প্রশ্ন
হযরত শায়েখ জাকারিয়া রহঃ তার কিতাবে ওলীদের জন্য এমন বিষয় প্রমাণিত করেছেন, যা নবীগণ ও সাহাবাগণ এর জন্যও প্রকাশিত হয়নি। তাহলে ওলীগণ কি নবীগণ ও সাহাবীগণ থেকেও শ্রেষ্ঠ কেউ? [নাউজুবিল্লাহ]
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
এর জবাব ইমামুল মুনাজিরীন হযরত মাওলানা মুহাম্মদ আমীন সফদর ওকারবী রহঃ দিয়েছেনঃ
ওহীদ সাহেব লিখেছেনঃ এসব ঘটনা কিভাবে মানা যায়? এতে এমন সব কথার উল্লেখ আছে, যা আম্বিয়ায়ে আলাইহিস সালাম এর জন্যও প্রকাশ পায়নি। রাসূল সাঃ ও সাহাবীদের মাকামতো ওলীদের থেকে অনেক উঁচুতে। তারপরও তাদের ক্ষেত্রে এসব ঘটনা কেন প্রকাশ পেল না?
এটা একেবারে অসম্ভব যে, যেই অলৌকিক ঘটনা রাসূল সাঃ ও সাহাবাগণ কর্তৃক প্রকাশিত হয়নি, সেটা কোন ওলীর হাতে প্রকাশিত হবে।
আমি বললামঃ আশ্চর্য কথা! যেখানে কিয়াস করা জায়েজ সেখানে আপনারা সেটাকে শিরক বলে থাকেন। আর এখন অলৌকিক ঘটনার ক্ষেত্রে কিয়াস করা শুরু করে দিলেন?
আমি আপনাকে জিজ্ঞেস করি, আপনি স্বপ্ন দেখেন নাকি না? সে বললঃ হ্যাঁ দেখি। আমি বললামঃ ঠিক সেগুলিও দেখেন যা নবীগণ ও সাহাবীগণ স্বপ্নে দেখতেন? নাকি আরো অন্য কিছুও দেখেন?
সে বললঃ নবীগণ বা সাহাবগণের কথা এখানে আসছে কেন? আল্লাহ তাআলা যাকে যা ইচ্ছে স্বপ্নে দেখান।
আমি বললামঃ কখনো ছোট বাচ্চা স্বপ্নে দেখে সকালে বলে যে, “আমি আজ রাতে আমাদের বাড়িতে নানা নানুকে আসতে দেখেছি”। সকালে দেখা গেল যে, সত্যিই তাই হয়েছে। স্বপ্নটি সত্য রূপান্তরিত হয়ে গেল।
তাহলে এক্ষেত্রে কেউ যদি স্বপ্নকে এ বলে প্রত্যাখ্যান করে যে, বড়রা কেউ স্বপ্ন দেখেনি, অথচ বাচ্চা কিভাবে দেখল? এটা সম্ভব নয়। তাহলে এটা যৌক্তিক কথা হবে? না বোকামী হবে?
দেখুন! হযরত মরিয়ম আঃ নবী নন ওলী ছিলেন। অথচ তার কাছে গায়রে মৌসুমী ফল উপস্থিত হত, কিন্তু নবী হযরত জাকারিয়া আঃ এর জন্য তা আসতো না। আয়শা সিদ্দিকা রাঃ এর স্বামী থাকা সত্বেও সন্তান পাননি, কিনÍু মরিয়ম আঃ স্বামী ছাড়াই সন্তান পেয়েছেন। হযরত ইয়াকুব আঃ প্রতিদিন চেহারার উপর নিজের নবুওতী হাত বুলাতেন, কিন্তু চোখের অন্ধত্ব দূরিভূত হয়নি, কিন্তু ইউসুফ আঃ এর জামা লাগতেই তার চোখের জ্যোতি ফিরে এসেছে। হযরত সুলাইমান আঃ এর সিংহাসন বাতাস উড়িয়ে নিয়ে চলতো। অথচ এ বাতাসের উপর এ হুকুম ছিল না যে, রাসূল সাঃ কে হিজরতের সময় এ মুহুর্তে মদীনায় পৌঁছে দিবে।
হযরত সুলাইমান আঃ নবী ছিলেন। কিন্তু বিলকিসের সিংহাসন মুহুর্তে মাঝে উড়িয়ে নিয়ে আসা এটা তার সাহাবীর কারামত ছিল। তাঁর নয়।
তো ভাই এটা আল্লাহ তাআলার ইচ্ছেধীন বিষয়। তিনি চাইলে হাজার মাইল দূর বাইতুল মুকাদ্দাসও চোখের সামনে ভেসে উঠে। আর জান্নাত জাহান্নাম ও চোখের সামনে প্রকাশিত হয়। আর না চাইলে অল্প দূরের হযরত উসমান রাঃ এর মৃত্যুর ভুল সংবাদ শুনে জিহাদের বাইয়াত নেয়া শুরু দেন রাসূল সাঃ। এমনিভাবে না চাইলে কেনানের কূপে অবস্থান করা ইউসুফ আঃ এর খোঁজও পান না ইয়াকুব আঃ। আবার যখন চাইলেন তখন মিশরে থাকা ইউসুফ আঃ এর জামার খুশবো সুদূর কিনানে ইয়াকুব আঃ এর কাছে পৌঁছে দেন।
আমি তাকে বললামঃ আপনারা যে, সারা দুনিয়াকে মুশরিক বলতে শুরু করেছেন, এর উপর আবার দৃষ্টি বুলিয়ে নিন। আর এ থেকে তওবা করুন। {তাযাল্লিয়াতে সফদর-১/৪৬৯}
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
ইমেইল- ahlehaqmedia2014@gmail.com
জাযাকাল্লাহ