প্রশ্ন
সাজিদ বিন শফিক
শায়েখ: আমি সাজিদ বিন শফিক, আমার প্রশ্ন হলো।
‘আল্লাহর ধন নবীরে দিয়া, আল্লাহ গেলেন গায়েব হইয়া, নবীর ধন খাজায় পাইয়া, বইসা আছে আজমীরে, কেউ ফিরে না…….ইত্যাদি।
উক্ত গান গাইলে বা বিশ্বাস করলে তার ঈমান থাকে কি না?
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
আল্লাহর ধন অর্থ যদি হয়ে, ইলম তাহলে আল্লাহর ধন নবীকে দেয়া হয়েছে কথাটি সঠিক।
কিন্তু এর অর্থ যদি আল্লাহর স্রষ্টাগত শক্তি ও ধনভাণ্ডার। তাহলে এটি কুফরী কথা নিঃসন্দেহে।
কুরআনে কারীমে ইরশাদ হচ্ছে:
قُل لَّا أَقُولُ لَكُمْ عِندِي خَزَائِنُ اللَّهِ وَلَا أَعْلَمُ الْغَيْبَ وَلَا أَقُولُ لَكُمْ إِنِّي مَلَكٌ ۖ إِنْ أَتَّبِعُ إِلَّا مَا يُوحَىٰ إِلَيَّ ۚ قُلْ هَلْ يَسْتَوِي الْأَعْمَىٰ وَالْبَصِيرُ ۚ أَفَلَا تَتَفَكَّرُونَ [٦:٥٠]
আপনি বলুনঃ আমি তোমাদেরকে বলি না যে, আমার কাছে আল্লাহর ভান্ডার রয়েছে। তাছাড়া আমি অদৃশ্য বিষয় অবগতও নই। আমি এমন বলি না যে, আমি ফেরেশতা। আমি তো শুধু ঐ ওহীর অনুসরণ করি, যা আমার কাছে আসে। আপনি বলে দিনঃ অন্ধ ও চক্ষুমান কি সমান হতে পারে? তোমরা কি চিন্তা কর না ? [সূরা আনআম-৫০]
দ্বিতীয়ত আল্লাহ গেলেন গায়েব হইয়া কথাটি মারাত্মক পর্যায়ের গলদ।
আল্লাহ তাআলা কি নবীকে ইলমের ধন দেয়ার আগে দৃশ্যমান ছিলেন নাকি? তাহলে গায়েব হয়ে যাবার অর্থ কী?
যদি এই অর্থে বলা হয় যে, তিনি নিস্ক্রিয় হয়ে গেছেন। সর্বক্ষমতা নবীর কাছে দেয়া হয়েছে, তাহলেও এটিও সরাসরি কুফরী।
কারণ, সর্বময় ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহর হাতে। এটা অন্য কাউকে দেয়া হয়েছে বিশ্বাস করা সুষ্পষ্টভাবেই শিরক ও কুফর।
কেউ আজমীর দরবারে গেলে খালি হাতে ফিরে না, এই কথা বলাও পরিস্কার শিরক।
قُل لَّا أَمْلِكُ لِنَفْسِي نَفْعًا وَلَا ضَرًّا إِلَّا مَا شَاءَ اللَّهُ وَلَوْ كُنتُ أَعْلَمُ الْغَيْبَ لَاسْتَكْثَرْتُ مِنَ الْخَيْرِ وَمَا مَسَّنِيَ السُّوءُ إِنْ أَنَا إِلَّا نَذِيرٌ وَبَشِيرٌ لِّقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ ﴿الأعراف: ١٨٨﴾
বল, যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ ইচ্ছা না করেন, আমি আমার নিজেরও কোন উপকার ও অপকার করার ক্ষমতা রাখি না। আমার যদি গায়েব সম্পর্কে জানা থাকত, তবে ভালো-ভালো জিনিস প্রচুর পরিমাণে সংগ্রহ করে নিতাম এবং কোনও রকম কষ্ট আমাকে স্পর্শ করত না। আমি তো কেবল একজন সতর্ককারী ও সুসংবাদদাতা সেই সকল লোকের জন্য, যারা (আমার কথা) মানে। [সূরা আ’রাফ-১৮৮]
আরেক আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে:
إِنَّكَ لَا تَهْدِي مَنْ أَحْبَبْتَ وَلَٰكِنَّ اللَّهَ يَهْدِي مَن يَشَاءُ وَهُوَ أَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِينَ ﴿القصص: ٥٦﴾
(হে রাসূল!) সত্যি কথা হল, তুমি নিজে যাকে ইচ্ছা করবে তাকে হেদায়াতপ্রাপ্ত করতে পারবে না; বরং আল্লাহ যাকে চান হেদায়াতপ্রাপ্ত করেন। কারা হেদায়াত কবুল করবে তা তিনিই ভালো জানেন। [সূরা কাসাস-৫৬]
قُلْ إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ مِّثْلُكُمْ يُوحَىٰ إِلَيَّ أَنَّمَا إِلَٰهُكُمْ إِلَٰهٌ وَاحِدٌ فَمَن كَانَ يَرْجُو لِقَاءَ رَبِّهِ فَلْيَعْمَلْ عَمَلًا صَالِحًا وَلَا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهِ أَحَدًا ﴿الكهف: ١١٠﴾
বলে দাও, আমি তো তোমাদের মত একজন মানুষই। (তবে) আমার প্রতি এই ওহী আসে যে, তোমাদের মাবুদ কেবল একই মাবুদ। সুতরাং যে-কেউ নিজ মালিকের সাথে মিলিত হওয়ার আশা রাখে, সে যেন সৎকর্ম করে এবং নিজ মালিকের ইবাদতে অন্য কাউকে শরীক না করে। [সূরা আল কাহ্ফ – ১১০]
عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ سَمِعَ عُمَرَ يَقُوْلُ عَلَى الْمِنْبَرِ سَمِعْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يَقُوْلُ لَا تُطْرُونِيْ كَمَا أَطْرَتْ النَّصَارَى ابْنَ مَرْيَمَ فَإِنَّمَا أَنَا عَبْدُهُ فَقُوْلُوْا عَبْدُ اللهِ وَرَسُوْلُهُ
ইবনে ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি ‘উমার (রাঃ)-কে মিম্বারের ওপর দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছেন যে, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, তোমরা আমার প্রশংসা করতে গিয়ে বাড়াবাড়ি করো না, যেমন ‘ঈসা মারইয়াম (আঃ) সম্পর্কে খ্রিস্টানরা বাড়াবাড়ি করেছিল। আমি তাঁর বান্দা, তাই তোমরা বলবে, আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৩৪৪৫]
সুতরাং উপরোক্ত গান যে ব্যক্তি কথাগুলোকে বিশ্বাস করে বলবে, তার ঈমান চলে যাবে। তার জন্য নতুন করে কালিমা পড়ে মুসলমান হওয়া আবশ্যক।
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তা’লীমুল ইসলাম ইনস্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
প্রধান মুফতী: জামিয়াতুস সুন্নাহ লালবাগ, ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া ইসলামিয়া দারুল হক লালবাগ ঢাকা।
পরিচালক: শুকুন্দী ঝালখালী তা’লীমুস সুন্নাহ দারুল উলুম মাদরাসা, মনোহরদী নরসিংদী।
ইমেইল– ahlehaqmedia2014@gmail.com