লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
- আসসালামু আলাইকুম।
- ওয়াআলাইকুম আসসালাম ওয়ারাহমাতুল্লাহ।
- লুৎফুর রহমান ফরায়েজী সাহেব বলছেন?
- হু। বলেন।
- হুজুরের কী সময় আছে? কয়েক মিনিট কথা ছিল।
- বলেন।
- চার মাযহাবই যদি হক হয়, তাহলে যারা কোন মাযহাবই মানে না, তাদের হুকুম কী? তারা কি পথভ্রষ্ট?
- আপনি আমাকে আগে বলেন, চার মাযহাব হক বলতে আপনি কি বুঝেন?
- এটাতো আপনারা বলেন, সুতরাং এটার জবাব দেয়া আপনাদের দায়িত্ব।
- প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন করার জন্য ন্যুনতম জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। আপনি যখন জানতে পারবেন যে, মাযহাব কী? চার মাযহাবের হক হবার অর্থ কী? তখন আপনি প্রশ্ন করতে পারেন যে, চার মাযহাবের বাহিরে যারা আছে, তাদের হুকুম কী? কিন্তু আপনি প্রাথমিক জ্ঞান অর্জন ছাড়াই বিষয়ভিত্তিক দ্বিতীয় স্তরের প্রশ্ন করে বসবেন তাতো হয় না। আপনি আমাকে চার মাযহাবের একটি উদাহরণ দিন।
- উদাহরণতো অনেক। যেমন আমীন জোরে ও আস্তে বলা। আমীন জোরে বলা এক মাযহাব আর আস্তে বলা আরেক মাযহাব।
- এইতো বুঝে গেছেন। তাহলে আমরা বুঝলাম যে, আমীন বলার মাসআলায় মাযহাব হল, দু’টি। যথা আস্তে বলা ও জোরে বলা। হাদীসে দুই ধরণের কথাই আসছে। সেই হিসেবে মাযহাবও হয়েছে দু’টি। তৃতীয় কোন মত হাদীসে নেই।
এবার আপনি যদি বলেন, মাযহাবের বাইরে একটি মতবাদ প্রতিষ্ঠা করবেন। তাহলে উক্ত মাসআলায় আরেকটি মত থাকতে হবে, সেটি কী হবে?
নিশ্চয় আপনাকে বলতে হবে যে, আমীন বলাই যাবে না। এটা হবে মাযহাবের বাইরের মত। এছাড়া আস্তে বলার কথা বলুন, বা জোরে বলার কথাই বলুন আপনি মাযহাবের ভিতরেই রয়ে গেলেন। মাযহাবের বাইরে যেতে পারেন নি।
যদি আপনি মাযহাবের বাইরে মত প্রকাশ করেন, তাহলে আপনার হুকুম কী হবে আপনিই বলুনতো। আপনি কি হাদীস ও সুন্নাহ বিরোধী হয়ে যাবেন না? কারণ, তখন আপনাকে বলতে হবে যে, আমীন বলাই যাবে না। আর এ বক্তব্যতো হাদীস বিরোধী বক্তব্য। এর মানে মতভেদপূর্ণ মাসআলায় মাযহাবের বিরোধী বক্তব্য দেয়া বা মাযহাবের বাইরে যাওয়অ মানেই হল, হাদীসের দুশমন ও নবীর সুন্নাতের দুশমন হওয়া।
এটা চোখে আঙ্গুল দিয়ে বুঝানোর জন্য আপনাকে প্রথমে মাযহাবের উদাহরণ দিতে বললাম।
আপনাকে একজন শিখিয়েছে এভাবে কথাগুলো বলার জন্য। তাই আপনি না বুঝে মাযহাবের বাইরের লোকদের হুকুম জানতে প্রশ্ন করেছেন লা মাযহাবীদের মত। আসলে মাযহাবতো মতভেদপূর্ণ হাদীসের মতভেদপূর্ণ আমলের নাম। এর মানে প্রতিটি মাযহাবই হাদীস নির্ভর। মাযহাবের বাইরে যাবার কোন সুযোগই নেই। গেলে সুন্নাহ বিরোধী হওয়া ছাড়া গত্যান্তর নেই।
- হ্যা, হুজুর। ঠিকই বলেছেন। আমাকে এভাবে একজন বুঝিয়েছে। আমার মাথাটাই নষ্ট করে দিয়েছে। আমি বুঝার জন্যই আপনার কাছে প্রশ্ন করেছি।
আচ্ছা, যদি কোন একজন ইমামের মাযহাব মানতেই হয়, তাহলে কুরআন ও হাদীস আর পড়ে লাভ কী? আমারতো মাযহাবই মানতে হয়।
- এই দেখেন, কত বড় মারাত্মক কথা বলে ফেললেন। আপনার অজ্ঞতার কারণে। ঐসব লোকেরা আপনার মাথায় এ ভয়ানক কথাটা ঢুকিয়ে দিয়েছে।
আচ্ছা, আমাকে বলেনতো, কুরআনে বর্ণিত বিধান সংখ্যা কত? অনেক মতভেদ আছে। তবে অধিকাংশের মত হল, দুইশত। তাহলে বিধান আছে মাত্র দুইশত। আর কুরআনের আয়াত সংখ্যা কত? ছয় হাজার দুইশত ছত্রিশটি। যদি ধরেও নেই যে, এই দুইশত বিধানের মাঝেই মতভেদ আছে, তাহলেও বাকি রইল পুরো ছয় হাজার ছত্রিশটি আয়াত। এখন দুইশত আয়াতের কারণে ‘পুরো কুরআন পড়ারই কোন দরকার নেই’ বলাটা কত বড় মারাত্মক কথা একবার ভেবেছেন?
কিন্তু সত্য কথা হল, কুরআনের বিধানগুলো নিয়ে মৌলিক কোন মতভেদই নেই। তারপরও কয়েকটি মাসআলায় মতভেদ থাকার কারণে একথা বলা যে, মাসআলায় কারো মত মানতে হলে, কুরআনই পড়ার দরকার নেই, বলাটা কি পরিমাণ ভয়ানক ও কুফরী টাইপের কথা। একবার ভাবা যায়?
দ্বিতীয়ত দেখুন হাদীসের দিকে। বুখারী থেকে নিয়ে যেকোন হাদীসের কিতাবের দিকে তাকান। দেখুন,নামাযের হাতেগোণা কয়েকটি মাসআলায় এবং বিবাহ ও তালাকের দুই একটি মাসআলায় মতভেদ আছে। বাকি সব মাসআলায় চার মাযহাবের আমল একই।
দেখুন দুই রাকাত নামাযের মাসআলায় কত যায়গায় মতভেদ? খুঁজে দেখবেন চার পাঁচটি। বাকি সব মাসআলায় সকলেই একমত। এছাড়া বাকি যেসব অধ্যায় রয়েছে হাদীসে বর্ণিত সেসব বিষয়ে কোন মতভেদই নেই।
এখন এ অল্প কয়েকটি মাসআলার মতভেদের কারণে একথা বলা যে, ‘হাদীসের মাঝে মতভেদ আছে, আর মতভেদের মাসআলায় ইমামের কথা মানতে যেহেতু হবেই, তাই হাদীস পড়ারই কোন দরকার নেই’। এটা কী পরিমাণ বিভ্রান্তিকর ও জঘন্য কথা একবার ভাববেন কি?
- হ্যাঁ, হুজুর ঠিকই বলেছেন। আমি আসলে ওদের কথায় বিভ্রান্ত হয়ে গিয়েছিলাম। আমার মাথাটা ওরা নষ্ট করে দিয়েছে।
- এবারতো বুঝলেন যে, ওরা আসলে হাকীকত বুঝে না। না বুঝেই বা ইচ্ছেকৃত আপনাদের মত সরল মানুষদের এভাবে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা করে।
- আমি বুঝছি। আমি আসলে অনেক বিভ্রান্ত হয়ে গেছিলাম। তা’ই বুঝার জন্য আপনার নাম্বার সংগ্রহ করে ফোন দিয়েছি।
- যা’ই হোক, আজকে এতটুকু বুঝলেন যে, ওরা আসলে সত্য গোপন করে। অর্ধেক কথা বলে। হকের আড়ালে প্রতারণা করে বেড়ায়। তাই সাবধান থাকতে হবে। ওদের কথায় বিভ্রান্ত হওয়া যাবে না। প্রয়োজন হলে বিজ্ঞ আলেম উলামাগণের সাথে যোগাযোগ করবেন। ঠিক আছে? ভাল থাকুন।
ঈষৎ সংক্ষেপিত
বিকাল ২টা
২৬/১১/২০১৯ ঈসাব্দ