প্রশ্ন
আমাদের দেশের আহলে হাদীস ভাইয়েরা প্রচার করছে যে, হেদায়া, কুদুরী, কানযুদ দাকায়েক ও আদদুররুল মুখতার গ্রন্থাদী ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর ফিক্বহ নয়। কারণ এসব ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর মৃত্যুর অনেক পরে লেখা হয়েছে। অথচ ইমাম আবু হানীফা রহঃ পর্যন্ত এর কোন সনদ উক্ত কিতাবসমূহে উল্লেখ নেই। যেহেতু সনদ বিদ্যমান নেই। তাই এসব কিতাবে বর্ণিত মাসআলা ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর বর্ণিত মাসআলা নয়।
এ অভিযোগের কি জবাব হতে পারে? জানালে উপকৃত হতাম।
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
তাদেরকে জিজ্ঞাসা করুন-
কুরআনে কারীমের প্রতিটি আয়াতের কি সনদ আছে রাসূল সাঃ পর্যন্ত?
গায়রে মুকাল্লিদ নিশ্চয় তখন বলবেঃ- নেই।
আবার প্রশ্ন করুন- তাহলে কি নাউজুবিল্লাহ কুরআন রাসূল সাঃ এর উপর নাজিলকৃত কুরআন নয়?
গায়রে মুকাল্লিদ নিশ্চয় বলবেঃ- অবশ্যই রাসূল সাঃ এর উপর নাজিলকৃত কুরআন।
পাল্টা প্রশ্ন করুনঃ- তাহলে সনদ কোথায়? সনদ ছাড়া কথা কি করে মানা যায় যে এটি রাসূল সাঃ এর উপরই নাজিল হয়েছিল?
গায়রে মুকাল্লিদটি মাথায় যদি ঘিলু থাকে আর ইলমের সামান্য হলেও ছোঁয়া থাকে তাহলে বলবেঃ- আসলে বর্তমানে বিদ্যমান কুরআন যে রাসূল সাঃ এর উপর নাজিলকৃত কুরআনই তা মুতাওয়াতিসূত্রে বর্ণিত। তথা উম্মতের নিরবচ্ছিন্ন মতৈক্যে এটি প্রমাণিত। এ ব্যাপারে কেউ কোন দিন প্রশ্ন উত্থাপন করেনি। কিছু বিভ্রান্ত শিয়া এবং নাস্তিক ইসলাম বিদ্বেষী ছাড়া। যে বিষয় মুতাওয়াতির সূত্রে বর্ণিত হয়, সে বিষয়ের সনদের দিকে তাকানোর কোন প্রয়োজন নেই। সনদ ছাড়াই উক্ত বিষয়টি গ্রহণযোগ্য হয়ে থাকে। যেমন পবিত্র কুরআন যে রাসূল সাঃ এর উপর নাজিলকৃত কুরআন। তা মুতাওয়াতির সূত্রে প্রমানিত। তাই এ ব্যাপারে প্রশ্ন উত্থাপিত করা বা এর সনদ চাওয়া আহমকী ছাড়া কিছু নয়।
আপনি তখন তার কথার সাথে আরেকটু সংযোজন করে দিনঃ- আচ্ছা তাই নাকি? তাহলে আমি আরেকটু সংযোজন করি। বিখ্যাত হাদীস বিশারদ হযরত ইবনে হাজার আসকালানী রহঃ তার সুবিখ্যাত উসূলে হাদীসের হাদীসের কিতাব “শরহু নুখবাতিল ফিকার” এ উল্লেখ করেছেনঃ-
والمتواتر لا يبحث عن رجاله، بل يجب العمل به من غير بحث
মুতাওয়াতির এর রিজাল তথা রাবী নিয়ে আলোচনা হয় না। বরং আলোচনা ও সমালোচনা ছাড়াই এর উপর আমল করা আবশ্যক। {শরহু নুখবাতিল ফিকার}
সুতরাং কুরআন যেহেতু মুতাওয়াতির। তাই এর সনদ খোঁজা সত্যিই আহমকী। বরং সনদ তালাশ করা ছাড়াই এটি রাসূল সাঃ এর উপর নাজিলকৃত ঐশী কুরআন বিশ্বাস করা আবশ্যক।
ঠিক তেমনি হেদায়া, কুদরী, শরহে বেকায়া, কানযুদ দাকায়েক, তুহফাতুল ফুক্বাহা, আদদরুরুল মুখতার, বিদায়াতুল মুজতাহিদ, আলকাফীসহ যেসব গ্রন্থ ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর দিকে নিসবত করা গ্রন্থাদী যা মুতাওয়াতির হিসেবে চলে আসছে। সেগুলোরও ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর পর্যন্ত সনদ তালাশ করা আহমকী বৈ কিছু নয়। কারণ মুতাওয়াতির বিষয়ের সনদ তালাশ করার প্রয়োজন নেই। বরং তা মুতাওয়াতির হওয়াই এটির নিসবত সঠিক হওয়ার দলীল।
উপরোক্ত কিতাবাদী যে, ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর ফিক্বহের আলোকে লেখা তা সর্বজন বিদিত। হাজার বছর ধরে ফক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুসলিম উম্মাহের কাছে স্বীকৃত উলামা-মাশায়েখ, আইয়িম্মায়ে দ্বীন, ও বিদগ্ধ পন্ডিতগণ নিঃসংকোচে স্বীকার করে আসছেন। শুধু তাই নয়, হাজার বছর ধরে অধিকাংশ উম্মতে মুসলিমা ফিক্বহে হানাফী বিশ্বাস করেই এসব কিতাবের উপর নিরবচ্ছিন্ন আমল জারি রেখেছেন। সেখানে অধুনা কিছু অর্বাচিন ব্যক্তিদের সন্দেহ প্রকাশ এ মুতাওয়াতির বিষয়ের ক্ষেত্রে সনদ তালাশ করার মানসিকতা ফিতনা সৃষ্টি বৈ কিছু নয়। সেই সাথে মুতাওয়াতিরের হুকুমের ক্ষেত্রে অজ্ঞতা ছাড়া আর কিছু নয়।
আল্লাহ তাআলা এ ফিতনাবাজ গোষ্টি থেকে মুসলিম জাতিকে হিফাযত করুন।
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।