প্রচ্ছদ / আকিদা-বিশ্বাস / হাদীস অস্বিকারকারী আহলে কুরআন কাফির কেন? প্রমাণিক আলোচনা

হাদীস অস্বিকারকারী আহলে কুরআন কাফির কেন? প্রমাণিক আলোচনা

প্রশ্ন

আসসালামু আলাইকুম!

শ্রদ্ধেয় মুফতী সাহেব!

আশা করি ভাল আছেন। আল্লাহ তাআলা আপনাদের মেহনতকে কবুল করুন।

মুফতী সাহেব! ইদানিং একটি দলের কর্মকান্ড লক্ষ্য করছি। বিশেষ করে ইন্টারনেটে। যারা হাদীসকে অস্বিকার করে থাকে। হাদীস সম্পর্কে খুবই বিষোদগার করে থাকে। বলে হাদীস সব নাকি মানুষের বানানো। মুহাম্মদের [সাঃ] এর কথা। এটি মানার কোন প্রয়োজন নেই। এর মাধ্যমেই বিভক্তি ছড়িয়েছে। মানতে হবে শুধুই কুরআন। কুরআন পূর্ণাঙ্গ। তাই এছাড়া আর কোন গ্রন্থেরই প্রয়োজন।

এক কথায় তারা হাদীস মানে না। সম্ভবত তারা নিজেদের নাম আহলে কুরআন বলে থাকে। এ বিষয়ে আপনাদের সুচিন্তিত দলীলভিত্তিক সমাধান আশা করছি।

 উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

ইংরেজ আমলের পর যেমন আহলে হাদীস নামক দলের আবির্ভাব হয়েছে। তেমনি আহলে কুরআন নামক দলেরও আবির্ভাব হয়েছে। আহলে হাদীস এ সুন্দর নামের আড়ালে যেমন তারা ইসলামী ফিক্বহকে অস্বিকার করে থাকে। তেমনি আহলে কুরআন নামের আড়ালে এ গোষ্টিটি হাদীসকে অস্বিকার করে থাকে। উভয়টিই ভ্রান্ত ফিরক্বা।

তবে পার্থক্য হল আহলে হাদীস নামধারীরা হল ভ্রান্ত কিন্তু কাফির নয়। কিন্তু আহলে কুরআন নামধারীরা পরিস্কার কাফির। এতে কোন সন্দেহ নেই।

কারণ যে ব্যক্তি রাসূল সাঃ এর হাদীসকে অস্বিকার করবে সে ব্যক্তি কিছুতেই মুসলিম নয়।এতে ইসলামী বিশেষজ্ঞদের মাঝে কারো দ্বিমত নেই।

এসব লোকদের গোমরাহী ধরার জন্য কয়েকটি উসূলী কথা বলে দিচ্ছি। ইনশাআল্লাহ এটি ফলো করলে তাদের ভ্রান্তিতা সহজেই ধরতে পারবেন।

প্রথমে হাদীস কাকে বলে তা জেনে নেই।

اقوال النبى صلى الله عليه وسلم وأفعاله وأحواله (فتح الملهم-1/6

রাসূল সাঃ এর কথা,কর্ম এবং অবস্থাকে বলা হয় হাদীস। {ফাতহুল মুলহিম-১/৬}

রাসূল সাঃ এর অনুসরণের নির্দেশ দিয়ে পবিত্র কুরআনে একাধিক আয়াত এসেছে। যেমন-

وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانتَهُوا ۚ وَاتَّقُوا اللَّهَ ۖ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ [٥٩:٧

রসূল তোমাদেরকে যা দেন,তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন,তা থেকে বিরত থাক এবং আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা। { সূরা হাশর-৭}

قُلْ إِن كُنتُمْ تُحِبُّونَ اللَّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللَّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ ۗ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ [٣:٣١

বলুন,যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস,তাহলে আমাকে অনুসরণ কর,যাতে আল্লাহ ও তোমাদিগকে ভালবাসেন এবং তোমাদিগকে তোমাদের পাপ মার্জনা করে দেন। আর আল্লাহ হলেন ক্ষমাকারী দয়ালু। {সূরা আলে ইমরান-৩১}

لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِيهِمْ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِّمَن كَانَ يَرْجُو اللَّهَ وَالْيَوْمَ الْآخِرَ ۚ وَمَن يَتَوَلَّ فَإِنَّ اللَّهَ هُوَ الْغَنِيُّ الْحَمِيدُ [٦٠:٦

তোমরা যারা আল্লাহ ও পরকাল প্রত্যাশা কর, তোমাদের জন্য তাদের মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে। আর যে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তার জানা উচিত যে,আল্লাহ বেপরওয়া,প্রশংসার মালিক। {সূরা মুমতাহিনা-৬}

শুধু তাই নয়। রাসূল সাঃ এর আমল কথাকে আল্লাহর কথা বলে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে-

وَمَا يَنْطِقُ عَنِ الْهَوَى (3) إِنْ هُوَ إِلَّا وَحْيٌ يُوحَى (4

তিনি নিজের পক্ষ থেকে কোন কথা বলেন না, বরং তিনি তা’ই বলেন, যা আল্লাহ তা’আলা অহী মারফত জানাতে বলেন। সুরা নজম-৩-৪}

উপরোক্ত আয়াতসমূহ পরিস্কার ভাষায় প্রমাণ করছে। রাসূল সাঃ এর আদেশ নিষেধ, আমল ইত্যাদি যা হাদীস সেটিকে অস্বিকার করা মানে আল্লাহকে অস্বিকার করা। কুরআনকেই অস্বিকার করা। তাই রাসূল সাঃ এর হাদীস অস্বিকারকারী কিছুতেই কুরআন মান্যকারী হতে পারে না। বরং সে এক নাম্বারের কুরআন অস্বিকারকারী।

আরো পরিস্কার ভাষায় কয়েকটি যৌক্তিক অবস্থান বুঝে নিন।

যুক্তি

হাদীসের ক্ষেত্রে বিষয় হল তিনটি। যথা-

জরুরতে হাদীস তথা হাদীসের প্রয়োজন ছিল কি না?

উজুদে হাদীস তথা হাদীস বিদ্যমান ছিল কি না?

হিফাযতে হাদীস তথা হাদীস সংরক্ষিত হয়েছে কি না?

এই হল হাদীসের হালাত। এখন প্রশ্ন হল এসব নামধারী আহলে কুরআনরা অস্বিকার করে কোনটি?

জরুরতে হাদীসকে অস্বিকার করেন?

উজুদে হাদীসকে অস্বিকার করেন?

হিফাযতে হাদীসকে অস্বিকার করেন?

যদি জরুরতে হাদীসকে অস্বিকার করেন, তাহলে প্রশ্ন হল ঈমান আনার পদ্ধতি কি হবে? নামায কিভাবে পড়বো? হজ্ব কিভাবে করবো? কি কি কারণে রোযা ভঙ্গ হয়? পারিবারিক জীবন কিভাবে চালাবো? এসব কথা কোথায় পাবো? কুরআনেতো নেই। বিবাহ করার পদ্ধতি কি হবে? যাকাত কিভাবে প্রদান করবো? জানাযা নামায পড়ার পদ্ধতি কী হবে?

এসবতো কুরআনে নেই। এসব বিষয়ে সমাধান কী হবে?

সুতরাং এসবের জন্য ব্যাখ্যা প্রয়োজন। অর্থাৎ রাসূল সাঃ এর কথা, কর্ম ও তাকরীর দ্বারা এসবের সমাধান দেখা আবশ্যক।

বুঝা গেল শরীয়ত পূর্ণতা পেতে হলে হাদীস লাগবেই। হাদীস ছাড়া কোন আমলই পূর্ণাঙ্গ করা সম্ভব নয়। তাই জরুরতে হাদীসকে অস্বিকার করার কোন সুযোগই নেই।

দুই নাম্বার বিষয় হল উজুদে হাদীসকে অস্বিকার করা। তথা কেউ যদি বলে যে হাদীস দুনিয়াতে বিদ্যমানই ছিল না। তাহলে এটি হবে গাঁজাখুরী কথা। কারণ হাদীস মানেতো কুরআনে বর্ণিত আল্লাহর বিধান পালন করা। আর রাসূল সাঃ নবুওয়ত প্রাপ্তির পরতো সেই বিধানই অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন। আর রাসূল সাঃ যা করেছেন যা বলেছেন তার নামইতো হাদীস।

যদি বলা হয় হাদীস বিদ্যমান ছিল না। তাহলে বলতে হবে রাসূল সাঃ নবী হবার পর থেকে নিয়ে আল্লাহর কোন নির্দেশই পালন করেননি। আমল করেননি। যদি বলা হয় আমল করেছেন, তাহলেতো এ সবই হাদীস বিদ্যমান হওয়ার প্রমাণবাহী। আর যদি বলা হয় আমল করেননি, তাহলেই কেবল বলা যায় হাদীস বিদ্যমান ছিল না।

কিন্তু একথা কি কোন মুসলমান দাবি করতে পারে যে, রাসূল সাঃ আল্লাহর কোন নির্দেশই ২৩ বছরের নবুওতী জিন্দিগীতে আমল করেননি? নিশ্চয় বলতে পারবে না। যদি বলতে না পারেন, তাহলেতো পরিস্কার বুঝা গেল যে, রাসূল সাঃ এর হাদীস বিদ্যমান ছিল। তা অস্বিকার করা মানে রাসূল সাঃ এর আমলী জিন্দেগীকে অস্বিকার করা।

তাই উজুদে হাদীস অস্বিকার করারও কোন সুযোগ বাকি রইল না।

হিফাযতে হাদীস তথা হাদীসগুলো সংরক্ষিত আছে কি না?

হিফাযতে হাদীসকেও অস্বিকার করার কোন সুযোগ নেই। দেখুন কিভাবে মুহাদ্দিসীনরা প্রতিটি হাদীসের সূত্রকে একত্র করেছেন। কিভাবে প্রতিটি রাবীদের জীবনী নিয়ে জরাহ ও তাদীল করেছেন। কিভাবে প্রতিটি বর্ণনাকারীদের জীবনী অবস্থান, সমসায়িকদের মন্তব্য নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছেন। যা পরিস্কারভাবে হাদীস সংরক্ষিত হবার প্রমাণ বহন করে।

সেই সাথে যদি হাদীস সংক্ষিতই না থাকে, তাহলে ইসলামই সংরক্ষিত নয় বলে দাবি করতে হবে। কারণ হাদীসেই কুরআনের বিধানের আমলী হালাত বিধৃত হয়েছে। এখন যদি সেসব হাদীসই সংরক্ষিত না থাকে, তাহলে ইসলামী শরীয়তের আমলী অবস্থাও আর সংরক্ষিত নয় বলে প্রতীয়মান হয়ে যায়।

যা কোন মুসলমানই দাবি করতে পারে না।

সুতরাং একথা পরিস্কার যে, হাদীস সংরক্ষণকে অস্বিকার করারও কোন সুযোগই নেই।

আশা করি উপরোক্ত আলোচনার দ্বারা পরিস্কার হয়ে গেছে হাদীস করা মুর্খতা ছাড়া কিছুই নয়। সেই সাথে হাদীস অস্বিকার করা মানেই পুরো দ্বীনকেই অস্বিকার করা।

হাদীস অস্বিকার মানেই কুরআন অস্বিকার করা। হাদীস অস্বিকার করা মানেই রাসূল সাঃ এর আমল অস্বিকার করা। হাদীস অস্বিকার করা মানেই ইসলামী শরীয়ত অস্বিকার করা।

এ কারণেই হাদীস অস্বিকারকারী যতই সুন্দর নামে আসুক না কেন, তারা অবশ্যই কাফির।

والله اعلم بالصواب

উত্তর লিখনে

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

ইমেইল- [email protected]

[email protected]

0Shares

আরও জানুন

স্ত্রীকে ‘তালাক তালাক তালাক’ বললে কয় তালাক পতিত হয়?

প্রশ্ন আসসালামু আলাইকুম। হুজুর!  স্বামী স্ত্রী  ঝগড়া করতে করতে এক পর্যায়ে স্বামী তালাক তালাক তালাক …

No comments

  1. wallahi 100 fil 100

  2. kazi munir hossain

    সুন্দর উপাস্তাপনা ও বাস্তব নির্ভর আলোচনার জন্য শূকরিয়া