবুল হবেনা এবং বৃষ্টি হবেনা।

মুসা নবী রাগান্বিত হয়ে মজলিশের লোকদের উদ্দেশ্যতে বললেন কে আছো এখানে সেই পাপিষ্ঠ জেনাকারি? সে বের হয়ে যাও অবলিম্বে সে যতক্ষন এখানে অবস্থান করবে দোয়া কবুল হবেনা এবং বৃষ্টিপাত ও হবেনা।

মজলিশের মধ্য জিনাকারি ব্যাক্তি মনে মনে বললো আমি যে জেনা করেছি লোকেরা তা এখনি জেনে যাবে। সবাই আমাকে ছিঃ ছিঃ করবে ধিক্কার জানাবে। আবার অপরদিকে আমার জন্য এতগুলো মানুষ অনাবৃষ্টির ভুক্তভোগী হবে।

তখন জেনাকারি লোকটি মহান আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ জানালো হে আল্লাহ দয়ার মালিক আমি জেনাকারি পাপিষ্ঠ এই কথা আমার মা জানেনা বাবা জানেনা কেউ জানেনা তুমি এতদিন গোপন রেখেছো। আজকেও তুমি গোপন করে দাও।
আমি তওবা করছি খাটি দিলে তওবা করছি দয়ার
মালিক তুমি আমার ইজ্জত রক্ষা করো। আমাকে প্রকাশ্য এনোনা আমার পাপ গোপন রাখো। আমার তওবা কবুল করো।

হঠাৎ আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে গেলো এবং মুহুর্তের মধ্য বৃষ্টির ধারা শুরু হয়ে গেলো। হযরত মুসা আলাইহিসালাম বিস্মিত হয়ে গেলো। মুসা আলাইহিসালাম বললেন হে আল্লাহ তুমি বললে মজলিশে সেই পাপিষ্ঠ না বের হলে তুমি বৃষ্টি দেবেনা দোয়া কবুল করবেনা। তাহলে কি এমন হলো সেই পাপিষ্ঠ ব্যাক্তি অবস্থানরত থাকাকালীন তুমি বৃষ্টি দিলে?

মহান দয়াময় আল্লাহ বললেন হে মুসা নিশ্চয় আমি যা জানি তা তুমি জানোনা। যার কারনে বলেছি বৃষ্টি দেবোনা তার কারনেই বৃষ্টি দিলাম। এই বৃষ্টির উছিলায় সে তার স্বীয় পাপের জন্য ক্ষমা চেয়েছে তওবা করেছে। তাই আমি তার তওবা কবুল করে তার গুনাহ মাফ করে দিয়েছি।

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

ঘটনাটি শায়েখ হানিউল হাজ্জ সংকলিত ‘আলফু কিসসাতুন কিসসাতুন মিন কাসাসিস সালিহীনা ওয়াস সালিহাত’ গ্রন্থের ৪১০ নং পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে।

এছাড়া শায়েখ ইবনে কুদামা আলমাকদিসী রচিত ‘আততাওয়াবীন’ গ্রন্থের ৫৫ নং পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে।

তাছাড়া ‘কাইফা নুহিব্বুল্লাহ ওয়ানাশতাতু ইলাইহি-৪৭ পৃষ্ঠা, মুজাদ্দেদী হেলালীকৃত]

তবে ঘটনাটি যিনাকারী ব্যক্তির ক্ষেত্রে নয়, বরং ৪০ বছর পর্যন্ত সেজদা দেয় না এমন নাফরমান ব্যক্তি সম্পর্কে।

ঘটনাটির আরবী পাঠ

وروي أنه لحق بني إسرائيل قحط على عهد موسى – عليه السلام – فاجتمع الناس إليه فقالوا: يا كليم الله! ادع لنا ربك أن يسقينا الغيث فقام معهم وخرجوا إلى الصحراء وهم سبعون ألفا أو يزيدون فقال موسى – عليه السلام -: إلهي! اسقنا غيثك: وانشر علينا رحمتك وارحمنا بالأطفال الرضع والبهائم الرتع والمشايخ الركع فما زادت السماء إلا تقشعا والشمس إلا حرارة.

فقال موسى: إلهي إن كان قد خلق جاهي عندك فبجاه النبي الأمي محمد صلى الله عليه وسلم الذي تبعثه في آخر الزمان! فأوحى الله إليه: ما خلق جاهك عندي وإنك عندي وجيه ولكن فيكم عبد يبارزني منذ أربعين سنة بالمعاصي فناد في الناس حتى يخرج من بين أظهركم فبه منعتكم.

فقال: موسى: إلهي وسيدي! أنا عبد ضعيف وصوتي ضعيف فأين يبلغ وهم سبعون ألفا أو يزيدون؟ فأوحى الله إليه: منك النداء ومني البلاغ.

فقام مناديا وقال: يا أيها العبد العاصي الذي يبارز الله منذ أربعين سنة! اخرج من بين أظهرنا فبك منعنا المطر.

فقام العبد العاصي فنظر ذات اليمين وذات الشمال فلم ير أحدا خرج فعلم أنه المطلوب فقال في نفسه: إن أنا خرجت من بين هذا الخلق افتضحت على رؤوس بني إسرائيل وإن قعدت معهم منعوا لأجلي فأدخل رأسه في ثيابه نادما على فعاله وقال: إلهي وسيدي! عصيتك أربعين سنة وأمهلتني وقد أتيتك طائعا فاقبلني فلم يستتم الكلام حتى ارتفعت سحابة بيضاء فأمطرت كأفواه القرب.

فقال موسى: إلهي وسيدي! بماذا سقيتنا وما خرج من بين أظهرنا أحد؟ فقال: يا موسى! سقيتكم بالذي به منعتكم.

এটি একটি ইসরাঈলী রেওয়ায়েত। ইসরাঈলী রেওয়ায়েত এর ক্ষেত্রে মূলনীতি হল, যদি তা আমাদের আকীদা বিশ্বাস ও শরীয়ত বিরোধী না হয়, তাহলে তা বর্ণনা করাতে কোন সমস্যা নেই।

وَحَدِّثُوا عَنْ بَنِي إِسْرَائِيلَ وَلاَ حَرَجَ،

বনী ইসরাইল থেকে বর্ণনা করাতে কোন সমস্যা নেই। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৩৪৬১]

ঘটনাটি যেহেতু তওবার প্রতি উৎসাহমূলক। তাই উপমা হিসেবে বর্ণনা করা যেতে পারে। তবে বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত ঘটনাবলী বর্ণনা করাই অধিক নিরাপদ।

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক ও প্রধান মুফতী-তা’লীমুল ইসলাম ইনস্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

ইমেইল– ahlehaqmedia2014@gmail.com

আরও জানুন

তালাকের সন্দেহের দ্বারা কি কোন তালাক পতিত হয়?

প্রশ্ন ‘তালাক’ শব্দটি বলেছে কি না- ভাবনার সময় ‘তালাক দিলাম’  উচ্চারণে কি তালাক হয়? আসসালামু …

Leave a Reply

Your email address will not be published.

আহলে হক্ব বাংলা মিডিয়া সার্ভিস