প্রচ্ছদ / প্রশ্নোত্তর / মা বাবা এবং স্ত্রীর হকের মাঝে কার হক কিভাবে আদায় করবে?

মা বাবা এবং স্ত্রীর হকের মাঝে কার হক কিভাবে আদায় করবে?

প্রশ্ন

প্রশ্নকারীর নাম: নাম ও ঠিকানা প্রকাশে অনিচ্ছুক

প্রশ্নের বিষয়: পূত্রবধূর উপর শ্বশুরশাশুড়ির অধিকার এবং পুত্রের করনীয়

বিস্তারিত:
—————-
আসসালামু আলাইকুম হযরত!
এক দম্পতির বিয়ে বয়স প্রায় ১.৫ বছর এবং ধর্মীয় অনুশাসনের মাধ্যমেই তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর ছেলের কর্মসূত্র দূরে হওয়ার ছেলে তার বউকে সাথে নিয়ে আসে। ছেলে বাবা-মা কে তার সাথে থাকতে অনুরোধ করে। কিন্তু ছেলের বাবা-মা নিজ বাড়িঘর ছেড়ে আসতে চায় না। তবে মাঝে মাঝে ছেলের বাড়িতে বেড়াতে আসে। ছেলে নিজ দ্বায়িত্বগুণে বাবা-মার খেদমতের নিমিত্তে প্রতিমাসে যেয়ে প্রয়োজনীয় সবকিছু কিনে দিয়ে আসে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ হাতখরচ দেয়।  ছেলের বাবা-মার কিছু কিছু আচরণ পুত্রবধূর মনে কষ্ট দেয়। তাদের ধারণাগুলো নিম্নরূপ:

প্রথমত, ছেলের বউ শ্বশুরবাড়িতে থাকবে, ছেলে মাঝে মাঝে এসে বউ এর সাথে দেখা করে যাবে।

দ্বিতীয়ত, ছেলে তার বউকে নিয়ে ঘুরতে গেলে তাদের মন খারাপ হয়, কথা ঠিকমত বলে না।

তৃতীয়ত, পুত্রবধুর বাড়ি থেকে কুটুম এলে তারা বিরক্ত হয়।

চতুর্থত, ছেলের অসুখ হলে তাদের বিচলতা বাড়ে কিন্তু পুত্রবধূর অসুখ হলে খোজ নেওয়ার প্রয়োজন মনে করে না। এসব বিষয়ে শরীয়তের সমাধান আশা করছি। কারণ ছেলে এসব বিষয় সহ্য করতে করতে পেরেশান হয়ে যাচ্ছে।
বি.দ্র.: ছেলে তার বাবা-মা কে এটাও বলেছে যে, তারা চাইলে সে চাকুরী ছেড়ে তাদের সাথে থাকবে। সেক্ষেত্রে বাবা-মা নিষেধ করেছে কারণ উপার্জনক্ষম হিসেবে ছেলে একাই। ছেলে তার বাবা-মা র কাছে জিজ্ঞেস করেছে যে, তাদের প্রতি কোনো হক্ব আদায় বাদ পড়ছে কি না। বাবা-মা র উত্তর ছিলো, না।

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

ছেলের জন্য সর্বাবস্থায় মা বাবার খিদমাত ও তাদের মন খুশি রাখার চেষ্টা করা আবশ্যক। যথাসাধ্য চেষ্টা করতে হবে যে, যেন মা বাবা কষ্ট না পান। তাদের ভরণপোষণে কমতি না হয়। মা বাবা কাফের হলেও তার সাথে খারাপ আচরণ করা জায়েজ নয়। মা বাবা ফাসিক ও পাপী হলেও তাদের সাথে দুর্ব্যবহার করার অনুমতি নেই। সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যেতে হবে যেন, তারা সন্তুষ্ট থাকেন। বাকি অন্যায্য ও শরীয়ত বহির্ভূত কারণে তারা অসন্তুষ্ট হলে আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করে দিবেন ইনশাআল্লাহ।

তবে পুত্রবধু শ্বশুর শ্বাশুরির খিদমাত করতে বাধ্য নয়। জরুরতের কারণে শ্বশুর ও শ্বাশুরী  থেকে আলাদা বাসস্থানে থাকার আবদার করাও তার হকের অন্তর্ভূক্ত।

শ্বশুর ও শ্বাশুরীর জন্য পুত্রবধুর উপর অন্যায্য অভিযোগ ও দোষ তালাশী করাও জায়েজ নয়। পুত্রবধুকে নিজের কন্যা মনে করলে অনেকাংশেই এ সমস্যা সমাধান সম্ভব। নিজের কন্যার দোষ তালাশে মা বাবা সারাক্ষণ ব্যস্ত থাকে না। তেমনি পুত্রবধুর দোষ তালাশে ব্যস্ত থাকা এবং তার আত্মীয়দের আগমনে বিরক্ত হওয়া মা বাবার জন্য শুভনীয় নয়।

এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা যেন, মা বাবাকে নিজের সাথে রাখা যায়। যদি তা সম্ভব না হয়, তাহলে তাদের জন্য প্রয়োজনীয় খরচ ও খিদমাতের জন্য লোক রাখা সম্ভব হলে ব্যবস্থা করে দেয়া।

আর স্ত্রীকেও একথা বুঝানো যেন, সে ছেলের বাবা ও মায়ের সাথে সুন্দর আখলাক ও উত্তম ব্যবহার করে। তাদের খিদমাত করে। তাদেরকে খুশি রাখে। কারণ, এ সময় তারও আসবে। যখন হয়তো সে শ্বাশুরী হবে। তখন তার পুত্রবধুর কাছ থেকে সে কেমন আচরণ আশা করে তা চিন্তা করে যেন সে তেমন সুন্দর আচরণ করার চেষ্টা করে।

আল্লাহ তাআলা আপনাকে মা বাবার সন্তুষ্টির সাথে সাথে স্ত্রীর হক আদায় করে উভয় জগতে পেরেশানী মুক্ত রাখুন। আমীন।

 

وقضى ربك الا تعبدوا إلا اياه وبالوالدين احسانا (الاسراء-23)

من البر بهما والإحسان إليهما ألا يتعرض لسبهما ولا يعقبهما فإن ذلك من الكبائر بلا خلاف (قرطبى، سورة الإسراء، رقم الآية-23، دار الكتب العلمية-10/156)

فإنه دل على الاجتناب عن جميع الأقوال المحرمة والإتيان بجميع كرائم الأقوال والأفعال من التواضع والخدمة والإنفاق عليهما ثم الدعاء لهما فى العاقبة (مرقة المفاتيح، باب البر والصلة، امدادية ملتان-9/191)

ووصينا الإنسان بوالديه أى أمرناه أن يبرهما ويشكرهما……. يجب بهذه الآية  الإنفاق على الأبوين الفقيرين وصلتهما وإن كان كافرين (تفسير مظهرى، سورة لقمان، تحت رقم الآية-14، زكريا-7/255)

عن طارق المحاربى قال قدمنا المدينة فإذا رسول الله صلى الله عليه وسلم قائم على المنبر يخطب الناس وهو يقول يد المعطى العليا وابدأ بمن تعول أمك وأباك وأختك وأخاك ثم ادناك أدناك (سنن النسائي، باب أيتهما اليد العليا، النسخة الهندية-1/272، در السلام، رقم-2533)

عن أبى أمامة رضى الله عنه أن رجلا قال: يا رسول الله! ما حق الوالدين على ولدهما؟ قال هما جنتك ونارك (سنن ابن ماجه، باب بر الوالدين-260، رقم-3662)

ليس للرجل أن يستخدم امرأته الحرة (المحيط البرهانى، المجلس العملى-4/237، رقم-4151، الفتاوى التاتارخانية-4/309، رقم-6271)

فى الدر المختار: وكذا تجب لها السكنى فى بيت خال عن أهله

وفى رد المحتار: لأنها تتضرر بمشاركة غيرها فيه، لأنها لا تأمن على متاعها الخ (الدر المختار مع رد المحتار، زكريا-5/319-320)

فإن كان لرجل والدة أو أخت أو ولد فى غيرها فى منزلها، فقالت: صيرى فى منزل على حدة كان لها ذلك (فتاوى قاضي خان على الهندية-1/428، الهداية-2/441، رد المحتار، زكريا-4/388)

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।

পরিচালক: শুকুন্দী ঝালখালী তা’লীমুস সুন্নাহ দারুল উলুম মাদরাসা, মনোহরদী নরসিংদী।

ইমেইল– ahlehaqmedia2014@gmail.com

0Shares

আরও জানুন

‘সুন্দর সম্পর্ক কেন নষ্ট করে দিলা’ বলার দ্বারা কি স্ত্রী তালাক হয়ে যায়?

প্রশ্ন আস্সালামুআলাইকুম মুফতি সাহেব, এই প্রশ্ন কয়েকটা আগেও করেছিলাম, উত্তর না পেয়ে আবার করছি| ওয়াসওয়াসা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *