প্রশ্ন
সম্মানিত মুফতী সাহেব!
আপনাদের আহলে হক মিডিয়ায় প্রকাশিত প্রবন্ধ নিবন্ধ এবং বিভিন্ন প্রশ্নোত্তর ও ভিডিও আমাদের সাধারণ লোকদের অনেক উপকারে আসছে আলহামদুলিল্লাহ। আমাদের ঈমান ও আমলের জন্য ক্ষতিকর অনেক বাতিল ফিরক্বা সম্পর্কে আমাদের ধারণা-বিশ্বাস দৃঢ় হচ্ছে।
ইদানিং কয়েকটি প্রশ্ন আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। হযরত যদি সময় করে উত্তর প্রদান করতেন, তাহলে আমাদের অনেক উপকার হতো।
সালামান্তে
আব্দুর রহীম, ময়নামতি, কুমিল্লা।
প্রশ্ন নং-১
আহলে হাদীস নামধারী শায়েখদের প্রায়ই দেখা যায় সাধারণ মানুষদের সামনে খুবই দৃঢ়তার সাথে বয়ান করছেন। তারাই হক, তারাই সত্যের উপর আছেন, তাদের মতের পক্ষে দলীল সবচে’ শক্তিশালী। এসব বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলেন। কিন্তু যখনি বলা হয় আপনারা এসব মতভেদপূর্ণ বিষয়ে আগে উলামায়ে হকের সাথে আলোচনা করুন। তাদের বসে সমাধান করুন কে হক আর কে বাতিল? তারপর সাধারণ মানুষের সামনে বিষয়গুলো উপস্থাপন করুন। কুরআন ও হাদীস সম্পর্কে অজ্ঞ সাধারণ মুসলমানদের কেন বিভক্ত করছেন? আগে ফায়সালা করে নিন। কারণ আলেমদের ভুল আলেম বুঝে। সাধারণ মুসলমানরাতো এসব বিষয় কিছুই বুঝে না।
এসব শুনে তারা ভড়কে যান। উলামায়ে হকের সামনে বসতে অস্বিকৃতি জানান। যদিও তাদের কিছু অন্ধ ভক্তরা বসতে খুবই আগ্রহ প্রকাশ করে থাকে।
কিন্তু কারণ কি? তারা বসতে চায় না কেন? তাদের সমস্যা কি? মাইক পেলেতো মাইক ফাটিয়ে ফেলেন। কিন্তু সত্যের মুখোমুখি হতে তাদের বুকটা এভাবে কেঁপে উঠে কেন? চাতুরীর আশ্রয় নিয়ে পালাতে চান কেন?
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
বাজারে ক্যানভাসারের বক্তব্য শুনে অনেকেই তার ভক্ত হয়ে যায়। তাকে মনে করে বিশাল ডাক্তার। কিন্তু আসল ডাক্তার জানে সে ভূয়া। জানে উক্ত ক্যানভাসারও। তাই উক্ত ক্যানভাসার কখনোই আসল ডাক্তারের সামনে বসতে রাজি হয় না। তেমনি এসব কথিত আহলে হাদীস নামধারীদের হালাত। কিছু ইংরেজী শিক্ষিতরা তাদের ষ্টাইল, কিছু মুখরোচক কথা শুনে তাদের বিশাল শায়েখ মনে করে থাকে। কিন্তু সত্যিকার উলামায়ে কেরামগণ জানেন তাদের ইলমের দৌড়। সেই সাথে এসব কথিত শায়েখরাও জানে তাদের ইলমের দৌড় কতটুকু? তাই তারা উলামায়ে হকের সাথে বসতে রাজি হবে না এটাইতো স্বাভাবিক।
কিন্তু ক্যানভাসারের ভক্তরা যেমন ক্যানভাসারকে সত্যিকার ডাক্তার মনে করে তাই তাকে নিয়ে গর্ব করে, আসল ডাক্তারদের সাথে আলোচনায় বসার মত চ্যালেঞ্জও করে বসতে পারে, কিন্তু ক্যানভাসার কিন্তু এতে রাজি হবে না। তেমনি কথিত শায়েখদের ভক্তরা বসতে রাজি হয়ে গেলেও এসব শায়েখরা বিষ খেতে রাজি, কিন্তু উলামায়ে হকের সাথে বসতে কিছুতেই রাজি হয় না। কারণ বসলেই তাদের ইলমের দৌড় জাতির সামনে পরিস্কার হয়ে যাবে। বন্ধ হয়ে যাবে তাদের ধাপ্পাবাজি করে দু’ পয়সা কামানোর পথ।
বেশি কিছু নয় মুরাদ বিন আমজাদ আর আব্দুর রাজ্জাক সাহেবকে আলোচনায় বসলে যদি শুধু বলা হয় আপনারা দুইজন প্রথমে কওমী মাদরাসার মক্তবের ছাত্রদের সামনে শুদ্ধ করে সূরা ফাতিহা পড়বেন। তারপর আমরা আলোচনা শুরু করবো। তাহলেইতো কেল্লাফতে। তারা যে, শুদ্ধ করে সূরা ফাতিহাই পড়তে জানে না। মক্তবের ছাত্ররাও তাদের চেয়ে সুন্দর করে কুরআন পড়ে, তা যখন জাতির সামনে পরিস্কার হয়ে যাবে, তখন তাদের কে শায়েখ শায়েখ বলে বিশাল টাকার হাদিয়া দিবে?
তাহলে তারা কেন নিজের পেটে লাথি মারার মত দুঃসাহস দেখিয়ে বাহাসে বসে নিজেদের মুর্খতা জাতিকে জানিয়ে দিবে?
প্রশ্ন নং-২
আহলে হাদীস শায়েখরা নিজেদের বাতিল জানার পরও [যেহেতু আলোচনায় বসে না তারা বাতিল জানে বলে] কেন তারা ফিরে আসে না। কেন তারা আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের সঠিক পথের উপর অটল থাকেনি। কেন তারা বিচ্যুত হয়ে এ নতুন মতবাদ আবিস্কার করল?
উত্তর
এটি খুবই সহজ কথা। আগের উত্তরটি দেখলেই আপনাদের কাছে বিষয়টি পরিস্কার হয়ে যাবে। কুরআন ও হাদীস সম্পর্কে এত কম ইলম ও অগভীরতা নিয়ে নাজাতপ্রাপ্ত আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের অনুসারী থাকলে তারা কিছুতেই প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে না। পারবে না শায়েখ হতে। পারবে না বিশাল জনগোষ্ঠির কাছে আল্লামা সেজে অর্থ কড়ি কামাতে। কারণ তাদের যে ইলম তা দিয়ে তারা এত বিজ্ঞ আলেম উলামাদের ভীরে যাবে হারিয়ে। তাদের থাকবে না এতটুকু দাম।
এক কথায় অর্থ কামাইয়ের একটি আলাদা প্লাটফর্ম তারা তৈরী করেছে। যে প্লাটফর্মে তারা শায়েখ। তাদের পিছনে থাকবে একদল অর্বাচিন। যারা তাদের শায়েখ শায়েখ বলে মুখে ফেনা তুলবে। দিবে হাদিয়া তোহফা। ভরবে পকেট। এটি নাজাতপ্রাপ্ত আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের অনুসারী হয়ে থাকলে তাদের জন্য পাওয়া ছিল দুঃসাধ্য বিষয়। যা তারা এ নতুন মতবাদ প্রচার করে পেয়ে যাচ্ছে অনায়াসেই।
আশা করি বিষয়টি পরিস্কার। একটি কর্মক্ষেত্র তৈরী করা। যাতে তারা পেট চালানোর একটি সুন্দর উপায় বের করে নিয়েছে। যেখানে তারা শায়েখ। বিশাল কিছু। যা তারা সঠিক দ্বীন প্রচার করলে অযোগ্যতার কারণে পেতো না।
প্রশ্ন নং-৩
যদি এ মতবাদ ভ্রান্ত হয়, তাহলে অনেক আহলে সুন্নত ওয়াল জামাত হানাফী ব্যক্তিরা এ নতুন মতবাদে দিক্ষীত হচ্ছে কেন? দিন দিন তাদের সংখ্যা বাড়ছে। এর কারণ কি? অনেকেই বলছেন এটিই তাদের হক হবার প্রমাণ। এ ব্যাপারে আপনাদের মতামত জানতে চাই।
উত্তর
সুদানে প্রচুর লোক খৃষ্টান হয়েছে। অবশেষে তারা আলাদাভাবে দক্ষিণ সুদান নামে রাষ্ট্রও করে নিয়েছে। ইন্দোনেশিয়ায় হয়েছে বিশাল জনগোষ্ঠি মুসলমান থেকে খৃষ্টান। তারাও পূর্ব তিমুরকে আলাদা করে বানিয়েছে আলাদা রাষ্ট্র। আমাদের দেশের অনেক লোকই মুসলমান থেকে খৃষ্টান হয়ে যাচ্ছে। হচ্ছে কাদিয়ানী। মুসলমান থেকে অসংখ্য মানুষ কাদিয়ানী ধর্মমত গ্রহণ করেছে তাদের প্রোপাগান্ডায়। হয়েছে এবং হচ্ছে শিয়া। হচ্ছে হাদীস অস্বিকারকারী কাফের আহলে কুরআনও।
এরা সবাই মুসলমান থেকেই এসব ভ্রান্ত ফিরকায় অন্তর্ভূক্ত হয়েছে এবং হচ্ছে। বাড়ছে দিন দিন ভন্ড পীর ও মাজারপূজারীদের সংখ্যা। শুধুই সংখ্যা বাড়া যদি হক হবার প্রমাণ হয়, তাহলে কি তারা খৃষ্টান মতবাদ, শিয়া মতবাদ, কাদিয়ানী মতবাদ এবং মাজারপূজারীদের মতবাদকেও সত্য ও হক বলে মেনে নিবেন? তাহলে কি করে ইংরেজ আমলের সৃষ্টি আহলে হাদীস মতবাদের লোকজন বাড়ছে বলে তাদেরকে হক বলে মেনে নিচ্ছেন?
সুতরাং বুঝা গেল এটি একটি হাস্যকর কথা। সংখ্যা বাড়া মানেই তারা হক হয়ে যাওয়া নয়। কিয়ামত আসছে। সুতরাং বাতিলপন্থী ব্যক্তিদের আধিপত্ব বাড়বে। তাদের সংখ্যা বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। এর মাঝেই হককে চিনে তা আঁকড়ে থাকতে হবে।
আল্লাহ তাআলা আমাদের হককে হক এবং বাতিল হিসেবে বুঝার তৌফিক দান করুন। আমীন। ছুম্মা আমীন।
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।