প্রশ্ন
আচ্ছালামু আলাইকুম প্রাণ প্রিয় কলিজার টুকরো হুজুর। আশা করি ভালো আছেন।
আমার প্রশ্ন বিস্তারিত আকারে বর্ণিত হলো :
আমার এক প্রবাসী ভাই দীর্য দিন (৬বছর ) দরে ফেইসবুক এ বিভিন্ন মেয়ের সাথে চ্যাট এর মাধ্যমে বন্ধুত্ব গড়ে তুলত একাকিত্ব কাটানো জন্য। প্রথম দিকে কথা বার্তা স্বাবাবিক হলে ও এক সময় অশ্লীল কথা বার্তায় রূপ নেয় ও বিভিন্ন মেয়ের গোপন ছবি নিতো তাঁদের বন্ধুত্বের কথা বলে। বিবাহিতা এক মহিলার সাথে ভিডিও কলে যিনায় অভস্থ হয়ে যায় ৩ মাস পর ভুল বুজতে পেরে অনুশোচিত হয়ে ফিরে আসে। এখন এই ভাইটি নিজের উপর ইসলামী শাস্তি প্রয়োগ করতে চায়। আর যাতে পুনরায় এই পাপে না জড়িয়ে যায় তার জন্য আপনার পরামর্শ চায়। আর যেই পাপ গুলা সংগঠিত হয়েছে তার জন্য করণীয় জানতে চায়। যারা তার হাত দরে খারাপ হয়েছে (১২০ জনের উপর) তাঁদের থেকে মাফ কি করে নিবে?
বিঃদ্রঃ: যাদের সাথে এই পাপ সংগঠিত হয়েছে তাঁদের আনফ্রেন্ড করে দিসে ক্ষমা চাওয়ার জন্য তাঁদের কাউকে পাওয়া সম্ভব নয়।
ভাইটি কি ক্ষতি করে পেলছে বুঝতে পেরে মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। বার বার আত্মহননের কথা বলছে পরিবারের সাথে কথাবার্তা বলা বন্ধ করে দিছে। এটা ও বলে আমি বিয়ে করলে ওই মেয়েকে ঠকানো হবে আমার স্বাবাবিক জীবন শেষ। সারাক্ষন নিজের মৃত্যু কামনা করে।
এই অবস্থায় আপনার পরামর্শ অতীব জুরুরি। E-mail করে পরামর্শ দেয়ার অনুরোধ রইলো। আসসালামু আলাইকুম।
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
তিনি যে কাজগুলো করেছেন সেগুলো নিঃসন্দেহে খুবই জঘন্য কাজ। মারাত্মক কবীরা গোনাহ।
কিন্তু তিনি যেহেতু অনুতপ্ত হয়েছেন। তাই তার উচিত খাস দিলে তওবা করা।
খাস তওবা করলে আল্লাহর কাছে পূর্বের গোনাহের জন্য ক্ষমা চাইলে আল্লাহ তাআলা চাইলে তাকে অবশ্যই ক্ষমা করে দিবেন।
তাই তওবা করার পর তিনি বিয়ে করতে পারেন। কোন সমস্যা নেই। আত্মহননের চিন্তা যেন মাথা থেকে দূর করে দেন। কারণ, এক কবীরা গোনাহ যার ক্ষমা পাওয়ার সুযোগ আছে, সেটি থেকে রক্ষা পেতে আরেকটি মারাত্মক কবীরা গোনাহ করা কোন বুদ্ধিমানের কাজ হতে পারে না। কারণ, আত্মহত্যা করা মারাত্মক কবীরা গোনাহ। এহেন চিন্তা কোনভাবেই যেন তিনি মাথায় না আনেন।
বরং খাস দিলে তওবা করেন। এটাই তার জন্য কর্তব্য।
তওবার জন্য শর্ত হলো:
১ গোনাহটি ছেড়ে দেয়া।
২ গোনাহটির কারণে অনুতপ্ত হওয়া।
৩ ভবিষ্যতে উক্ত গোনাহ আর না করার দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করা।
৪ আল্লাহর কাছে কায়মানোবাক্যে কান্নকাটি করে ক্ষমা প্রার্থনা।
ইনশাআল্লাহ আল্লাহ তাআলা উক্ত ভাইকে মাফ করে দিবেন।
হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত।
فَالْعَيْنَانِ زِنَاهُمَا النَّظَرُ، وَالْأُذُنَانِ زِنَاهُمَا الِاسْتِمَاعُ، وَاللِّسَانُ زِنَاهُ الْكَلَامُ، وَالْيَدُزِنَاهَا الْبَطْشُ، وَالرِّجْلُ زِنَاهَا الْخُطَا، وَالْقَلْبُ يَهْوَى وَيَتَمَنَّى، وَيُصَدِّقُ ذَلِكَ الْفَرْجُ وَيُكَذِّبُهُ
রাসূল সাঃ ইরশাদ করেন, চোখের জিনা হল [হারাম] দৃষ্টিপাত। কর্ণদ্বয়ের জিনা হল, [গায়রে মাহরামের যৌন উদ্দীপক] কথাবার্তা মনযোগ দিয়ে শোনা। জিহবার জিনা হল, [গায়রে মাহরামের সাথে সুড়সুড়িমূলক] কথোপকথন। হাতের জিনা হল, [গায়রে মাহরামকে] ধরা বা স্পর্শকরণ। পায়ের জিনা হল, [খারাপ উদ্দেশ্যে] চলা। অন্তর চায় এবং কামনা করে আর লজ্জাস্থান তাকে বাস্তবে রূপ দেয় [যদি জিনা করে] এবং মিথ্যা পরিণত করে [যদি অন্তরের চাওয়া অনুপাতে জিনা না করে]। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-২৬৫৭, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৮৯৩২]
انَّمَا التَّوْبَةُ عَلَى اللَّهِ لِلَّذِينَ يَعْمَلُونَ السُّوءَ بِجَهَالَةٍ ثُمَّ يَتُوبُونَ مِنْ قَرِيبٍ فَأُولَٰئِكَ يَتُوبُ اللَّهُ عَلَيْهِمْ ۗ وَكَانَ اللَّهُ عَلِيمًا حَكِيمًا [٤:١٧]
অবশ্যই আল্লাহ তাদের তওবা কবুল করবেন,যারা ভূলবশতঃ মন্দ কাজ করে,অতঃপর অনতিবিলম্বে তওবা করে; এরাই হল সেসব লোক যাদেরকে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। আল্লাহ মহাজ্ঞানী, রহস্যবিদ। {সূরা নিসা-১৭}
إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ التَّوَّابِينَ وَيُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِينَ [٢:٢٢٢
নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবাকারী এবং অপবিত্রতা থেকে যারা বেঁচে থাকে তাদেরকে পছন্দ করেন। [বাকারা-২২২]
إِنَّمَا التَّوْبَةُ عَلَى اللَّهِ لِلَّذِينَ يَعْمَلُونَ السُّوءَ بِجَهَالَةٍ ثُمَّ يَتُوبُونَ مِنْ قَرِيبٍ فَأُولَٰئِكَ يَتُوبُ اللَّهُ عَلَيْهِمْ ۗ وَكَانَ اللَّهُ عَلِيمًا حَكِيمًا [٤:١٧]
অবশ্যই আল্লাহ তাদের তওবা কবুল করবেন,যারা ভূলবশতঃ মন্দ কাজ করে,অতঃপর অনতিবিলম্বে তওবা করে; এরাই হল সেসব লোক যাদেরকে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। আল্লাহ মহাজ্ঞানী,রহস্যবিদ। {সূরা নিসা-১৭ }
وَإِنِّي لَغَفَّارٌ لِّمَن تَابَ وَآمَنَ وَعَمِلَ صَالِحًا ثُمَّ اهْتَدَىٰ [٢٠:٨٢]
আর যে তওবা করে,ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে অতঃপর সৎপথে অটল থাকে,আমি তার প্রতি অবশ্যই ক্ষমাশীল। [সূরা ত্বহা-৮২]
وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ [٢٤:٣١]
মুমিনগণ,তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর,যাতে তোমরা সফলকাম হও। [সূরা নূর-৩১]
إِلَّا مَن تَابَ وَآمَنَ وَعَمِلَ عَمَلًا صَالِحًا فَأُولَٰئِكَ يُبَدِّلُ اللَّهُ سَيِّئَاتِهِمْ حَسَنَاتٍ ۗ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَّحِيمًا [٢٥:٧٠]
কিন্তু যারা তওবা করে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদের গোনাহকে পুন্য দ্বারা পরিবর্তত করে এবং দেবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। [সূরা ফুরকান-৭০]
হযরত উবাদা বিন আব্দুল্লাহ তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন,রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ
التَّائِبُ مِنَ الذَّنْبِ، كَمَنْ لَا ذَنْبَ لَهُ
গোনাহ থেকে তওবাকারী এমন,যেন সে গোনাহ করেইনি। [সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৪২৫০]
হযরত আয়শা রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,
فَإِنَّ العَبْدَ إِذَا اعْتَرَفَ ثُمَّ تَابَ، تَابَ اللَّهُ عَلَيْهِ
বান্দা গোনাহ স্বীকার করে মাফ চাইলে আল্লাহ পাক তা কবুল করেন। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৪১৪১]
عَنْ أَبِي بَكْرٍ الصِّدِّيقِ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا أَصَرَّ مَنِ اسْتَغْفَرَ، وَإِنْ عَادَ فِي الْيَوْمِ سَبْعِينَ مَرَّةٍ
হযরত আবু বকর রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যদি কেউ ক্ষমা প্রার্থনা করে, তবে সে দৈনিক সত্তর বার গোনাহ করলেও সে যেন আসলে গোনাহই করেনি। [সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-১৫১৪]
وَلَا تَقْتُلُوا أَنفُسَكُمْ ۚ إِنَّ اللَّهَ كَانَ بِكُمْ رَحِيمًا [٤:٢٩
আর তোমরা নিজেদের কাউকে হত্যা করো না। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তা’আলা তোমাদের প্রতি দয়ালু। {সূরা নিসা-২৯}
وَقَالَ حَجَّاجُ بْنُ مِنْهَالٍ حَدَّثَنَا جَرِيرُ بْنُ حَازِمٍ عَنْ الْحَسَنِ حَدَّثَنَا جُنْدَبٌ فِي هَذَا الْمَسْجِدِ فَمَا نَسِينَا وَمَا نَخَافُ أَنْ يَكْذِبَ جُنْدَبٌ عَلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ كَانَ بِرَجُلٍ جِرَاحٌ فَقَتَلَ نَفْسَهُ فَقَالَ اللهُ بَدَرَنِي عَبْدِي بِنَفْسِهِ حَرَّمْتُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ
হাজ্জাজ ইবনু মিনহাল (রহ.) বলেন, জারীর ইবনু হাযিম (রহ.) আমাদের হাদীস শুনিয়েছেন হাসান (রহ.) হতে, তিনি বলেন, জুনদাব (রাঃ) এই মসজিদে আমাদের হাদীস শুনিয়েছেন, আর তা আমরা ভুলে যাইনি এবং আমরা এ আশঙ্কাও করিনি যে, জুনদাব (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নামে মিথ্যা বলেছেন। তিনি বলেছেন, এক ব্যক্তির (দেহে) যখম ছিল, সে আত্মহত্যা করল। তখন আল্লাহ্ তা‘আলা বললেন, আমার বান্দা তার প্রাণ নিয়ে আমার সাথে তাড়াহুড়া করল। আমি তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিলাম। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং-১৩৬৪]
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم الَّذِي يَخْنُقُ نَفْسَهُ يَخْنُقُهَا فِي النَّارِ وَالَّذِي يَطْعُنُهَا يَطْعُنُهَا فِي النَّارِ
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্তি ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামে (অনুরূপভাবে) নিজেকে ফাঁস লাগাতে থাকবে আর যে ব্যাক্তি বর্শার আঘাতে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নাম (অনুরূপভাবে) বর্শা বিঁধতে থাকবে। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং-১৩৬৫, ইফাবা, হাদীস নং-১২৮১]
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তা’লীমুল ইসলাম ইনস্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
প্রধান মুফতী: জামিয়াতুস সুন্নাহ লালবাগ, ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া ইসলামিয়া দারুল হক লালবাগ ঢাকা।
পরিচালক: শুকুন্দী ঝালখালী তা’লীমুস সুন্নাহ দারুল উলুম মাদরাসা, মনোহরদী নরসিংদী।
শাইখুল হাদীস: জামিয়া ইসলামিয়া আরাবিয়া, সনমানিয়া, কাপাসিয়া, গাজীপুর।
ইমেইল– [email protected]