মূল লেখক– মাওলানা সাইয়্যেদ মাহদী হাসান শাহজাহানপুরী রহঃ
অনুবাদ– লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
মতবাদ-২৬
গায়র মুকাল্লিদদের নিকট কেউ কোন মহিলার সাথে যিনা করে, তাহলে উক্ত মহিলার মেয়েকে যিনাকারী বিয়ে করতে পারবে, যদিও সেই মেয়েটি তারই যিনার কারণে জন্ম নিয়ে থাকে। {আরফুল জাদী-১১৩}
গায়র মুকাল্লিদ হিসেবে ইমাম শাফেয়ী রহ. বা ইমাম রাজী রহ. এর মতামতের তাকলীদ না করে কুরআন হাদীসের দলিল দিন এ মতাবাদের পক্ষে।
মতবাদ-২৭
গায়র মুকাল্লিদদের নিকট হস্ত মৈথুন করে বীর্যপাত করা, কিংবা অন্য কোন পদ্ধতিতে বীর্যপাত করা এমন ব্যক্তির জন্য জায়েজ যার স্ত্রী নেই। আর যদি তার গোনাহ করার সম্ভাবনা থাকে, তাহলে এভাবে বীর্যপাত করা ওয়াজিব বা মুস্তাহাব । {আরফুল জাদী-২১৪}
গায়র মুকাল্লিদ ভাইয়েরা কারো তাকলীদ করে ফুক্বাহাদের বক্তব্য উদ্ধৃত না করে কুরআন হাদীস থেকে এ মতবাদের দলীল দিন।
মতবাদ-২৮
গায়র মুকাল্লিদের নিকট কুরবানীর একটি বকরী অনেক ব্যক্তির পক্ষ থেকে যথেষ্ট। চাই তা শত ব্যক্তির পক্ষ থেকেই করা হোক না কেন! {বুদূরুল আহিল্লাহ-৩৯১}
এ মতবাদের পক্ষে কুরআন হাদীসের কী দলিল আছে?
মতবাদ-২৯
গায়র মুকাল্লিদদের নিকট রাসূল সাঃ এর রওজা যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করা জায়েজ নয়। {আরফুল জাদী-২৫৭}
কোন হাদীসে এসেছে যে, রাসূল সাঃ এর রওজা জিয়ারতের জন্য সফর করা নাজায়েজ?
গায়র মুকাল্লিদ হয়ে থাকলে কোন ব্যক্তির উক্তি পেশ না করে হাদীস পেশ করুন।
মতবাদ-৩০
গায়র মুকাল্লিদদের নিকট নাপাক পড়ার দ্বারা কোন পানিই নাপাক হয় না। পানি কম হোক বা বেশি হোক। নাপাকটি পায়খানা প্রস্রাব হোক বা অন্য কিছু হোক। হ্যাঁ, যদি রং বা গন্ধ যদি প্রকাশ পায়, তাহলে নাপাক হয়ে যাবে। {আরফুল জাদী-৯}
কম পানিতেও নাপাক পড়লে তা নাপাক হয় না, শুধু গন্ধ হলে বা রং পাল্টে গেলে নাপাক হবে, একথার দলীল কোন হাদীস?
সাহাবীর কথা, বা ফুক্বাহাদের কথাতো গায়র মুকাল্লিদের কাছে দলিল হতে পারে না। তাহলে এ মতবাদ কিভাবে সাবিত হল?
মতবাদ-৩১
গায়র মুকাল্লিদদের নিকট অজু ছাড়া ব্যক্তি কুরআন শরীফ স্পর্শ করতে পারে। {আরফুল জাদী-১৫}
এ মতবাদের পক্ষে কী দলীল আছে ফুক্ব্হাদের কওল ছাড়া?
মতবাদ-৩২
গায়র মুকাল্লিদদের নিকট যদি নামাযী ব্যক্তি নাপাক শরীরে নামায পড়ে, তাহলে তার নামায বাতিল হয় না। তবে সে গোনাহগার হবে। {বুদূরুল আহল্লিাহ-৩৮}
এ মতাবাদের পক্ষে ইবনে মাসউদ রাঃ বক্তব্য, কিংবা হানাফী ফক্বীহদের কথাতো আপনাদের পক্ষে দলীল হতে পারে না, এর পক্ষে কুরআন বা হাদীসের কী দলীল আছে?
মতবাদ-৩৩
গায়র মুকাল্লিদদের নিকট শরীর থেকে যতই রক্ত বের হোক এতে অজু ভাঙ্গবে না। {দস্তুরুল মুত্তাকী-২৯}
কুরআন হাদীসের কোন দলীলের ভিত্তিতে এ মতবাদ প্রতিষ্ঠিত?
মতবাদ-৩৪
গায়র মুকাল্লিদদের নিকট মুসাফির ব্যক্তি মুকিম ইমামের পিছনে ইক্তেদা করবে না, যদি ইক্তেদা করতেই হয়, তাহলে শেষের দুই রাকাতে ইক্তেদা করবে। {আল বুনইয়ানুল মারসুস-১৬৩}
এ মতবাদ কুরআনের কোন আয়াত বা নবীজী সাঃ এর কোন হাদীস দ্বারা প্রতিষ্ঠিত?
মতবাদ-৩৫
গায়র মুকাল্লিদদের নিকট মাথা মুন্ডানো খেলাফে সুন্নাত এবং খারেজীদের আলামত। {আল বুনইয়ানুল মারসূস-১৬৯}
এ মতবাদের পক্ষে ফক্বীহদের বক্তব্য রেখে কুরআন হাদীসের দলীল কই?
মতবাদ-৩৬
গায়র মুকাল্লিদদের নিকট “আল্লাহ” শব্দে জিকির করা বেদআত। {আল বুনইয়ানুল মারসূস-১৭৩}
এ মতবাদের পক্ষে কুরআন বা হাদীসের কী দলীল আছে?
মতবাদ-৩৭
গায়র মুকাল্লিদদের নিকট কতিপয় সাহাবাগণ ফাসেক ছিলেন (নাউজুবিল্লাহ)। এমনকি হযরত মুয়াবিয়া রাঃ কবীরা গোনাহ ও বিদ্রোহ করেছেন (নাউজুবিল্লাহ)। {আল বুনইয়ানুল মারসূস-১৮৪}
আক্বায়েদের কিতাবের রেফারেন্স, বা ফুক্বাহদের কথা না বলে কুরআন হাদীসের বক্তব্য উপস্থাপন করুন কোথায় আছে যে, সাহাবাগণ ফাসেক ও গোনাহে কবীরার মুরতাকিব ছিলেন?
মতবাদ-৩৮
গায়র মুকাল্লিদদের নিকট মহিলাদের নামায পূর্ণ শরীর ঢাকা ছাড়াও জায়েজ আছে, চাই একাকী নামায পড়–ক বা অন্যান্য মহিলাদের সাথে নামায পড়–ক, কিংবা স্বীয় স্বামীর সাথে নামায পড়–ক, বা অন্য কোন মাহরামের সাথে নামায পড়–ক, সর্বাবস্থায়ই নামায সহীহ হয়ে যাবে। সর্বোচ্চ মাথা ঢাকা থাকলেই হবে। {বুদূরুল আহিল্লাহ-৩৯}
নামায সহীহ হওয়া এটা শরয়ী হুজ্জত, তাই এর পক্ষে কুরআন হাদীসের দলিল আবশ্যক। গায়র মুকাল্লিদগণ এটা কোন দলীলের ভিত্তিতে বলে থাকেন?
মতবাদ-৩৯
গায়র মুকাল্লিদদের নিকট নামাযী ব্যক্তির কাপড় পাক হওয়া শর্ত নয়। যদি কেউ কোন ওজর ছাড়াই ইচ্ছেকৃত নাপাক কাপড় পরিধান করে নামায পড়ে নেয় তাহলে নামায হয়ে যাবে। {দলীলুত তালেব-২৬৪, আরফুল জাদী-৩২, বুদূরুল আহিল্লাহ-৩৯}
গায়র মুকাল্লিদদের নিকট যেহেতু সাহাবাদের আমল হুজ্জত নয়, তাই এসব উপস্থাপন না করে হাদীস উপস্থাপন করুন এ মতবাদের পক্ষে।
মতবাদ-৪০
গায়র মুকাল্লিদদের নিকট টাখনুর নিচে পায়জামা পরিধান করার দ্বারা অজু ভেঙ্গে যায়। {দস্তুরুল মুত্তাকী-২৯}
টাখনুর নিচে পায়জামা পরিধান করলে অজু ভেঙ্গে যায় এমন হাদীস কোথায় আছে? গোনাহ হওয়া এক বিষয়, আর অজু ভাঙ্গা আরেক বিষয়। এতটুকু বুঝার ক্ষমতাও কি আপনাদের হয়নি?
মতবাদ-৪১
রমজান মাসে রোজাবস্থায় যদি কেউ ইচ্ছেকৃত খেয়ে ফেলে তাহলে গায়র মুকাল্লিদদের নিকট উক্ত ব্যক্তির জিম্মায় কাফফারা আদায় করা আবশ্যক নয়। {দস্তুরুল মুত্তাকী-১০৩}
মতবাদ-৪২
গায়র মুকাল্লিদদের নিকট পর্দার বিধান কেবল মাত্র রাসূল সাঃ এর সম্মানিত স্ত্রীগণের জন্যই নাজিল হয়েছে। উম্মতের মহিলাদের জন্য নয়। [আল বুনইয়ানুল মারসূস-১৬৮}
উম্মতী মহিলাদের জন্য পর্দা জরুরী নয়,এমন কথা কুরআন হাদীসের কোথায় আছে?
মতবাদ-৪৩
গায়র মুকাল্লিদদের নিকট সজারু খাওয়া জায়েজ। যেহেতু হারাম হওয়ার কোন হাদীস প্রমানিত নেই। {বুদূরুল আহিল্লাহ-৩৫১}
এ হযরতদের কাছে জিজ্ঞাসা সজারু খবীশ প্রাণী হওয়ার জন্য কোন হাদীসের দলীল লাগবে? “খবীশ প্রাণী হারাম” সে হাদীসের অন্তর্ভুক্ত সজারু নয়? তাহলে সজারু হালাল কোন হাদীসের ভিত্তিতে?
মতবাদ-৪৪
গায়র মুকাল্লিদদের নিকট কাফেরদের থেকে হিলা করে সুদ খাওয়া জায়েজ। {আল বুনইয়ানুল মারসূস-১৭৩}
এ মতবাদের পক্ষে কুরআন বা হাদীসের কী দলীল আছে? গায়র মুকাল্লিদ হয়ে মুকাল্লিদদের মত ব্যক্তির বক্তব্যের দলীল কেন দেয়া হয়?
মতবাদ-৪৫
গায়র মুকাল্লিদদের নিকট পশু জবাই করার সময় বিসমিল্লাহ না বলে থাকলে খাওয়ার সময় বিসমিল্লাহ বললেই খাওয়া জায়েজ হয়ে যাবে। {আরফুল জাদী-২৪১}
এ মতবাদের দলীল কি? ইমাম বুখারীর বক্তব্যতো আপনাদের পক্ষে দলীল হতে পারে না। দলীল দিতে হবে কুরআন ও হাদীস থেকে।
মতবাদ-৪৬
কাফের অবস্থায় যদি কোন কাফের মান্নত করে, তারপর উক্ত কাফের মুসলমান হলে, কাফের অবস্থায় যে মান্নত করেছিল তা পূর্ণ করা তার উপর ওয়াজিব। {আরফুল জাদী-২৫৭}
তাহলেতো কাফের অবস্থায় কাযাকৃত সকল ইবাদতও কাযা করা উচিত। তাই নয়কি? যাহোক এ উদ্ভট বক্তেব্যের পক্ষে কুরআন হাদীসের দলীল কি?
মতবাদ-৪৭
ফরজ আদায়কারী ব্যক্তি নফল আদায়কারীর পিছনে ইক্তেদা করলে শুদ্ধ হবে গায়র মুকাল্লিদদের নিকট। {আরফুল জাদী-৩৭}
সাহাবীদের বক্তব্য যেহেতু গায়র মুকাল্লিদদের নিকট দলীল নয়, তাই “নফল আদায়কারীর পিছনে ফরজ আদায়ের ইক্তেদা সহীহ হয়” মর্মে সহীহ হাদীস উপস্থাপন করা উচিত। কিন্তু হাদীস কোথায়?
মতবাদ-৪৮
গায়র মুকাল্লিদদের নিকট নাবালেগ ছেলে যদি বালেগ ব্যক্তিদের ইমামতি করে, তাহলে এ ইমামতী সহীহ আছে। [আরফুল জাদী-৩৮}
রাসূল সাঃ এর কওল বা ফেল এ ব্যাপারে দলীল হিসেবে উপস্থাপন করা উচিত। কিন্তু আছে কি কোন দলীল?
মতবাদ-৪৯
গায়র মুকাল্লিদদের নিকট ঈদের নামায একাকী একজন ব্যক্তির দ্বারাও সহীহ হয়ে যায়। এজন্য জামাত হওয়া জরুরী নয়। {বুদূরুল আহিল্লাহ-৭৮}
এ ব্যাপারে রাসূল সাঃ থেকে কোন কওলী, ফেলী বা তাক্বরীরী হাদীস আছে? তবে কোন যুক্তিতে এ মতবাদ প্রতিষ্ঠিত হল?
মতবাদ-৫০
গায়রে মুকাল্লিদগণ নামাযের বিভিন্ন রুকনকে ফরজ, সুন্নাত মুস্তাহাব বলে মন্তব্য করে থাকেন। কিন্তু প্রশ্ন হল যেহেতু তারা কোন ব্যক্তির অনুসরন তথা তাক্বলীদকে শিরক মনে করেন, শুধু কুরআন ও হাদীসই দলীল বলে প্রচার করে থাকেন, তাহলে ফরজ, সুন্নাত, ওয়াজিব ও মুস্তাহাব ইত্যাদি পরিভাষা কুরআন হাদীসের কোথায় আছে? এসব কুরআনের কোন আয়াতে আছে? হাদীসের কোন কিতাবে আছে?
যদি না থাকে, তাহলে তারা এসব বলে নিজেদের সংজ্ঞা অনুযায়ী গায়রে মুকাল্লিদ থাকেন কী করে?
শেষ কথা
প্রিয় পাঠকবৃন্দ!
এখানে গায়রে মুকাল্লিদ বা কথিত আহলে হাদীসদের কিছু মতবাদ বর্ণনা করা হল। আপনারাই লক্ষ্য করুন-যাদের পবিত্রতা, নাপাকী, হালাল-হারাম, জায়েজ-নাজায়েজ, সুন্নাত-বেদআত ইত্যাদি বিষয়ের উপর সামান্য জ্ঞানও নেই, তারাই দাবি করছে যে, তারা হাদীসের উপর আমল করেন। আর মুকাল্লিদরা সবাই মুশরিক ফির রিসালাত।
যদি কেউ চারজনের বদলে আটজন মহিলাকে বিয়ে করে নেয়, তাহলে কোন সমস্যা নেই।
যদি বদনা ভরা পানিতে কিছু প্রস্রাব পড়ে যায়,তাতে কোন সমস্যা নেই! পানি পাক! যতক্ষণ না রং, গন্ধ বা স্বাদ পাল্টে না যাবে!
জীনা করে উক্ত মহিলার বাচ্চাকে বিয়ে করা জায়েজ!
যদি বেশ্যা মহিলা তওবা করে, তাহলে বেশ্যাগিরি করে কামানো টাকা হালাল হয়ে যাবে!
রক্ত, বীর্য, পশুর প্রস্রাব পবিত্র!
সূদ নিতে ইচ্ছে হলে হীলা করে নিতে পারবে!
সূর্য পশ্চিম দিগন্তে সামান্য হেলে পড়ার আগেই জুমআর নামায পড়তে পারবে!
সমুদ্রের কচ্চপ, কাঁকড়া, ব্যাঙ, সামুদ্রিক কুকুর সব খাওয়া জায়েজ!
আল্লাহ আল্লাহ জিকিরই যেহেতু বেদআত, তাহলে আর থাকলোই কি?
যে সাহাবাগণের উপর দ্বীনের ভিত্তি, তারাই যদি ফাসেক হন তাহলে আর কী থাকে?
মদ নাকি নাপাকই না!
শরীর থেকে যতই রক্ত ঝরুক, অজু এতই মজবুত যে এতে ভাঙ্গবে না!
কিন্তু পায়জামা টাখনু থেকে একটু নিচে নামলেই সাথে সাথেই অজু ভেঙ্গে যাবে!
কাফেরদের জবাইকৃত পশু খাওয়া জায়েজ!
মহিলাদের গহনায় কোন যাকাত নেই। তারা একদম স্বাধীন এ ব্যাপারে!
ব্যবসায়ীরা গায়রে মুকাল্লিদদের মুবারকবাদ দেয়া দরকার। কারণ বন্দুকের গুলিতে মারা প্রাণী একদম হালাল! তাই তাদের ব্যবসা করার সুযোগ গেল বেড়ে।
পুরুষদের জন্য রূপার গহনা পরিধান করা জায়েজ!
পর্দার বিধান শুধু রাসূল সাঃ এর সম্মানিত স্ত্রীগণের জন্যই খাস। অন্য কোন মহিলাকে পর্দা করতে হবে না। বেপর্দা হয়ে মনের আনন্দে ঘুরে বেড়াতে পারবে।
মাথা ঢেকে রেখে কাপড় খোলা রাখা অবস্থায়ও মহিলাদের জন্য নামায পড়া জায়েজ আছে!
মোটকথা
গায়রে মুকাল্লিদ হতে পারলে দুনিয়াটাই জান্নাত হয়ে যাবে, সব কিছুই করা যাবে মনে খুশি মত।
পড়ে ভাল লাগলো।
আপনাদের এ খেদমতটুকু আল্লাহ তা’আলা কবুল করুন ৷