প্রচ্ছদ / প্রশ্নোত্তর / মহিলারা ইতিকাফ কোথায় করবে?

মহিলারা ইতিকাফ কোথায় করবে?

প্রশ্ন:

মহিলারা এতেকাফ কোথায় করবে?

প্রশ্নকর্তা:
From: Md Riajulislam

<mriajulislam83@gmail.com>

بسم الله الرحمن الرحيم
حامدا ومصليا و مسلما

উত্তর: 

মহিলাদের ইতিকাফের সর্বোত্তম স্থান হল নিজের আপন ঘর। যেমিনভাবে মহিলাদের নামাযের সর্বোত্তম উত্তম স্থান হল, নিজের আপন ঘর। তবে কোন মহিলা যদি মসজিদে পূর্ণ পর্দার সাথে ইতিকাফ করে তাহলে তা মাকরুহের সহিত আদায় হবে।

জেনে রাখা উচিত যে, পুরুষদের ন্যায় মহিলাদের জন্যও রমজানের শেষ দশকের ইতিকাফ সুন্নত। এজন্য মহিলাদের বাড়িতে তার নিজের ঘরে, পূর্ব থেকে নামাজের জন্য নির্ধারিত জায়গা থাকলে সেখানে অথবা জায়গা নির্ধারিত করে সেখানে ইতিকাফ করা সর্বোত্তম।

হাদীসে বর্ণিত হয়েছে,
আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাস্উদ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। নবী (ﷺ) বলেনঃ মহিলাদের ঘরে নামায আদায় করা বৈঠকখানায় নামায আদায় করার চাইতে উত্তম এবং মহিলাদের সাধারণ থাকার ঘরে নামায আদায় করার চেয়ে গোপন প্রকোষ্ঠে নামায আদায় করা অধিক উত্তম।
সুনানে আবি দাউদ, হাদিস নং ৫৭০।

অন্য বর্ণনায় আসছে,
‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন,রমযানের শেষ দশকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইতিকাফ করতেন। আমি তাবু তৈরী করে দিতাম। তিনি ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে তাতে প্রবেশ করতেন। (নবী সহধর্মিণী) হাফসা (রাঃ) তাঁবু খাটাবার জন্য ‘আয়িশা (রাঃ) এর কাছে অনুমতি চাইলেন। তিনি তাঁকে অনুমতি দিলে হাফসা (রাঃ) তাবুঁ খাটালেন। (নবী সহধর্মীণী) যয়নাব বিনতে জাহশ (রাঃ) তা দেখে আরেকটি তাবু তৈরি করলেন। সকালে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাবুঁগুলো দেখলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন এগুলো কি? তাকে জানানো হলে তিনি বললেনঃ তোমরা কি মনে কর এগুলো দিয়ে নেকি হাসিল হবে? এ মাসে তিনি ইতকিাফ ত্যাগ করলেন এবং পরে শাওয়াল মাসে ১০ দিন (কাযা স্বরুপ) ইতিকাফ করেন। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং-২০৩৩, ইফাবা, হাদীস নং-১৯০৫]

প্রকাশ থাকে যে, বর্তমানে অনেক মডারেটস শায়খ মহিলাদের মসজিদে ইতিকাফ করাকে জরুরী মনে করে। অথচ উপরোক্ত হাদীস দ্বয়ের মাধ্যমে কি বুঝা যায়?
১- মহিলাদের ঘরেই নামাজ আদায় করা উত্তম।

২- যে স্থানে নামাজ আদায় করা হয় সে স্থানে ইতিকাফ করা সর্বোত্তম।

৩- নবীজি সাঃ এর জীবদ্দশায় আম্মাজান
হাফসা ও যায়নাব বিনতে জাহাশ মসজিদে ইতিকাফ করতে তাবু টানালে তিনি রাগ করে সেই বছর রমজানে ইতিকাফই করেননি।

৪-  তিনি (সাঃ) প্রশ্ন করেছেন এভাবে মহিলারা মসজিদে ইতিকাফ করলে কি সওয়াবের ভাগিদার হবে? অর্থাৎ মসজিদে ইতিকাফ করলে বেশি সওয়াব হবার যে অলীক ধারণা করা হয়েছিল তা ভুল। বরং বাড়িতে ইতিকাফ করলেই মহিলাদের জন্য বেশি সওয়াব হয়।

৫- এই মর্মে স্পষ্ট শব্দে কুরআন ও হাদীসের কোথাও উল্লেখ নেই যে নবীজি সাঃ থেকে আদেশ অথবা মৌন সমর্থনও ছিলো যে মহিলারা মসজিদেই এতেকাফ করবে।

৬- বর্তমান ফিতনার যমানায়, আম্মাজান আয়েশা রা. এর হাদীসের দিকে লক্ষ্য করলেও বুঝা যায় যে, মহিলারা নামাজ/ইতিকাফ নিজ ঘরেই পালন করা সর্বোত্তম কাজ।

৭- সূরা বাকারার ১৮৭ নং আয়াতে কারীমার কোথাও মহিলাদের ইতিকাফ শুদ্ধ হতে হলে মসজিদেই থাকতে হবে, এমন কোন কথা বর্ণিত হয়নি।

৮- সহীহ বুখারীতে বর্ণীত (হাদীস নং ২০২৬)
হাদীসে রাসুলুল্লাহ সাঃ এর ইন্তেকালের পর আম্মাজানরা যে ইতিকাফ করার কথা এসেছে, তাতেও স্পষ্ট আকারে কোন শব্দ নেই যে তিনারা মসজিদেই ইতিকাফ করেছেন।

সুতরাং মহিলাদের মসজিদে ইতিকাফ করার জন্য উৎসাহিত করা অনুচিত। বরং বাড়িতে, নিজের ঘরে ইতিকাফ করাই অধিক সওয়াবের মাধ্যম।

المستندات الشرعية:

رواه الإمام أبي داود رح فى سننه ، رقم الحديث: ٥٧٠ :  عَنْ عَبْدِ اللَّهِ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ” صَلاَةُ الْمَرْأَةِ فِي بَيْتِهَا أَفْضَلُ مِنْ صَلاَتِهَا فِي حُجْرَتِهَا وَصَلاَتُهَا فِي مَخْدَعِهَا أَفْضَلُ مِنْ صَلاَتِهَا فِي بَيْتِهَا ” .

و رواه الإمام البخاري رح فى صحيحه: رقم الحديث: ٢٠٣٣: عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، قَالَتْ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَعْتَكِفُ فِي العَشْرِ الأَوَاخِرِ مِنْ رَمَضَانَ، فَكُنْتُ أَضْرِبُ لَهُ خِبَاءً فَيُصَلِّي الصُّبْحَ ثُمَّ يَدْخُلُهُ، فَاسْتَأْذَنَتْ حَفْصَةُ عَائِشَةَ أَنْ تَضْرِبَ خِبَاءً، فَأَذِنَتْ لَهَا، فَضَرَبَتْ خِبَاءً، فَلَمَّا رَأَتْهُ زَيْنَبُ ابْنَةُ جَحْشٍ ضَرَبَتْ خِبَاءً آخَرَ، فَلَمَّا أَصْبَحَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَأَى الأَخْبِيَةَ، فَقَالَ: «مَا هَذَا؟» فَأُخْبِرَ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَلْبِرَّ تُرَوْنَ بِهِنَّ» فَتَرَكَ الِاعْتِكَافَ ذَلِكَ الشَّهْرَ، ثُمَّ اعْتَكَفَ عَشْرًا مِنْ شَوَّالٍ.

وفي الطنطاوي على مراقى الفلاح: ص : ٦٩٩: وللمراۃ الاعتکاف فی مسجد بیتھا ولا تخرج منه إذا اعتکفت فلو خرجت لغیر عذر یفسد واجبہ وینتھی نفله“. انتهى

جاء فى بدائع الصنائع في ترتيب الشرائع :١١٣/٢ :
“و أما المرأة فذكر في الأصل: أنها لا تعتكف إلا في مسجد بيتها، ولا تعتكف في مسجد جماعة، وروى الحسن عن أبي حنيفة أن للمرأة أن تعتكف في مسجد الجماعة، وإن شاءت اعتكفت في مسجد بيتها، ومسجد بيتها أفضل لها من مسجد حيها، ومسجد حيها أفضل لها من المسجد الأعظم، وهذا لايوجب اختلاف الروايات، بل يجوز اعتكافها في مسجد الجماعة على الروايتين جميعاً بلا خلاف بين أصحابنا، والمذكور في الأصل محمول على نفي الفضيلة لا على نفي الجواز توفيقاً بين الروايتين، وهذا عندنا.” انتهى

فتح القدير للكمال ابن الهمام:    ٣٩٤/٢:’ (قوله: أما المرأة فتعتكف في مسجد بيتها)
.أي الأفضل ذلك، ولو اعتكفت في الجامع أو في مسجد حيها -وهو أفضل من الجامع في حقها- جاز، وهو مكروه، ذكر الكراهة قاضي خان

وفى المبسوط للسرخسي :١١٩/٣ :
” (قال): ولا تعتكف المرأة إلا في مسجد بيتها، وقال الشافعي – رحمه الله تعالى -: لا اعتكاف إلا في مسجد جماعة، الرجال والنساء فيه سواء، قال: لأن مسجد البيت ليس له حكم المسجد ؛ بدليل جواز بيعه، والنوم فيه للجنب والحائض، وهذا؛ لأن المقصود تعظيم البقعة، فيختص ببقعة معظمه شرعاً، وذلك لا يوجد في مساجد البيوت.
(ولنا) أن موضع أداء الاعتكاف في حقها الموضع الذي تكون صلاتها فيه أفضل، كما في حق الرجال، وصلاتها في مسجد بيتها أفضل فإن النبي صلى الله عليه وسلم لما «سئل عن أفضل صلاة المرأة؟ فقال: في أشد مكان من بيتها ظلمة».” انتهى

وفي تبيين الحقائق شرح كنز الدقائق: ٢٥٠/١: (والمرأة تعتكف في)مسجد بيتها لأنه هو الموضع لصلاتها،فيتحقق انتظارها فيه،ولو اعتكفت في مسجد الجماعة جاز والأول أفضل ومسجد حيها أفضل لها من المسجد الأعظم.انتهى

وفي البحر الرائق شرح كنز الدقائق: ٣٢٤/٢:  أن اعتكافها في مسجد بيتها أفضل فأفاد أن اعتكافها في مسجد الجماعة جائز وهو مكروه ذكره قاضی خان وصححه في النهاية وظاهر ما في غاية البيان أن ظاهرةاھ،وفي البدائع أن اعتكافها في مسجد الجماعة صحيح بلا خلاف بين أصحابنا والمذكور في الأصل محمول علی نفي الفضیلہ. انتهى

وفى الفتاوى الهندية : ٢١١/١:
“والمرأة تعتكف في مسجد بيتها، إذا اعتكفت في مسجد بيتها فتلك البقعة في حقها كمسجد الجماعة في حق الرجل، لاتخرج منه إلا لحاجة الإنسان، كذا في شرح المبسوط للإمام السرخسي”. انتهى

والله أعلم بالصواب

উত্তর লিখনে
মুহা. শাহাদাত হুসাইন , ছাগলনাইয়া, ফেনী।

সাবেক শিক্ষার্থী: ইফতা বিভাগ
তা’লীমুল ইসলাম ইনস্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

সত্যায়নে
মুফতী লুৎফুর রহমান ফরায়েজী দা.বা.

পরিচালক তা’লীমুল ইসলাম ইনস্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা

উস্তাজুল ইফতা জামিয়া কাসিমুল উলুম আমীনবাজার ঢাকা।

প্রধান মুফতী: জামিয়াতুস সুন্নাহ লালবাগ, ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া ইসলামিয়া দারুল হক লালবাগ ঢাকা।

পরিচালক: শুকুন্দী ঝালখালী তা’লীমুস সুন্নাহ দারুল উলুম মাদরাসা, মনোহরদী নরসিংদী।

আরও জানুন

ভুলে আপন ভাগ্নির মেয়েকে বিয়ে করে সন্তান হয়ে গেলে করণীয় কী?

প্রশ্ন আসসালামুওয়ালাইকুম উস্তাজ, আমার আত্নীয় ২০১৮ সালে বিয়ে করেন। অজ্ঞতা বসত আপন ভাগ্নির মেয়েকে বিয়ে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *