প্রচ্ছদ / ইলম/জ্ঞান/শব্দার্থ / মুসলিম ও অমুসলিম রাষ্ট্র কোন মানদণ্ডের ভিত্তিতে নির্ণিত হয়?

মুসলিম ও অমুসলিম রাষ্ট্র কোন মানদণ্ডের ভিত্তিতে নির্ণিত হয়?

প্রশ্ন

মুসলিম ও অমুসলিম দেশ কিসের মানদন্ডে বা উপর ভিত্তি করে নির্ণয় করা হয়?

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

প্রশ্নটি অপূর্ণাঙ্গ। মুসলিম অমুসলিম এর মানদণ্ড কীসের ভিত্তিতে জানার প্রশ্ন করছেন?

বর্তমান প্রচলিত রূপ হিসেবে? নাকি শরয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে।

বর্তমান প্রচলিত দৃষ্টিকোণ থেকে যে দেশের সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম লিখা আছে, সেটাকেই মুসলিম রাষ্ট্র বলা হয়। আর যাতে তা নেই, সেটাকে অমুসলিম নিয়ন্ত্রিত রাষ্ট্র বলা হয়।

 

আবার কখনো কখনো সংগরিষ্টতার উপরও মুসলিম ও অমুসলিম রাষ্ট্র হবার পরিচয় প্রদান করা হয়ে থাকে।

থেকে গেল ইসলামী ফিক্বহ অনুপাতে মুসলিম ও অমুসলিম রাষ্ট্র কাকে বলে? এ প্রশ্নটি।

এক্ষেত্রে প্রথমে বুঝতে হবে যে, মুসলিম ও অমুসলিম রাষ্ট্র বুঝাতে ফিক্বহে ইসলামীতে পারিভাষিক শব্দ ব্যবহৃত হয়। সেটি হল “দারুল ইসলাম” বা ইসলামী রাষ্ট্র। আর দারুল হরব-দারুল কুফর বা কুফরী রাষ্ট্র।

দারুল ইসলাম ও দারুল হরবের সংজ্ঞা নিয়ে ফুক্বাহায়ে কেরামের মাঝে খানিক মতভেদ আছে।

দারুল ইসলাম ও দারুল হরবের বেশ কিছু সংজ্ঞা ফুক্বাহায়ে কেরাম করেছেন। কিছু মতভিন্নতাসহ প্রায় সকলের সংজ্ঞাই কাছাকাছি পর্যায়ের।

ইমাম আবু হানীফা রহঃ দারুল ইসলাম ও দারুল হরবের সংজ্ঞা করতে গিয়ে লিখেছেনঃ

قَوْلِ أَبِي حَنِيفَةَ – رَحِمَهُ اللَّهُ – أَنَّ الْمَقْصُودَ مِنْ إضَافَةِ الدَّارِ إلَى الْإِسْلَامِ وَالْكُفْرِ لَيْسَ هُوَ عَيْنَ الْإِسْلَامِ وَالْكُفْرِ، وَإِنَّمَا الْمَقْصُودُ هُوَ الْأَمْنُ وَالْخَوْفُ.

وَمَعْنَاهُ أَنَّ الْأَمَانَ إنْ كَانَ لِلْمُسْلِمِينَ فِيهَا عَلَى الْإِطْلَاقِ، وَالْخَوْفُ لِلْكَفَرَةِ عَلَى الْإِطْلَاقِ، فَهِيَ دَارُ الْإِسْلَامِ، وَإِنْ كَانَ الْأَمَانُ فِيهَا لِلْكَفَرَةِ عَلَى الْإِطْلَاقِ، وَالْخَوْفُ لِلْمُسْلِمِينَ عَلَى الْإِطْلَاقِ، فَهِيَ دَارُ الْكُفْرِ

ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর বক্তব্য অনুপাতে দারুল ইসলাম ও দারুল হরবের প্রতি নিসবতের মূল উদ্দেশ্য তা পরিপূর্ণ ইসলাম ও পরিপূর্ণ কুফর হওয়া নয়। বরং উদ্দেশ্য হল নিরাপত্তা ও ভয় বিষয়ে। অর্থাৎ যদি সর্বদিক থেকে নিরাপত্তা থাকে মুসলমানদের আর স্বাভাবিকভাবে আতংকিত থাকে কুফরী শক্তি, তাহলে সেটি দারুল ইসলাম।

পক্ষান্তরে সর্বদিক থেকে নিরাপদ থাকে কুফরী শক্তি আর ভীত থাকে মুসলিমগণ, তাহলে উক্ত রাষ্ট্র দারুল কুফর বা দারুল হরব। {বাদায়েউস সানায়ে-৭/১৩১}

আর ইমাম আবু ইউসুফ রহঃ এবং ইমাম মুহাম্মদ রহঃ দারুল ইসলাম ও দারুল কুফরের সংজ্ঞা করতে গিয়ে লিখেছেনঃ

وَقَالَ أَبُو يُوسُفَ وَمُحَمَّدٌ – رَحِمَهُمَا اللَّهُ: إنَّهَا تَصِيرُ دَارَ الْكُفْرِ بِظُهُورِ أَحْكَامِ الْكُفْرِ فِيهَا.

(وَجْهُ) قَوْلِهِمَا أَنَّ قَوْلَنَا دَارُ الْإِسْلَامِ وَدَارُ الْكُفْرِ إضَافَةُ دَارٍ إلَى الْإِسْلَامِ وَإِلَى الْكُفْرِ، وَإِنَّمَا تُضَافُ الدَّارُ إلَى الْإِسْلَامِ أَوْ إلَى الْكُفْرِ لِظُهُورِ الْإِسْلَامِ أَوْ الْكُفْرِ فِيهَا،

ইমাম আবু ইউসুফ রহঃ ও ইমাম মুহাম্মদ রহঃ বলেন, দারুল হরব সাব্যস্ত হবে তাতে কুফরী বিধান প্রয়োগ হওয়া হিসেবে।

সাহাবাইনের বক্তব্যের যৌক্তিকতা হল, দারুল ইসলাম ও দারুল কুফরের নিসবতের মৌলিকত্ব হল ইসলাম ও কুফরের দিকে নিসবত হিসেবে। অর্থাৎ দারুল ইসলাম বলা হবে যাতে ইসলামী বিধান প্রয়োগ করা হয়, আর দারুল কুফর বলা হবে যাতে কুফরী বিধান প্রয়োগ হয়। {বাদায়েউস সানায়ে-৭/১৩১}

ইমাম আবু ইউসুফ রহঃ ও ইমাম মুহাম্মদ রহঃ এর বক্তব্য মানলে সারা পৃথিবীতে কোথাও দারুল ইসলাম পাওয়া সম্ভব নয়। কারণ ইসলামের সকল বিধান প্রয়োগ হয়, এমন কোন রাষ্ট্র অস্তিত্বে আসা এখন অনেক কঠিন হয়ে গেছে। বাকি অধিকাংশ বিধান প্রয়োগ করা সম্ভব। সেই হিসেবে ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর সংজ্ঞাটিই সবচে’ সহজতর এবং গ্রহণযোগ্য বলে মত দিয়েছেন বিজ্ঞ উলামায়ে কেরাম।

অর্থাৎ দারুল ইসলাম ঐ রাষ্ট্রকে বলবে, যেখানে মুসলমানদের পূর্ণাঙ্গ আধিপত্ব রয়েছে । নিরাপত্তার সাথে তারা সেখানে বসবাস করে। কাফেরদের আধিপত্ব নেই বললেই চলে। ইসলামের শাস্তি বিধানও প্রয়োগ করতে সক্ষম। এরকম রাষ্ট্রকেও বলা হবে দারুল ইসলাম। [কামুসুল ফিক্বহ-৩/৩৯৫-৪০৪]

যেমন সৌদি আরব। সংযুক্ত আরব আমিরাত। আফগানিস্তান ছিল দারুল ইসলামের একটি প্রকৃত চিত্র। যখন মোল্লা উমরের নেতৃত্বে ইসলামী খিলাফত প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল। কিন্তু পরবর্তী কুফরী শক্তির সম্মিলিত প্রচেষ্টায় তা আজ বিলীন হয়ে গেছে।

আর দারুল হরব বা দারুল কুফর হল ঐ সকল রাষ্ট্র, যেখানে মুসলমানরা ভীত সন্ত্রস্ত। কুফরী শক্তি যেখানে প্রবল এবং শোষক। তাহলে উক্ত রাষ্ট্রের নাম হবে দারুল হরব বা দারুল কুফর। যেমন বার্মার নিপীড়িত রাখাইন রাজ্য। ইজরাঈল। চীনের জিনজিয়াং প্রদেশ ইত্যাদি।

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।

ইমেইল– ahlehaqmedia2014@gmail.com

আরও জানুন

তারাবীতে সেজদায়ে তিলাওয়াত না দিয়ে নামায শেষ করলে নামায হবে কি?

প্রশ্ন তারাবির নামাজে সেজদার আয়াত ছিল  ইমাম সাহেব সেজদার আয়াত পড়ছে কিন্তু আয়াতে সেজদা দেয়নি …