প্রচ্ছদ / অপরাধ ও গোনাহ / হানাফী মাযহাবের ফিক্বহের কিতাবে ‘হস্তমৈথুন’ কে জায়েজ বলা হয়েছে?

হানাফী মাযহাবের ফিক্বহের কিতাবে ‘হস্তমৈথুন’ কে জায়েজ বলা হয়েছে?

প্রশ্ন

কিছু আহলে হাদীস ভাইরা ফেইসবুকে এসব লিখে পোস্ট করতেছে যে, হানাফী ফিক্বহের কিতাবে আছে যে, ‘উত্তেজনা প্রশমনে যদি কেউ হস্তমৈথুন করে তাহলে কোন সমস্যা নেই’। এমনও আছে যে, ‘বেশি উত্তেজনা হলে হস্তমৈথুন করা ওয়াজিব’।

সুতরাং বুঝা যাচ্ছে যে, হস্তমৈথুনকে হানাফী মাযহাব মতে সম্পূর্ণরূপে জায়েজ।

আসলেই কি ফিক্বহে হানাফীতে এমন কথা আছে? দয়া করে বিস্তারিত জানাবেন।

উত্তর

بسم الله الرحمن الرحيم

হানাফী ফিক্বহের কিতাবে এ বিষয়ক দু’টি সুরত উদ্ধৃত হয়েছে।

একটি হলো, এখতিয়ারী তথা ইচ্ছাধীন। আরেকটি হলো গায়রে ইখতিয়ারী তথা নিজের নিয়ন্ত্রনের বাহিরে।

এখতিয়ারী অবস্থায় হস্তমৈথুন করাকে ফিক্বহে হানাফীতে পরিস্কার ভাষায় হারাম এবং শাস্তির উপযুক্ত বলে ঘোষণা করা হয়েছে।

 الِاسْتِمْنَاءُ حَرَامٌ، ‌وَفِيهِ ‌التَّعْزِيرُ (الفتاوى الهندية-2/170، رد المحتار، زكريا-6/38، كرتاشى-4/27، الجوهرة النيرة، كتاب الحدود، مسألة الشهادة على الإحصان2/155)

হস্তমৈথুন করা হারাম। এতে তা’জীর তথা বিচারক কর্তৃক শাস্তি প্রযোজ্য হবে। [ফাতাওয়া আলমগীরী-২/১৭০, ফাতাওয়া শামী-৬/৩৮, আলজাওহারাতুন নায়্যিরাহ-২/১৫৫]

তাহলে ফিক্বহে হানাফীতে শুধুমাত্র জৈবিক আনন্দ লাভের আশায় হস্তমৈথুনকে শুধু হারামই বলেনি, বরং শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে ঘোষণা করেছে।

সুতরাং হানাফী মাযহাবের ফিক্বহের কিতাবে হস্তমৈথুনকে জায়েজ বলা হয়েছে বলাটা চরম পর্যায়ের মিথ্যা অপবাদ ছাড়া আর কী হতে পারে?

তবে গায়রে এখতিয়ারী অবস্থায় তথা কোন যুবক যদি তাক্বওয়া পরহেযগারী থাকা সত্বেও যৌবনের তীব্র উত্তেজনার অবস্থায় বিবাহ করতে সক্ষম না হয়, কিংবা বিবাহিত, কিন্তু কোন কারণে স্ত্রীর কাছে যেতে সক্ষম না হয়, আর তীব্র উত্তেজনা প্রশমনে যিনায় লিপ্ত হবার প্রবল ধারণা হয়, সেইসাথে এ কারণে ইবাদতে নিমগ্ন হওয়া বা মনোযোগী হওয়া কঠিন হয়ে যায়, তাহলে উক্ত কাজকে গোনাহের কাজ মনে করে, বীর্যপাতের মাধ্যমে উত্তেজনা প্রশমন করে ইবাদতে মনোযোগী হবার মানসে যদি কেউ হস্তমৈথুন করে, এবং পরবর্তীতে তওবা করে নেয়, তাহলে আশা করা যায়, আল্লাহ তাআলা তাকে ক্ষমা করে দিবেন।

ফিক্বহে হানাফীতে এ গায়রে ইখতিয়ারী সূরতের ক্ষেত্রে লেখা হয়েছে যে,

إنْ أَرَادَ بِذَلِكَ ‌تَسْكِينَ ‌الشَّهْوَةِ الْمُفْرِطَةِ الشَّاغِلَةِ لِلْقَلْبِ وَكَانَ عَزَبًا لَا زَوْجَةَ لَهُ وَلَا أَمَةَ أَوْ كَانَ إلَّا أَنَّهُ لَا يَقْدِرُ عَلَى الْوُصُولِ إلَيْهَا لِعُذْرٍ قَالَ أَبُو اللَّيْثِ أَرْجُو أَنْ لَا وَبَالَ عَلَيْهِ وَأَمَّا إذَا فَعَلَهُ لِاسْتِجْلَابِ الشَّهْوَةِ فَهُوَ آثِمٌ (رد المحتار، كتاب الصوم، بَابُ مَا يُفْسِدُ الصَّوْمَ وَمَا لَا يُفْسِدُهُ، مَطْلَبٌ فِي حُكْمِ الِاسْتِمْنَاءِ بِالْكَفِّ، زكريا-3/371، كرتاشى-2/399)

যদি কেউ উত্তেজনা প্রশমনের ইচ্ছে করে, যা তীব্র হয়ে গেছে। যা তার মনকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে, আর সে একাকী হয়, তার স্ত্রী বা বাদী না থাকে, অথবা আছে, কিন্তু তাদের কাছে পৌঁছতে না পারে কোন কারণে। এ ব্যক্তি বিষয়ে আবুল লাইছ রহঃ বলেন: আমি আশাবাদী যে, তার উপর শাস্তি হবে না। কিন্তু যদি উত্তেজনা আনয়নের জন্য হস্তমৈথুন করে থাকে, তাহলে সে গোনাহগার হবে। [ফাতাওয়া শামী-৩/৩৭১]

যিনা করার বিষয়টি একীন হয়ে গেলে, যিনা না করে হস্তমৈথুন করে নেয়াটাকে ওয়াজিব বলা হয়েছে। কারণ, যিনার চেয়ে হস্তমৈথুন করা কম গোনাহ। [ফাতাওয়া শামী-৩/৩৭১]

তাহলে ফিক্বহে হানাফীতে সর্বাবস্থায়ই উক্ত কাজকে গোনাহের কাজ বলা হয়েছে। এখতিয়ারী অবস্থায় হারাম এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলা হয়েছে। গায়রে এখতিয়ারী সূরতেও এটাকে গোনাহ হিসেবেই আখ্যায়িত করা হয়েছে।

সুতরাং ফিক্বহে হানাফীতে হস্তমৈথুনকে জায়েজ বলা হয়েছে বলে প্রচারণা করা সুষ্পষ্ট মিথ্যা অপবাদ ছাড়া আর কিছু নয়।

গায়রে এখতিয়ারী সূরতের যে হুকুম ফিক্বহে হানাফীতে উদ্ধৃত হয়েছে। লা মাযহাবী শায়েখরাতো সেটা এখতিয়ারী সূরতেই জায়েজ বলে দিয়েছেন।

লা মাযহাবী আলেমের দৃষ্টিতে হস্তমৈথুন:

লা মাযহাবী আলেম নওয়াব নূরুল হাসান লেখেন: হাত বা অন্য কিছু দ্বারা বীর্যপাত করা প্রয়োজনের সময় জায়েজ। বিশেষ করে যখন ব্যক্তি ফিতনা বা গোনাহে লিপ্ত হবার সম্ভাবনা থাকে যে, দৃষ্টিপাতের কারণে তখন মুস্তাহাব হয়, আবার কখনো ওয়াজিবও হয়ে যায়। যখন গোনাহ মুক্ত থাকা এটা করা ছাড়া সম্ভব না হয়। হস্তমৈথুন নিষিদ্ধতা সম্পর্কিত যেসব হাদীস বর্ণিত হয়েছে, এসব প্রমাণিত এবং সহীহ নয়। বরঞ্চ কতিপয় আহলে ইলম স্ত্রীদের অনুপস্থিতির সময় হস্তমৈথুন করা কতিপয় সাহাবী থেকে নকল করেছেন। এসব করাতে কোন সমস্যা নেই। বরং শরীরের অন্যান্য উচ্ছিষ্ট (পেশাব, পায়খানা) বের হবার মতোই। [আরফুল জাদী-২০৭]

নাউজুবিল্লাহ মিন জালিক। লা মাযহাবী শায়েখতো হস্তমৈথুনকে সাহাবায়ে কেরামের আমল সাব্যস্ত করে, পেশাব পায়খানা বের হবার মতো হবার দাবি করে এটা পান্তাভাত বানিয়ে দিয়েছেন। লা মাযহাবী যুবকদের এ গোনাহের কাজ করতে বলতে গেলে উদ্ধুদ্ধ করে গেছেন। সেখানে হানাফী ফিক্বহের কিতাবে এটাকে হারাম, গোনাহের কাজ বলার পরও ফিক্বহে হানাফীর দিকে দোষারোপের আঙ্গুল তোলা মুনাফিকী ছাড়া আর কী হতে পারে?

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তা’লীমুল ইসলাম ইনস্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

প্রধান মুফতী: জামিয়াতুস সুন্নাহ লালবাগ, ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া ইসলামিয়া দারুল হক লালবাগ ঢাকা।

পরিচালক: শুকুন্দী ঝালখালী তা’লীমুস সুন্নাহ দারুল উলুম মাদরাসা, মনোহরদী নরসিংদী।

ইমেইল– ahlehaqmedia2014@gmail.com 

আরও জানুন

অযুতে কনুই ধৌত না করে নামায পড়লে নামায আদায় হবে কি?

প্রশ্ন আসলে আমি অযু করে নেওয়ার সময় আমার হাতের কনুইয়ের উপর ও উপরিভাগে পানি লাগে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *