প্রচ্ছদ / আহলে হাদীস / কথিত আহলে হাদীসদের মাসঈদী ফিরক্বা তথা জামাআতুল মুসলিমীনের হাকীকত!

কথিত আহলে হাদীসদের মাসঈদী ফিরক্বা তথা জামাআতুল মুসলিমীনের হাকীকত!

লেখক– মুনাজিরে ইসলাম মাওলানা মুহাম্মদ আমীন সফদর ওকাড়বী রহঃ

অনুবাদঃ লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

মাসউদী ফিরক্বা এবং কুরআন

এতে কোন সন্দেহ নেই যে, কুরাআনে কারীম আল্লাহ তাআলার সর্বশেষ গ্রন্থ। যা আজ থেকে সাড়ে চৌদ্দশত বছর পূর্বে রাসূল সাঃ এর উপর নাজিল হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হল, চৌদ্দশত শতাব্দীর মুসলমানদের কাছে এ কুরআন কাদের মাধ্যমে পৌঁছেছে? একথা স্পষ্ট যে, রাসূল সাঃ এবং আমাদের মধ্যকার মাধ্যম উম্মতী। আমাদের দেশে কুরআনে পাক নিয়ে আসা ব্যক্তি সকলেই ছিলেন আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআত হানাফী। যারা আমাদের নিকট পরিপূর্ণ মুসলমান। এ কারণে আমাদের কাছে এ কুরআন মুসলমানদের দ্বারাই পৌঁছেছে। কিন্তু মাসউদী ফিরক্বার প্রতিষ্ঠাতা আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতকে মুশরিক ও গায়রে মুসলিম বলে থাকে। তাই তার কাছে কুরআন মুশরিক আর গায়রে মুসলমানদের মাধ্যমে পৌঁছেছে। ইহুদীদারাও এতটা আত্মমর্যাদাহীন নয় যে, তারা ঐ কিতাবকে মানবে যে, কিতাবের আর মুসা আঃ এর মধ্যকার মাধ্যম অইহুদী। হিন্দু এবং খৃষ্টানরাও এমন কিতাবকে ঐশী গ্রন্থ মানতে তৈরী নয়, যে কিতাব তাদের কাছে হিন্দু নয় বা অখৃষ্টানদের দ্বারা পৌঁছেছে।
কিন্তু এ ফিরক্বার প্রতিষ্ঠাতার আত্মমর্যাদাবোধ এতটাই নিচ যে, যাদের সে মুশরিক এবং গায়রে মুসলিম বলে থাকে, তাদের আনীত কুরআনের উপরই নির্ভর করে থাকে। তারতো উচিত এমন কুরআন নিয়ে আসবে, যেটি গায়রে মুকাল্লিদ নামী ব্যক্তিদের নিরবচ্ছিন্ন সূত্র পরম্পরায় তার কাছে এসেছে। নিরবচ্ছিন্ন সূত্র পরম্পরাতো দূরে থাক, গায়রে মুকাল্লিদদের সনদে খবরে ওয়াহিদ দিয়েও কুরআনে কারীমকে প্রমাণিত করতে পারবে না।

কতিপয় প্রশ্নাবলী

মাসউদী ফিরক্বার প্রতিষ্ঠাতার অন্যদের প্রশ্ন করার খুবই শখ। নিজেদের ভ্রান্তিতা ও ভুলকে প্রশ্নের মোড়কে আড়াল করে রাখতে চায়। যার সম্পর্ক না কুরআনের সাথে না হাদীসের সাথে। কিন্তু অন্যদের প্রশ্নের জবাব দেবার কোন সাড়া তার থেকে পাওয়া যায় না। প্রথমতঃ প্রশ্ন শুনে মৃত বাড়ির মত শুনশান নিরবতা নেমে আসে। আর যদি কোন প্রশ্নের জবাব দেয়ার জন্য বাধ্য করা হয়, তাহলে গালি-গালাজ শুরু করে দেয়। এ এক আশ্চর্য স্বভাব তাদের। খুব দ্রুতই খোলস পাল্টে ফেলে।
এক ব্যক্তিকে বলেঃ “প্রশ্নকারীর জন্য উচিত যে, সে প্রশ্নের মাঝে যে প্রকার আছে তার প্রমাণ কুরআনে কারীম এবং হাদীস থেকে দিবে। প্রমাণ দেবার পর প্রশ্ন করবে। এ সকল প্রকার একেবারেই ফালতু এবং মনগড়া”। {আলজামাআতুল কাদিমাহ-২৯}
আমরা প্রশ্ন করি, আপনি যেসব প্রশ্ন করে থাকেন, এসব কি কুরআন ও হাদীসে আছে?

আপনি আপনার কিতাবে উসূলে হাদীসের পরিভাষা, আর রাবীদের প্রকার বর্ণনা করেছেন। এসবের প্রমাণ কুরআন ও হাদীস থেকে দিয়ে জবাব দেয়ার সহীহ পদ্ধতি প্রতিষ্ঠা করে দিন।

আপনি কুরআন ও হাদীস মানার দাবী করে থাকেন। কিন্তু উভয়টিকে একইভাবে মানেন না। কুরআনের কোন আয়াতের সনদ খুঁজে দেখেন না। কিন্তু হাদীসকে সনদ ছাড়া একেবারেই মানেন না। এ পার্থক্য কুরআনের আয়াতে কিংবা হাদীসে আছে? না নিজের মনগড়া উসূল?

কারীগণ এ ব্যাপারে একমত যে, কুরআনে পাকের সাতটি মুতাওয়াতির কিরাত রয়েছে। যাতে পরস্পর ভিন্নতা ও মতভেদ রয়েছে। চার ইমাম, যাদের আপনি হক মানেন, কিন্তু তাদের মতভেদকে সহ্য করতে পারেন না। তাই তাদের ছেড়ে দিয়েছেন। কিন্তু সাত কারীদের কেরাতের মতভেদকে কোন আয়াত বা হাদীসের কারণে সহ্য করছেন? তাদের মত এটাকেও কেন ছেড়ে দিচ্ছেন না? যাতে করে কুরআন থেকেও মুক্তি পেয়ে যেতে পারেন।

জনাব এবং জনাবের ফিরক্বার লোকেরা সাত কিরাতে কুরআন তিলাওয়াত করেন, না এক কিরাতে? এক কিরাতে কুরআন তিলাওয়াত করলে সাত কিরাতের সওয়াব পাওয়া গেলে, চার ইমামের মধ্য থেকে এক ইমামের তাকলীদ করলে পূর্ণ সুন্নতের উপর আমলের সওয়াব পাওয়া যায় কি যায় না? যদি না যায়, তাহলে এ দু’টির মাঝে পার্থক্যটি কুরআন বা হাদীস দিয়ে স্পষ্ট করে দিন।

সাত কেরাতের মাঝে ছয় কেরাতকে সর্বদার জন্য ছেড়ে দিয়ে শুধু এক কিরাতে সর্বদা তিলাওয়াত করা আপনার রায়ের উপর নির্ভরশীল? না কুরআন বা হাদীসের হুকুম? রেফারেন্সসহ বলুন।

এ সাত মতভেদপূর্ণ কেরাতের কারীদের মাঝে মক্কী, মাদানী, বসরী কারীও ছিল। কিন্তু আপনি সবাইকে ছেড়ে দিয়ে কারী আসেম কুফী রহঃ এর কেরাতকে কেন আঁকড়ে ধরলেন? মক্কা মদীনার সাথে সম্পর্ক ছেদ করে এ ইরাকীর সাতে সম্পর্ক জোড়লেন কেন? যাদের ব্যাপারে আপনার ভাষ্য হল, “ইরাকীরা নামকাওয়াস্তে মুসলমান ছিল। না তাদের কুরআনের সাতে কোন মোহাব্বত ছিল, না হাদীসের সাথে। তারাতো ফেতনাবাজ আর দ্বীনের দুশমন ছিল”। {তাফহীমুল ইসলাম-১১৪}

আপনার নিকট এ সাত কিরাতের সমষ্টি কুরআন? না প্রতিটি কিরাত আলাদা আলাদা পূর্ণ কুরআন? যদি সব ক’টির সমষ্টি কুরআন হয়, তাহলে আল্লাহ তাআলার হুকুম ادخلوا فى السلم كافة তথা “তোমরা ইসলামে পরিপূর্ণভাবে প্রবিষ্ট হও” আয়াত অনুপাতে আপনারা বাকি কেরাতের উপর কেরাত কেন করেন না? শুধুমাত্র সপ্তমাংশের উপর তেলাওয়াত কেন?

যদি প্রতিটি কেরাত আলাদা আলাদা কুরআন হয়ে থাকে, তাহলে কি রাসূল সাঃ এর উপর সাতটি কুরআন নাজিল হয়েছিল? যেমনিভাবে আপনারা এক দ্বীনের উপর চার মাযহাব হওয়ায় বদনাম করে থাকেন। এক আল্লাহ আর কুরআন সাতটি বলা কি জায়েজ আছে?

যদি কোন অমুসলিম আপনার ফেরক্বায় অন্তর্ভূক্ত হয়, তাহলে আপনি তাকে সাত কেরাতের মাঝে কোন কুরআন দিবেন, যাতে সে হুকুম ادخلوا فى السلم كافة তথা “তোমরা ইসলামে পরিপূর্ণভাবে প্রবিষ্ট হও” আয়াত অনুপাতে সাচ্চা মুসলমান হতে পারে?
১০
এই সাত কিরাত কি রাসূল সাঃ এর উপর নাজিল হয়েছিল? না এ সাত কারীর উপর? এ সাতজন কারী কি কুরআন প্রণেতা ছিল? না কুরআন প্রচারক?
১১
আপনি আপনার ফেরক্বা ১৩৯৫ হিজরীতে করাচিতে বানিয়েছেন। আর কুরআন কুফাওয়ালা [কারী আসেম কুফী রহঃ এর কেরাতের কুরআন] মেনেছেন। আর রুশ এলাকার লেখা সিহাহ সিত্তার কিতাব মানলেন। আপনার মক্কা মদীনার সাথে এত ঘৃণা ও বিদ্বেষ কেন?
১২
আপনার আসমাউর রিজাল গ্রন্থের সাথে ভাসা ভাসা সম্পর্ক জানি। আপনি বলেনতো, কারী আসেম কুফী রহঃ কে ঐক্যমত্বের ভিত্তিতে সিক্বা পেয়েছেন নাকি তিনি মুখতালাফ ফী তথা মতভেদপূর্ণ রাবী? অবশেষে জঈফ আর মুখতালাফ ফী ব্যক্তির কুরআনই আপনার কেন পছন্দ হল? এসব কি আপনার নিজের মনগড়া মত না কুরআন ও হাদীসের কোন দলীল আছে?
১৩
বুখারী শরীফের বর্ণনা অনুপাতে রাসূল সাঃ, আবু বকর রাঃ এবং হযরত উমর রাঃ এর জমানায় সাত হরফের কিরাতেই কুরআন তিলাওয়াত হতো। হযরত উসমান রাঃ ছয় হরফে কুরআনে কারীম তেলাওয়াত করাকে শক্তভাবে বারণ করেছেন। এখন আপনি রাসূল সাঃ এর অনুসরণে সাত কিরাতে কুরআন তিলাওয়াত করে থাকেন, না হযরত উসমান রাঃ এর রায়ের তাকলীদ করে থাকেন? খলীফা সাহেবের ছয় অথবা ছষ্ঠমাংশ কুরআনের তেলাওযাত থেকে বাধা দেয়ার কোন অধিকার কি কুরআন ও হাদীস অনুযায়ী ছিল? যদি থেকে থাকে, তাহলে উক্ত আয়াত বা হাদীস উপস্থাপন করুন। যা হযরত উসমান রাঃ এ থেকে নিষেধ করেছেন।

অগভীর পড়াশোনা

এ ফিরক্বার প্রতিষ্ঠাতা সত্যই বলেছেন যে, অগভীর দৃষ্টিতে গবেষণা করলে হাদীস মানুষকে গোমরাহ করে দিতে পারে। পড়াশোনায় গভীরতা না থাকলে হাদীসের সুক্ষœ অর্থ বুঝতে সক্ষম হবে না। অগভীর দৃষ্টিতেতো কুরআন পড়লেও গোমরাহ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। {তাফহীম-২২৬}
তারপর তিনি লিখেনঃ যদি কুরআনের ব্যাখ্যাকে এভাবে স্বাধীন করে ছেড়ে দেয়া হয়, তাহলে কুরআনে কারীম বাচ্চাদের খেলার বস্তুতে পরিণত হবে। একদল এক অর্থ করবে, আরেক দল করবে ভিন্ন অর্থ। এসবের সবচে’ বড় ক্ষতি এটা হবে যে, মানুষ নাস্তিক হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। ÑÑÑÑ এ মতভেদ এবং নাস্তিকতা থেকে বাঁচার জন্য জরুরী হল, কুরআনে কারীমের প্রতিটি শব্দের একটি অর্থ সুনির্দিষ্ট করে দেয়া। {তাফহীম-৪৩}
তার এ বক্তব্য দ্বারা একথা বুঝা গেল যে, কুরআন দ্বারা গোমরাহীও প্রসার হতে পারে। সেই সাথে নাস্তিকতাও বিস্তার লাভ করতে পারে। যদি কেউ অগভীর পড়াশোনা আর স্বীয় রায়ের উপর আত্মপ্রশান্ত হয়ে থাকে।
কিন্তু আফসোসের বিষয় হয়, এ ফিরক্বার প্রতিষ্ঠাতা নিজেই এ রোগের রোগী। আল্লাহ তাআলা এবং তার রাসূল সাঃ স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন যে, কুরআন ও হাদীসের বিষয়ে বিশেষজ্ঞ প্রাজ্ঞ ফক্বীহদের কথা গ্রহণযোগ্য। উম্মতের মাঝে এটাই একমাত্র দল। যাদের সিদ্ধান্ত সঠিক হলে সওয়াব দু’টি আর ভুল হলে সওয়াব একটি হয়ে থাকে। তাই ফক্বহী ও তাদের মুকাল্লিদের কোন ভয় নেই। তাদের দ্বীনী আমল সুনিশ্চিতভাবে কবুল হবে। একটি সওয়াব সুনিশ্চিত আরেকটি পাওয়ারও আশা রয়েছে।
তবে এখানে ফক্বীহ দ্বারা উদ্দেশ্য ঐ সকল ফক্বীহ, যারা শরয়ী দলীল তথা ইজমায়ে উম্মত অর্থাৎ উম্মতের ঐক্যমত্বের ভিত্তিতে ফক্বীহ হওয়া স্বীকৃত। যদি শরয়ী দলীলের ভিত্তিতে ফক্বীহ না হয়ে থাকেন, তাহলে তাদের বিষয়টি ভিন্ন।

কুরআন গবেষণা

এ ফিরক্বার প্রতিষ্ঠাতা বলেনঃ “কুরআন সর্বদিক থেকে পরিপূর্ণ কিতাব। এটি একটি আনন্দসূচক কথাতো অবশ্যই। কিন্তু আসলে তাতে কিছুই নেই। তাতে না নামাযের পদ্ধতি আছে। না আমলের। তারপরও এটি পরিপূর্ণ কিতাব। এটি একটি অত্যাশ্চর্য ব্যাপার”। {তাফহীম-২২৬}
তিনি আরো বলেনঃ “কুরআনের ইসলামতো খুবই সহজ। দুআ চেয়ে নিলেই নামায আদায় হয়ে যায়। পবিত্রতা অর্জন করে নাও তো যাকাত আদায় হয়ে যাবে। নামাযে থাকা অবস্থায় বাতাস বের হয়ে গেলেও অজু ঠিক থাকবে। নাচ-গানের মাহফিল আয়োজন কর, কোন সমস্যা নেই। সুক্ষাতিসুক্ষè বিষয়ে নিয়ে অপ্রয়োজনীয় গবেষণা কর, কোন সমস্যা নেই। তাস, দাবা খেলে মজা কর, কোন অসুবিধা নেই। বেশ্যাখানা খোল কোন নিষিদ্ধতা নেই। {তাফহীম-২৩২}
কুরআনে কারীমে উলঙ্গতার শিক্ষা আছে। [নাউজুবিল্লাহ!] {প্রাগুক্ত-২৪৬}
এবার কোন কাফের একথা বলতে পারে যে, এ ফিরক্বার ঘর কুরআনের এ কথিত ইসলাম থেকে খালি? আসল কথা হল, এ ফিরক্বার প্রতিটি সদস্য মূলত এ কথিত উলঙ্গতার আলিঙ্গন পাওয়ার লালসায়ই এই নব মুসলিম সেজেছে।
এরাই সেসব মুসলমান! যাদের দেখে ইহুদী-খৃষ্টানরাও লজ্জা পায়।
তিনি আরো জোশের সাথে বলেছেনঃ “কুরআনে কারীমেও এমন আয়াত পাওয়া যায়, যা দ্বারা বাহ্যিকভাবে রাসূল সাঃ এর মর্যাদা বিষয়ে ধোঁকা খেতে হয়”। {প্রাগুক্ত-৩৪৭}
“এ আয়াত এবং অন্য আয়াত দ্বারা স্পষ্ট হয় যে, রাসূল সাঃ মাআজাল্লাহ গোনাহগার ছিলেন। এ আয়াত দিয়ে প্রমাণিত হয় যে, রাসূল সাঃ ইসলামী শরীয়তের মাঝে পরিবর্তন করে ফেলতেন। সেটাও আবার নিজের স্ত্রীদের সন্তুষ্ট করার জন্য। উপরোক্ত আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হল যে, ইসলাম হিংসাকে খুবই পছন্দ করে থাকে। এর দ্বারা ইসলামের দুশমনদের জন্য ইসলামের উপর ঠাট্টা করার সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়া হচ্ছে না? ”{প্রাগুক্ত-২৪৮}
তিনি আরে বলেনঃ “আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেনঃ লোকদের হিসাবের সময় ঘনিয়ে এসেছে, অথচ সে এখনো গাফলতীতে নিমজ্জিত আছে। আল্লাহ তাআলাতো বলছেন যে, হিসাবের সময় সন্নিকটে। কিন্তু কাল সাক্ষ্যি যে, প্রায় এক হাজার চার শত বছর অতিক্রন্ত হয়ে গেছে কিন্তু হিসাবের দিন এখনো আসেনি। এটা কেমন সন্নিকটে হল?”। {প্রাগুক্ত-২৬৪}
“কুরআনে পাকের অকাট্যতার ব্যাপারেতো কুরআনের আয়াত দ্বারাই চোট লেগে যায়।” {প্রাগুক্ত-২৫৫}
তিনি আরো লিখেনঃ “কেউ মুসলমান থেকেও কুরআনে পাককে অস্বিকার করতে পারে। সে বলতে পারে যে, আমি আল্লাহ তাআলাকে এক বিশ্বাস করি, ফেরেস্তা, আসমানী কিতাব এবং রাসূলদের উপর ঈমান রাখি। কিন্তু এ কুরআন সেই কুরআন নয় যেটা আল্লাহ তাআলা বলেছিলেন। এতে বিকৃতি সাধিত হয়েছে। আর মুসলমানদের এক বিরাট অংশ এ বিকৃতিকে বিশ্বাস করে থাকে। আর খোদ কুরআনে কারীমের ইবারতও এর উপর সাক্ষ্যি। [নাউজুবিল্লাহ]{প্রাগুক্ত-২৬৯}
এ ফিরক্বার এসব বক্তব্য পড়ার পর মাথায় চক্কর খেয়ে যায়। হায়! হানাফী শাফেয়ী নাকি অমুসলিম। আর যে ব্যক্তি কুরআনকে বিকৃত গ্রন্থ বলছে কুরআনকে অকাট্য নয় বরে বিশ্বাস করছে, আর রাসূল সাঃ কে কুরআন পাকও বলছে না এমন ব্যক্তি ও নাকি মুসলিম!

ফিরক্বাটির প্রতিষ্ঠাতা এবং সুন্নত

হাদীসের যতগুলো সনদযুক্ত কিতাব বর্তমান জমানায় পাওয়া যায়, তাদের সংকলকগণ হয়তো মুজতাহিদ যেমন ইমামে আজম আবু হানীফা রহঃ, কাজী আবু ইউসুফ রহঃ, ইমাম মুহাম্মদ রহঃ, ইমাম মালিক রহঃ, ইমাম শাফেয়ী রহঃ, ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল রহঃ প্রমূখগণ। যাদেরকে এ ফিরক্বার প্রতিষ্ঠাতা শরীয়ত বিকৃতিকারী বলে মন্তব্য করে থাকে। আর শরীয়ত বিকৃতি করা কুফরী এবং শিরক। তাদের উপর কুরআনের আহবার এবং রুহবানের বক্তব্য সংশ্লিষ্ট আয়াত ফিট করে থাকে।
কিংবা সনদযুক্ত হাদীস সংকলকগণ মুকাল্লিদ। যাদের উল্লেখ করা হয়েছে তাবাক্বাতে হানাফিয়্যাহ, তবাক্বাতে মালিকিয়্যাহ, তবাক্বাতে শাফিয়িয়্যাহ এবং তবাক্বাতে হানাবেলাতে। তাদেরকে এ ফিরক্বার প্রতিষ্ঠাতা মুশরিক ও অমুসলিম বলে থাকে। আর অমুসলিমদের সংকলিত কিতাব ফিরক্বা প্রতিষ্ঠাতার কাছে অগ্রহণীয় ও অনির্ভরযোগ্য হওয়ার কথা। আর মুকাদ্দিমায়ে মুসলিমের ১১ নং পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে, হাদীসের রাবীগণ আহলে সুন্নত, যারা ফিরক্বা প্রতিষ্ঠাতার কাছে অমুসলিম।
ফিরক্বা প্রতিষ্ঠাতা সাহেব শুধুমাত্র একটি হাদীস পেশ করতে পারবে না, যে হাদীসের প্রতিটি রাবীর ক্ষেত্রে একথা প্রমাণ করতে পারবে যে, তিনি মুজতাহিদও ছিলেন না, আবার কারো তাকলীদও করতেন না, বরং তিনি গায়রে মুকাল্লিদ ছিলেন। এমন একজন রাবীর নাম উচ্চারণ করতে পারবে না।

হাদীস পর্যালোচনা

হাদীস বিষয়ে তিনটি বিষয় পর্যালোচনা যোগ্য। যথা-

এটি রাসূল সাঃ থেকে প্রমানিত হতে হবে।

এ হাদীসের যে অর্থ আমরা বুঝতে পেরেছি, সেটি রাসূল সাঃ এর উদ্দেশ্য হতে হবে।

এ হাদীস যদি কোন আয়াত বা হাদীস কিংবা কোন আমলে সাথে বিপরীতমুখী হয়, তাহলে তা সমাধান তালাশ করতে হবে।
আর তিনটি কাজই করতে হবে দলীলের ভিত্তিতে। দলীল হলে হবে না।
ফিরক্বাটির প্রতিষ্ঠাতার কাছে দলীল কেবল কুরআন ও হাদীস। অর্থাৎ আল্লাহর ফরমান বা রাসূল সাঃ এর বয়ান তথা বর্ণনা হবে। তাই ফিরক্বা প্রতিষ্ঠাতার উপর আবশ্যক ছিল যে, তিনি যে হাদীসকে সহীহ বা জঈফ ইত্যাদি বলে থাকেন, সে ব্যাপারে আল্লাহ ও রাসূল সাঃ এর ফরমান নকল করবেন যে, এ হাদীস সহীহ আর এ হাদীস জঈফ।
মুহাদ্দিসীনে কেরাম যে হাদীসকে সহীহ বা জঈফ বলেছেন, এসব তারা বলেছেন, তাদের নিজেদের রায় এবং ইজতিহাদের ভিত্তিতে। আর ফিরক্বা প্রতিষ্ঠাতা লিখেছেন যে, “কোন ব্যক্তির ইজতিহাদ ও কিয়াস না সেটি আল্লাহর স্থানে না শরীয়তের কোন মূল ভিত্তি।” {জামাআতুল মুসলিমীন আওর আহলে হাদীস-৪}
এতদসত্বেও ফিরক্বা প্রতিষ্ঠাতা একটি হাদীসের সহীহ-জঈফ হওয়ার উপর আল্লাহ ও রাসূল সাঃ এর কোন বক্তব্য উপস্থাপন করতে পারেনি। খাইরুল কুরুনের পরবর্তী উম্মতীরা যাকে নিজস্ব রায়ের ভিত্তিতে সহীহ এবং জঈফ বলছেন। সে তাদেরই অন্ধ তাকলীদ করছে। তারপরও দৃঢ়তার সাথে লিখেছেঃ “জামাআতুল মুসলিমীন আল্লাহর রহমাতে তাকলীদ থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। আমরা সেসব কাজই কেবল করে থাকি, যা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। আমাদের এখানে কিয়াস ও রায়ের দ্বারা মাসআলা হয় না। তাই আমাদের তাকলীদের প্রয়োজনই নেই। {প্রাগুক্ত-৭}
তাকলীদের সাগরে ডুব দিয়ে বলছে যে, তাকলীদ তারা করে না। তাদের নিকট মুজতাহিদ ইমাম শাফেয়ী রহঃ এর তাকলীদতো শিরক। কিন্তু তাদের মুকাল্লিদ ইবনে হাজার রহঃ এবং ইমাম নববী রহঃ প্রমূখদের তাকলীদ করা ফরজে আইন।
আশ্চর্য ব্যাপার! হাজারকে মানা শিরক আর হাজারের ছেলেকে মানা ঈমান?!
হাদীস পর্যালোচনায় দ্বিতীয় আলোচ্য বিষয় হল এর উদ্দেশ্য বুঝা। শুধুমাত্র তা প্রমাণিত হওয়া যথেষ্ট নয়। যতক্ষন পর্যন্ত না এর সঠিক উদ্দেশ্য বুঝা না যাবে।
দেখুন! যেসব আয়াত দ্বারা কাদিয়ানীরা খতমে নবুওয়াতকে অস্বিকার করা এবং ঈসা আঃ এর মৃত্যুর কথা বলে থাকে, এবং আহলে কুরআনের অনুসারীরা হাদীসকে অস্বিকার করে থাকে সেসব হাদীসের প্রমাণিত হওয়ার ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। শুধুমাত্র তার উদ্দেশ্যের মাঝে মতভেদ।
মুহাদ্দিসীনে কেরাম শুধুমাত্র নিজের রায় অনুযায়ী কিছু হাদীসকে সহীহ আর কিছু হাদীসকে জঈফ বলেছেন। কিন্তু অন্য দুই বিষয়ের ক্ষেত্রে মুহাদ্দিসীনদের নিজস্ব রায়ের কোন দখল নেই। সেই দুই বিষয়ের তাহক্বীক করা ফুক্বাহায়ে কেরামের জিম্মাদারী।
ইমাম বুখারী রহঃ বলেনঃ الفقه ثمرة الحديث তথা ফিক্বহ হল হাদীসেরই ফল। ইমাম তিরমিজী রহঃ বলেনঃ ফুক্বাহায়ে কেরাম এমনটি বলেছেন, আর ফুক্বাহায়ে কেরাম হাদীসের অর্থ বেশি বুঝতেন। {তিরমিজী}
রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ رب حامل فقه غير فقيه তথা অনেক ফিক্বহ বহনকারী ফক্বীহ হয় না। {কানযুল উম্মাল, হাদীস নং-২৯০০৪, মাযমাউজ যাওয়াদ, হাদীস নং-১৮৪, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২১৫৯০}
ফিরক্বা প্রতিষ্ঠাতা ফক্বীহদের শরীয়ত বিকৃতিকারী বলে থাকে, অথচ সে নিজেই হাদীসের উদ্দেশ্যের ক্ষেত্রে নিজের রায় আর শরীয়ত বিকৃত করে যাচ্ছে। হাতির দাঁত খাওয়ার জন্য আবার দেখানোর জন্য এ উপমাটি সে পূর্ণ করে দিল।
তার উপর দায়িত্ব ছিল, যেখানে কুরআন ও হাদীসের উদ্দেশ্য বুঝার ক্ষেত্রে উম্মতীদের মাঝে মতভেদ হয়ে গেছে সেখানে সে আল্লাহ ও রাসূল সাঃ থেকে তার বর্ণিত উদ্দেশ্য প্রমাণ করে দেখাবে।
এটাতো তার সাধ্যের বাইরের বিষয়, কিন্তু সে তার নিজের বুঝকে আল্লাহ ও রাসূল সাঃ এর সমঝের মত মনে থাকে। সে সমস্ত উম্মতীদের ব্যাপারে বলে থাকে যে, তাদের থেকে শুধু ভুল হওয়ার সম্ভাবনাই নেই, তাদের সবারই ভুল হয়েছে। কিন্তু তার নিজের বুঝকে ভুল থেকে মুক্ত মনে করে। যে উল্টা-পাল্টা কথা তার মনে হয়েছে, সেটাকেই আল্লাহ ও রাসূল সাঃ এর বক্তব্য চালিয়ে দিচ্ছে। যদি কেউ তার মনগড়া বক্তব্যকে না মানে, তাহলে সে একথা বলে না যে, উক্ত ব্যক্তি তার বুঝ ও সমঝকে অস্বিকার করছে। বরং সে দাম্ভিকতার সাথে বলে থাকে যে, উক্ত ব্যক্তি আল্লাহ ও রাসূল সাঃ কে অস্বিকার করছে। তার এ বিদআতি মতবাদকে অস্বিকারকারীদের আল্লাহ ও রাসূল সাঃ এর অস্বিকারকারী সাব্যস্ত করছে।
এমনিভাবে হাদীস পর্যালোচনার তৃতীয় অংশ তথা হাদীসের পারস্পরিক বাহ্যিক বৈপরীত্ব নিরসন করার ক্ষেত্রে তার পদ্ধতি খুবই অবাক করা। সে হাদীসের ভুল অনুবাদ করে হাদীসের মাঝে প্রকৃত বৈপরীত্ব স্থাপন করে ফেলছে। সেই সাথে যেসব হাদীস তার এ ভুল অনুবাদের বিপরীত হবে, সব ক’টিকে সে হাদীস হওয়ার কথাই অস্বিকার করে বসে।

উপমা

হাদীসে রয়েছে যে, রাসূল সাঃ জুতা পরিধান করে নামায পড়তেন। এটি মুতাওয়াতির সূত্রে বর্ণিত হাদীসে রয়েছে। প্রায় ৫৬ জন সাহাবী এ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে একটি গায়রে মুতাওয়াতির হাদীসে রয়েছে যে, রাসূল সাঃ জুতা পরিধান করা ছাড়াও নামায পড়েছেন। এ হাদীস যদিও সনদের দিক থেকে মুতাওয়াতির নয়। কিন্তু উম্মতের মাঝে আমল হিসেবে এ হাদীস মুতাওয়াতির। আর এ দুই হাদীসের মাঝে মূলত কোন বৈপরীত্বও নেই। কিন্তু যদি প্রথম হাদীসটির অনুবাদ এই করা হয় যে, “রাসূল সাঃ সর্বদাই জুতা পরিধান করে নামায পড়তেন, জীবনে কোনদিন জুতা খুলে নামায পড়েননি। যে ব্যক্তি জুতা খুলে নামায পড়বে, সে নবীওয়ালা নামায পড়ে না”। এ অনুবাদকারী ব্যক্তি শুধু রাসূল সাঃ এর উপরই শুধু মিথ্যাচার করছে না, বরং সাথে সাথে অন্য হাদীসকেও অস্বিকার করছে।
এমনিভাবে রাসূল সাঃ তাহরীমার পর রফয়ে ইয়াদাইন করেছিলেন। তিনি তাহরীমার পর রফয়ে ইয়াদাইন করতেন না। দুই সময়ে এই আমল হলে এতে কোন বৈপরীত্ব নেই। কিন্তু যদি কেউ এ মিথ্যা কথা বলে যে, রাসূল সাঃ তাকবীরে তাহরীমার পর সর্বদা রফয়ে ইয়াদাইন করতেন। জীবনে একটি নামাযও তাকবীরে তাহরিমার পর রফয়ে ইয়াদাইন ছাড়া পড়েননি।
একথা বলা শুধু রাসূল সাঃ এর দিকে মিথ্যাচার করার সাথে সাথে রফয়ে ইয়াদাইন ছেড়ে দেয়ার হাদীসকে অস্বিকার করাও হয়ে থাকে।
আমরা ফিরক্বা প্রতিষ্ঠাতাকে বলে থাকি যে, তুমি সর্বদা রফয়ে ইয়াদাইন করার মিথ্যা বলা ছেড়ে দাও, তাহলে তোমার হাদীসের মাঝে কোন বৈপরীত্ব ও দৃষ্টিগোচর হবে না, সেই সাথে অন্য হাদীসকে অস্বিকার করাও হবে না।
কিন্তু সে তা না মেনে জিদ করে বশে যে, “না আমি এ মিথ্যা বলা ছাড়বো, তবে প্রত্যেক ঐ হাদীস যেটা আমার এ মিথ্যার বিপরীত হবে, আমি সেটাকে মিথ্যা বলে বেড়াবো, কিন্তু নিজের মিথ্যার উপর অটল থেকে যাবো”।

হাদীসের পোষ্ট মর্টেম

হাদীসের সহীহ বা জঈফ বলার জন্যতো জরুরী ছিল যে, আল্লাহ ও রাসূল সাঃ থেকে প্রমাণ উপস্থাপন করবে। কিন্তু সেটাতো তার সাধ্যের বাইরের বিষয়। আসমাউর রিজাল এবং উম্মতীদের রায়ের উপর ভিত্তিশীল হাদীস ব্যবহার করার ক্ষেত্রেও অনেক খেয়ানত করেছে সে। সামান্য সামান্য বিষয়ে সে হাদীসকে মিথ্যা বলে মন্তব্য করেছে যে, হাদীসটিতে ইনকিতা আছে।
প্রথথমতঃ ইনকিতা এর জারহ এর ব্যাপারেও যথেষ্ট মতভেদ আছে। যারাও একে জারাহ বিশ্বাস করে থাকেন, তারাও বলেন যে, এ জারাহ মুতাবিআত ও শাওয়াহেদ দ্বারা শেষ হয়ে যায়।
কিন্তু এ জালিম সহীহ হাদীসকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার জন্য কোন মূলনীতির তোয়াক্কা করেনি। তার কাছে একটি প্রশ্ন করিঃ “তাবেয়ীন রহঃ সম্পর্কে তোমার খারাপ ধারণা এতটাই প্রবল যে, তুমি তাদের মুরসাল শাওয়াহেদ ও মুতাবিআত এর পরও তা দলীল হয় না। তাহলে তোমার কাছে বুখারীর [মৃত্যু-১৫৬] এর সনদহীন তালীক দলীল হয় কি করে?
জারাহ-তাদীলের কিতাব তাফহীমুল ইসলামের ভিত্তি মূলত দুই কিতারেব উপর রাখা হয়। একটি হল, ইবনে হাজার রহঃ {মৃত্যু ৮৫২ হিজরী] এর তাকরীবুত তাহজীব এবং শরফুদ্দীন গায়রে মুকাল্লিদের {মৃত্যু-১৩৮১ হিজরী] এর কিতাব বুরুকে ইসলাম।
উভয়জন এ ফিরক্বার প্রতিষ্ঠাতার কাছে গায়রে মুসলিম। এর উপর এমন অন্ধ তাকলীদ তার যে, প্রথম নয় শতাব্দীর মাঝে রাবীকে দলীল ছাড়াই জঈফ বলে বেড়াচ্ছে। সনদহীন বর্ণনা করা হচ্ছে। কিন্তু হাদীসকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার জযবায় আট শতাব্দীর ইনকিতা তথা বিচ্ছিন্নতা দৃষ্টিগোচর হয় না।
দ্বিতীয়জন প্রথম চৌদ্দ শতাব্দীতে এসে প্রথম শতাব্দীর রাবীদের দলীলহীন এবং সনদহীন জারাহ নকল করে যাচ্ছে। কিন্তু তেরশত বছরের বিচ্ছিন্ন তথা ইনকিতা দৃষ্টিতে পড়ছে না।
খাইরুল কুরূনের সাথে দুশমনীর এর চেয়ে নিকৃষ্ট উপমা আর হতে পারে না।
আপনি কোন আয়াত বা হাদীসতো পেশ করুন, যাতে বলা হয়েছে যে, আট বছরের ইনকিতা গ্রহণীয় নয়, তবে আট শত সালের ইনকিতা গ্রহণীয়। আর তের তিনের ইনকিতা গ্রহণীয় নয়, কিন্তু তেরশত বছরের ইনকিতা গ্রহণীয়!
মোটকথা, রাসূল সাঃ এর হাদীসকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার জন্য এ ব্যক্তি প্রকাশ্য মুনকিরীনের হাদীসকেও হার মানিয়ে দিয়েছে।

ইমাম আজম আবু হানীফা রহঃ

ইতোপূর্বে আমি একথা উল্লেখ করেছি যে, হাদীসের পর্যালোচনার জন্য তিনটি বিষয়ের প্রয়োজন। যথা-১- হাদীস প্রমাণীত হওয়ার তাহকীক করা। ২- দালালতে হাদীস তথা হাদীসের মর্মার্থের তাহকীক। ৩- হাদীসের বাহ্যিক বৈপরীত্ব নিরসন।
এ তিনটি বিষয়ের কোনটি কুরআন ও হাদীসে বিদ্যমান নয়। এ কারণে আমরা উম্মতীদের প্রতি মুখাপেক্ষী।
মুহাদ্দিসীনে কেরাম শুধু প্রথম বিষয়টির উপর নিজেদের রায় দিয়েছেন।
তবে হ্যাঁ, ফুক্বাহায়ে কেরাম এবং মুজতাহিদীনগণ তিনটি বিষয়েরই পরিপূর্ণ তাহকীক করে তার নির্যাস থেকে আমলযোগ্য মাসআলাকে উপস্থাপন করে দিয়েছেন্ হযরত মুয়াজ বিন জাবাল রাঃ এর প্রসিদ্ধ হাদীস অনুপাতে যে বিষয় কিতাবুল্লাহ ও সুন্নতে না পাওয়া যায় তাতে ইজতিহাদের ভিত্তিতে ফায়সালা হবে। এ কারণেই আমরা উক্ত তিনটি বিষয়ের ক্ষেত্রে ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর তাকলীদ করে থাকি। কিন্তু মাসঊদী ফিরক্বারা মাসউদের মত অযোগ্য ব্যক্তির কথার তাকলীদ করে থাকে। তাদের দু’জনের মাঝে কি বিস্তর ফারাক।
এ ব্যাপারে এ ফিরক্বার প্রতিষ্ঠাতার নিজের স্বীকারোক্তিটি একটু পড়ে নিন-
এক ব্যক্তি তাকে চিঠি লিখলঃ “আমি আল্লাহর রহমাতে হানাফী। কুরআনে কারীম, রাসূল সাঃ এর সুন্নত এবং সাহাবায়ে কেরামের মত ও পথের পর ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর অনুসরণ করে থাকি। আর নিজেকে হানাফী বলে থাকি। আল্লাহর রহমাতে আমি সন্তুষ্ট। তবে হানাফী হওয়াকে আমি ঈমানের অংশ মনে করি না। তবে তার অনুসরণ এ কারণে করে থাকি যে, তিনি কুরআন ও হাদীস খুব ভাল করে বুঝেছিলেন। হাদীস বুঝা ও যাচাই বাছাই করা অনেক যোগ্যতার কাজ। তিনি কুরআন ও হাদীস খুব বুঝতেন। সেই সাথে আমাদের খুব সহজ পদ্ধতিতে বুঝিয়েছেন। এ কারণেই এক হাজার বছরের অতিরিক্ত সময়কাল ধরে মানুষেরা তার অনুসরণ করে আসছে। ইনশাআল্লাহ কিয়ামত পর্যন্ত মানুষ তা করতে থাকবে। এবার আপনি আন্দাজ করে নিন যে, এই এক হাজার বছরের মাঝে কত বড় বড় মুহাদ্দিস, যোগ্য আলেম, আবেদ, আল্লাহওয়ালা , মুজতাহিদ, ইমাম, ফক্বীহ অতিক্রান্ত হয়েছেন। যারা সবাই তার মুকাল্লিদ ছিলেন এবং তার অনুসরণ করেছেন। ইমাম সাহেব রহঃ তাবেয়ী ছিলেন। ইমাম সাহেব রহঃ এর মুবারক চোখ সাহাবীদের প্রতক্ষ্য করেছেন।
ভেবে দেখুন! ইমাম সাহেব রহঃ এর মর্যাদা কত বড়? কালের বড় বড় ইমাম তার ছাত্র ছিলেন। বর্তমানে যদি কেউ নিজের মতকে তার উপর প্রধান্য দেয়, এবং তাকে মন্দ বলে বোকার খাতায় নিজের নাম লিখাতে চায় তাহলে এটি তার আত্মপ্রবঞ্চনা আর মুর্খতা বৈ কিছু নয়। ”{খুলাসায়ে তালাশে হক-১৫}
উক্ত চিঠির জবাবে ফিরক্বা প্রতিষ্ঠাতা লিখেনঃ “আমি এসব ফযীলতকে স্বীকার করি। যা আপনি ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর ব্যাপারে বর্ণনা করেছেন। আমি কোন বিষয়ে তার সম পর্যায়েরতো দূরে থাক তার পায়ের ধুলিকণা সমও নই। {খুলাসায়ে তালাশে হক-২২}
মাসঈদী ফিরক্বার লোকেরা একটু ভেবে দেখুন! যে ব্যক্তি ইমাম আজম আবু হানীফা রহঃ এর তাকলীদ ও পথপ্রদর্শনে কুরআন ও সুন্নতের উপর আমল করে তাদেরতো আপনারা মুশরিক এবং গায়রে মুসলিম বলে থাকেন। অথচ আপনাদের ইমাম যে ইমাম আজম রহঃ এর পায়ের ধুলি কণা সমতুল্যও নয় তার তাকলীদ করাকে ফরজ মনে করেন!

0Shares

আরও জানুন

বাউল সম্প্রদায় সম্পর্কে একথাগুলো কি আমরা জানি?

সংগৃহিত  আমরা জানি না লালন আসলে কে? লালন ছিলেন বাউল সম্প্রদায়ের গুরু।আমরা কি জানি কারা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *