প্রচ্ছদ / আকিদা-বিশ্বাস / কিয়ামতের আলামতসমূহ (পর্ব-৮)

কিয়ামতের আলামতসমূহ (পর্ব-৮)

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

৭ম পর্বটি পড়ে নিন

মসজিদে আওয়াজ উঁচু হতে থাকবে

عَنْ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِذَا فَعَلَتْ أُمَّتِي خَمْسَ عَشْرَةَ خَصْلَةً حَلَّ بِهَا البَلاَءُ فَقِيلَ: وَمَا هُنَّ يَا رَسُولَ اللهِ؟ قَالَ: إِذَا كَانَ الْمَغْنَمُ دُوَلاً، وَالأَمَانَةُ مَغْنَمًا، وَالزَّكَاةُ مَغْرَمًا، وَأَطَاعَ الرَّجُلُ زَوْجَتَهُ، وَعَقَّ أُمَّهُ، وَبَرَّ صَدِيقَهُ، وَجَفَا أَبَاهُ، وَارْتَفَعَتِ الأَصْوَاتُ فِي الْمَسَاجِدِ، وَكَانَ زَعِيمُ القَوْمِ أَرْذَلَهُمْ، وَأُكْرِمَ الرَّجُلُ مَخَافَةَ شَرِّهِ، وَشُرِبَتِ الخُمُورُ، وَلُبِسَ الحَرِيرُ، وَاتُّخِذَتِ القَيْنَاتُ وَالمَعَازِفُ، وَلَعَنَ آخِرُ هَذِهِ الأُمَّةِ أَوَّلَهَا، فَلْيَرْتَقِبُوا عِنْدَ ذَلِكَ رِيحًا حَمْرَاءَ أَوْ خَسْفًا وَمَسْخًا

আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার উন্মাত যখন পনেরটি বিষয়ে লিপ্ত হয়ে পড়বে তখন তাদের উপর বিপদ-মুসীবত এসে পড়বে। প্রশ্ন করা হল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সেগুলো কি কি?

তিনি বললেনঃ যখন গানীমাতের মাল ব্যক্তিগত সম্পদে পরিণত হবে, আমানাত লুটের মালে পরিণত হবে, যাকাত জরিমানারূপে গণ্য হবে, পুরুষ তার স্ত্রীর আনুগত্য করবে এবং তার মায়ের অবাধ্য হবে, বন্ধুর সাথে ভালো ব্যবহার করবে কিন্তু পিতার সাথে খারাপ ব্যবহার করবে, মসজিদে শোরগোল করা হবে, সবচাইতে খারাপ চরিত্রের লোক হবে তার সম্প্রদায়ের নেতা, কোন লোককে তার অনিষ্টতার ভয়ে সম্মান করা হবে, মদ পান করা হবে, রেশমী বস্ত্র পরিধান করা হবে, এবং এই উম্মাতের শেষ যামানার লোকেরা তাদের পূর্ব যুগের লোকদের অভিসম্পাত করবে, তখন তোমরা একটি অগ্নিবায়ু অথবা ভূমিধস অথবা চেহারা বিকৃতির আযাবের অপেক্ষা করবে। [জামে তিরমিজী, হাদীস নং-২২১০]

عَنْ عَطَاءِ بْنِ يَسَارٍ قَالَ: «مِنْ أَشْرَاطِ السَّاعَةِ عُلُوُّ صَوْتِ الْفَاسِقِ فِي الْمَسَاجِدِ، وَمَطَرٌ وَلَا نَبَاتٌ، وَأَنْ تُتَّخَذَ الْمَسَاجِدُ طُرُقًا، وَأَنْ تَظْهَرَ أَوْلَادُ الزُّنَاةِ

হযরত আত্বা বিন ইয়াসার রহঃ বলেন, কিয়ামতের আলামতসমূহের মাঝে রয়েছে যে,  মসজিদে ফাসিক ফুজ্জারদের আওয়াজ উঁচু হবে। অর্থাৎ তারা দাপটের সাথে মসজিদে কথা বলবে। বৃষ্টি হবে কিন্তু ফসল হবে না। মসজিদকে রাস্তা বানিয়ে নেয়া হবে। জারজ সন্তানের বৃদ্ধি ঘটবে। [মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক, বর্ণনা নং-৫১৩৮]

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «سَيَكُونُ فِي آخِرِ الزَّمَانِ قَوْمٌ يَجْلِسُونَ فِي الْمَسَاجِدِ حِلَقًا حِلَقًا، إِمَامُهُمُ الدُّنْيَا، فَلَا تُجَالِسُوهُمْ؛ فَإِنَّهُ لَيْسَ لِلَّهِ فِيهِمْ حَاجَةٌ

হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, শেষ জমানায় এমন লোক হবে, যারা মসজিদে বৃত্ত আকারে বসবে। তাদের ইমাম মুক্তাদী দুনিয়া হবে, অর্থাৎ তাদের আলোচ্য হবে দুনিয়া। তাদের সাথে বসবে না। কারণ, আল্লাহ তাআলার এসব লোকের কোন প্রয়োজন নেই। [আলমু’জামুল কাবীর, হাদীস নং-১০৪৫২]

عَنْ مَكْحُولٍ، قَالَ: قَالَ أَعْرَابِيٌّ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، مَتَى السَّاعَةُ؟ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا الْمَسْئُولُ عَنْهَا بِأَعْلَمَ مِنَ السَّائِلِ، وَلَكِنَّ أَشْرَاطَهَا تَقَارُبُ الْأَسْوَاقِ، وَمَطَرٌ وَلَا نَبَاتَ، وَظُهُورُ الْغِيبَةِ، وَظُهُورُ أَوْلَادِ الْغَيَّةِ، وَالتَّعْظِيمُ لِرَبِّ الْمَالِ، وَعُلُوُّ أَصْوَاتِ الْفُسَّاقِ فِي الْمَسَاجِدِ، وَظُهُورُ أَهْلِ الْمُنْكَرِ عَلَى أَهْلِ الْمَعْرُوفِ، فَمَنْ أَدْرَكَ ذَلِكَ الزَّمَانَ فَلْيَرُغْ بِدِينِهِ، وَلْيَكُنْ حِلْسًا مِنْ أَحْلَاسِ بَيْتِهِ

হযরত মাকহুল রহঃ থেকে বর্ণিত। এক গ্রাম্য সাহাবী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কিয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন। নবীজী জবাবে বলেন, যাকে জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে, তিনি যে জিজ্ঞাসা করছে তার চেয়ে বেশি জানে না। কিন্তু এর আলামত হলো, বাজার বা শপিং সেন্টার একটা অন্যটার খুব কাছাকাছি হবে। বৃষ্টি হওয়া সত্বেও ফসল ভালো না হওয়া। গীবত ছড়িয়ে যাওয়া। জারজ সন্তান ছড়িয়ে পড়া। সম্পদশালীদের সম্মান বৃদ্ধি পাওয়া। মসজিদে ফাসিকও পাপীলোকদের আওয়াজ উঁচু হওয়া। গোনাহগারদের নেকককারদের উপর প্রধান্য পাওয়া। যে ব্যক্তি এ যুগ পাবে, তার উচিত সে তার দ্বীন ও ঈমান নিয়ে কোথাও লুকিয়ে পড়বে। আর নিজ ঘরের জিনপোশ হয়ে যায়। অর্থাৎ আর বাইরে বের না হয়। [আলফিতান লিনুআঈম বিন হাম্মাদ, বর্ণনা নং-১৭৯৬]

 

শুধু পরিচিত লোকদেরই সালাম দেয়া হবে!

إِنَّهُ لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى تُتَّخَذَ الْمَسَاجِدُ طُرُقًا، وَحَتَّى يُسَلِّمَ الرَّجُلُ عَلَى الرَّجُلِ بِالْمَعْرِفَةِ، وَحَتَّى تَتْجَرَ الْمَرْأَةُ وَزَوْجُهَا، وَحَتَّى تَغْلُو الْخَيْلُ وَالنِّسَاءُ، ثُمَّ تَرْخُصَ فَلَا تَغْلُو إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ

সে পর্যন্ত কিয়ামাত কায়েম হবে না যে পর্যন্ত মাসজিদকে রাস্তা বানিয়ে নেয়া না হবে, যে পর্যন্ত ব্যক্তি শুধুমাত্র পরিচিত ব্যক্তিকেই সালাম না দিবে, যে পর্যন্ত নারী ও তার স্বামী উভয়ে ব্যবসা না করবে, যে পর্যন্ত ঘোড়া [যানবাহন] ও নারীর [মোহরের] মূল্য বৃদ্ধি না পাবে। অতঃপর মূল্য কমে যাবে, কিয়ামাত দিবস পর্যন্ত আর বৃদ্ধি পাবে না। [মুস্তাদরাক আলাস সহীহাইন, হাদীস নং-৮৩৭৯, মু’জামুল কাবীর লিততাবারানী, হাদীস নং-১৭, সুনানুর কুবরা লিলবায়হাকী, হাদীস নং-৩৩২৮]

قَالَ عَبْدُ اللَّهِ: صَدَقَ اللَّهُ وَرَسُولُهُ، سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ عَلَيْهِ السَّلَامُ، وَهُوَ يَقُولُ: «إِنَّ مِنْ أَشْرَاطِ السَّاعَةِ أَنْ يَمُرَّ الرَّجُلُ فِي الْمَسْجِدِ لَا يُصَلِّي فِيهِ رَكْعَتَيْنِ، وَأَنْ لَا يُسَلِّمَ الرَّجُلُ إِلَّا عَلَى مَنْ يَعْرِفُ، وَأَنْ يُبَرِّدَ الصَّبِيُّ الشَّيْخَ

কিয়ামাতের আলামাতের মধ্যে রয়েছে, ব্যক্তি কর্তৃক মাসজিদের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করা সত্ত্বেও মাসজিদে দু’রাক’য়াত সলাত আদায় না করা। ব্যক্তি কর্তৃক শুধুমাত্র পরিচিতজনকে সালাম দেয়া আর শিশু কর্তৃক শাইখকে ঠাণ্ডা করা (অর্থাৎ কম বয়স্ক লোকেরা বয়স্ক লোকদের দূত হিসেবে ব্যবহার করা)। [সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদীস নং-১৩২৬, মু’জামুল কাবীর লিততাবারানী, হাদীস নং-৯৪৮৯]

رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُولُ: ” إِنَّ مِنْ أَشْرَاطِ السَّاعَةِ، إِذَا كَانَتِ التَّحِيَّةُ عَلَى الْمَعْرِفَةِ

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, কিয়ামমতের আলামতের মাঝে একটি হলো, শুধুমাত্র পরিচিত লোকদেরই সালাম দেয়া হতে থাকবে। [মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৩৬৬৪, আলমু’জামুল কাবীর লিততাবারানী, হাদীস নং-৯৪৯১]

নারী ও পুরুষ উভয়ে উপার্জন করবে!

إِنَّهُ لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى تُتَّخَذَ الْمَسَاجِدُ طُرُقًا، وَحَتَّى يُسَلِّمَ الرَّجُلُ عَلَى الرَّجُلِ بِالْمَعْرِفَةِ، وَحَتَّى تَتْجَرَ الْمَرْأَةُ وَزَوْجُهَا

সে পর্যন্ত কিয়ামাত কায়েম হবে না যে পর্যন্ত মাসজিদকে রাস্তা বানিয়ে নেয়া না হবে, যে পর্যন্ত ব্যক্তি শুধুমাত্র পরিচিত ব্যক্তিকেই সালাম না দিবে, যে পর্যন্ত নারী ও তার স্বামী উভয়ে ব্যবসা না করবে। [মুস্তাদরাক আলাস সহীহাইন, হাদীস নং-৮৩৭৯, আলমু’জামুল কাবীর লিততাবারানী, হাদীস নং-১৭, সুনানুল কুবরা লিলবায়হাকী, হাদীস নং-৩৩২৮]

قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” بَيْنَ يَدَيِ السَّاعَةِ ‌تَسْلِيمُ ‌الْخَاصَّةِ، وَتَفْشُو التِّجَارَةُ، حَتَّى تُعِينَ الْمَرْأَةُ زَوْجَهَا عَلَى التِّجَارَةِ، وَتُقْطَعُ الْأَرْحَامُ

হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, কিয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে শুধুমাত্র খাস খাস লোকদের সালাম দেয়া হবে। ব্যবসা বাণিজ্য এতোটাই প্রসার ঘটবে যে, স্ত্রী তাদের স্বামীদের ব্যবসা বাণিজ্যে সহযোগিতা করতে থাকবে। রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়তা ছিন্ন করা হবে। [মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৩৯৮২, আদাবুল মুফরাদ, হাদীস নং-১০৪৯, মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস নং-৮৩৭৮]

ব্যবসা বাণিজ্য বিস্তৃতি লাভ করবে

رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُولُ: ” إِنَّ بَيْنَ يَدَيِ السَّاعَةِ تَسْلِيمَ الْخَاصَّةِ، وَفُشُوَّ التِّجَارَةِ حَتَّى تُعِينَ الْمَرْأَةُ زَوْجَهَا عَلَى التِّجَارَةِ، وَحَتَّى يَخْرُجَ الرَّجُلُ بِمَالِهِ إِلَى أَطْرَافِ الْأَرْضِ فَيَرْجِعُ فَيَقُولُ: ‌لَمْ ‌أَرْبَحْ ‌شَيْئًا

হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, কিয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে ব্যক্তি বিশেষকে সালামকে সালাম দেয়ার প্রচলন হবে। ব্যবসা বাণ্যিজ্য বিস্তৃতি লাভ করবে। এমন কি স্ত্রীরা তাদের স্বামীকে ব্যবসায় সহযোগিতা করতে থাকবে। এমনো ঘটবে যে, লোকেরা তাদের মাল নিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরবে। ফিরে এসে বলবে: আমার কোন লাভ হয়নি। [মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস নং-৮৩৭৮]

নবীণ ব্যক্তিরা প্রবীণ ব্যক্তিদের প্রতিনিধি বানাবে

أَنَّ ابْنَ مَسْعُودٍ قَالَ: «إِنَّ مِنْ أَشْرَاطِ السَّاعَةِ أَنْ يَمُرَّ الْمَارُّ بِمَسْجِدٍ فَلَا يَرْكَعُ فِيهِ رَكْعَتَيْنِ، وَأَنْ يَبْعَثَ الصَّبِيُّ مِنَ الصِّبْيَانِ الشَّيْخَ بَرِيدًا ‌بَيْنَ ‌الْأُفُقَيْنِ،

হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ রাঃ ইরশাদ করেন, কিয়ামতের আলামতের অন্তর্ভূক্ত হলো, লোকেরা মসজিদের উপর দিয়ে অতিক্রম করবে, কিন্তু দুই রাকাত নামাযও পড়বে না। শিশু বয়সী ব্যক্তি প্রবীণ ব্যক্তিদের পৃথিবীর দুই প্রান্তে তার দূত হিসেবে পাঠাবে। [মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং-৫১৪০]

قَالَ عَبْدُ اللَّهِ: صَدَقَ اللَّهُ وَرَسُولُهُ، سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ عَلَيْهِ السَّلَامُ، وَهُوَ يَقُولُ: «إِنَّ مِنْ أَشْرَاطِ السَّاعَةِ أَنْ يَمُرَّ الرَّجُلُ فِي الْمَسْجِدِ لَا يُصَلِّي فِيهِ رَكْعَتَيْنِ، وَأَنْ لَا يُسَلِّمَ الرَّجُلُ إِلَّا عَلَى مَنْ يَعْرِفُ، وَأَنْ يُبَرِّدَ الصَّبِيُّ الشَّيْخَ

কিয়ামাতের আলামাতের মধ্যে রয়েছে, ব্যক্তি কর্তৃক মাসজিদের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করা সত্ত্বেও মাসজিদে দু’রাক’য়াত সলাত আদায় না করা। ব্যক্তি কর্তৃক শুধুমাত্র পরিচিতজনকে সালাম দেয়া আর শিশু কর্তৃক শাইখকে ঠাণ্ডা করা (অর্থাৎ কম বয়স্ক লোকেরা বয়স্ক লোকদের দূত হিসেবে ব্যবহার করা)। [সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদীস নং-১৩২৬, মু’জামুল কাবীর লিততাবারানী, হাদীস নং-৯৪৮৯]

 

عَنْ عَلْقَمَةَ، قَالَ: لَقِيَ عَبْدَ اللهِ بْنَ مَسْعُودٍ أَعْرَابِيٌّ وَنَحْنُ مَعَهُ، فَقَالَ: السَّلَامُ عَلَيْكَ يَا أَبَا عَبْدِ الرَّحْمَنِ، فَضَحِكَ فَقَالَ: صَدَقَ اللهُ وَرَسُولُهُ، سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يَكُونَ السَّلَامُ عَلَى الْمَعْرِفَةِ، وَإِنَّ هَذَا عَرَفَنِي مِنْ بَيْنِكُمْ فَسَلَّمَ عَلَيَّ، وَحَتَّى تُتَّخَذَ الْمَسَاجِدُ طُرُقًا فَلَا يُسْجَدُ لِلَّهِ فِيهَا، وَحَتَّى يَبْعَثَ الْغُلَامُ الشَّيْخَ بَرِيدًا ‌بَيْنَ ‌الْأُفُقَيْنِ، وَحَتَّى يَبْلُغَ التَّاجِرُ ‌بَيْنَ ‌الْأُفُقَيْنِ فَلَا يَجِدُ رِبْحًا

হযরত আলক্বামা রহঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ রাঃ এর সাথে এক গ্রাম্য ব্যক্তির সাক্ষাৎ হলো। আমিও হযরতের সাথে ছিলাম। তখন লোকটি বলল: আসসালামু আলাইকা হে আবূ আব্দুর রহমান! শোনে হযরত ইবেন মাসঈদ রাঃ হেসে দিলেন। তারপর বললেন, আল্লাহ তাআলা এবং তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সত্য বলেছেন। আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেছেন: কিয়ামত ততক্ষণ পর্যন্ত হবে না, যতক্ষণ না সালাম শুধু পরিচিতজনকেই দেয়া হবে। এই লোক তোমাদের মাঝে আমাকে  চিনে, তাই  আমাকেই সালাম দিয়েছে। এমন কি মসজিদকে রাস্তা করা হবে। এতে আল্লাহর রাহে সেজদা দেয়া হবে। এমন কি ছোট বাচ্চা বৃদ্ধ ব্যক্তিদের পৃথিবীর দুই প্রান্তে তার দূত হিসেবে পাঠাবে। ব্যবসায়ীরা পূর্ব পশ্চিমে পৌঁছে যাবে, কিন্তু কোন লাভ করতে পারবে না। [আলমু’জামুল কাবীর লিততাবারানী, হাদীস নং-৯৪৯০]

উলামায়ে ছূ এর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে!

وَعَنْ عَلِيٍّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: يُوشِكُ أَنْ يَأْتِيَ عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ لَا يَبْقَى مِنَ الْإِسْلَامِ إِلَّا اسْمُهُ وَلَا يَبْقَى مِنَ الْقُرْآنِ إِلَّا رَسْمُهُ مَسَاجِدُهُمْ عَامِرَةٌ وَهِيَ خَرَابٌ مِنَ الْهُدَى عُلَمَاؤُهُمْ شَرُّ مَنْ تَحْتَ أَدِيمِ السَّمَاءِ مِنْ عِنْدِهِمْ تَخْرُجُ الْفِتْنَةُ ‌وَفِيهِمْ ‌تَعُودُ

‘আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ শীঘ্রই মানুষের ওপর এমন এক যুগ আসবে, যখন শুধু নাম ব্যতীত ইসলামের কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না, সেদিন কুরআনের অক্ষরই শুধু অবশিষ্ট থাকবে। তাদের মাসজিদগুলো তো বাহ্যিকভাবে আবাদ হতে থাকবে, কিন্তু হিদায়াতশূন্য থাকবে। তাদের ‘আলিমগণ হবে আকাশের নীচে সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট লোক, তাদের নিকট হতেই (জালিমদের সহযোগিতা করার কারণে) ফিতনাহ্-ফাসাদ সৃষ্টি হবে। অতঃপর এ ফিতনা তাদের দিকেই ফিরে আসবে। (অর্থঅৎ তাদের উপরই জালিম চড়াও হবে।) [শুয়াবুল ঈমান লিলবায়হাকী, হাদীস নং-১৭৬৩]

عَنْ حَوْشَبٍ الطَّائِيِّ قَالَ: «مَا أَسَاءَتْ أُمَّةٌ أَعْمَالَهَا إِلَّا زَخْرَفَتْ مَسَاجِدَهَا، وَمَا هَلَكَتْ أُمَّةٌ قَطُّ إِلَّا ‌مِنْ ‌قِبَلِ ‌عُلَمَائِهَا

হযরত হাউশাব ত্বয়ী রহঃ বলেন, কোন উম্মত নিজের আমল নষ্ট করেনি, তবে তারা তাদের মসজিদকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করতে গিয়ে তা করেছে, এবং কোন উম্মত ধ্বংস হয়নি, তবে তাদের আলেমদের কারণেই হয়েছে। (অর্থাৎ আলেমগণ মানুষকে দ্বীনের রাহনূমায়ী করার বদলে দ্বীন থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। [মুসন্নাফ আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং-৫১৩৩]

من اقتراب الساعة إذا ‌كثر ‌خطباء منابركم وركن علماؤكم إلى ولاتكم فأحلوا لهم الحرام وحرموا عليهم الحلال فأ توهم بما يشتهون، وتعلم علماؤكم ليحلوا به دنانيركم ودراهمكم، واتخذتم القرآن تجارة

হযরত আলী রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কিয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে তোমাদের মিম্বরে খতীবের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। তোমাদের উলামাগণ শাসকের প্রতি আকৃষ্ট হবে। শাসকের অনুকূল হালালকে হারাম এবং হারামকে হালাল বলতে থাকবে। তোমাদের আলেমরা এজন্য ইলম অর্জন করবে, যাতে করে তোমাদের টাকা পয়সা নিজের জন্য হালাল করতে পারে। আর তোমাদের লোকেরা কুরআনকে ব্যবসা করার মাধ্যম বানাবে। [কানযুল উম্মাল ফী সুনানিল আক্বওয়ালি ওয়াল আফআল, হাদীস নং-৩৮৫৬৩]

চলবে ইনশাআল্লাহ

0Shares

আরও জানুন

মুসলমানদের জন্য হিন্দুদের ধর্মীয় উৎসবে গমণ এবং মুবারকবাদ দেয়ার হুকুম কী?

প্রশ্ন মুসলমানদের জন্য হিন্দুদের ধর্মীয় উৎসবে গমণ এবং মুবারকবাদ দেয়ার হুকুম কী? উত্তর بسم الله …

One comment

  1. বিলাল আহমদ সালেহী

    জাযাকাল্লাহ মুহতারাম শায়খ
    আমরা রীতিমতো উপকৃত হচ্ছি আলহামদুলিল্লাহ
    সমসাময়িক বিষয়গুলো আমাদের সামনে পেশ করার জন্য ধন্যবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *