লেখক– মুনাজিরে ইসলাম মাওলানা মুহাম্মদ আমীন সফদর ওকাড়বী রহঃ
অনুবাদঃ লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
দশমওয়ালা হাদীস
অবশেষে লোকটি বলতে লাগলঃ “এতেতো কোন সন্দেহ নেই যে, গায়রে মুকাল্লিদ ব্যক্তির দশ গণনাটির কথা মনে ছিল না। কিন্তু শেষেতো সে একটি দশ স্থানে রফয়ে ইয়াদাইনের প্রমাণবাহী একটি হাদীস সে দেখিয়েছিল”।
আমি বললামঃ “কিন্তু তারপর উক্ত হাদীসের যে ব্যাখ্যা আমি উপস্থাপন করেছিলাম সেটা দেখেতো তারা সবাই পিলে চমকে গিয়েছিল। পুরো বর্ণনাটি লক্ষ্য করুন –
باب رفع اليدين إذا قام من الركعتين حدثنا عياش قال حدثنا عبد الأعلى قال حدثنا عبيد الله عن نافع
: أن ابن عمر كان إذا دخل في الصلاة كبر ورفع يديه وإذا ركع رفع يديه وإذا قال ( سمع الله لمن حمده ) . رفع يديه وإذا قام من الركعتين رفع يديه ورفع ذلك ابن عمر إلى نبي الله صلى الله عليه و سلم
رواه حماد بن سلمة عن أبوب عن نافع عن ابن عمر عن النبي صلى الله عليه و سلم . ورواه ابن طهمان عن أيوب وموسى بن عقبة مختصرا
হযরত নাফে থেকে বর্ণিত যে, আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাঃ নামায শুরু করলেন। তিনি আল্লাহু আকবার বলে রফয়ে ইয়াদাইন করলেন। আর যখন রুকু করলেন তখনো রফয়ে ইয়াদাইন করলেন। আর যখন সামিয়াআল্লাহু লিমান হামিদাহ বললেন তখন তিনি রফয়ে ইয়াদাইন করলেন। আবার যখন দুই রাকাত পড়ে দাঁড়ালেন, তখন রফয়ে ইয়াদাইন করলেন। আর এ পদ্ধতিকে রাসূল সাঃ এর দিকে নিসবত করলেন।
এটাকে হাম্মাদ বিন সালামা আইয়ুব-নাফে’-ইবনে ওমর- রাসূল সাঃ থেকে বর্ণনা করেছেন। আর ইবনে তাহমান আইয়ুব থেকে এবং মুসা বিন উকবা থেকে সংক্ষিপ্তকারে বর্ণনা করেছেন। {সহীহ বুখারী-১/১০২, হাদীস নং-৭০৬, বুখারী রহঃ এর মৃত্যু-২৫৬হিজরী}
এ হাদীসে না ১৮ স্থানে রফয়ে ইয়াদাইনের নিষেধাজ্ঞার কথা আছে, না উল্লেখিত আছে হাত কতটুকু উঠাবে। না সর্বদা এমনটি করার কথা উল্লেখ আছে। যেমন بال قائماতথা রাসূল সাঃ “দাঁড়িয়ে প্র¯্রাব করেছেন”একথার অনুবাদ এটা করা যেমন সম্পূর্ণ ভুল যে, “রাসূল সাঃ সর্বদা দাঁড়িয়ে প্র¯্রাব করেছেন”তেমনি রাসূল সাঃ রুকুতে গমন ও উঠার সময় রফয়ে ইয়াদাইন করেছেন দ্বারা একথা প্রমাণিত হয় যে, রাসূল সাঃ সর্বদা রুকুতে গমণ ও উঠার সময় রফয়ে ইয়াদাইন করেছেন।
এছাড়া উক্ত হাদীসটিতে একথাও নেই যে, দশ স্থানে রফয়ে ইয়াদাইন না করলে উক্ত নামায শুদ্ধ হয় না। না এ হাদীসের সহীহ বা জঈফ হওয়ার বিষয়টি আল্লাহ বা তার রাসূল সাঃ থেকে প্রমাণিত করেছে। আর সবচে’বড় ধোঁকাতো এটা দিয়েছে যে, উক্ত হাদীসের আন্ডারলাইন করা অংশটি একদম ছেড়ে দিয়েছে। কত বড় ধোঁকাবাজী। বিতার্কিক লোকটি নিজে এবং তার সহকারীদের কেউ এ অংশটির কথা একদম বলেনি। সাথে হাদীসটির অনুবাদও করেছে ভুল। হাদীসে এসেছে মাজী মুতলাকের [সাধারণ অতীতকাল] অনুবাদ মাজী এস্তেমরারী [চলমান অতীতকাল] শব্দ দ্বারা করেছে।
১
যেহেতু এ হাদীসকে আল্লাহ বা রাসূল সাঃ সহীহ বা জঈফ বলেননি, তাই নামধারী আহলে হাদীসদের উক্ত হাদীসটিকে না সহীহ বলার কোন হক আছে, না জঈফ বলার কোন হক আছে। হ্যাঁ আমরা আহলে সুন্নত একথা বলি যে, হাদীসে মুয়াজ বিন জাবাল রাঃ এর মুতাবেক যখন আল্লাহ ও রাসূল সাঃ থেকে কোন ফায়সালা পাওয়া না যায়, তখন মুজতাহিদ ইমামগণের ফায়সালাকে মেনে নেয়া উচিত। সে হিসেবে এ হাদীসের উপর চার ইমামের কোন ইমামেরই আমল নেই। তাই যেমন যে কেরাতকে সাত কারীই ছেড়ে দিয়েছেন সে কিরাত শাজ ও মাতরূক হওয়ার মাঝে কোন সন্দেহ নেই, তেমনি যে হাদীস চার ইমামই ছেড়ে দিয়েছেন। কোন ইমামই নিজের মাযহাব হিসেবে স্বীকৃতি দেননি, সে হাদীস শাজ হওয়ার মাঝে কোন সন্দেহ নেই।
২
ইমাম বুখারী রহঃ এর নিকট নিখাদ স্বর্ণখচিত সনদ হল -“মালিক আন নাফে’আন ইবনে ওমর রাঃ”। উক্ত হাদীসটি ইমাম বুখারী রহঃ এর জন্মের আগেই উক্ত নিখাদ স্বর্ণখচিত সনদে “মুয়াত্তা মালিক”এবং “মুয়াত্তা মুহাম্মদ”এর মাঝে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। কেননা, ইমাম মালিক রহঃ এর ওফাত হয়েছে ১৭৯ হিজরীতে। আর ইমাম মুহাম্মদ রহঃ এর ওফাত হয়েছে ১৮৯ হিজরীতে। অথচ ইমাম বুখারী রহঃ এর জন্ম হল ১৯৪ হিজরীতে। কিন্তু মুয়াত্তা মালিক ও মুয়াত্তা মুহাম্মদের শব্দ আর বুখারীর বর্ণিত শব্দের মাঝে অনেক পার্থক্য আছে। মুয়াত্তাইনের শব্দ হল-
مالك عن نافع ان عبد الله بن عمر رض كان اذا افتتح الصلوة رفع يديه حذو منكبيه واذا رفع رأسه من الركوع رفعهما دون ذلك- (موطا مالك-৬১، موطا محمد-৮৭، جزء رفع يدين نمبر-৭৪
মালিক নাফে থেকে বর্ণনা করেন যে, যখন আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাঃ নামায শুরু করতেন, তখন রফয়ে ইয়াদাইন কাঁধ বরাবর করতেন। আর যখন রুকু থেকে মাথা উঠাতেন তখন এর চেয়ে নিচু করে হাত উঠাতেন। {মুয়াত্তা মালিক-৬১, মুয়াত্তা মুহাম্মদ-৮৭, জুযয়ে রফয়ে ইয়াদাইন-৭৪}
মদীনা মুনাওয়ারার ইমাম মালিক রহঃ যখন এ হাদীস লিখেছেন, তখন রফয়ে ইয়াদাইন পাঁচ স্থানে ছিল। এ হাদীসই যখন কুফাতে পৌঁছল তখনো রফয়ে ইয়াদাইন পাঁচ স্থানেই ছিল। কিন্তু একই বর্ণনা যখন বুখারাতে পৌঁছল তখন সেটা পাঁচ থেকে বেড়ে ১০ স্থানে হয়ে গেছে।
এছাড়া মদীনায় এ বর্ণনাটি হযরত ইবনে ওমর রাঃ এর নিজের আমল ছিল। রাসূল সাঃ এর দিকে মারফু ছিল না। কুফাতেও সেটি আপন অবস্থায় বহাল ছিল। কিন্তু বুখারাতে তা পৌঁছে ইবনে ওমর রাঃ এর আমলকে রাসূল সাঃ এর দিকে মারফু করে দেয়া হয়েছে। এ কারণেই ইমাম আবু দাউদ রহঃ [ওফাত-২৭৫ হিজরী] ইমাম বুখারী রহঃ এর জীবদ্দশায়ই উক্ত ভুলের সংশোধন করে দিয়েছিলেন। তিনি আবু দাউদে লিখেছেন- قال ابو داود الصحيح قول ابن عمر ليس بمرفوع তথা আবু দাউদ বলেনঃ সহীহ কথা হল যে, ইবনে ওমর রাঃ এর বক্তব্যটি মারফু নয়। {সুনানে আবু দাউদ-১/১০৮}
মুয়াত্তা মালিক এবং মুয়াত্তা মুহাম্মদে স্পষ্টভাষায় ছিলঃ হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাঃ তাকবীরে তাহরীমার সময় হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠিয়েছেন। আর রুকুতে গমণ ও উঠার সময় এর চেয়ে কম উঠিয়েছেন। একথা বুখারী থেকে এবং জুযয়ে রফয়ে ইয়াদাইন থেকে মুছে ফেলা হয়েছে।
ইমাম আবু দাউদ রহঃ [ওফাত-২৭৫ হিজরী] বলেনঃ قال ابو داود- رواه الليث بن سعد ومالك وايوب وابن جريج موقوفا (ص-১০৭) তথা আবু দাউদ রহঃ বলেনঃ লাইস বিন সাদ এবং মালিক আইয়্যূব এবং ইবনে জুরাইজ এটাকে বর্ণনা করেছেন “মাওকুফ” [রাসূল সাঃ এর দিকে নিসবত না করে সাহাবী পর্যন্ত নিসবত] হিসেবে। {সুনানে আবু দাউদ-১/১০৮}
আর ইমাম বুখারী রহঃ স্বীয় ভুলটি স্বীকার করেছেনঃ قال البخارى والمحفوظ ما روى عبيد الله وايوب ومالك وابن جريج والليث وعدة من اهل الحجاز واهل العراق عن نافع عن ابن عمر رضতথা ইমাম বুখারী রহঃ বলেনঃ সংরক্ষিত সেই বক্তব্যটিই, যা উবায়দুল্লাহ, মালিক, ইবনে জুরাইজ এবং লাইস ও আহলে হেযাজ এবং আহলে ইরাকীগণ নাফে আন ইবনে ওমর রাঃ থেকে বর্ণনা করেছেন। {জুযয়ে রফয়ে ইয়াদাইন-৮৩}
তাহলে কী দাঁড়াল? ইমাম বুখারী রহঃ ও স্বীকার করেছেন যে, এ বর্ণনাটি মূলত ইবনে ওমর রাঃ এর উপর মওকুফ।
এসব কথার কোন জবাব আমাদের লা মাযহাবী বিতার্কিক বন্ধুটি দিতে পারেনি।
ইমাম বুখারী রহঃ رواه حماد بن سلمة عن أبوب عن نافع عن ابن عمر عن النبي صلى الله عليه و سلم . ورواه ابن طهمان عن أيوب وموسى بن عقبة مختصرا ইবারত দ্বারা যে تعليق উল্লেখ করেছেন। তার পূর্ণ বক্তব্যটি জুযয়ে রফয়ে ইয়াদাইনের ৫৩ থেকে ৫৪ পৃষ্ঠায় বিদ্যমান। তাতে “যখন দুই রাকাত শেষ করে দাঁড়ালেন”তখন রফয়ে ইয়াদাইন করেছেন কথাটি নেই। যেন ইমাম বুখারী রহঃ এর দ্বারা দশ স্থানে রফয়ে ইয়াদাইন করার বিষয়টি সংরক্ষিত হওয়ার দিকেই ইংগিত করে দিলেন।
যেহেতু ইমাম বুখারী রহঃ উক্ত ইবারত দ্বারা বিতার্কিক সাহেবের দশের সংখ্যা ঠিক থাকে না। তাই তিনি উক্ত ইবারতটি হজম করে ফেললেন। সেই ইবারতের ব্যাখ্যায় ইমাম আবু দাউদ বলে দিয়েছিলেনঃ واسنده حماد بن سلمة وحده عن ايوب لم يذكر ايوب ومالك الرفع اذا قام من السجدتين তথা একমাত্র হাম্মাদ বিন সালামাই আইয়ুব থেকে উক্ত বর্ণনাটি রাসূল সাঃ এর দিকে নিসবত করেছেন। অথচ আইয়ুব এবং মালিক দুই সেজদা থেকে তথা দুই রাকাত পূর্ণ করে উঠে রফয়ে ইয়াদাইনের কথা উল্লেখ করেননি। {আবু দাউদ-১/১০৮}
শেষ ইবারতটি ইবনে তাহমান ও মুসা বিন উকবা এর তালীক। যেটা ইমাম বুখারী শেষে উল্লেখ করেছেন। যা বায়হাকীর ২য় খন্ডের ৭১ পৃষ্ঠায় এসেছে। তাতে না দুই রাকাত শেষে উঠে রফয়ে ইয়াদাইনের কথা আছে, না সেটি রাসূল সাঃ এর দিকে মারফু।
এটাই হল ইমাম বুখারী রহঃ এর শেষের ইবারত দ্বারা ইশারা যে, উক্ত বর্ণনাটি মারফু নয়, না দশ রফয়ে ইয়াদাইন প্রমাণিত। বুখারীর উক্ত ইবারতটি গায়রে মুকাল্লিদ সাহেব ইচ্ছেকৃত ধরা খাওয়ার ভয়ে ছেড়ে দিয়েছেন।
সনদ বিষয়ক পর্যালোচনা
বুখারীর ১০২ পৃষ্ঠার প্রথম রাবী হল আইয়্যাশ বিন ওলীদ। কিন্তু দিল্লি থেকে প্রকাশিত জুযয়ে রফয়ে ইয়াদাইন এর ১২ পৃষ্ঠায় আইয়্যাশের বদলে রাবী উল্লেখ করা হয়েছে আব্বাস। তাহলে এখানে রাবীটি সন্দেহযুক্ত হয়ে গেছে। আসলে রাবীর নাম কি? আইয়্যাশ না আব্বাস? এ কারণে গায়রে মুকাল্লিদ ফয়জুর রহমান সূরী সাহেব জুযয়ে রফয়ে ইয়াদাইনের ৩৮ পৃষ্ঠায় এবং পীর ঝান্ডা সাহেব “জালাল আইনাইন”গ্রন্থের ১২৬ পৃষ্ঠায় বিকৃত করে আব্বাসকে আইয়্যাশ বানিয়ে দিয়েছেন। যদিও “আররাসায়েল ফী তাহকীকিল মাসায়েল”এর চৌদ্দজন মুজাহিদ এটাকে আব্বাসই লিখে থাকেন। সেই সাথে খালেদ ঘরঝাকী সাহেব তার রেসালা “জুযয়ে রফয়ে ইয়াদাইনে”জুযয়ে বুখারীর উদ্ধৃতিতে আব্বাসই লিখেছেন রাবীর নাম। [দ্রষ্টব্য-৭০]
কিন্তু খালেদ ঘরঝাকী সাহেব যখন বুখারীর জুযয়ে রফয়ে ইয়াদাইন প্রকাশ করলেন, তখন সেটাকে বিকৃত করে আব্বাসের স্থলে আইয়্যাশ বসিয়ে দিয়েছেন।
দ্বিতীয় রাবী হলেন “আব্দুল আলা”। তিনি মুতাকাল্লাম ফি তথা যার ব্যাপারে মুহাদ্দিসীনগণ কালাম করেছেন এমন রাবী। মুহাদ্দিস বুন্দর রহঃ বলেনঃ “আল্লাহ তাআলাই ভাল জানেন, তার উভয় পা অত্যধিক লম্বা। {মিযানুল ইতিদাল-২/৫৩১} তিনি মুতাকাল্লাম ফি রাবী হওয়া সত্বেও তিনি মুহাদ্দিস আব্দুল ওহাব এর বিরোধীতা করছেন। কেননা, আব্দুল আলা এটাকে মারফু করেছেন। যেমন বুখারীর ১ম খন্ডের ১০২ পৃষ্ঠায় রয়েছে। আর আব্দুল ওহাব এটাকে মাওকুফ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। যেমন জুযয়ে বুখারীর ৪৮ নং পৃষ্ঠায় রয়েছে।
পরের রাবীর ব্যাপারেও মতভেদ আছে। বুখারীর ১ম খন্ডের ১০২ পৃষ্ঠায় উবায়দুল্লাহ আর দিল্লি থেকে প্রকাশিত জুযয়ে বুখারীতে আব্দুল্লাহ লিখা হয়েছে। যাকে মাতরুকূল হাদীস হিসেবে মুহাদ্দিসীনে কেরাম উল্লেখ করেছেন। এ কারণে পীর ঝান্ডা তার “জালাউল আইনাইন”এর ১৫৯ পৃষ্ঠায় এবং ফয়জুর রহমান সূরী সাহেব “জুযয়ে রফয়ে ইয়াদাইনের”৪৮ পৃষ্ঠায় এটাকে বিকৃত করে উবায়দুল্লাহ বানিয়ে দিয়েছেন।
এসব কিছুর আশ্চর্য কথা হলঃ জুযয়ে বুখারীর ৮৩ পৃষ্ঠায় এসেছে যে, وزادا وكيع عن العمرى عن نافع عن ابن عمر رض عن النبى صلى الله عليه وسلم انه كان يرفع يديه اذا ركع واذا سجد তথা ওকী উমরী আন নাফে আন ইবনে ওমর রাঃ আন রাসূল সাঃ সূত্রে অতিরিক্ত বর্ণনা করে বলেনঃ নিশ্চয় তিনি রুকু ও সেজদা করার সময় রফয়ে ইয়াদাইন করতেন।
আর ইমাম বুখারী রহঃ বলেন যে, এ অতিরিক্ত বক্তব্যটি গ্রহণযোগ্য। ব্যাস হয়ে গেল! গায়রে মুকাল্লিদ বিতার্কিক সাহেব! নিন! এবার আপনার দশের বদলে ছাব্বিশ রফয়ে ইয়াদাইন হয়ে গেল। সেই সাথে আপনারা প্রত্যেক চার রাকাত নামাযে ১৬টি সুন্নতের তরককারী সাব্যস্ত হয়ে গেছেন।
এই হল এ হাদীসের মূল অবস্থা। যে হাদীসকে গায়রে মুকাল্লিদ ভাইয়েরা সকল সাহাবা, সকল তাবেয়ী এবং সকল আয়িম্মায়ে মুজতাহিদীনদের বিরুদ্ধে আমল বানিয়ে রেখেছে।
এ কথাও স্মরণ রাখতে হবে যে, ইমাম বুখারী রহঃ এর জন্মের পূর্বে থেকে ইমাম মুহাম্মদ রহঃ বলে গেছেন যে, হযরত আলী রাঃ, হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাঃ থেকে বহুত মজবুতভাবে প্রমাণিত যে, তারা প্রথম তাকবীরের পর আর রফয়ে ইয়াদাইন করতেন না। আর তারা বদরী সাহাবী। যারা নবীজী সাঃ এর সাথে সামনের কাতারে নামায পড়তেন। আর তারা সুনিশ্চিতভাবে হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাঃ এর তুলনায় রাসূল সাঃ এর ব্যাপারে অধিক বেশি জ্ঞাত ছিলেন। এ কারণে তাদের বর্ণনাটি প্রাধান্য পাবে। {কিতাবুল হুজ্জাত-৯৫}
তার ইমাম মুহাম্মদ রহঃ খোদ আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাঃ থেকে রফয়ে ইয়াদাইন না করার বর্ণনা নকল করেন। সুতরাং একথা স্পষ্ট যে, এবার ইবনে ওমর রাঃ এর ঐ বক্তব্যটিই প্রাধান্য পাবে, যা আহলে বদরের অনুপাতে হয়। এটা খুবই আশ্চর্যজনক কথা যে, ইমাম মুহাম্মদ রহঃ [মৃত্যু ১৮৯ হিজরী] এর এ আহবান যে, আহলে বদর কোন সাহাবী থেকে তাহরীমা ছাড়া রফয়ে ইয়াদাইন প্রমাণ করে দেখাও। এর সমর্থনে ইমাম বুখারী [মৃত্যু ২৫৬ হিজরী] এবং ইমাম মুসলিম [মৃত্যু ২৬১ হিজরী] বদরী সাহাবী থেকে কোন মারফু বা মাওকুফ হাদীস সহীহাইন এর মাঝে এনে দলীল দিতে পারেননি।
তারাই যেহেতু অক্ষম হয়ে গেলেন, তাহলে আর কে এটা পারবে?
শেষ জীবন পর্যন্ত
নামধারী আহলে হাদীস বিতার্কিক সাহেবের দাবীর একটি অংশ এটিও ছিল যে, আমরা যেভাবে রুকু ও সেজদার সাথে তাকবীরকে সুন্নত মনে করি, সেই সাথে এ দাবী করি যে, রাসূল সাঃ শেষ জীবন পর্যন্ত এ তাকবীরে ইন্তিকালিয়া করেছেন। তখন আমরা আমাদের এ দাবীর স্বপক্ষে সরীহ দলীল ও পেশ করে থাকি যে, রাসূল সাঃ সর্বদা এ তাকবীর বলতেন, এ পর্যন্ত যে তিনি দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন। {বুখারী-১/১১৪, নাসায়ী-১/১৭৩}
একই ভাবে নামধারী আহলে হাদীসরা তাদের দাবীর স্বপক্ষে ১৮ স্থানে রফয়ে ইয়াদাইন করার নিষেধাজ্ঞা আর ১০ স্থানে রফয়ে ইয়াদাইন করার পক্ষে প্রমাণ পেশ করার সাথে সাথে এমন শব্দ দেখাবে যাতে প্রমানিত হয় যে, রাসূল সাঃ মৃত্যু পর্যন্ত রফয়ে ইয়াদাইন করেছেন। চাই তা বুখারীর বর্ণনা দ্বারা হোক বা মুসলিমের বর্ণনা দ্বারা হোক। কিন্তু এতে তারা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হল। কেননা, এ বেচারাদের কাছে দলীল নামের কোন বস্তুই নেই। হ্যাঁ, অযথা চিৎকার আর চেঁচামেচি করেছে ইচ্ছেমত।
আমি লোকটি জিজ্ঞেস করলামঃ আপনিইতো বলেছেন যে, আপনি ক্যাসেট শুনেছেন। আপনি কি শুনেছেন যে, ক্যাসেটে সিহাহ সিত্তাহ থেকে এমন কোন বর্ণনা বলেছে?
লোকটি বললঃ না বলেনি।
আমি বললামঃ তাকবীরে ইন্তিকালিয়া শেষ জীবন পর্যন্ত বাকি থাকার আরো একটি প্রমাণ আছে। সেটআ হলঃ হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাঃ বলেনঃ রাসুল সাঃ তাকবীর বলতেন, হযরত আবু বকর রাঃ ও তাকবীর বলতেন, হযরত ওমর রাঃ ও তাকবীর বলতেন। {তিরমিজী-১/৫৯} হযরত উসমান রাঃ ও {নাসায়ী-১/১৭২}
এর মাধ্যমে একথা সুষ্পষ্টরূপে বুঝা যায় যে, এটাই ঐ নামায যার উপর রাসূল সাঃ হযরত আবু বকর রাঃ কে ছেড়ে গিয়েছিলেন। তারপর আবু বকর রাঃ হযরত ওমর রাঃ কে ছেড়ে গিয়েছিলেন। তারপর হযরত ওমর রাঃ হযরত উসমান রাঃ কে ছেড়ে গিয়েছিলেন । কিন্তু এমন সুষ্পষ্ট শব্দ গায়রে মুকাল্লিদ ভাইদের কাছে কোথায়?
অবশেষে নামধারী আহলে হাদীসরা হাদীস থেকে হাত গুটিয়ে ইতিহাসের দিকে দৌড় দেয়। বলতে লাগলঃ হযরত মালিক বিন হুয়াইরিস রাঃ নবম হিজরীতে ঈমান এনেছেন। তিনি রাসূল সাঃ কে রফয়ে ইয়াদাইন করতে দেখেছেন।
আমি বললামঃ
১
প্রথম কথা হল যে, মালিক বিন হুয়াইরিস রাঃ নবম হিজরীতে ঈমান এনেছেন এর একটি সনদ পেশ কর। সনদ তারা পেশ করতে পারেনি।
২
হযরত মালিক বিন হুয়াইরিস রাঃ এ হাদীসের সাথে আপনাদের কী সম্পর্ক? এর সনদেওতো তৃতীয় রাকাতের শুরুতে রফয়ে ইয়াদাইনের কথা উল্লেখ নেই। যেটাকে আপনারা সুন্নতে মুআক্কাদা বলে থাকেন। তাহলে আপনাদের দাবী অনুপাতে রাসূল সাঃ নবম হিজরীতে খেলাফে সুন্নত নামায পড়েছেন?
৩
মালিক বিন হুয়াইরিস রাঃ এ হাদীস নাসায়ীর ১ম খন্ডের ১৭২ পৃষ্ঠায় এসেছে। যাতে রাসূল সাঃ এর সেজদায় গমণ ও উঠার সময় সেজদার কথা স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। আর ফাতাওয়ায়ে উলামায়ে হাদীস এর মাঝে এ হাদীসকে সহীহ এবং উক্ত হাদীসের উপর আমলকারীকে মৃত সুন্নতকে জিন্দাকারী হিসেবে এক শত শহীদের সওয়াবের অধিকারী সাব্যস্ত করা হয়েছে।
এর দ্বারা বুঝা গেল যে, আপনারা চার রাকাত নামাযে ১৭ স্থানে সুন্নতকে নষ্ট করে থাকেন। ১৬ বার সেজদার সময় রফয়ে ইয়াদাইন করা নবম হিজরী পর্যন্ত সুন্নত ছিল। যা আপনারা ছেড়ে দিয়েছেন। আর তৃতীয় রাকাতের শুরুতে রফয়ে ইয়াদাইন করা নবম হিজরীতে বিলকুল সুন্নত ছিল না, অথচ আপনারা এটাকে সুন্নত বানিয়ে দিলেন গায়ের জোরে।
সিহাহ সিত্তার সাথে দুশমনী
আপনিতো ক্যাসেট শুনেছেন! নামধারী আহলে হাদীস বিতার্কিক পূর্ণ বিতর্কে মক্কা মদীনার সাথে বিরোধীতা করেছে। এবার সিহাহ সিত্তার সাথেও বিরোধীতা শুরু করে। কেননা, নাসায়ী সিহাহ সিত্তার অন্তুর্ভূক্ত। ইমাম নাসায়ী রহঃ নাসায়ীতে ১/১৬৫, ১/১৭২ পৃষ্ঠায় সেজদার সময় রফয়ে ইয়াদাইন করার বাব এনেছেন। তাতে তিনি হযরত মালিক বিন হুয়াইরিস রাঃ এর হাদীস এনেছেন। তারপর হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাঃ এর হাদীস দ্বারা ওটাকে মাতরুকুল আমল তথা আমল হিসেবে পরিত্যজ্য সাব্যস্ত করেছেন। তারপর ১/১৫৮ ও ১/১৬১ পৃষ্ঠায় রুকুর রফয়ে ইয়াদাইনের বাব এনেছেন। তাতে ইবনে ওমর প্রমুখদের হাদীস এনেছেন। তারপর আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাঃ এর হাদীস দ্বারা এসবকে মাতরুকুল আমল তথা আমল হিসেবে পরিত্যাজ্য সাব্যস্ত করেছেন।
এটা হল একজন শাফেয়ী মুহাদ্দিসের বাব নির্ধারণ বিন্যাস পদ্ধতি। যেটাকে নামধারী আহলে হাদীসরা শুধুমাত্র সনদহীন ইতিহাস দিয়ে রদ করে দিতে চায়। আমিও অবশেষে সুনানে নাসায়ীর আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাঃ এর হাদীসটি হাওয়ালাসহ উল্লেখ করলাম।
عن عبد الله قال ألا أخبركم بصلاة رسول الله صلى الله عليه وسلم قال فقام فرفع يديه أول مرة ثم لم يعد
হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি কি রাসূল সাঃ এর নামায সম্পর্কে তোমাদের জানাবো? তারপর তিনি দাঁড়ালেন তারপর দুই হাত উঠালেন প্রথম বার। তারপর আর হাত উঠালেন না। {সুনানে নাসায়ী-১/১৫৮, হাদীস নং-১০২৫}
১
এ হাদীসে আমার পূর্ণাঙ্গ মাসআলা বিদ্যমান। যেমন আমাদের একত্ববাদের বিশ্বাস হল যে, আল্লাহ তাআলাকে এক বিশ্বাস করা, আর বাকি সকলকে অস্বিকার করা। এমনিভাবে আমাদের রফয়ে ইয়াদাইন এক স্থানে প্রমাণিত, বাকি সকল স্থানের অস্বিকার।
আমার মত পূর্ণাঙ্গ দলীল নামধারী আহলে হাদীসের কাছে তাদের পূর্ণাঙ্গ দাবী তথা ১০ স্থানে রফয়ে ইয়াদাইন প্রমাণ ও বাকি ১৮ স্থানের নিষেধাজ্ঞা সম্বলিত একটি দলীলও দেখাতে পারেনি। কিয়ামত পর্যন্ত দেখাতেও পারবে না ইনশাআল্লাহ।
২
আমি আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাঃ এর হাদীস উপস্থাপন করলাম। যিনি বদরী সাহাবী এবং রাসূল সাঃ এর নামাযের প্রথম কাতারের মুসল্লি ছিলেন। আমাদের প্রিয় নবীজী সাঃ ও তা’ই বলেছেন যে, “উলুল আহলাম ওয়ান নুহা”তথা প্রাজ্ঞ ব্যক্তিত্ব থেকে দ্বীন শিখ। আর আমাদের ইমাম মুহাম্মদ রহঃ ও বলেছেনঃ আহলে বদর সাহাবীগণ রাসূল সাঃ এর নামায বিষয়ে সবচে’বেশি জানতেন। নামধারী আহলে হাদীস বিতার্কিক সাহেব নিজের দাবীর পক্ষে আহলে বদর সাহাবী থেকে একটি মারফু বা মাওকুফ হাদীসও দেখাতে পারেনি।
৩
আমি এ বদরী সাহাবীর হাদীস উপস্থাপন করেছি, যে হাদীস তিনি কুফাতে বর্ণনা করেছেন। আর সমস্ত কুফাবাসী তথা সাহাবী, তাবেয়ী, তাবেয়ী, ফুক্বাহা ও মুহাদ্দিসীন এবং সাধারণ মুসলমানগণের নিরবচ্ছিন্ন আমল এর উপরই ছিল। অথচ নামধারী আহলে হাদীস বিতার্কিক নিজের পূর্ণাঙ্গ দাবীর উপর কোন সাহাবী, তাবেয়ী, তাবেয়ী, ফক্বীহ, মুহাদ্দিস বা সাধারণ মুসলমানগণের আমল প্রমাণ স্বরূপ উপস্থাপন করতে পারেনি।
৪
এ হাদীসকে আল্লাহ তাআলা বা রাসূল সাঃ সহীহ বা জঈফ কোনটিই বলেননি। কিন্তু আহলে কুফার নিরবচ্ছিন্ন আমল এ হাদীস সহীহ হওয়ার পরিস্কার দলীল।
৫
আলবানী গায়রে মুকাল্লিদ সাহেবও স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন যে, এ হাদীসে দোষণীয় কোন কারণ নেই। বরং তিনি স্পষ্ট ভাষায় একে সহীহ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন{সহীহ ওয়া জঈফ সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং-১০২৬, হাশিয়ায়ে মিশকাত}
একটি আশ্চর্যজনক অভিযোগ
যখন আমি সেজদাতে রফয়ে ইয়াদাইন সম্বলিত হাদীস পড়লাম তখন নামধারী আহলে হাদীস বিতার্কিক বলতে লাগলঃ “যখন তুমি এটাকে সহীহ মান, তাহলে এর উপর আমল কর না কেন?”
“এ বেচারারা এ কথাও জানা ছিল না যে, মানার জন্য সর্বদা আমল জরুরী নয়। দেখুন! মুসলমান এবং ইহুদীরা মুসা আঃ কে সত্য নবী বিশ্বাস করে থাকে। তাহলে মতভেদ কিসের উপর? সেটা হল এই যে, ইহুদীরা বলে থাকে যে, মুসা আঃ শেষ নবী। এ কারণে তারা ঈসা আঃ এর নবুওয়তকেও অস্বিকার করে থাকে। মুসলমানগণ বলে থাকেন যে, ইহুদীরা কিয়ামত পর্যন্ত মুসা আঃ কে শেষ নবী প্রমাণিত করতে পারবে না। এ কারণে হয়তো তারা দলীল দিবে নতুবা ঈসা আঃ কে নবী হিসেবে স্বীকৃতি দিবে। এমনিভাবে মুসলমান এবং খৃষ্টানরা ঈসা আঃ কে নবী বিশ্বাস করে থাকে। কিন্তু খৃষ্টানরা বলে থাকে যে, ঈসা আঃ শেষ নবী। এ কারণে তারা রাসূল সাঃ এর নবুওয়তের অস্বিকার করে থাকে। এক্ষেত্রে মুসলমানগণ এটাই চায় যে, হয়তো তোমরা ঈসা আঃ এর শেষ নবীর প্রমাণ দাও, নতুবা রাসূল সাঃ এর উপর ঈমান আন। আর মুসলমানগণ রাসূল সাঃ কে শেষ নবী বিশ্বাস করে থাকে, এ কারণেই মুসায়লামায়ে কাজ্জাব এবং মুসায়লামায়ে পাঞ্জাব তথা কাদিয়ানীকে মিথ্যা নবী বলে থাকে।
যেমনিভাবে মুসলমানদের এ দাবী সঠিক যে, হযরত মুসা আঃ সত্য নবী, ইহুদীদের একথা সম্পূর্ণ মিথ্যা যে, মুসা আঃ শেষ নবী। এখন ইহুদীদের কাছে মুসা আঃ এর নবী হওয়ার দলীল চাওয়ার কোন অর্থ হয় না। কারণ এটিতো আমরা মানিই। তাদের কাছে আমরা দলীল চাব যে, মুসা আঃ আখেরী নবী কিভাবে? এর দলীল দাও। যদি কোন ইহুদী মুসা আঃ এর নবী হওয়ার দলীল পেশ করতে থাকে, তাহলে সেই ইহুদী ধোঁকাবাজী করছে। সে নিজের সময়ও নষ্ট করছে, নষ্ট করছে অন্যদের সময়ও। ঠিক একইভাবে আমরা একথা বলি যে, রাসূল সাঃ থেকে সেজদার সময় রফয়ে ইয়াদাইন করা প্রমানিত। কিন্তু একথা বলা যে, রাসূল সাঃ শেষ জীবন পর্যন্ত সেজাদার সময় রফয়ে ইয়াদাইন করেছেন সেটা হবে মিথ্যাচার এবং সেজদার সময় রফয়ে ইয়াদাইন ছেড়ে দেয়ার হাদীসকে অস্বিকারকারীও সাব্যস্ত হয়।
ঠিক একইভাবে খৃষ্টানদের থেকে আমরা ঈসা আঃ এর নবী হওয়ার দলীল চাই না। কারণ তিনি যে, নবী একথা আমরা মানি। যদি খৃষ্টানরা ঈসা আঃ এর নবী হওয়ার দলীল পেশ করে করে, তাহলে এটি তাদের ধোঁকাবাজী ছাড়া কিছু নয়। তাদের দায়িত্বতো হল, ঈসা আঃ এর শেষ নবী হওয়ার প্রমাণ দেয়া। যে মিথ্যাচারের কারণে তারা রাসূল সাঃ এর শেষ নবী হওয়াকে অস্বিকার করে যাচ্ছে।
তারপর এ কথা ভাল করে বুঝে নিন যে, সেই খৃষ্টান বিশটি আয়াত এবং অসংখ্য হাদীস দিয়ে যদি ঈসা আঃ এর নবী হওয়া প্রমাণিত করে দেয়, তাহলে এটি কেবল ঈসা আঃ এর নবী হওয়ার দলীল হবে, শেষ নবী হওয়ার দলীল হবে না। আর এভাবে রাসূল সাঃ এর শেষ নবী হওয়া কিছুতেই অস্বিকার করতে পারে না।
আমাদের দাবী তাদের কাছে কেবল এই যে, তারা একটি আয়াত বা হাদীস দিয়ে একথা প্রমাণ করে দেখাক, যাতে বলা হয়েছে যে, ঈসা আঃ শেষ নবী। যেমন মুসলমানদের একথা বলা যে, ঈসা আঃ সত্য নবী। তারপর তাকে সত্য নবী বিশ্বাস করে রাসূল সাঃ কে শেষ নবী ও পালনীয় নবী হিসেবে বিশ্বাস করা সম্পূর্ণ সহীহ। ঠিক তেমনি একথাও সহীহ যে, রাসূল সাঃ রুকুতে গমণ ও উঠার সময় এবং সেজদাতে গমণ ও উঠার সময় রফয়ে ইয়াদাইন করেছেন। কিন্তু একথা মিথ্যাচার যে, রাসূল সাঃ শেষ জীবন পর্যন্ত উক্ত স্থানসমূহে রফয়ে ইয়াদাইন করতে ছিলেন। এটি এমনি মিথ্যাচার যেমন খৃষ্টানদের দলীল হিসেবে ঈসা আঃ কে শেষ নবী মানা।
খৃষ্টানদের ঈমান ঈসা আঃ এর উপরও বাকি থাকে না। কারণ তিনি নবী ছিলেন। কিন্তু শেষ নবী ছিলেন না। তাই তাদের রাসূল সাঃ এর উপর ঈমান আনা জরুরী ছিল। ঠিক তেমনি নামধারী আহলে হাদীসদের না ঐ সকল হাদীসের উপর ঈমান আছে, যাতে প্রতিটি তাকবীরের সাথে রফয়ে ইয়াদাইন আছে, না ঐ সকল হাদীসের উপর ঈমান আছে, যাতে সেজদার সময় রফয়ে ইয়াদাইনের কথা উল্লেখ আছে। সেই সাথে তাদের ঐ সকল হাদীসের উপরও ঈমান নেই, যাতে রুকু করার সময় রফয়ে ইয়াদাইন প্রমাণিত। কেননা, যেমনিভাবে খৃষ্টানরা ঈসা আঃ কে শেষ নবী বলে নিজের ঈমানকে নষ্ট করেছে, ঠিক তেমনি লোকদের কাছে শেষ সময় পর্যন্ত ১৮ স্থানে রফয়ে ইয়াদাইন নিষেধ ্আর দশ স্থানে রফয়ে ইয়াদাইন প্রমানিত বলে রাসূল সাঃ এর উপর মিথ্যাচার করেছে। আর রাসূল সাঃ এর উপর মিথ্যারোপ করার দ্বারা সুনিশ্চিতভাবে ঈমান নষ্ট হয়ে যায়।
সেই সাথে তাদের ঐ হাদীসের উপরও ঈমান নেই, যাতে প্রথম তাকবীরের পর রফয়ে ইয়াদাইন ছেড়ে দেয়ার বিষয় উল্লেখ আছে। এ মাসআলার সকল হাদীসকে অস্বিকার করেও নাম তাদের আহলে হাদীস। নাম আহলে হাদীস, কাজ মুনকিরীনে হাদীসের।
বিরোধ
একথা স্মরণ রাখা প্রয়োজন যে, আমরা মুসা আঃ এর মুকাবিলায় ঈসা আঃ কে নবী মানি না। বরং মুসা আঃ এর পরের নবী ঈসা আঃ একথা বিশ্বাস করি। ঠিক তেমনি আমরা ঈসা আঃ এর মুকাবিলায় রাসূল সাঃ কে নবী মানি না। বরং ঈসা আঃ এর পরের নবী বিশ্বাস করি। যেমনিভাবে আমরা আল্লাহ তাআলার নবীদের মাঝে বিরোধ সৃষ্টি করি না। এমনিভাবে প্রিয় নবীজী সাঃ এর প্রিয় হাদীসের মাঝেও বিরোধ সৃষ্টি করি না। আমরা বলে থাকি যে, রাসূল সাঃ সেজদার সময় রফয়ে ইয়াদাইন করেছেন। তবে এটি বাকি ছিল, না রাসূল সাঃ ছেড়ে দিয়েছেন? সেজদার সময় রফয়ে ইয়াদাইন করার হাদীসটিতে একথা উল্লেখ নেই। তবে কিয়াস একথা বলে যে, রাসূল সাঃ সেজদার সময় রফয়ে ইয়াদাইন করতেই ছিলেন। কিন্তু এ কিয়াসের বিপরীত হাদীস পাওয়া গেছে। যাতে উল্লেখ আছে যে, রাসূল সাঃ রফয়ে ইয়াদাইন ছেড়ে দিয়েছেন। তখন আমরা কিয়াস ছেড়ে দিয়ে হাদীস মেনে নিলাম। যে বর্ণনাটি নাসায়ী শরীফে বিদ্যমান। [ইতোপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে] এমনিভাবে রুকুর সময় রফয়ে ইয়াদাইন করা রাসূল সাঃ থেকে প্রমানিত। কিন্তু এটি মৃত্যু পর্যন্ত বাকি ছিল কি না? একথা উক্ত হাদীসে উল্লেখ নেই। এখানেও কিয়াস একথা বলে যে, রাসূল সাঃ শেষ জীবন পর্যন্ত রফয়ে ইয়াদাইন করেছেন। কিন্তু এ কিয়াস কে আমরা ছেড়ে দিয়েছি, কারণ হাদীস পাওয়া গেছে। যাতে উল্লেখ আছে যে, রুকুতে গমণ ও উঠার সময়ের রফয়ে ইয়াদাইন ছেড়ে দিয়েছেন। তখন আমরা কিয়াস ছেড়ে দিয়ে উক্ত হাদীসকে মেনে নিলাম।
এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল যে, মুসা আঃ এর উপর ঈমান থাকতেই পারে না, যতক্ষণ পর্যন্ত ঈসা আঃ কে বাতিল বলা না হবে। ঈসা আঃ এর উপর থাকতেই পারে না যতক্ষণ পর্যন্ত না নাউজুবিল্লাহ রাসূল সাঃ কে মিথ্যা বলা হবে। বরং একজন বিশ্বাস করে অন্যজনকে মানা যায়। যা স্বতসিদ্ধ মূলনীতি।
অথচ নামধারী আহলে হাদীসরা এরকম ভুল ধারণাই পোষণ করে থাকে। তাদের মতে রুকুর তাকবীরের সময় রফয়ে ইয়াদাইনের হাদীস মানাই যাবে না, যতক্ষণ না প্রত্যেক তাকবীরের সাথে রফয়ে ইয়াদাইন সম্বলিত হাদীসকে অস্বিকার করা হয়। আর শুধু এসব হাদীসকে অস্বিকার করার দ্বারাই তাদের ঈমান পূর্ণ হয় না, যতক্ষণ পর্যন্ত এ সকল হাদীসের সাথে এ মিথ্যা সম্পৃক্ত করে যে, রাসূল সাঃ শেষ জীবন পর্যন্ত এ আমলই করেছেন।
মোটকথা, মিথ্যা ছাড়া তাদের মতবাদ চলতেই পারে না। যদি সিহাহ সিত্তার বাহিরেও সিনার উপর হাদীস পাওয়া গেলেও এ মিথ্যাচার সাথে সংযুক্ত করে নেয় যে, রাসূল সাঃ এর শেষ জীবনের আমলও সীনার উপর হাত বাঁধার উপর ছিল। কোথাও যদি কোন জঈফ হাদীসও পায়, যাতে আমীনের কথা এসেছে, তাহলে সাথে সাথে এ মিথ্যা মিলিয়ে নেয় যে, রাসূল সাঃ শেষ জীবন পর্যন্ত জোরে আমীনেই নামায পড়েছেন। আর বাকি সকল হাদীসকে মিথ্যা বলা শুরু করে দেয়। আমাদের আহবান এখনো কায়েম আছে যে, শুধুমাত্র একটি হাদীস দেখান, যাতে ১৮ স্থানে রফয়ে ইয়াদাইন সর্বদার জন্য নিষেধের কথা আছে, আর দশ স্থানে কাঁধ পর্যন্ত হাত উঠানোর হুকুম আছে। আর এর উপর রাসূল সাঃ শেষ জীবন পর্যন্ত আমল করেছেন। সাথে সাথে বলে দিয়েছেন যে, এভাবে রফয়ে ইয়াদাইন না করলে নামায হবে না। আর এ হাদীসকে শরয়ী দলীল দিয়ে সহীহ প্রমাণিত করতে হবে। মনে রাখতে হবে যে, শরয়ী দলীল কেবল আল্লাহ তাআলা এবং রাসূল সাঃ বাণীই হতে পারে। এরকম দলীল উপস্থাপন করতে পারলে, আমরা তা মেনে নিয়মমাফিক আমল করা শুরু করে দিব।
আশরাফ সাহেব বলেনঃ হাফত রোযা আহলে হাদীস লাহুর ৩১শে মে ১৯৯৬ ঈসাব্দে উল্লেখ আছে যে, এ বিতর্কে মাওলানা মুহাম্মদ ইয়াহইয়া গুন্ধলেয়ী, মুনাজিরে ইসলাম কাজী আব্দুর রশীদ সাহেব, মাওলানা মুবাশিশর আহমদ রাব্বানী সাহেব, প্রফেসর আকরম জজ সাহেব, মুনাজিরে ইসলাম হাফেজ মুস্তাফা সাদেক সাহেব, মাওলানা আব্দুর রহমান কাজেমী সহ অন্যান্য ওলামায়ে কেরামও উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু এ সকল হযরত মিলেও নিজেদের পূর্ণাঙ্গ দাবীর স্বপক্ষে একটি হাদীসও উপস্থাপন করতে পারেনি।
তারপর আশরাফ সাহেব বলেনঃ বুখারী মুসলিম, মুয়াত্তা মালিক, এবং মুয়াত্তা মুহাম্মদের নাম “হাফত রোযা আহলে হাদীস”এর লোকেরা লিখেছে যে, এসব কিতাব থেকে আমাদের বিতার্কিকগণ সহীহ হাদীস উপস্থাপন করেছে।
আমি বললামঃ “আপনিই বের করে দিন। সহীহ হাদীসতো দূরে থাক ১৮ স্থানে রফয়ে ইয়াদাইনের নিষেধাজ্ঞা, আর ১০ স্থানে কাঁধ পর্যন্ত হাত উঠানোর হুকুম এবং তা রাসূল সাঃ এর আজীবন আমল করা, আর সেই সাথে যে ব্যক্তি এভাবে নামায না পড়ে, তার নামায বাতিল, এবং উক্ত হাদীসকে আল্লাহ বা রাসূল সাঃ সহীহ বলেছেন মর্মে একটি হাদীস উপস্থাপন করে দিন”।
আশরাফ সাহেব বললেনঃ “যখন তারা তাদের পূর্ণাঙ্গ দাবীর উপর একটি হাদীসও উপস্থাপন করতে পারেনি, তাহলে ভবিষ্যতে তাদের নিজেদের কখনো আহলে হাদীস বলা উচিত হবে না।
আমি বললামঃ “শুধু তাই নয়, তাদের কাছে একেতো নিজেদের দাবীর পক্ষে কোন দলীল নেই। সাথে সহীহ হাদীসগুলোকে মিথ্যা বলেও প্রচার করে থাকে। যথা-
১
প্রত্যেক তাকবীরের সাথে রফয়ে ইয়াদাইনের হাদীসকে তাদের আল্লামা আলবানী সাহেব সহীহ মেনেছেন। অথচ তারা এটাকে অস্বিকার করে থাকে।
২
সেজদার সময় রফয়ে ইয়াদাইনের হাদীসকে আবু হাফস দাজেলী, আব্দুল হক হাশেমী, আব্দুল করীম সিন্ধী এবং আল্লামা আলবানী সহীহ বলেছেন। অথচ তারা এ কে অস্বিকার করে থাকে।
৩
রুকুর সময় রফয়ে ইয়াদাইনের হাদীস মানার দাবী করে থাকে, অথচ সাথে সাথে মিথ্যা সম্পৃক্ত করে যে, রাসূল সাঃ শেষ জীবন পর্যন্ত রফয়ে ইয়াদাইন করেছেন। এটা এমন মিথ্যা, যেমন মিথ্যা ঈসা আঃ আখেরী নবী হওয়া।
৪
প্রথম তাকবীরের পর রফয়ে ইয়াদাইন আর না করার আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাঃ এর হাদীসকে তাদের শায়েখ আলবানী সাহেব সহীহ বলেছেন। অথচ তারা এটাকে অস্বিকার করে থাকে।
যে দলটি একটি মাসআলার জন্য চার প্রকার হাদীসকে অস্বিকার করে থাকে। এ দলের নিজেদের আহলে হাদীস দাবী করা এমন, যেমন রাতকে দিন বলা। যদি হাদীস অস্বিকার করার নাম আহলে হাদীস হয়, তাহলে মুনকিরীনে হাদীস তথা হাদীস অস্বিকারকারী কাদের বলা হয়?
আশরাফ সাহেব বলতে লাগলেনঃ একেবারে সত্য বলেছেন। আলহামদুলিল্লাহ! আপনার কথায় আমার সন্দেহ একেবারে দূরিভূত হয়ে গেছে।
আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ পাকের শোকর যে, আপনাদের মত হক্কানী ওলামায়ে কেরামদের জন্যই এইসব নামধারী আহলে হাদিসদের থেকে আমাদের ঈমান ও আক্বিদা এখনও হেজাযতে আছে। জাঝাকুমুল্লাহু খয়রান।