প্রশ্ন
Assalamoualikom…ভাই আমি একজন ইউনিভার্সিটির ছাত্রী।যে ছেলেটা আমাকে বোকা বানাইছে সেও আমার ভার্সিটি তে পড়ে! সে আমাকে বিয়ে করার কথা বলে, আমার সাথে জিনা করে।
আমি পুরু পাগল হয়ে গেছি। তাকে বিয়ে করতে চাচ্ছি। অনেক বলেছি। সে আমাকে গালি গালাজ করে। আমাকে বিয়ে করবেনা বলে দিছে। আমি তাকেই বিয়ে করতে চাই। এখন এমন কোনো উপায় আছে কি তাকে বুঝানোর?
আমি তওবা করেছি। এখন আমার কি অন্য জায়গায় বিয়ে হবে না? বিয়ে হলে আমি তাকে জানিয়ে বিয়ে করবো? আমার এখন অনেক ভয় হচ্ছে? আমার মনে হচ্ছে আমার আর বিয়েই হবে না! অনেক চেষ্টা করেছি বিয়ের জন্য। কিন্তু হচ্ছে না। এখন আমি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছি প্রায়। সারাদিন কান্না করছি। অই ছেলে আমাকে অনেক ভয় দেখায়। আর মেনেও নিবে না। এখন আমি কি করবো?
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
পারিবারিকভাবে বিয়ে করার কথা আলোচনা করতে পারেন।
অন্য কারো সাথেও বিয়ে করতে পারেন। এতে শরয়ী কোন বিধিনিষেধ নেই। যাকে বিয়ে করবেন, তাকে এ বিষয়ে কোন কিছু জানানো জরুরী নয়।
যেহেতু উক্ত ছেলে আপনাকে পাত্তা দিচ্ছে না, তাই আপনার উচিত তার পিছনে আর না ঘুরা। অন্য কোন ভালো দ্বীনদার ছেলে দেখে বিয়ে করে নেয়া।
তাছাড়া যেহেতু ঐ লোকের সাথে কথা বলার দ্বারা আপনার গোনাহের বোঝা আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। কারণ বিবাহ বহির্ভূত শারিরীক সম্পর্ক যেমন গোনাহ, তেমনি কথা বলা, আকৃষ্ট করার চেষ্টা করাও যিনার গোনাহের সমতূল্য। তাই তার সাথে কথা বলা বা সম্পর্ক রাখার চেষ্টা করার সুযোগ নেই। তবে যদি আপনার পরিবারের কেউ উক্ত ছেলের সাথে বিয়ের চেষ্টা করে তাহলে করতে পারে।
নিয়মিত নামায পড়ুন। শেষ রাতে তাহাজ্জুদ পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। শেষ রাতের কান্নাজড়িত দুআ আল্লাহ তাআলা কবুল করেন। অতীত গোনাহের জন্য ক্ষমা চান ও তওবা করুন। ইনশাআল্লাহ আল্লাহ তাআলা আপনার জন্য উত্তম ফায়সালা করবেন।
বিয়ে হবার জন্য কুরআনে কারীমেসূরা ত্বহা এর ১৩১ ও ১৩২ নং আয়াত কাগজে লিখে সাথে রাখতে পারেন। আশা করি দ্রুতই ভালো পাত্রের সাথে বিবাহ হবে।
দু’টি আয়াত হলো:
وَلَا تَمُدَّنَّ عَيْنَيْكَ إِلَىٰ مَا مَتَّعْنَا بِهِ أَزْوَاجًا مِّنْهُمْ زَهْرَةَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا لِنَفْتِنَهُمْ فِيهِ ۚ وَرِزْقُ رَبِّكَ خَيْرٌ وَأَبْقَىٰ،
وَأْمُرْ أَهْلَكَ بِالصَّلَاةِ وَاصْطَبِرْ عَلَيْهَا ۖ لَا نَسْأَلُكَ رِزْقًا ۖ نَّحْنُ نَرْزُقُكَ ۗ وَالْعَاقِبَةُ لِلتَّقْوَىٰ
তওবা করলে অতীত গোনাহ মাফ হয়ে যায়!
إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ التَّوَّابِينَ وَيُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِينَ [٢:٢٢٢
নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবাকারী এবং অপবিত্রতা থেকে যারা বেঁচে থাকে তাদেরকে পছন্দ করেন। [বাকারা-২২২]
إِنَّمَا التَّوْبَةُ عَلَى اللَّهِ لِلَّذِينَ يَعْمَلُونَ السُّوءَ بِجَهَالَةٍ ثُمَّ يَتُوبُونَ مِنْ قَرِيبٍ فَأُولَٰئِكَ يَتُوبُ اللَّهُ عَلَيْهِمْ ۗ وَكَانَ اللَّهُ عَلِيمًا حَكِيمًا [٤:١٧]
অবশ্যই আল্লাহ তাদের তওবা কবুল করবেন,যারা ভূলবশতঃ মন্দ কাজ করে,অতঃপর অনতিবিলম্বে তওবা করে; এরাই হল সেসব লোক যাদেরকে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। আল্লাহ মহাজ্ঞানী,রহস্যবিদ। {সূরা নিসা-১৭ }
وَإِنِّي لَغَفَّارٌ لِّمَن تَابَ وَآمَنَ وَعَمِلَ صَالِحًا ثُمَّ اهْتَدَىٰ [٢٠:٨٢]
আর যে তওবা করে,ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে অতঃপর সৎপথে অটল থাকে,আমি তার প্রতি অবশ্যই ক্ষমাশীল। [সূরা ত্বহা-৮২]
وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ [٢٤:٣١]
মুমিনগণ,তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর,যাতে তোমরা সফলকাম হও। [সূরা নূর-৩১]
إِلَّا مَن تَابَ وَآمَنَ وَعَمِلَ عَمَلًا صَالِحًا فَأُولَٰئِكَ يُبَدِّلُ اللَّهُ سَيِّئَاتِهِمْ حَسَنَاتٍ ۗ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَّحِيمًا [٢٥:٧٠]
কিন্তু যারা তওবা করে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদের গোনাহকে পুন্য দ্বারা পরিবর্তত করে এবং দেবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। [সূরা ফুরকান-৭০]
হযরত উবাদা বিন আব্দুল্লাহ তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন,রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ
التَّائِبُ مِنَ الذَّنْبِ، كَمَنْ لَا ذَنْبَ لَهُ
গোনাহ থেকে তওবাকারী এমন,যেন সে গোনাহ করেইনি। [সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৪২৫০]
হযরত আয়শা রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,
فَإِنَّ العَبْدَ إِذَا اعْتَرَفَ ثُمَّ تَابَ، تَابَ اللَّهُ عَلَيْهِ
বান্দা গোনাহ স্বীকার করে মাফ চাইলে আল্লাহ পাক তা কবুল করেন। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৪১৪১]
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ: مَا رَأَيْتُ شَيْئًا أَشْبَهَ بِاللَّمَمِ مِمَّا قَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ اللَّهَ كَتَبَ عَلَى ابْنِ آدَمَ حَظَّهُ مِنَ الزِّنَا، أَدْرَكَ ذَلِكَ لَا مَحَالَةَ، فَزِنَا الْعَيْنَيْنِ النَّظَرُ، وَزِنَا اللِّسَانِ الْمَنْطِقُ، وَالنَّفْسُ تَمَنَّى وَتَشْتَهِي، وَالْفَرْجُ يُصَدِّقُ ذَلِكَ وَيُكَذِّبُهُ
ইবন আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত (হাদীসের চাইতে) অধিক সগীরা গুনাহ্ সম্পর্কিত হাদীস নাই। তিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেছেন যে, আল্লাহ্ তা‘আলা আদম সন্তানের জন্য যিনার একটি অংশ নির্ধারণ করেছেন, আর সে তা অবশ্যই করবে। আর চক্ষুর যিনা হল দৃষ্টিপাত করা, মুখের যিনা হল অশোভন উক্তি, আর নফসের যিনা হল (যিনার) ইচ্ছা ও আকাঙ্ক্ষা করা। আর সবশেষে গুপ্তাঙ্গ তা সত্য বা মিথ্যায় পরিণত করে। [সুনানে আবূ দাউদ, হাদীস নং-২১৫২, ইফাবা-২১৪৯, সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৬৬১২]
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।
পরিচালক: শুকুন্দী ঝালখালী তা’লীমুস সুন্নাহ দারুল উলুম মাদরাসা, মনোহরদী নরসিংদী।
ইমেইল– ahlehaqmedia2014@gmail.com