আবূ মুয়াবিয়া লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
আগের লেখাটি পড়ে নিন– হযরত আলী রাঃ এর শাহাদত
হযরত আলী রাঃ এর শাহাদতের পর কুফার শিয়ানে আলীরা হযরত হাসান রাঃ কে খলীফা হিসেবে নিযুক্ত করে। মৃত্যুর পূর্বে হযরত আলী রাঃ এ বিষয়ে হ্যাঁ, বা না কিছুই বলে যাননি। যা হযরত হাসান রাঃ এর খলীফা হবার প্রতি তার সন্তুষ্টির দিকেই ইংগিতবহ ছিল।
হযরত হাসান রাঃ খিলাফতের দায়িত্ব গ্রহণের পর শিয়ারা হযরত হাসান রাঃ কে হযরত মুয়াবিয়া রাঃ এর সাথে সর্বাত্মক যুদ্ধের জন্য প্রলুব্ধ করতে থাকে। শিয়াদের প্রসিদ্ধ আলেম আবুল হাসান আলী বিন ঈসা বিন আবুল ফাতাহ ইরবিলীর লেখা ‘কাশফুল গুম্মাহ ফী মা’রিফাতিল আয়িম্মাহ’ গ্রন্থে এসেছেঃ
ثم خفوا ومعه أخلاط من الناس بعضهم من شيعته وشيعة أبيه عليه السلام وبعضهم محكمة يؤثرون قتال معاوية بكل حيلة (كشف الغمة فى معرفة الأئمة-2/338)
অবশেষে তারা কিছুটা স্তিমিত হয়। তাদের সাথে ছিল নানা মতবাদের লোকজন। কতিপয় ছিল তার এবং তার বাবার শিয়া। কতিপয় ছিল খারেজী। তারা যেকোন মূল্যে মুয়াবিয়ার সাথে যুদ্ধে করতে প্ররোচিত করছিল। [কাশফুল গুম্মাহ ফী মা’রিফাতিল আয়িম্মাহ-২/৩৩৮]
হযরত হাসান রাঃ যুদ্ধে জড়ানোর এতোটাই বিরোধী ছিলেন যে, তার নিযুক্ত আযরাবাইজানের গভর্ণর কায়স বিন সাদ মুয়াবিয়া রাঃ এর সাথে যুদ্ধে জন্য পীড়াপীড়ি করলে তিনি তাকে গভর্ণরী পদ থেকে বরখাস্ত করে উবায়দুল্লাহ বিন আব্বাস রাঃ কে গভর্ণর নিযুক্ত করেন। [আলবিদায়া ওয়াননিহায়া-৮/৩৯, তারীখে তাবারী উর্দু-৪/২৩]
কিন্তু সমঝদার ও দ্বীনের একনিষ্ট অনুসারী হযরত হাসান রাঃ তাদের এ ষড়যন্ত্রের জালে পা দেননি। তিনি বুঝে যান যে, এ সমস্ত নামধারী শিয়ারা প্রতারক ও ধোঁকাবাজ। এরা মুসলমানদের একতা চায় না। চায় বিভেদ ও বিচ্ছেদ। যাতে করে মুসলমানদের শক্তি সামর্থ দুর্বল থেকে দুর্বল হয়ে যায়। তিনি তার পিতা হযরত আলী রাঃ কেও বারবার মুয়াবিয়া রাঃ এর সাথে সন্ধি করতে অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু সাবায়ী চক্রের আধিক্যের কারণে হযরত আলী রাঃ তা কার্যকর করতে সক্ষম ছিলেন না। [দ্রষ্টব্য, তারীখে ইবনুল আসীর-৩/১০৪, আলবিদায়া ওয়াননিহায়া-৭/২৫০]
কিন্তু তাদের পীড়াপীড়িতে হযরত হাসান রাঃ তার সেনাবাহিনী ও শিয়াদের ডেকে যুদ্ধ বিষয়ে পরামর্শ চাইলেন। মুয়াবিয়া রাঃ এর বিষয়ে কী করা যায়? তখন তারা সকলেই যুদ্ধ করার পরামর্শ দিল। এবং হযরত আমরণ হযরত হাসান রাঃ এর সাথে থাকার সংকল্প প্রকাশ করল।
অবশেষে তিনি বাধ্য হয়ে সেনাবাহিনী নিয়ে সিরিয়া অভিমুখে রওনা হন। মাদায়েনের উপকণ্ঠে সৈন্যদলসহ অবস্থান নেন। তখন হঠাৎ করে হাসান রাঃ এর সেনাপ্রধান কায়স বিন সাদ রাঃ নিহত হয়েছেন মর্মে গুজব ছড়িয়ে পড়ল। এ গুজব ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথেই শিয়ানে হাসানের প্রকৃত মুখোশ খুলে গেল। যারা আমৃত্যু হযরত হাসান রাঃ এর সাথে থাকার শপথ করেছিল তারা হযরত হাসান রাঃ কে রেখে পালাতে শুরু করল। শুধু পালানোই নয়, বরং তারা ব্যাপক লুটপাট করে একে অন্যের মাল ছিনিয়ে নিতে লাগল। এমনকি তারা হযরত হাসান রাঃ এর তাঁবুর সরঞ্জামাদিও খুলে নিতে লাগল। তিনি যে বিছানায় বসেছিলেন সেটি নেবার জন্যও টানাটানি শুরু করেছিল। হযরত হাসান রাঃ কে সওয়ারীতে আরোহী অবস্থায় বর্শার আঘাত করে আহত করল। [আলবিদায়া ওয়াননিহায়া-৮/১৪, বাংলা সংস্করণ-৮/৪০, তারীখে তাবারী-৫/১৫৯, উর্দু সংস্করণ-৪র্থ খ-, ১ম অংশ, পৃষ্ঠা-২৪]
হযরত হাসান রাঃ এর আর বুঝতে বাকী রইল না যে, শিয়ারা মুখে মুখে আমাদের বন্ধু হবার ভান করলেও এরা সবাই ইসলাম ও মুসলমানদের দুশমন। তাই এদের কথা মানা ও তাদেরকে সঙ্গী বানানো যেমন নিজের জন্য ক্ষতিকর, তেমনি মুসলমানদের একতা ভ্রাতৃত্বের জন্য এরা হুমকি। চরম স্বার্থপর ও প্রতারক এরা।
সুতরাং মুয়াবিয়া রাঃ এর সাথে সন্ধিচুক্তিই একমাত্র সমাধান। মুসলমানদের একতা ও ভ্রাতৃত্বই পারে এসব কুচক্রীদের ষড়যন্ত্র রুখে দিতে।
তাই তিনি দৃৃঢ় সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলেন যে, মুয়াবিয়া রাঃ এর সাথে সন্ধিতে আবদ্ধ হবেন। সিদ্ধান্ত যখন শিয়াদের সামনে পেশ করলেন, তখন তারা যারপরনাই আশ্চর্য হল, এবং চরম বিরোধীতা করল। শিয়াদের গ্রহণযোগ্য গ্রন্থে এ বিষয়ে কী লিখা হয়েছে, তা একটু দেখে নেইঃ-
فقالوا: والله يريد ان يصالح معاوية ويسلم الأمر إليه كفر والله الرجل كما كفر أبوه، فانتهبوا فسطاطه حتى أخذوا مصلاه من تحته، ونزع مطرفه عبد الرحمن بن جعال الأزدى وطعنه جراح بن سنان الأسدى فى فخذه (مناقب آل ابى طالب-4/38)
(যখন শিয়ানে আলীরা একথা জানতে পারল যে, হযরত হাসান রাঃ মুয়াবিয়া রাঃ এর সাথে সন্ধি করতে চাচ্ছেন তখন) তারা বলতে লাগল, আল্লাহর কসম! হাসান রাঃ মুয়াবিয়া রাঃ এর সাথে সন্ধি করতে চাচ্ছেন এবং আমীরত্ব তার কাছে হস্তান্তর করতে চাচ্ছেন। আল্লাহর কসম! তিনিতো তার বাবার মতই কুফরী করছেন। একথা বলে তারা হযরত হাসান রাঃ এর তাঁবুতে হামলে পড়ে। তার নিচ থেকে জায়নামায টেনে নিয়ে যায়। আব্দুর রহমান বিন জাআল তার কাঁধ থেকে চাদর নিয়ে যায়। আর যাররাহ বিন সিনান তার রানের উপর বর্শার আঘাত দিয়ে তাকে আহত করে ফেলে। [মানাকিবে আলে আবী তালেব, শিয়া লেখক আবূ যাফর মুহাম্মদ বিন আলীকৃত-৪/৩৮, কাশফুল গুম্মাহ ফী মা’রিফাতিল আয়িম্মাহ, শিয়া আবুল হাসান আলী বিন ঈসা বিন আবিল ফাতাহ ইরবিলীকৃত-২/৩৩৯]
প্রসিদ্ধ শিয়া ঐতিহাসিক মাসঈদী লিখেছেনঃ
يا أهل الكوفة، لو لم تذهل نفسى عنكم إلا لثلاث خصال لذهلت: مقتلكم لأبى، وسلبكم ثقلى، وطعنكم فى بطنى، وإنى قد بايعت معاوية، فاسمعوا له وأطيعوا (مروج الذهب ومعادن الجوهر للمسعودى-3/9)
[হযরত হাসান রাঃ তার শিয়াদের রেখে হযরতে মুয়াবিয়া রাঃ এর সাথে সন্ধি করে তার বাইয়াত গ্রহণের কারণ সম্পর্কে বলছেন] হে কুফাবাসী! তোমাদের তিনটি ব্যবহারের কারণে আমার মন তোমাদের থেকে উঠে গেছে। একটি হল, তোমরা আমার বাবাকে হত্যা করেছো, আমার সম্পদ লুণ্ঠন করেছো, আমার পেটে বর্শা মেরে আমাকে আহত করেছো। নিশ্চয় আমি মুয়াবিয়ার হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেছি, সুতরাং তোমরা তার কথা শোন এবং তার আনুগত্ব কর। [মুরাওয়াজুয যাহাব, শিয়া ঐতিহাসিক মাসঈদীকৃত-৩/৯, এছাড়া দ্রষ্টব্য-তারীখে তাবারী-৫/১৫৯, উর্দু সংস্করণ-৪খ-, প্রথমাংশ, পৃষ্ঠা-২৪]সম্মানিত পাঠক/পাঠিকাগণ! একটু ভাবুন! হযরত আমীরে মুয়াবিয়া রাঃ এর সাথে সন্ধিচুক্তি ও তার বাইয়াত গ্রহণের কারণেহ হযরত হাসান রাঃ এর উপর আক্রমণ করা হল। তাকে গালাগাল করা হল। কাফের বলা হল। এমনকি হযরত আলী রাঃ কেউ কাফের বলা হল। হযরত হাসান রাঃ এর গায়ের চাদর ছিনিয়ে নেয়া হল। তার জায়নামায টেনে নিয়ে গেল। হযরত হাসান রাঃ কে বর্শার আঘাতে রক্তাক্ত করা হল।
প্রশ্ন হল, এই কমবখত লোকগুলো কারা? তারা নিজেদের কী বলে পরিচয় দিতো? নিজেদের কী নামে ডাকতো?
এর ফায়সালা আমি আপনি বা অন্য কোন ঐতিহাসিক করার বদলে আমরা দেখি হযরত হাসান রাঃ তাদের ব্যাপারে কী মন্তব্য করেছেন?
শিয়া মতবাদের গ্রহণযোগ্য কিতাব ইহতিজাযে তাবরিসীর একটি ইবারত দেখে নেইঃ-
أرى والله أن معاوية خير لى من هؤلاء يزعمون أنهم لى شيعة، ابتغوا قتلى وانتهبوا ثقلى، وأخذوا مالى، والله لئن آخذ من معاوية عهدا احقن به دمى، وأومن به فى أهلى، خير من أن يقتلنى فتضيع أهل بيتى وأهلى، والله لو قاتلت معاوية لأخذوا بعنقى حتى يدفعونى إليه سلما (الاحتجاج للطبرسى-2/9)
আল্লাহর কসম! আমি মনে করি যে, মুয়াবিয়া আমার কাছে ঐ লোকদের চেয়ে উত্তম যারা নিজেদের বিষয়ে দাবী করে যে, তারা আমার শিয়া। এই শিয়ারাই আমাকে হত্যা করতে চেয়েছে, আমার সম্পদ ছিনিয়ে নিয়েছে এবং আমার মাল লুণ্ঠন করেছে। আল্লাহর কসম! যদি আমি মুয়াবিয়ার সাথে সন্ধি করি, তাহলে এর দ্বারা আমার প্রাণ রক্ষা পাবে, এবং আমার পরিবার নিরাপদ হবে। তাহলে এটিতো এর চেয়ে উত্তম যে, শিয়ারা আমাকে হত্যা করবে এবং এর ফলে আমার পরিবার ও সংসার ধ্বংস হবে। আল্লাহর শপথ! যদি আমি মুয়াবিয়ার সাথে যুদ্ধ করি, তাহলে এ শিয়ারাই আমাকে ঘাড় ধরে মুয়াবিয়ার কাছে সোপর্দ করবে। [আলইহতিযায, আবূ মানসূর আহমাদ বিন আলী বিন আবী তালিব তাবরিসীকৃত-২/৯]
হযরত হাসান রাঃ এর উপরোক্ত বক্তব্যটি আবার পড়ুন। ভাবুন। কী বলছেন হযরতে হাসান রাঃ। নিজেদের শিয়া দাবী করা লোকগুলো বিশ্বস্ত না গাদ্দার? শিয়া মতবাদের দ্বিতীয় ইমাম হযরত হাসান রাঃ কসম করে বলছেন এসব শিয়াদের তুলনায় হযরতে মুয়াবিয়া রাঃ অনেক উত্তম। এরকম সঙ্গীন মুহুর্তেও হযরতে মুয়াবিয়া রাঃ তার সহযোগিতায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তার জন্য নিরাপদ আশ্রয়। হযরতে হাসান রাঃ এর সাথে সন্ধি করতে হযরতে মুয়াবিয়া রাঃ ইচ্ছা প্রকাশ করে চিঠি লিখেছেন।
শুধু তা’ই নয়, হযরত হাসান রাঃ এমন কথাও জানতে পারেন যে, এসব শিয়া নামধারী গাদ্দারগুলো গোপনে হযরত মুয়াবিয়া রাঃ এর কাছে পত্রের মাধ্যমে জানায় যে, তিনি যেন তারাতারি হামলা করেন। তিনি হামলা করলে এরা হযরত হাসান রাঃ কে বন্দি করে তার হাতে হস্তান্তর করবে। [কাশফুল গুম্মাহ ফী মা’রিফাতিল আয়িম্মাহ-২/৩৩৯]
হযরত মুয়াবিয়া রাঃ সাদা কাগজে সাইন করে হযরত হাসান রাঃ এর কাছে পত্র প্রেরণ করেন। যাতে তিনি স্পষ্ট করেই লিখেন যে, হযরত হাসান রাঃ যে কোন শর্ত ইচ্ছে লিখে দিতে পারেন, সকল শর্ত মেনেই সন্ধি করতে প্রস্তুত আছেন মুয়াবিয়া রাঃ। [তারীখে ইবনে খালদুন আরবী-২/৬৪৮, উর্দু সংস্করণ-১ম খ-, প্রথমাংশ-৪৪১, তারীখে তাবারী, আরবী-৫/১২৬, উর্দু এডিশন, ৪র্থ খ-, প্রথমাংশ, পৃষ্ঠা-২৬]
শিয়াদের নিকট গ্রহণযোগ্য ও তাদের লিখিত কিতাবে এসেছে যে, হযরত মুয়াবিয়া রাঃ সন্ধি করার জন্য যে পত্র প্রেরণ করেন, তার সাথে হযরত হাসান রাঃ এর শিয়া দাবীকারী ব্যক্তিদের গাদ্দারীর একটি প্রমাণপত্র প্রেরণ করেন। যা হাসান রাঃ এর শিয়ারা মুয়াবিয়া রাঃ এর কাছে প্রেরণ করেছিল। যাতে লেখা ছিল যে, মুয়াবিয়া রাঃ যদি হাসান রাঃ এর সাথে যুদ্ধ করেন, তাহলে এসব শিয়ারা হযরত হাসান রাঃ কে তার হাতে সোপর্দ করে দিবে। [কাশফুল গুম্মাহ-২/৩৪০]
অবশেষে ইসলামের বৃহত্তর স্বার্থে হযরত হাসান রাঃ বিশাল হৃদয়ের পরিচয় দিয়ে ৫ বছরের দীর্ঘ মতভেদকে মিটিয়ে ইসলামী রাষ্ট্রকে একতার প্লাটফর্মে আনার লক্ষ্যে সন্ধির পথকে বেছে নেন। মাত্র ছয় মাসের খিলাফত শেষে হযরত হাসান রাঃ খিলাফতের দায়িত্ব মুয়াবিয়া রাঃ এর কাছে হস্তান্তর করে ৪১ হিজরীর রবিউল আওয়াল মাসে। নামকাওয়াস্তে কতিপয় শর্ত দিয়ে বাইয়াত গ্রহণ করে নেন।
অবশেষে হযরত কায়স বিন সাদ এবং ইবনে আব্বাস রাঃ এর সকল শর্ত মুয়াবিয়া রাঃ মেনে নেন। ফলে তারাও বাইয়াত গ্রহণ করলে আমীরে মুয়াবিয়া রাঃ এর খিলাফত বিষয়ে সকলের ঐক্যমত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। এ কারণেই এ বছরকে ঐক্যের বছর হিসেবে অভিহিত করা হয়। [তারীখে তাবারী, আরবী-৫/১৬৪, , উর্দু, ২য় খ-, প্রথমাংশ, ২৭-২৮ পৃষ্ঠা, আলবিদায়া ওয়াননিহায়া-৮/১৫, বাংলা সংস্করণ-৮/৪১, তারীখে ইবনে খালদুন, আরবী-২/৬৫০, উর্দু সংস্করণ-২/৪৪২, কাশফুল গুম্মাহ-২/৩৪১]
এরপর থেকে মুসলমানদের পুরানো ঐতিহ্য আবার ফিরে আসে। ৫ বছর যাবত ইসলামের যে বিজয় অভিযান থমকে ছিল তা আবার নতুন করে শুরু হয়। পৃথিবীর প্রান্তে প্রান্তে ইসলাম পৌছে দেবার মিশন আবার পুরোদমে চলতে থাকে।
এখানে শিয়াদের কাছে গ্রহণযোগ্য কিতাবের উদ্ধৃতি পেশ করা জরুরী মনে করছি। যাতে করে উক্ত সন্ধির সৌন্দর্য, তাৎপর্য ও গুরুত্ব এবং হাকীকত সম্পর্কে ধারণা পরিস্কার হয়।
শিয়াদের কাছে গ্রহণযোগ্য কিতাব রিজালকাশীতে উক্ত ঘটনার বিবরণ নিম্নোক্ত শব্দে উদ্ধৃত হয়েছেঃ-
سمعت ابا عبد الله يقول: إن معاوية كتب إلى الحسن بن على عليهما السلام أن أقدم انت والحسين وأصحاب على، فخرج معهم قيس بن سعد الأنصارى، وقدموا الشام، فاذن لهم معاوية واعد لهم الخطباء، فقال: يا حسن قم فبايع، فقام فبايع، ثم قال للحسين عليه السلام: قم فبايع، فقام فبايع، ثم قال قم يا قيس فبايع، فالتفت إلى الحسين عليه السلام ينظر ما يأمره، فقال: يا قيس إنه امامى- يعنى الحسن عليه السلام (اختيار معرفة الرجال، المعروف رجال الكشى-2/104)
হযরত যাফর সাদেক রহঃ বলেন, হযরত মুয়াবিয়া রাঃ হযরত হাসান রাঃ এর কাছে পত্র লিখলেন। যেন তিনি এবং তার ভাই হযরত হুসাইন রাঃ এবং হযরত আলী রাঃ এর সমর্থকদের নিয়ে আমার এখানে তাশরীফ আনুন। হযরত হাসান রাঃ যখন তাদের নিয়ে রওনা হলেন তখন তাদের সাথে কায়স বিন সাদ আনসারী রাঃ ও ছিলেন। যখন তারা শামে আসলেন তখন তাদেরকে ভিতরে আসার অনুমতি প্রদান করলেন এবং তাদের জন্য বক্তা নিযুক্ত করলেন। তারপর হযরত হাসান রাঃ কে উদ্দেশ্য করে বললেন, হে হাসান রাঃ উঠুন এবং বাইয়াত গ্রহণ করুন। তখন হযরত হাসান রাঃ উঠলেন এবং বাইয়াত গ্রহণ করলেন। তারপর হযরত হুসাইন রাঃ কে বললেন, উঠুন এবং বাইয়াত গ্রহণ করুন। তারপর তিনিও উঠলেন এবং বাইয়াত গ্রহণ করলেন। তারপর কায়েসকে বললেন, আপনি উঠুন এবং বাইয়াত গ্রহণ করুন। তখন হযরত কায়েস রাঃ অনুমতির জন্য হযরত হুসাইন রাঃ এর দিকে তাকালেন। তখন হযরত হুসাইন জবাবে বললেন, হে কায়েস! তিনিতো আমাদের ইমাম। (সুতরাং বাইয়াত নিতে সমস্যা কোথায়?) [রিজালকাশী-১০৪]
এখানে রিজালকাশী প্রণেতা শিয়া হবার কারণে একটু চালাকীর আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি হযরত হুসাইন রাঃ এর কথা যে, “হে কায়েস! তিনি আমাদের ইমাম” বাক্যটি যেহেতু পরিস্কারভাবে হযরত মুয়াবিয়া রাঃ কেই বুঝাচ্ছে। তাই ধোঁকার আশ্রয় নিয়ে একটু শব্দ বাড়িয়ে দিয়েছেন, সেটি হল, ইমাম বলতে উদ্দেশ্য হলেন হযরত হাসান রাঃ। অথচ আগের বক্তব্য এবং আরবী ইবারতটি স্পষ্টই বুঝাচ্ছে যে, এখানে হযরত হুসাইন রাঃ ‘ইমাম’ বলে হযরত মুয়াবিয়া রাঃ কেই বুঝাচ্ছেন।
বাইয়াত হয়ে যাবার পর কিছু বদবখত ব্যক্তিরা হযরত হাসান রাঃ কে ভর্ৎসনা করে। তখন তাদেরকে উদ্দেশ্য করে হযরত হাসান রাঃ বলেনঃ-
শিয়াদের প্রসিদ্ধ আলেম তাবরিসী তার গ্রন্থে লিখেন-
ويحكم ما تدرون ما عملت، والله للذى عملت لشيعتى خير مما طلعت عليه الشمس أو غربت، ألا تعلمون أنى إمامكم، ومفترض الطاعة عليكم (الاحتجاج للطبرسى-2/8
তোমরা ধ্বংস হও, তোমরা জানো না আমি কী করেছি? আল্লাহর কসম! আমি এমনটি করেছি আমার অনুসারীদের জন্যই। এটা [আমার বাইয়াত গ্রহণ] তাদের জন্য দুনিয়ার মাঝে সবচে’ উত্তম কাজ। তোমরা কি জানো না যে, আমি তোমাদের ইমাম। আর আমার অনুসরণ করা তোমাদের উপর ফরজ? [আলইহতিজাজ, তাবরিসীকৃত-২/৮]
আমাদের প্রশ্ন হল, শিয়াদের নিকট মাসূম দুইজন ইমাম যেখানে মুয়াবিয়া রাঃ এর খিলাফতকে মেনে নিয়েছেন। নিজেদের ইমাম ঘোষণা করেছেন। তাকে শিয়াদের চেয়ে উত্তম হিসেবে ঘোষণা করেছেন। সেখানে শিয়ারা কেন হযরত মুয়াবিয়া রাঃ এর খিলাফতকে মেনে নিচ্ছে না? কেন তাকে ইমাম হিসেবে স্বীকৃতি দিচ্ছে না? অথচ শিয়াদের মতে তাদের ইমামগণ মাসূম। তারা কোন ভুল করেন না। তাহলে হযরত মুয়াবিয়া রাঃ এর খিলাফত মেনে নেয়ার ক্ষেত্রেওতো তারা কোন ভুল করেননি তাদের আকীদা অনুপাতে। তারপরও কেন মুয়াবিয়া রাঃ এর খিলাফতের বিরোধীতা করে বেড়ায় শিয়ার দল?
যদি হযরত মুয়াবিয়া রাঃ ফাসিক-কাফের হয়ে থাকেন [নাউজুবিল্লাহ], তাহলে তার ইমামত গ্রহণ করার মাধ্যমে তার আনুগত্বের বাইয়াত গ্রহণের হযরত হাসান ও হুসাইন রাঃ ওতো একই অপরাধে অপরাধী হয়ে যাবেন। তাহলে কোথায় দাঁড়াল শিয়াদের আকীদা বিশ্বাস? কোথায় গেল তাদের ইমাম মাসূম ও আল্লাহর পক্ষ থেকে মনোনীত হবার আকীদা? তাদের কি সামান্যতম লজ্জাবোধ হয় না তাদের ইমামদের মান্যবর ইমামকে ভর্ৎসনা ও লানত করতে? আল্লাহ তাআলা হিফাযত করুন।