প্রচ্ছদ / আহলে হাদীস / প্রসঙ্গ ফাজায়েলে আমলঃ ফাজায়েলে আমলে অসম্ভব সব ঘটনা বর্ণিত তাই এটি পড়া যাবে না?

প্রসঙ্গ ফাজায়েলে আমলঃ ফাজায়েলে আমলে অসম্ভব সব ঘটনা বর্ণিত তাই এটি পড়া যাবে না?

প্রশ্ন

ফাজায়েলে আমল এবং ফাজায়েলে সাদাকাতে শায়েখ এমন কিছু ঘটনার কথা উল্লেখ করেছেন, যা অসম্ভব বিষয়। আর তাতে শিরক ও বিদআতের ও সুযোগ রয়েছে।

উত্তর

بسم الله الرحمن الرحيم

 

যে কাজকে মানুষ অসম্ভব মনে করে, যদি সে কাজ নবী থেকে সংঘটিত হয়, তাহলে একে বলা হয় মুজেজা। যেমন-

১- হযরত সালেহ আঃ এর উটনী পাথর থেকে জন্ম নেয়া।

২- হযরত মুসা আঃ এর লাঠি সাপে পরিণত হওয়া, আর হাত মুবারক আলোকিত হওয়া। তাঁর ও তাঁর জাতির জন্য সমুদ্রের মাঝ দিয়ে পানি সরে রাস্তা হয়ে যাওয়া।

৩- ইবরাহীম আঃ এর জন্য জ্বলন্ত অগ্নিকুন্ড বাগিচায় পরিণত হওয়া।

৪- হযরত ঈসা আঃ এর হাতে মৃত জীবিত হওয়া। এবং অসুস্থ্য হওয়া ইত্যাদি।

৫- রাসূল সাঃ এর হাতের ইশারায় চাঁদ দিখন্ডিত হওয়া।

এ সকল কিছু মুজেজা। এ ছাড়াও রাসূল সাঃ এর অসংখ্যা মুজেজা আছে। যার উল্লেখ হাদীসের কিতাবে বিদ্যমান।
মাওলানা বদরে আলম মিরাঠি রহঃ তরজুমানুস স্ন্নুাহে এবং এবং মাওলানা আহমাদ সাঈদ সুবহানুল হিন্দ রহঃ “মুজিজাতে রাসূল সাঃ” কিতাবে অসংখ্যা মুজেজার ঘটনা উল্লেখ করেছেন।
যদি এমন কাজ যা মানুষ অসম্ভব মনে করে, তা যদি কোন ওলী থেকে এমন কাজ প্রকাশ পায়, তাকে কারামত বলে। যেমন-
হযরত মরিয়ম এর জন্য বন্ধ কামরায় মৌসুমহীন ফল পাওয়া। শুষ্ক গাছ থেকে তাজা খেজুর পাওয়া ইত্যাদি। এমনিভাবে আসহাবে কাহাফের ৩০৯ বছর গোহায় ঘুমিয়ে থাকা।
এছাড়া হাদীসের কিতাব ও ইতিহাসের কিতাবে ওলীদের অসংখ্য কারামাতের ঘটনা লিপিবদ্ধ রয়েছে। যা উল্লেখ করা এখানে অসম্ভব।
অভিযোগকারীগণ যেসব ঘটনাকে অসম্ভব, শিরক-বিদআত বলে মন্তব্য করছেন। সেসব এসবের অন্তর্র্ভূক্ত। তথা এসব হয়তো মুজেজা নতুবা কারামত।
অভিযোগকারীদের কাছে আমাদের অনুরোধ হল, আপনারা যখন এসব ঘটনা পড়েন,তখন তা মুসলমানদের মানসিকতা নিয়ে পড়–ন। খৃষ্টানদের মানসিকতা নিয়ে পড়বেন না।
কেননা, খৃষ্টানরা যখন ঈসা আঃ এর আশ্চর্য ঘটনাগুলো পড়ে, তখন তারা এটা ধারণা করে যে, এসব তাঁর দ্বারাই সংঘটিত হয়েছে। এটা তারই ক্ষমতা। এসব তিনি নিজেই ঘটিয়েছেন।
কিন্তু যখন মুসলমান এসব ঘটনা পড়ে, তখন এ বিশ্বাস করে যে, এ সব কিছু আল্লাহ তাআলা পক্ষ থেকে হয়েছে। আর এতে মূলত আল্লাহ তাআলারই কুদরত নিহিত। অন্য কারো এতে বিন্দুমাত্র হাত নেই।
তাই আমাদের আবেদন হল, যখনই কেউ এসব ঘটনা পড়বেন, তখন মুসলমানী চিন্তা ও বিশ্বাস অনুযায়ী পড়–ন। তাহলে দেখবেন এসব ঘটনায় শিরক বিদআত নয় বরং তাওহীদের স্পষ্ট দৃশ্যই অবলোকিত হবে। আর যদি খৃষ্টানী মেজাজে পড়–ন, তাহলে এসবে শিরক ও বিদআত নজরে ভাসবে। তাই আগে পড়ার দৃষ্টিভঙ্গি ঠিক করে নিন।

যুক্তি

ধরুন যে, এসব ঘটনা শিরক ও বিদআতের কারণ। তাহলে এর মানে হল, এসব কিতাব যে বেশি পড়বে, সে তত বেশি মুশরিক হবে। অথচ আমরা কোন আল্লাহর বান্দা যিনি তাবলীগের সাল লাগিয়েছেন বা দীর্ঘ সময় তাবলীগের সাথে জড়িত, যিনি শিরক করছেন। বরং শিরকের বিরুদ্ধে তাদের আমল ও কঠোরতাই বৃদ্ধি পায়। অভিযোগকারীদের যদি এমন কোন তাবলীগের সাথি নজরে আসে, যিনি তাবলীগে সাল লাগিয়েছেন অথচ শিরক করছেন এমন একজন ব্যক্তির খোঁজ আমাদের দিন। যদি না পারেন। তাহলে খৃষ্টানী মানসিকতা নিয়ে এসব কিতাব পড়া থেকে বিরত থাকুন। বরং মুসলমানদের মানসিকতা নিয়ে তাবলীগী নিসাব পড়ার যেদিন অভ্যাস করতে পারবেন সেদিন এসে এসব কিতাব পড়–ন।

والله اعلم بالصواب

উত্তর লিখনে

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

ইমেইল- ahlehaqmedia2014@gmail.com

lutforfarazi@yahoo.com

 

0Shares

আরও জানুন

‘সুন্দর সম্পর্ক কেন নষ্ট করে দিলা’ বলার দ্বারা কি স্ত্রী তালাক হয়ে যায়?

প্রশ্ন আস্সালামুআলাইকুম মুফতি সাহেব, এই প্রশ্ন কয়েকটা আগেও করেছিলাম, উত্তর না পেয়ে আবার করছি| ওয়াসওয়াসা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *