প্রচ্ছদ / পরিবার ও সামাজিকতা / সমাজের একটি নৈমত্তিক সমস্যাঃ মা স্ত্রী কারো অধিকার খর্ব করা যাবে না

সমাজের একটি নৈমত্তিক সমস্যাঃ মা স্ত্রী কারো অধিকার খর্ব করা যাবে না

প্রশ্ন

আসসালামু আলাইকুম,

আমি বিবাহিত।  বিয়ের বয়স ২ বছর। আমাদের এখন পযন্ত কোন সন্তানাদি নেই। বিয়ের পর হতে আমার স্ত্রীর সাথে আমার বনিবনা হচ্ছে না। আমার স্ত্রী আলাদা ভাবে থাকতে চায়, আমার বাবা নাই মারা গেছেন। মা, আমি আর আমার বড় বোন একসাতে থাকি। আমার স্ত্রী আমাদের বিয়ের ৫-৬ মাস পর থেকে আলাদা থাকতে চায়। কিন্তু আমি এতে সম্মতি দেই না, এর কারনে সে আমার সাথে থাকে না। আমাদের এই বিয়ের ২ বছরের মদ্দে সে কয়েকবার তার বাবার বারিতে চলে যায়। এবং ৩ মাস, ১ মাস করে তার বাবার বাড়ি থাকে, এবং প্রতিবার আমি তাকে বুজ দিয়ে আমার বাসায় নিয়া আসি। এখন সে আবার ৩ মাস ধরে তার বাবার বাড়ি, তার দাবি না মানলে সে আসবে না, আর তার মা বাবা ও তার সাপোর্ট এ কথা বলে, কিন্তু আমার পক্ষে তার দাবি মানা সম্বভ না। এমত অবস্তাই আমার কি করনিয় ?  আমি এর শান্তিপূর্ণ সমাধান চাই। ইসলামের আলোকে প্রচলিত এর কি সমাধান আছে ? উত্তর এর অপেক্ষায় রইলাম।

নাম প্রকাশে অনিছক।

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

আসলে পারিবারিক জীবন একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এখানে প্রতিটি ব্যক্তির হক আদায় করার গুরুত্ব খুবই বেশি। স্ত্রীর মন রাখতে গিয়ে যেমন মায়ের মনে কষ্ট দেয়া যাবে না। আবার বা মার মন রাখতে গিয়ে স্ত্রীর উপর জুলুম করাও বৈধ নয়।

সবার ন্যায্য অধিকার প্রদান করা জরুরী। যা অনেক সময় পূর্ণ করা কষ্টসাধ্য হয়ে যায়।

আসলে এর মূল কারণ আমাদের মানসিকতা। স্ত্রী তার শ্বাশুরীকে মা বাবা মনে করে না। আর শ্বশুর ও শ্বাশুরী পুত্রবধুকে নিজের মেয়ে মনে করে না।

স্ত্রী মনে করে আমার স্বামীর মা বাবা। আর শ্বশুর শ্বাশুরী মনে করে আমার ছেলের বউ। এখানে যদি স্ত্রী মাঝখানের বিষয়টি বাদ দিয়ে মানসিকভাবে শ্বশুর শ্বাশুরীকে মা বাবা মনে করে। আর শ্বশুর শ্বাশুরীও মানসিকভাবে মাঝখানের মাধ্যম বাদ দিয়ে পুত্রবধুকে মেয়ে মনে করে। তাহলেই আসলে সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। শুধুমাত্র মানসিকতার কারণে অধিকাংশ পরিবারে অশান্তি হয়ে থাকে।

চেষ্টা করুন আপনার স্ত্রী ও মায়ের মাঝে মা মেয়ের সম্পর্ক গড়তে। উভয়কেই বুঝাতে চেষ্টা করুন।

মৌলিক কথা হল, ইসলাম সম্পর্কচ্ছেদকে পছন্দ করে না। পছন্দ করে না স্বামী স্ত্রীর মাঝে তালাককে। নিকৃষ্ট হালাল বলে হাদীসে উদ্ধৃত করা হয়েছে।

তাই আমাদের প্রাথমিক পরামর্শ হল, সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে চেষ্টা করা। আপনার মা ও বোনের মানসিকতা এবং স্ত্রীর মানসিকতা পরির্তন করার চেষ্টা করুন।

যদি সম্ভব না হয়, তাহলে স্ত্রীকে আলাদা করে রাখুন। কারণ আপনার মায়ের খিদমাত আপনার স্ত্রীর উপর শরয়ী বিধান হিসেবে আবশ্যক নয়। আপনার উপর আবশ্যক। তাই তাকে জোর করে তাদের খিদমাত নিতে আপনি বাধ্য করতে পারবেন না। তাই সে আলাদা হতে চাইলে এটি সে চাইতে পারে। এটি আইনগত কথা। বাকি নীতিগত কথাতো হল, একসাথে থাকাই উচিত।

যদি আপনার স্ত্রীকে আলাদা বাড়িতেই রাখেন। এক্ষেত্রেও আপনার মায়ের খিদমাত করা, তার দেখাশোনা করা আপনার উপর আবশ্যক। কোনভাবেই যেন তারা কষ্ট না পান। আপনাকে মাকে বুঝাতে হবে যে, এতে আপনার কোন ভুল নেই। আর স্ত্রীও আশা করি একদিন বুঝে যাবে। বাকি এ অজুহাতে স্ত্রীকে তালাক দেয়া উচিত হবে না।

তারপরও যদি এক সাথে থাকা সম্ভব না হয়, তাহলে আপনার স্ত্রীকে এক তালাক প্রদান করতে পারেন। কিন্তু দুই বা তিন তালাক কিছুতেই নয়। এক তালাক প্রদান করার পর যদি আপনার স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনতে চান, বা আপনার স্ত্রী ফিরি আসতে চায়, তাহলে ফিরিয়ে আনতে পারেন। আর যদি আপনি বা আপনার স্ত্রী না চায়, তাহলে আপনার স্ত্রী ইদ্দত শেষে অন্যত্র বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে।

আরেকটি বিষয়

যদিও এখন বলে লাভ নেই। যেহেতু আপনি বিবাহ করেই ফেলেছেন। তবু বলছি হয়তো অন্য কেউ সতর্ক হতে পারে। বিবাহ করার আগে ধার্মিক ও ভাল পরিবারে বিবাহ করা ইসলামী বিবাহের জন্য একটি লক্ষ্যনীয় বিষয়। ধার্মিক ও ভাল পরিবারের মেয়েরা সাধারণত বিবাহের পর এরকম সমস্যায় পতিত হলেও নিজেকে মানিয়ে নিতে চেষ্টা করে। কাদের সাথে মানাবে? কাদের সাথে মানাবে না? এসব বিষয় ভাল করে দেখে তারপর বিবাহ করা উচিত। বিবাহ কোন ছেলেখেলা নয় যে, ইচ্ছে হলেই করে ফেললাম, আবার ইচ্ছে হলেই ভেঙ্গে দিলাম। তাই চিন্তা ভাবনা করে এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত।

আল্লাহ তাআলা আপনার পরিবারে শান্তি ফিরিয়ে আনুক এ দুআই করি। আপনার স্ত্রী এবং আপনার মায়ের মাঝে মোহাব্বতের সম্পর্ক তৈরী হোক আল্লাহর কাছে আমাদের এই প্রার্থনা থাকবে। আল্লাহ তাআলা আপনার পরিবারে সুখ ফিরিয়ে দিন। আমীন।

والله اعلم بالصواب

উত্তর লিখনে

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

ইমেইল- ahlehaqmedia2014@gmail.com

lutforfarazi@yahoo.com

আরও জানুন

অযুতে কনুই ধৌত না করে নামায পড়লে নামায আদায় হবে কি?

প্রশ্ন আসলে আমি অযু করে নেওয়ার সময় আমার হাতের কনুইয়ের উপর ও উপরিভাগে পানি লাগে …

No comments

  1. মোঃ ফায়সাল

    এই সমস্যা আমাদের সবাইকেই কম বেশি সম্মুখীন করতে হয়। যেহেতু বিয়ে হয়ে গেছে, তাই এক্ষেত্রে আরেকটি কাজ করা যেতে পারে। সেটা হলঃ আল্লাহর রাস্তায় মাস্তুরাত জামাতে যাওয়া। তিন দিনের মাস্তুরাত জামাতে স্ত্রী, মা ও বোন কে নিয়ে যাওয়া যায়। আল্লাহর রহমতে এই জামাতে তাসির বা প্রভাব অনেক বেশি পরে। আশা করা যায়, এই জামাতে নিয়মিত (তিন মাস পর পর)যেতে থাকলে খুব দ্রুত আমাদের পুরুষ ও মহিলাদের মধ্যে একরামের সিফাত সহ সাহাবাদের ভাল ভাল গুন আসতে থাকবে,ঘরের মধ্যে একে অপরের সাথে মহব্বত পয়দা হবে এবং ঘরে দ্বীন কায়েম হবে।
    সেক্ষেত্রে পর্যায়ক্রমে একবার স্ত্রী কি নিয়ে মাস্তুরাত জামাতে যাওয়া আরেকবার মা ও বোন কে নিয়ে মাস্তুরাত জামাতে যাওয়া যেতে পারে। আমার জানা মতে, অনেক পরিবারের মহিলাদের মধ্যে মাস্তুরাত জামাতে যাওয়ার কারনে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে।

    সাথে সাথে প্রতিদিন ঘরের মাহরাম মহিলাদের নিয়ে তালিম চালু করা যেতে পারে। বিশেষ করে মুন্তাখাব হাদিসের একরামুল মুসলিমুন অধ্যায়, ফাজায়েলে আমলের হেকাআতে সাহাবা অধ্যায় থেকে প্রতিদিন তালিম করা উচিত। এগুলোর তালিমের দ্বারা সাহাবাদের আখলাক, একে অপরের প্রতি সহানুভুতি ও মুসলমানদের হক সম্বন্ধে জানা যাবে। তাই প্রতিদিন এই তালিমের দ্বারা ও আল্লাহ তায়ালা অনেকের দিল ইসলামদের দিকে ঘুরিয়ে দেন। বাকি আল্লাহর কাছে বেশি বেশি আমল করে দোয়া করা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *