প্রচ্ছদ / জায়েজ নাজায়েজ / জশনে জুলুস বিদআত হলে বার্ষিক মাহফিল বিদআত নয় কেন?

জশনে জুলুস বিদআত হলে বার্ষিক মাহফিল বিদআত নয় কেন?

প্রশ্ন

আসসালামুআলাইকুম কিছু কথার জবাব দিন।

  1. নিয়মিত নির্দিষ্ট তারিখ

যেমন: প্রতি বছর একই তারিখে “বার্ষিক মাহফিল”।

  1. সওয়াবের দাওয়াত আলেম/আয়োজক বলেন এই মাহফিলে অংশ নিলে অনেক ফজিলত / আল্লাহর রহমত নাজিল হয়।

এটা কী  ইবাদতের অংশ না?

  1. তরীকাহ বানিয়ে ফেলা

নির্দিষ্ট কাঠামো: কুরআন খতম, নাত, খুতবা, শেষ দোয়া এগুলো নির্দিষ্ট ফরম্যাটে হয়। ধীরে ধীরে এটা শরীয়তের বাইরে নতুন রীতি (বিদআত) হয়ে যায়না????????

মিলাদ উদযাপনকারীরা যেমন নবীর জন্মদিনকে নির্দিষ্ট দিনে ঈদ বানায়, বিদআত বিরোধী মাহফিলকারীরাও আবার নিজের আয়োজনকে বাৎসরিক, নির্ধারিত, ইবাদতসদৃশ বানিয়ে ফেলেন।

তাহলে দুই ক্ষেত্রেই মিল পাওয়া যায় উভয়েই নতুন একটি শরীয়তি কাঠামো বানাচ্ছে, যা রাসূল সা: সাহাবারা করেননি।

আর কিছু প্রশ্ন আল্লাহকে স্বাক্ষী রেখে বলেন আপনারা এমন কাজ কী করেননা? যে যুক্তিতে জুলুস বিদআত সেইম যুক্তিতে আপনাদের কাজ গুলাও বেদআত হবে না???

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله  وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

কোন কাজ বিদআত হওয়া ও না হওয়ার সুক্ষ পার্থক্যটি আপনি ধরতে পারেননি। তাই আপনার মনে এমন প্রশ্নের উদয় হয়েছে।

যে কাজ বা আমলের ভিত্তি কুরআন বা হাদীসে বিদ্যমান আছে, সেটি আদায়ের নির্ধারিত পদ্ধতি যদি কুরআন বা হাদীসে নির্ধারিত না থাকে, তাহলে তা আদায়ের সুবিধার্তে কোন পদ্ধতি আবিস্কার, এবং সেটিকে খোদ সওয়াবের কাজ মনে না করলে সেই পদ্ধতিটি বিদআত হয় না।

যেমন দ্বীন শিক্ষা করা এটি কুরআন ও হাদীস দ্বারা প্রমাণিত সওয়াবের কাজ।

এটা শিখার জন্য একাডেমিক পদ্ধতি আবিস্কার, যে পদ্ধতিটিকে সওয়াবের কাজ মনে না করায় তা বিদআত হয় না।

একথা কেউ বলে না যে, শ্রেণিভিত্তিক দ্বীন শিক্ষা করা বিশেষ সওয়াবের কাজ।

যদি কেউ এমন বলে, তাহলে এটি বিদআত হয়ে যাবে। এটাকে দ্বীন পালনের জন্য নবউদ্ভাবন বলে, দ্বীনের মধ্যে নতুন উদ্ভাবন বলে না।

মানুষকে দ্বীনের কথা বলা সওয়াবের কাজ। আল্লাহর জিকিরের মজলিসে রহমাত নাজিল হওয়ার কথা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।

কুরআন তিলাওয়াত সওয়াবের কাজ। সম্মিলিত মুনাজাত করলে তা কবুল হয় মর্মে সহীহ হাদীসে পাওয়া যায়।

তো এইসব কুরআন ও হাদীসে প্রমাণিত সওয়াবের কাজগুলো আদায়ের সুবিধার্তে যেন মানুষ তাতে অংশ নিতে পারে, এর জন্য একটি সময় নির্ধারণ করে দেয়াকে যদি আলাদা সওয়াবের কাজ মনে করা না হয়, তাহলে সেটি বিদআতের আওতাধীন হবে না।

যেমন হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ রাঃ প্রতি বৃহস্পতিবার ওয়াজ করতেন মর্মে বিশুদ্ধ হাদীসে পাওয়া যায়।

সুতরাং প্রমাণিত কোন সওয়াবের কাজে মানুষের অংশগ্রহণের সুবিধার্তে তারিখ নির্ধারণ বিদআতের অন্তর্ভূক্ত নয়।

কারণ এ সময়টার আলাদা কোন ফযীলত বা বিশেষত্ব মনে করা হয় না।

বরং আরেকটি সওয়াবের কাজ আদায়ের সুবিধার্তে উদ্ভাবন মাত্র।

তবে যদি কেউ বলে যে, এ সময়টায় বয়ান করা, ওয়াজ করা, কোন অনুষ্ঠানের পর সম্মিলিত দুআ করা বিশেষ সওয়াবের কাজ, তাহলে এটি বিদআত হবে।

অথচ এমনতো কেউ মনে করে না। তাই এসব বিদআত হয় না।

কিন্তু নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্মে খুশি হয়ে জুলুস করার কোন প্রমাণ কুরআন ও হাদীসে এবং সাহাবায়ে কেরামগণ রাঃ এর আমলে বিদ্যমান নেই।

তাই এটি ভিত্তিহীন আমল হওয়ায়, সেইসাথে এটাকে সওয়াবের কাজ মনে করে করায় এটি নিকৃষ্ট বিদআত হিসেবে পরিগণিত হয়েছে।

আশা করি সুক্ষ পার্থক্যটি বুঝতে পেরেছেন।

عن عائشة رضى الله عنها قالت: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: من أحدث فى أمرنا ما ليس منه فهو رد (مسند احمد-6/241، رقم-26561، صحيح مسلم-2/77، رقم-1718)

عن ابی وائل قال کان عبد ﷲ یذکر الناس فی کل خمیس فقال له رجل یا اباعبد ﷲ لوددت انک لو ذکرتنا کل یوم قال اما انه یمنعنی من ذلک انی اکره ان املکم وانی اتخولکم بالموعظة کما کان النبی ﷺ یتخولنا بها مخافة السامة علینا (صحيح البخارى، رقم-70)

عَنِ الْأَغَرِّ أَبِي مُسْلِمٍ، أَنَّهُ قَالَ: أَشْهَدُ عَلَى أَبِي هُرَيْرَةَ وَأَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ أَنَّهُمَا شَهِدَا عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ قَالَ لَا يَقْعُدُ قَوْمٌ يَذْكُرُونَ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ إِلَّا حَفَّتْهُمُ الْمَلَائِكَةُ، وَغَشِيَتْهُمُ الرَّحْمَةُ، وَنَزَلَتْ عَلَيْهِمِ السَّكِينَةُ، وَذَكَرَهُمُ اللهُ فِيمَنْ عِنْدَهُ (صحيح مسلم، رقم-2700، مسند احمد، رقم-11875)

عَنْ حَبِيبِ بْنِ مَسْلَمَةَ الْفِهْرِيِّ – وَكَانَ مُسْتَجَابًا -: أَنَّهُ أُمِّرَ عَلَى جَيْشٍ فَدَرِبَ الدُّرُوبِ، فَلَمَّا لَقِيَ الْعَدُوَّ قَالَ لِلنَّاسِ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – يَقُولُ: لَا يَجْتَمِعُ مَلَأٌ فَيَدْعُو بَعْضُهُمْ وَيُؤَمِّنُ سَائِرُهُمْ، إِلَّا أَجَابَهُمُ اللَّهُ.

ثُمَّ إِنَّهُ حَمِدَ اللَّهَ، وَأَثْنَى عَلَيْهِ، وَقَالَ: اللَّهُمَّ احْقِنْ دِمَاءَنَا، وَاجْعَلْ أُجُورَنَا أُجُورَ الشُّهَدَاءِ، (مجمع الزوائد، رقم-17347، مستدرك على الصحيحين، رقم-5478، المعجم الكبير للطبرانى، رقم-3536)

ومن جملة ما أحدثوه من البدع مع اعتقادهم أن ذلك من أكبر العبادات وإظهار الشرائع ما يفعلونه فى شهر ربيع الأول من المولد وقد احتوى على بدع ومحرمات (المدخل-2/2)

لا بأس بالجلوس للوعظ إذا أراد به وجه الله تعالى (الفتاوى الهندية-5/319، جديد-5/368)

والاحتفال بذكر الولادة الشريفة إن كان خاليا من البدعات المروجة فهو جائز بل مندوب كسائر أذكاره صلى الله عليه وسلم (امداد الفتاوى، زكريا-6/327)

ان هذه التعینات لاتعد بدعة والبدعة عندی ما لاتکون مستندة الی الشرع و تکون ملتبسة بالدین (فيض البارى-1/170)

البدعة: بالكسر في اللغة ما كان مخترعا على غير مثال سابق، ومنه بديع السماوات والأرض أي موجدها على غير مثال سبق. قال الشافعي رحمه الله تعالى: ما أحدث وخالف كتابا أو سنة أو إجماعا أو أثرا فهو البدعة الضالة، وما أحدث من الخير ولم يخالف شيئا من ذلك فهو البدعة المحمودة. والحاصل أن البدعة الحسنة هي ما وافق شيئا مما مر، ولم يلزم من فعله محذور شرعي، وأن البدعة السيئة هي ما خالف شيئا من ذلك صريحا أو التزاما۔۔۔وفي الشرع ما أحدث على خلاف أمر الشارع ودليله الخاص أو العام۔۔۔وفي شرح النخبة وشرحه: البدعة شرعا هي اعتقاد ما أحدث على خلاف المعروف عن النبي صلى الله عليه وسلم لا بمعاندة، بل بنوع شبهة. وفي إشارة إلى أنه لا يكون له أصل في الشرع أيضا، بل مجرد إحداث بلا مناسبة شرعية أخذا من قوله صلى الله عليه وسلم «من أحدث في أمرنا هذا ما ليس منه فهو رد»۔۔وقد فصل الشيخ عبد الحق الدهلوي في شرح المشكاة في باب الاعتصام بالكتاب والسنة فقال: اعلم بأن كل ما ظهر بعد النبي صلى الله عليه وسلم فهو بدعة. وكل ما وافق الأصول والقواعد أو القياس فتلك البدعة الحسنة. وما لم يوافق ذلك فهو البدعة السيئة والضلالة. ومفتاح «كل بدعة ضلالة» محمول على هذا (کشاف اصطلاحات الفنون و العلوم-1/313)

والله اعلم بالصواب

উত্তর লিখনে

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তা’লীমুল ইসলাম ইনস্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া ইসলামিয়া দারুল হক লালবাগ ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা: জামিয়াতুস সুন্নাহ কামরাঙ্গিরচর, ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা: কাসিমুল উলুম আলইসলামিয়া, সালেহপুর আমীনবাজার ঢাকা।

পরিচালক: শুকুন্দী ঝালখালী তা’লীমুস সুন্নাহ দারুল উলুম মাদরাসা, মনোহরদী নরসিংদী।

শাইখুল হাদীস: জামিয়া ইসলামিয়া আরাবিয়া, সনমানিয়া, কাপাসিয়া, গাজীপুর।

ইমেইল[email protected]

0Shares

আরও জানুন

সহবাসে অক্ষম এমন মেয়েকে বিবাহ করা যাবে?

প্রশ্ন আমি একজন মেয়েকে বিবাহ করব কিন্তু ইতিমধ্যে জানতে পারি যে, সে সহবাসে আজিবনের জিন্য …

আহলে হক্ব বাংলা মিডিয়া সার্ভিস