প্রশ্ন
কয়েকদিন আগে এক গায়রে মুকাল্লিদ ভাই আমাকে ১ টিং প্রশ্ন করলেন যে,
একবার ডানে সালাম ফিরিয়ে সাহু সেজদা করতে হবে এটা কোন হাদিসে আছে?
আশাকরি উত্তর দিবেন।
মুহাম্মদ নুরুল হুসাইন
সিংগাপুর প্রবাসী।
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
লোকটিকে প্রশ্ন করুন
১-
দুই দিকে সালাম ফিরানোর পর সাহু সেজদা করতে হবে, কোন সহীহ সরীহ এবং গায়রে মআরিজ তথা বৈপরীত্বহীন হাদীস দ্বারা প্রামাণিত?
২
সালাম ফিরানোর আগেই সাহু সেজদা দেয়া কোন সহীহ সরীহ গায়রে মুতাআরিজ তথা বৈপরীত্বহীন হাদীস দ্বারা প্রমানিত?
৩
নামায শেষে উভয় দিকে সালাম ফিরানো ফরজ? না ওয়াজিব? না সুন্নত? কোন সহীহ সরীহ হাদীসে এর প্রমাণ বিদ্যমান?
৪
ইমাম ও মুক্তাদী এবং একাকী নামায আদায়কারী ব্যক্তি সালাম ফিরানোর সময় মনে মনে কি নিয়ত করবে? সহীহ ও স্পষ্ট হাদীসের ভিত্তিতে প্রমাণ দাও।
৫
ইমাম উঁচু আওয়াজে আর মুক্তাদী আস্তে আওয়াজে সালাম ফিরানো কোন সহীহ সরীহ হাদীস দ্বারা প্রমানিত?
৬
যদি ইমাম ভুল করে ফজর, মাগরিব বা ইশার নামাযে ভুলে আস্তে কিরাত পড়ে ফেলে তাহলে কি সেজদায়ে সাহু আবশ্যক হবে? সহীহ সরীহ হাদীসের আলোকে জবাব দাও।
৭
যদি ইমাম ভুল করে আস্তে কিরাত পড়া নামাযে জোরে কিরাত পড়ে ফেলে তাহলে মুক্তাদীগণ কী করবে? এক্ষেত্রে কি সেজদায়ে সাহু আবশ্যক হবে? আবশ্যক হওয়াটা কোন সহীহ সরীহ হাদীস দ্বারা প্রমানিত?
৮
যদি ইমাম সূরা ফাতিহা পড়ে কিরাত না মিলিয়ে রুকুতে চলে যায়, তাহলে কী করণীয়? সেজদায়ে সাহু আবশ্যক হবে? না নামায বাতিল? সহীহ সরীহ হাদীসের আলোকে জানতে চাই।
৯
কোন ব্যক্তি যদি সূরা ফাতিহা না পড়ে প্রথমেই সূরা ইখলাস পুরোটা পড়ে ফেলে তাহলে তার নামাযের হুকুম কি? সেজদায়ে সাহু দিলে নামায হবে? সহীহ সরীহ হাদীসের আলোকে জবাব দাও।
১০
জোরে কিরাত পড়া আর আস্তে কিরাত পড়ার পূর্ণাঙ্গ সংজ্ঞা সহীহ সরীহ গায়রে মুআরিজ তথা বৈপরীত্বহীন হাদীস দ্বারা জবাব দাও।
এবার লোকটির প্রশ্নের জবাবে নিম্নোক্ত হাদীস পেশ করুন। আমাদের মত হল, সেজদায়ে সাহু দেয়ার পদ্ধতি হল, সালাম ফিরানোর পর সাহু সেজদা দিবে। আর সালাম যেহেতু একদিকে ফিরানোর মাঝেও সালাম ফিরানোর অর্থ থাকে, তাই একদিকে সালাম ফিরানোর কথা আমরা বলে থাকি। সালাম ফিরানোর পর সাহু সেজদা করবে সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমানিত। যেমন-
১
عَنْ عَبْدِ اللهِ، رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: «السَّهْوُ أَنْ يَقُومَ فِي قُعُودٍ , أَوْ يَقْعُدَ فِي قِيَامٍ , أَوْ يُسَلِّمَ فِي الرَّكْعَتَيْنِ , فَإِنَّهُ يُسَلِّمُ , ثُمَّ يَسْجُدُ سَجْدَتَيِ السَّهْوِ , وَيَتَشَهَّدُ , وَيُسَلِّمُ»
হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসঈদ রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ ভুল হল এই যে, নামাযী ব্যক্তি বসার বদলে দাঁড়িয়ে যাওয়া। অথবা দাঁড়ানোর বদলে বসে যাওয়া, বা [তিন বার চার রাকাতওয়ালা নামাযে] দুই রাকাত পড়ে সালাম ফিরিয়ে দেয়া। তাহলে এমন ব্যক্তি সালাম ফিরানোর পর দুই সেজদা করবে,তারপর তাশাহুদ পড়ে সালাম ফিরাবে। {তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-২৫৬৫}
হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসঈদ ছাড়াও হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ রাঃ, হযরত আব্দুল্লাহ বিন জুবায়ের রাঃ, হযরত আনাস বিন মালিক রাঃ, হযরত সাদ বিন আবী ওয়াক্কাস রাঃ প্রমূখ সাহাবাগণ থেকে সালাম ফিরানোর পর সাহু সেজদা করা প্রমানিত। {শরহু মাআনিল আসার, হাদীস নং-২৫৬৪}
২
وَإِذَا شَكَّ أَحَدُكُمْ فِي صَلاَتِهِ، فَلْيَتَحَرَّ الصَّوَابَ فَلْيُتِمَّ عَلَيْهِ، ثُمَّ لِيُسَلِّمْ، ثُمَّ يَسْجُدُ سَجْدَتَيْنِ»
হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসঈদ রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ তোমাদের মাঝে যখন কারো নামাযের ব্যাপারে সন্দেহ হয়ে যাবে, তখন তার জন্য উচিত এ ব্যাপারে চিন্তা ফিকির করা, তারপর নামায পূর্ণ করে সালাম ফিরাবে তারপর দুই সিজদা করবে। {সহীহ বুখারী-১/৫৮, হাদীস নং-৪০১, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৫৭২}
৩
عَنْ ثَوْبَانَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لِكُلِّ سَهْوٍ سَجْدَتَانِ بَعْدَ مَا يُسَلِّمُ»،
হযরত সাওবান রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ প্রত্যেক ভুলের কারণে দুই সিজদা দিতে হবে সালাম ফিরানোর পর। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-১০৩৮, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-১২১৯, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২২৪১৭}
৪
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ جَعْفَرٍ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنْ شَكَّ فِي صَلَاتِهِ فَلْيَسْجُدْ سَجْدَتَيْنِ بَعْدَ مَا يُسَلِّمُ»
হযরত আব্দুল্লাহ বিন যাফর রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ যার নামাযে সমস্যা হয়ে যায়, সে যেন দু’টি সেজদা করে সালাম ফিরানোর পর। {সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং-১৫৫০}
সালাম ফিরানের পর সাহু সেজদা করার এরকম অসংখ্য সহীহ বর্ণনা হাদীসের কিতাবসমূহে বর্ণিত। আপনি কথিত আহলে হাদীস দাবিদার ব্যক্তিকে প্রথমে উল্লেখিত নামায সংক্রান্ত প্রশ্নগুলোর জবাব সহীহ ও সরীহ গায়রে মুআরিজ বর্ণনার আলোকে দেয়ার জন্য বলুন।
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।