প্রচ্ছদ / আদব ও আখলাক / নামাযে তর্জনী আঙ্গুল নাড়াতেই থাকা কি উচিত?

নামাযে তর্জনী আঙ্গুল নাড়াতেই থাকা কি উচিত?

প্রশ্ন

From: নূরুল ইসলাম সাইফুল (ফেনী)
বিষয়ঃ নামাযে বসাতে তর্জনী দ্বারা ইশারা করার হুকুম কি?

প্রশ্নঃ
আস-সালামু আলাইকুম। হযরত মুফতী সাহেব আপনাকে এবং আপনার সাথে দ্বীনের কাজে যুক্ত সকল উলামায়ে কেরাম ও সহযোগীদের দ্বীনের জন্য ( আল্লাহর জন্য) খুব মহব্বত করি।
আল্লাহ্‌ আপনাদের জাযায়ে খয়ের দান করুক। ফেতনা-ফাসাদের এই কঠিন যুগে আল্লাহ্‌ আপনাদের খেদমতকে আরো শক্তিশালী করুক।
প্রশ্নঃ
আমিও নামাযে তাশাহুদ পড়ার সময় তর্জনী দ্বারা ইশারা করার আমাল করি। ঢাকা উত্তরা আমি যে মাসজীদে নামায পড়ি তাতে দেখি কিছু লোক তর্জনী দ্বারা ইশারা করে কিন্তু তারা বসার শুরু থেকে সালাম ফিরানোর আগ পর্যন্ত তর্জনী কম্পনরত রাখে , কেউ সজোরে কাঁপায় আবার কেউ আস্তে আস্তে। নাযের বসাতে এরকম তর্জনী ইশারা করার নামে তর্জনী কাঁপানোর কোন বিধান আছে কি?

উত্তর

بسم الله الرحمن الرحيم

নামাযের মাঝে অতিরিক্ত নড়াচড়া করা খুশুখুজুর খেলাফ। তর্জনী আঙ্গুলী তাশাহুদের সময় নাড়াতেই থাকা উচিত নয়। কেবল আশহাদু আল্লাহ ইলাহা বলার সময় উঠাবে এবং ইল্লাল্লাহ বলার পর নামাবে। তারপর আঙ্গুলকে স্থির রাখবে।

এর মাঝেই প্রকৃত খুশুখুজু। শুধু নাড়াতেই থাকা আল্লাহর সামনে আদবের খেলাফ আচরণ। কারণ, সম্মানিত কারো সামনে এভাবে আঙ্গুল নাড়াতেই থাকা কখনোই শোভনীয় নয়। তাই এমনটি করবে না।

قَدْ أَفْلَحَ الْمُؤْمِنُونَ، الَّذِينَ هُمْ فِي صَلَاتِهِمْ خَاشِعُونَ

মুমিনগণ সফলকাম হয়ে গেছে, যারা নিজেদের নামাযে বিনয়-নম্র; [সূরা মুমিনূন-১-২]

وَقُومُوا لِلَّهِ قَانِتِينَ [٢:٢٣٨]

আর আল্লাহর সামনে একান্ত আদবের সাথে দাঁড়াও। [সূরা বাকারা-২৩৮]


عَنْ عَامِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ الزُّبَيْرِ عَنْ أَبِيهِ قَالَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- إِذَا قَعَدَ يَدْعُو وَضَعَ يَدَهُ الْيُمْنَى عَلَى فَخِذِهِ الْيُمْنَى وَيَدَهُ الْيُسْرَى عَلَى فَخِذِهِ الْيُسْرَى وَأَشَارَ بِإِصْبَعِهِ السَّبَّابَةِ وَوَضَعَ إِبْهَامَهُ عَلَى إِصْبَعِهِ الْوُسْطَى وَيُلْقِمُ كَفَّهُ الْيُسْرَى رُكْبَتَهُ

হযরত আমের আব্দুল্লাহ বিন জুবায়ের তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, রাসূল সাঃ যখন তাশাহুদ পড়ার জন্য বসতেন, তখন ডান হাতখানা ডান উরুর উপর এবং বাঁ হাতখানা বাঁ উরুর উপর রাখতেন। আর শাহাদত আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করতেন। এ সময় তিনি বৃদ্ধাঙ্গুলিকে মধ্যমার সাথে সংযুক্ত করতেন এবং বাঁ হাতের তালু [বাঁ] হাঁটুর রাখতেন। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৩৩৬, সহীহ ইবনে হিব্বান-৫/২৭০}

عَنِ ابْنِ عُمَرَ أَنَّ النَّبِىَّ -صلى الله عليه وسلم- كَانَ إِذَا جَلَسَ فِى الصَّلاَةِ وَضَعَ يَدَيْهِ عَلَى رُكْبَتَيْهِ وَرَفَعَ إِصْبَعَهُ الْيُمْنَى الَّتِى تَلِى الإِبْهَامَ فَدَعَا بِهَا وَيَدَهُ الْيُسْرَى عَلَى رُكْبَتِهِ الْيُسْرَى بَاسِطُهَا عَلَيْهَا

হযরত ইবনে ওমর রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ নামায পড়ার সময় যখন বসতেন বৈঠক করতেন] তখন হাত দুইখানা দ্ইু হাঁটুর উপর রাখতেন। আর ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলির পার্শ্ববতী [শাহাদাত] আঙ্গুল উঠিয়ে ইশারা করতেন এবং বাঁ হাত বাঁ হাঁটুর উপর ছড়িয়ে রাখতেন। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৩৩৭}

عَنِ ابْنِ عُمَرَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- كَانَ إِذَا قَعَدَ فِى التَّشَهُّدِ وَضَعَ يَدَهُ الْيُسْرَى عَلَى رُكْبَتِهِ الْيُسْرَى وَوَضَعَ يَدَهُ الْيُمْنَى عَلَى رُكْبَتِهِ الْيُمْنَى وَعَقَدَ ثَلاَثَةً وَخَمْسِينَ وَأَشَارَ بِالسَّبَّابَةِ

হযরত ইবনে ওমর রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ যখন তাশাহুদের জন্য বসতেন, তখন বাম হাতকে রাখতেন বাম হাঁটুর উপর এবং ডান হাতখানা ডান হাঁটুর উপর রাখতেন। আর [হাতের তালু ও আঙ্গুলসমূহ গুটিয়ে আরবী] তিপ্পান্ন সংখ্যার মত করে শাহাদাত আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করতেন। {সহীহ মুসলিম,হাদীস নং-১৩৩৮}

উল্লেখিত হাদীসমূহে শুধুমাত্র আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করার কথা এসেছে। আঙ্গুল নাড়ানোর কথা আসেনি। কিন্তু আঙ্গুল নাড়বে কি না? এ ব্যাপারে কোন স্পষ্ট নির্দেশনা নেই। অন্য হাদীসে তাও স্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ করে দেয়া হয়েছে। যেমন-

عن عبد الله بن الزبير أن النبي صلى الله عليه وسلم كان يشير بأصبعه إذا دعا ولا يحركها

হযরত আব্দুল্লাহ বিন জুবায়ের রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ যখন তাশাহুদ পড়তেন, তখন আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করতেন, কিন্তু আঙ্গুল নাড়াতেই থাকতেন না। {সুনানে নাসায়ী কুবরা, হাদীস নং-১১৯৩, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৯৮৯, মুসনাদে আবী আওয়ানা, হাদীস নং-১৫৯৪}

প্রশ্নোত্তরটিও পড়তে পারেন:

তাশাহুদে ইশারা করার পর আঙ্গুল শুধু নাড়াতেই থাকবে?

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।

ইমেইল– ahlehaqmedia2014@gmail.com

আরও জানুন

স্ত্রীকে দুই তালাক দিলে কি আবার বিয়ে করতে হবে?

প্রশ্ন দুই তালাক বলে ফেলছি এখন কি আবার নতুন করে বিয়ে করতে হবে? উত্তর بسم …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আহলে হক্ব বাংলা মিডিয়া সার্ভিস