প্রচ্ছদ / ভ্রান্ত মতবাদ / হেযবুত তাওহীদের ভ্রান্ত মতবাদ (১৫)

হেযবুত তাওহীদের ভ্রান্ত মতবাদ (১৫)

বিশ্বনবী ﷺ কে ‘রহমাতুল্লিল আ’লামীন’ বলা যাবে না

হেযবুত তাওহীদের বক্তব্যঃ 

বিশ্বনবীর উপর আল্লাহর দায়িত্বকে যারা মাঝপথে স্তব্ধ করে দিয়েছিলেন,তারা আল্লাহর দেয়া বিশ্বনবীর উপাধি ‘রাহমাতুল্লিল আলামিন’ কেও পূর্ণ হতে দেন নি,অর্থাৎ তিনি এখনও রাহমাতুল্লিল আলামিন হন নি।ব্যাখ্যা করছি- রাহমাতুল্লিল আলামিন শব্দের অর্থ হল (পৃথিবীর) জাতি সমূহের উপর আল্লাহর রহমত।এখন প্রশ্ন হচ্ছে আজ পৃথিবীর দিকে চেয়ে দেখুন দেখি ।কোথায় সে রহমত? পৃথিবীর সর্বত্র অশান্তি, হাহাকার,অন্যায় ,অবিচার, যুদ্ধ, রক্তপাত,বুক ভাংগা দুঃখ ।(মো’মেন মুসলিম ও উম্মতে মোহাম্মদীর আকিদা-১৯, লিখক-বায়েজিদ খান পন্নী)

তাহলে তিনি কেমন করে পৃথিবীর জন্য রহমত?এর জবাব হচ্ছে এই যে ,আল্লাহ তাকে যে জীবনব্যবস্থা ,দীন দিয়ে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন সেই দীন মানবজাতির উপর সমষ্টিগতভাবে প্রয়োগ ও প্রতিষ্ঠা করলে যে শান্তি, সুবিচার, নিরাপত্তা মানুষের জীবনে নেমে আসবে সেটা হল আল্লাহর রহমত,তাঁর দয়া।কারণ তিনি ঐ জীবনব্যবস্থা না দিলে মানুষ কখনই তা নিজেরা তৈরি করে নিতে পারত না।যদি করত তবে তা সীমাহীন অশান্তি আর রক্তপাত ডেকে আনত,যেমন আজ করছে।সেই জীবনব্যবস্থা,দীন,সংবিধান তিনি যার মাধ্যমে মানুষকে দিলেন তাঁকে তিনি উপাধি দিলেন রাহমাতুল্লিল আলামিন।কিন্তু যতদিন না সমগ্র মানব জাতি নিজেদের তৈরি জীবনব্যবস্থা পরিত্যাগ করে মোহাম্মদের মাধ্যমে প্রেরিত আল্লাহর দেয়া জীবনব্যবস্থা গ্রহন ও প্রয়োগ করবে ততদিন তারা সেই অশান্তি,অন্যায় (ফাসাদ) ও যুদ্ধ, রক্তপাতের মধ্যে ডুবে থাকবে,আজকের মত ততদিন বিশ্বনবীর ঐ উপাধি অর্থবহ হবে না,অর্থপূর্ণ হবে না এবং আজও হয়নি।(মো’মেন মুসলিম ও উম্মতে মোহাম্মদীর আকিদা-২০)

পর্যালোচনাঃ

পবিত্র কুরআন মাজীদে আল্লহ ﷻ বলেনঃ

وَ مَاۤ اَرۡسَلۡنٰکَ اِلَّا رَحۡمَۃً لِّلۡعٰلَمِیۡنَ

আমি আপনাকে বিশ্ববাসীর জন্যে রহমত স্বরূপই প্রেরণ করেছি।(সূরা আম্বিয়া-১০৭)

উক্ত আয়াতে আল্লাহ ﷻ বিশ্বনবী ﷺ কে স্পষ্টভাবে ‘রহমাতুল্লিল আ’লামীন’ ঘোষণা দেয়ার পরও পন্নী সাহেব তা মানতে নারাজ।তার মতে এই উপাধি কার্যকর হওয়ার শর্ত হল সমগ্র পৃথিবীতে দ্বীন প্রতিষ্ঠিত হতে হবে।এর স্বপক্ষে তিনি যে যুক্তি পেশ করেছেন তা সম্পূর্ণই তার মনগড়া যুক্তি ।এর স্বপক্ষে তিনি কুরআন হাদীস থেকে কোন দলিল পেশ করেন নি।

প্রকৃতপক্ষে এর অর্থ হল, যে ব্যক্তি বিশ্বনবী ﷺ এর রিসালতের উপর ঈমান আনবে সে আসলে উক্ত করুণা ও রহমতকে গ্রহণ করবে। পরিণামে দুনিয়া ও আখিরাতে সে সুখ ও শান্তি লাভ করবে। আর যেহেতু বিশ্বনবী ﷺ এর রিসালাত বিশ্বজগতের জন্য, সেহেতু তিনি বিশ্বজগতের রহমত রূপে; অর্থাৎ নিজের শিক্ষা দ্বারা বিশ্ববাসীকে ইহ-পরকালের সুখের সন্ধান দিতে প্রেরিত হয়েছিলেন। কিছু উলামা তাঁকে এই অর্থেও বিশ্বজগতের জন্য করুণা বলেছেন যে, তাঁর কারণেই এই উম্মত (তাঁর দাওয়াত গ্রহণ অথবা বর্জনকারী মুসলিম অথবা কাফের সকলেই) নির্মূলকারী ব্যাপক ধ্বংসের হাত হতে রেহাই পেয়েছে। যেভাবে পূর্ববর্তী বহু জাতিকে নিশ্চিহ্ন করা হয়েছে, উম্মাতে মুহাম্মাদিয়াকে ঐ রকম আযাব দিয়ে ধ্বংস করে নির্মূল করা হয়নি।

পন্নী সাহেবের মতে যতদিন পর্যন্ত সমগ্র পৃথিবীতে দ্বীন কায়েম না হচ্ছে ততদিন পর্যন্ত বিশ্বনবী ﷺ কে ‘রহমাতুল্লিল আ’লামীন’ বলা যাবে না।অথচ হাদীসের মধ্যে আমরা এর বিপরীত বক্তব্য দেখতে পাই।

স্বয়ং রাসূল ﷺ এর বক্তব্য লক্ষ্য করুনঃ

সালমান রাঃ বলেন,হে হুজায়ফা রাঃ!একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁর ভাষণে বলেছিলেনঃ

 أَيُّمَا رَجُلٍ مِنْ أُمَّتِي سَبَبْتُهُ سَبَّةً، أَوْ لَعَنْتُهُ لَعْنَةً فِي غَضَبِي، فَإِنَّمَا أَنَا مِنْ وَلَدِ آدَمَ أَغْضَبُ كَمَا يَغْضَبُونَ، وَإِنَّمَا بَعَثَنِي رَحْمَةً لِلْعَالَمِينَ، فَاجْعَلْهَا عَلَيْهِمْ صَلَاةً يَوْمَ الْقِيَامَةِ

ক্রোধের সময় যদি আমি কাউকও ভাল- মন্দ কিছু বলি বা লা’নত করি তাহলে জেনে রেখ যে আদম সন্তান হিসেবে আমিও তোমাদের মতো অসন্তুষ্ট হয়ে থাকি। তবে হ্যাঁ, যেহেতু আল্লহ ﷻ আমাকে সৃষ্টিকূলের জন্য রহমাতুল্লিল আ’লামীন করে পাঠিয়েছেন সেহেতু আমার প্রর্থনা এই যে আল্লহ যেন কিয়ামাতের দিন আমার এই শব্দগুলোকেও তাদের জন্য রহমতে পরিবর্তন করে দেন।(সুনান আবূ দাউদ- ৪৬৫৯)

বিজ্ঞ পাঠক!
এই হাদীসে রাসূলুল্লাহ ﷺ অন্যের জন্য মাগফিরাত কামনার মাধ্যমে নিজের ‘রহমাতুল্লিল আ’লামীন’ গুণের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন ।পন্নী সাহেবের উল্লেখিত শর্ত এখানে কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে নি।

অপর হাদীসে এসেছে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেনঃ

‘‘আমি রহমতের মূর্তপ্রতীক হয়ে আল্লাহর পক্ষ হতে বিশ্বজগতের জন্য একটি উপহার।’’ (সহীহুল জামে-২৩৪৫)

এ হাদীসেও বিশ্বনবী ﷺ নিজের ক্ষেত্রে ‘রহমাতুল্লিল আ’লামীন’ উপাধি ব্যবহার করেছেন ।অথচ একথা সকলেরই জানা যে তখনও গোটা পৃথিবীতে দ্বীন কায়েম হয় নি।তাহলে তিনি ﷺ কেন নিজের ক্ষেত্রে এ উপাধি ব্যবহার করলেন?

এ থেকেই প্রমাণ হয় যে পন্নী সাহেবের প্রয়োগকৃত শর্ত তার নিজের থেকে তৈরিকৃত।

সূরা আম্বিয়া-১০৭ নং আয়াতের তাফসীরে ইবনে আব্বাস রাঃ হতে বর্ণিত আছে,মুমিনদের জন্য তো তিনি ﷺ দুনিয়া ও আখিরাতের রহমতস্বরুপ ছিলেন।কিন্তু যারা মুমিন নয় তাদের জন্য তিনি ﷺ শুধু দুনিয়ার জন্যই রহমত স্বরূপ ছিলেন।তারা তাঁরই বদৌলতে ভূমিকম্প হওয়া থেকে,আকাশ থেকে পাথর বর্ষন হওয়া থেকে রক্ষা পেয়ে যায় যা পূর্ববর্তী অবাধ্য উম্মতের জন্য শাস্তিস্বরূপ এসেছিল।(তাবারী-১৮/৫৫২)

প্রিয় পাঠক!
আশাকরি আমার সাথে সকলেই একমত হবেন যে কুরআন বুঝার ক্ষেত্রে সাহাবী ইবনে আব্বাস রাঃ হতে পন্নীসাহেব কোনভাবেই অগ্রগামী নন।ইবনে আব্বাস রাঃ ‘রহমাতুল্লিল আ’লামীন’ উপাধি কার্যকর হওয়ার জন্য পন্নী সাহেবের উল্লেখিত শর্ত প্রয়োগ করেছেন কি?
এখন আপনি কার বক্তব্যকে প্রাধান্য দিবেন তা বিবেচনার দায়িত্ব আপনার ।

এবার আসুন আমরা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কিছু রহমতের দৃষ্টান্ত দেখে নেই।

🔹তিনি মু’মিনদের জন্য রহমতঃ

আল্লহ ﷻ ইরশাদ করেনঃ

لَقَدۡ جَآءَکُمۡ رَسُوۡلٌ مِّنۡ اَنۡفُسِکُمۡ عَزِیۡزٌ عَلَیۡہِ مَا عَنِتُّمۡ حَرِیۡصٌ عَلَیۡکُمۡ بِالۡمُؤۡمِنِیۡنَ رَءُوۡفٌ رَّحِیۡمٌ

তোমাদের কাছে এসেছে তোমাদের মধ্য থেকেই একজন রসূল। তোমাদের দুঃখ-কষ্ট তার পক্ষে দুঃসহ। তিনি তোমাদের মঙ্গলকামী, মুমিনদের প্রতি স্নেহশীল, দয়াময়।(সূরা তাওবা-১২৮)

🔹শিশুদের প্রতি তাঁর রহমতঃ

وَعَنْ أَبِي قَتادَةَ الحَارِثِ بنِ رِبعِي رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ الله ﷺ: «إنِّي لأَقُومُ إِلَى الصَّلاةِ، وَأُرِيدُ أَنْ أُطَوِّلَ فِيهَا، فَأسْمَعُ بُكَاءَ الصَّبيِّ فَأَتَجَوَّزَ في صَلاَتِي كَرَاهِيَةً أَنْ أَشُقَّ عَلَى أُمِّهِ

আবু কাতাদাহ্ হারেস ইবনে রিবয়ী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আমি নামাজ পড়তে দাঁড়াই এবং আমার ইচ্ছা হয় তা দীর্ঘ করি। অতঃপর আমি শিশুর কান্নার আওয়াজ শুনি। ফলে আমি তার মায়ের কষ্ট হওয়াটা অপছন্দ মনে করে নামাজ সংক্ষিপ্ত করি।’’ (বুখারি৭০৭, ৮৬৮, নাসায়ি ৮২৫, আবু দাউদ ৭৮৯, ইবন মাজাহ ৯৯১, আহমদ ২৩০৯৬)

🔹প্রাণীদের প্রতি তাঁর রহমতঃ

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ جَعْفَرٍ، قَالَ: أَرْدَفَنِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَلْفَهُ ذَاتَ يَوْمٍ، فَأَسَرَّ إِلَيَّ حَدِيثًا لَا أُحَدِّثُ بِهِ أَحَدًا النَّاسِ، وَكَانَ أَحَبُّ مَا اسْتَتَرَ بِهِ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ لِحَاجَتِهِ هَدَفًا، أَوْ حَائِشَ نَخْلٍ، قَالَ: فَدَخَلَ حَائِطًا لِرَجُلٍ الْأَنْصَارِ فَإِذَا جَمَلٌ، فَلَمَّا رَأَى النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَنَّ وَذَرَفَتْ عَيْنَاهُ، فَأَتَاهُ النَّبِيُّ ﷺ فَمَسَحَ ذِفْرَاهُ فَسَكَتَ، فَقَالَ: مَنْ رَبُّ هَذَا الْجَمَلِ، لِمَنْ هَذَا الْجَمَلُ؟، فَجَاءَ فَتًى مِنَ الْأَنْصَارِ فَقَالَ: لِي يَا رَسُولَ اللَّهِ. فَقَالَ: أَفَلَا تَتَّقِي اللَّهَ فِي هَذِهِ الْبَهِيمَةِ الَّتِي مَلَّكَكَ اللَّهُ إِيَّاهَا؟، فَإِنَّهُ شَكَا إِلَيَّ أَنَّكَ تُجِيعُهُ وَتُدْئِبُهُ صحيح م بجملة الهدف والحائش فقط

‘আব্দুল্লাহ ইবনু জা‘ফার (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাকে তাঁর খচ্চরের পিঠে তাঁর পিছনে বসালেন। তিনি আমাকে গোপনে কিছু কথা বলে এ মর্মে সতর্ক করে দিলেন যে, আমি যেন কাউকে তা না বলি। রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁর প্রাকৃতিক প্রয়োজনের সময় গোপনীয়তা রক্ষার্থে উঁচু জায়গা অথবা ঘন খেজুরকুঞ্জ পছন্দ করতেন। তিনি এক আনসারীর খেজুর বাগানে প্রবেশ করলে হঠাৎ একটি উট তাঁর দৃষ্টিগোচর হয়। উটটি নবী ﷺ -কে দেখে কাঁদতে লাগলো এবং তার চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। নবী ﷺ উটটির কাছে গিয়ে এর মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করলেন। এতে উটটি কান্না থামালো। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ এ উটের মালিক কে? তিনি আবারো ডাকলেনঃ উটটি কার? এক আনসারী যুবক এসে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আমার। তিনি বললেনঃ আল্লাহ যে তোমাকে এই নিরীহ প্রাণীটির মালিক বানালেন, এর অধিকারের ব্যাপারে তুমি কি আল্লাহকে ভয় করো না? উটটি আমার কাছে অভিযোগ করেছে, তুমি একে ক্ষুধার্ত রাখো এবং একে কষ্ট দাও। (মুসলিম ৩৪২, ২৪২৯, আবু দাউদ ২৫৪৯, ইবন মাজাহ ২৪০, আহমদ ১৭৪৭, দারেমি ৬৬৩, ৭৫৫)

🔹অত্যাচারীদের প্রতি তাঁর রহমতঃ

أَنَّ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا زَوْجَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم حَدَّثَتْهُ أَنَّهَا قَالَتْ لِلنَّبِيِّ هَلْ أَتَى عَلَيْكَ يَوْمٌ كَانَ أَشَدَّ مِنْ يَوْمِ أُحُدٍ قَالَ لَقَدْ لَقِيْتُ مِنْ قَوْمِكِ مَا لَقِيْتُ وَكَانَ أَشَدَّ مَا لَقِيْتُ مِنْهُمْ يَوْمَ الْعَقَبَةِ إِذْ عَرَضْتُ نَفْسِيْ عَلَى ابْنِ عَبْدِ يَالِيْلَ بْنِ عَبْدِ كُلَالٍ فَلَمْ يُجِبْنِيْ إِلَى مَا أَرَدْتُ فَانْطَلَقْتُ وَأَنَا مَهْمُومٌ عَلَى وَجْهِيْ فَلَمْ أَسْتَفِقْ إِلَّا وَأَنَا بِقَرْنِ الثَّعَالِبِ فَرَفَعْتُ رَأْسِيْ فَإِذَا أَنَا بِسَحَابَةٍ قَدْ أَظَلَّتْنِيْ فَنَظَرْتُ فَإِذَا فِيْهَا جِبْرِيْلُ فَنَادَانِيْ فَقَالَ إِنَّ اللهَ قَدْ سَمِعَ قَوْلَ قَوْمِكَ لَكَ وَمَا رَدُّوْا عَلَيْكَ وَقَدْ بَعَثَ إِلَيْكَ مَلَكَ الْجِبَالِ لِتَأْمُرَهُ بِمَا شِئْتَ فِيْهِمْ فَنَادَانِيْ مَلَكُ الْجِبَالِ فَسَلَّمَ عَلَيَّ ثُمَّ قَالَ يَا مُحَمَّدُ فَقَالَ ذَلِكَ فِيْمَا شِئْتَ إِنْ شِئْتَ أَنْ أُطْبِقَ عَلَيْهِمْ الأَخْشَبَيْنِ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم بَلْ أَرْجُوْ أَنْ يُخْرِجَ اللهُ مِنْ أَصْلَابِهِمْ مَنْ يَعْبُدُ اللهَ وَحْدَهُ لَا يُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا

‘আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, একবার তিনি নাবী ﷺ -কে জিজেস করলেন, উহুদের দিনের চেয়ে কঠিন কোন দিন কি আপনার উপর এসেছিল? তিনি বললেন, আমি তোমার ক্বওম হতে যে বিপদের সম্মুখীন হয়েছি, তা তো হয়েছি। তাদের হতে অধিক কঠিন বিপদের সম্মুখীন হয়েছি, আকাবার দিন যখন আমি নিজেকে ইবনু ‘আবদে ইয়ালীল ইবনে ‘আবদে কলালের নিকট পেশ করেছিলাম। আমি যা চেয়েছিলাম, সে তার জবাব দেয়নি। তখন আমি এমনভাবে বিষণ্ণ চেহারা নিয়ে ফিরে এলাম যে, কারনুস সাআলিবে পৌঁছা পর্যন্ত আমার চিন্তা দূর হয়নি। তখন আমি মাথা উপরে উঠালাম। হঠাৎ দেখতে পেলাম এক টুকরো মেঘ আমাকে ছায়া দিচ্ছে। আমি সে দিকে তাকালাম। তার মধ্যে ছিলেন জিব্রাঈল (আঃ)। তিনি আমাকে ডেকে বললেন, আপনার ক্বওম আপনাকে যা বলেছে এবং তারা উত্তরে যা বলেছে তা সবই আল্লাহ শুনেছেন। তিনি আপনার নিকট পাহাড়ের ফেরেশতাকে পাঠিয়েছেন। এদের সম্পর্কে আপনার যা ইচ্ছে আপনি তাঁকে হুকুম দিতে পারেন। তখন পাহাড়ের ফেরেশতা আমাকে ডাকলেন এবং আমাকে সালাম দিলেন। অতঃপর বললেন, হে মুহাম্মাদ ﷺ এসব ব্যাপার আপনার ইচ্ছাধীন। আপনি যদি চান, তাহলে আমি তাদের উপর আখশাবাইনকে চাপিয়ে দিব। উত্তরে নাবী ﷺ বললেন, বরং আশা করি মহান আল্লাহ তাদের বংশ থেকে এমন সন্তান জন্ম দেবেন যারা এক আল্লাহর ‘ইবাদাত করবে আর তাঁর সঙ্গে কাউকে শরীক করবে না। (সহীহ বুখারী-৩২৩১)

বিশ্বনবী মুহাম্মাদ ﷺ এর এরকম অসংখ্য রহমতের নিদর্শন ছড়িয়ে আছে তাঁর জীবনীতে।

সুতরাং উপরোক্ত আলোচনা হতে এটাই প্রতিয়মাণ হল যে, পন্নী সাহেব ‘রহমাতুল্লিল আ’লামীন’ উপাধি কার্যকরের জন্য যে শর্তারোপ করেছেন তা কুরআন-হাদীসের বক্তব্যের সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক ।

পরিশেষে একটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে নেয়া জরুরি। তা হচ্ছে ,উপরোক্ত আলোচনা হতে এমনটি ভেবে নেয়ার সুযোগ নেই যে, আমরা দ্বীন কায়েমের বিরোধিতা করছি।বরং মুসলিম দাবিদার প্রত্যেকের মধ্যেই আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন বাস্তবায়নের চেতনা থাকা আবশ্যক ।কিন্ত দ্বীন কায়েমের গুরুত্ব তুলে ধরার জন্য রাসূলুল্লাহ ﷺ এর একটি অন্যতম মর্যাদাকে অকার্যকর করে দেয়া এবং এর জন্য কুরআনের অপব্যাখ্যার মত গর্হিত কাজ কোনোভাবেই সমীচীন নয়।যা পন্নী সাহেবের লিখনীতে ফুটে উঠেছে ।একেই আবার তিনি মু’মিন ,মুসলিমদের আক্বিদা বলে চালিয়ে দিয়েছেন ।(নাউযুবিল্লাহ)

0Shares

আরও জানুন

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবুওয়াতপ্রাপ্তির আগে শিরক করেছেন?

প্রশ্ন আসসালামু আলাইকুম। হযরত আমাদের এলাকায় এক ব্যক্তি দাবী করছে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম …