প্রচ্ছদ / আহলে হাদীস / কথিত আহলে হাদীসদের কাছে দলীল চাই [শেষ পর্ব]

কথিত আহলে হাদীসদের কাছে দলীল চাই [শেষ পর্ব]

লেখক– মুনাজিরে ইসলাম মাওলানা মুহাম্মদ আমীন সফদর ওকাড়বী রহঃ

অনুবাদঃ লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

আগের পর্ব

সালামের উপর আলোচনা
১৮১
নামাযের শেষে উভয় দিকে সালাম ফিরানো ফরজ, না সুন্নত না ওয়াজিব?
১৮২
ইমাম মুক্তাদী, এবং মুনফারিদ সালাম ফিরানোর সময় মনে মনে কী নিয়ত করবে?
১৮৩
ইমাম উচ্চ আওয়াজে আর মুক্তাদী ও মুনফারিদ আস্তে আওয়াজে সালাম ফিরায়। এ পদ্ধতিটি সহীহ সরীহ হাদীস দিয়ে প্রমাণ করুন।
১৮৪
ফাতাওয়া ওলামায়ে হাদীস এর ৩ নং খন্ডের ২১৪পৃষ্ঠায় আছে যে, নামায ফরজ, সুন্নত এর পর হাত উঠিয়ে দুআ করতে পারে। এর উপর কওলী, ফেলী এবং আসরী দলীল রয়েছে। আর নাজায়েজের উপর কোন দলিল নেই।
আজকালকার গায়রে মুকাল্লিদরা এ কওলী ফেলী দলীলের বিরোধী হয়ে দুআকে পরিস্কার অস্বিকার করে। কেন?
১৮৫
কোন বেগানা মহিলার সাথে চুম্বন ও আলিঙ্গন করে নামায পড়ে নিলে সব কিছু মাফ হয়ে যায়। {বুখারী-১/৭৫}
গায়রে মুকাল্লিদ ভাইয়েরা কি নিজেদের মেয়েদের এর উপর আমল করার অনুমতি দিয়ে থাকেন?
১৮৬
রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ মহিলারা সামনে দিয়ে গেলে নামায ভেঙ্গে যায়। {সহীহ মুসলিম-১/১৯৭, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৭০২}
কিন্তু হযরত আয়শা সিদ্দিকা রাঃ রাসূল সাঃ এর সামনে শুয়ে থাকতেন, আর রাসূল সাঃ সেজদায় যাওয়ার সময় নিজের হাতে পা সরিয়ে দিতেন। {সহীহ মুসলিম-১/১৯৭}
মহিলা সামনে দিয়ে গেলে কি নামায ভেঙ্গে যায়?
১৮৭
হায়েজা মহিলা সামনে দিয়ে গেলে নামায ভেঙ্গে যায়। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৭০৩}
হযরত আয়শা রাঃ হায়েজা অবস্থায় রাসূল সাঃ এর নামাযরত অবস্থায় সামনে শুয়ে ছিলেন। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৭১০} হযরতের মায়মুনা রাঃ থেকেও এমন বর্ণিত। {বুখারী-১/৭৪, মুসলিম-১/১৯৮}
গায়রে মুকাল্লিদ ভাইয়েরা এক্ষেত্রে কোনটি মানেন এবং কেন?
১৮৮
মহিলা যদি নামাযে ইমামের লজ্জাস্থান দেখতে থাকে, তাহলে তার নামায ভাঙ্গবে না। {বুখারী-২/২৯০}
যদি পুরুষ মহিলার লজ্জাস্থান দেখে ফেলে তাহলে নামায ভাঙ্গবে কি না? সহীহ সরীহ হাদীস দেখান।
১৮৯
রাসূল সাঃ নামাযে বিবিদের পায়ে হাত লাগাতেন। রাসূল সাঃ নামায পড়ার সময় তাঁর পায়ের গিটে হাত লাগাতেন, কিন্তু নামায ভাঙ্গতো না। যদি নামাযী ব্যক্তি মহিলার অন্য কোন অঙ্গে হাত লাগায় তাহলে নামায ভাঙ্গবে কি?
১৯০
রাসূল সাঃ নামাযের পূর্বে সম্মানিতা স্ত্রীকে চুম্বন করেছেন। এতে অজু ভাঙ্গেনি। যদি পুরুষ নামাযরত মহিলাকে চুন্বন করে, তাহলে নামায ভাঙ্গবে কি না? সহীহ সরীহ দিয়ে প্রমাণ দিন।
১৯১
যদি এর উল্টো তথা নামাযরত পুরুষকে মহিলা চুম্বন করে, তাহলে পুরুষের নামায ভাঙ্গবে কি? সহীহ সরীহ হাদীস দিয়ে দলিল দিন।
১৯২
নামাযী দৃষ্টি যদি লজ্জাস্থানে পরে, তাহলে নামায ভাঙ্গবে কি না?
১৯৩
মা নামাযরত ছিল, বাচ্চা কোলে এসে প্রস্রাব করে দিল, মায়ের নামায ভেঙ্গে যাবে কি?
১৯৪
মা নামাযরত থাকা অবস্থায় বাচ্চা যদি দুধ পান করা শুরু করে দেয়, তাহলে কি নামায ভেঙ্গে যাবে? সহীহ সরীহ হাদীসের জবাব চাই।
১৯৫
রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ গাধা সামনে দিয়ে অতিক্রান্ত হলে নামায ভেঙ্গে যায়। {মুসলিম-১/১৯৭}
কিন্তু রাসূল সাঃ নামায পড়াচ্ছিলেন, আর সবার সামনে গাধা বিচরণ করছিল। {মুসলিম-১/১৯৬, আবু দাউদ, নাসায়ী}
এমনকি রাসূল সাঃ গাধার উপর নামাযও পড়েছেন। এরকম বিপরীতমুখী কেন কওল ও ফেল?
১৯৬
রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ কুকুর সামনে দিয়ে অতিক্রান্ত হলে নামায ভেঙ্গে যায়। {মুসলিম-১/১৯৭}
অথচ রাসূল সাঃ নামায পড়তেছিলেন, আর সামনে কুকুর খেলতেছিল। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৭১৮}
১৯৭
রাসূল সাঃ নামাযরত অবস্থায় তাঁর উপর উটের নাড়িভূরি ঢেলে দেয়া হয়েছিল। তারপরও রাসূল সাঃ নামায শেষ করে উঠেন। {সহীহ বুখারী, ১/৭৪}
সারা শরীরে নামাযরত অবস্থায় নাপাক লাগলে নামাযের কী হুকুম?
১৯৮
রাসূল সাঃ এর নাতি হযরত উমামা রাঃ পিঠে উঠিয়ে নামায পড়তেন। {বুখারী-১/৭৪, মুসলিম}
এ হাদীসের ব্যাখ্যায় মাওলানা ওয়াহিদুজ্জামান সাহেব লিখেন যে, ইমাম শাফেয়ী রহঃ এর মাযহাব হল, ছেলে বা মেয়ে অথবা কোন পবিত্র প্রাণি নামাযরত ব্যক্তির গায়ে উঠানো জায়েজ আছে। এটি ইমাম মুক্তাদী এবং মুনফারিদ সবার জন্যই তা জায়েজ আছে।
ইমাম মালিক রহঃ বলেনঃ এটা জায়েজ হওয়াকে নফল নামাযের সাথে খাস করেছেন। কিন্তু এটি ঠিক নয়। কারণ খোদ হাদীস দ্বারা প্রমানিত যে, রাসূল সাঃ ইমাম ছিলেন আর উমামাকে উঠিয়ে নিয়েছিলেন।
কতিপয় মালেকীগণ বলেনঃ এ হাদীস মানসুখ তথা রহিত হয়ে গেছে। কেউ কেউ বলেন যে, জরূরতের কারণে এমনটি করেছেন।
কিন্তু সব কথাই বাতিল এবং মারদুদ। কেননা, হাদীস দ্বারা স্পষ্টই জায়েজ প্রমাণিত। এটি শরীয়তের মূলনীতির ও বিরোধী নয়। কেননা, মানুষ পবিত্র। আর বাচ্চার শরীর এবং কাপড়কেও পবিত্র মনে করা উচিত যতক্ষণ না নাপাকীর উপর কোন দলীল না হয়। {হাশিয়ায়ে মুসলিম-২/১১৭-১১৮}
১৯৯
গায়রে মুকাল্লিদ ভাইদের মাযহাব অনুযায়ী কুকুর ও শুকর পাক। {উরফুর জাদী-১০}
তাহলে আপনাদের মাযহাবে কুকুর বা শুকর উঠিয়ে নামায পড়া কোন হাদীসের খেলাফ?
২০০
আপনাদের মাযহাব অনুযায়ীতো নামাযী ব্যক্তি যে বস্তু উঠাবে সেটা পবিত্র হওয়া শর্ত নয়। {বুদুরুল আহিল্লাহ-৩৮} আপনাদের মাযহাবেতো কুকুর ও শুকরের পায়খানায় লেপ্টে গেলেও নামায হয়ে যায়। {আরফুর জাদী-২১}
এসবের দলিল কি?
২০১
মা নামায পড়তেছে সন্তান উড়না টেনে নিয়ে গেল, তাহলে কি নামায ভেঙ্গে যাবে?
২০২
হাদীসের কিতাব মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবাতে আছে যে, হযরত মুয়াজ রাঃ হযরত আলী রাঃ উকুন মারতেন। {আবী শাইবা-২/৩৬৭-৩৬৮}
২০৩
হাদীসের কিতাবে এসেছে যে, ইবরাহীম, কাতাদাহ, হাকাম, আদা রহঃ বলেছেন যে, কেউ যদি তাকবীরে তাহরিমা না বলে তাহলে নামায জায়েজ আছে। {আব্দুর রাজ্জাক-২/৭২-৭৩}
২০৪
হাদীসের কিতাবে এসেছে যে, আতা রহঃ বলেছেনঃ আউজুবিল্লাহিমিনাশ শাইতানিররাজীম না পড়লেও নামায জায়েজ হবে। {আব্দুর রাজ্জাক-২/৮৭}
ইমাম হাসান বসরী রহঃ বলেছেনঃ একাকী ব্যক্তিও যদি সূরায়ে ফাতিহা না পড়ে, তাহলে নামায পুনরায় পড়তে হবে না। {মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক-২/৯৫}
২০৫
হযরত ওমর রাঃ মাগরিবের পূর্বে মাগরিবের প্রথম রাকাতে সূরায়ে ফাতিহা না পড়ে সেজদায়ে সাহু করেছেন। {মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক-২/১২৩}
হযরত মুআম্মার, কাতাদা এবং হযরত হাম্মাদ রহঃ বলেনঃ কেউ যদি তাশাহুদ না পড়ে, তাহলে তার নামায হবে। {মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক-২/২০৫}
হযরত আবূ বারযাহ আসলামী খচ্চরকে হাতে ধরে নামায পড়েছিলেন। {মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক-২/২৬২}
২০৬
নামাযী ব্যক্তি যদি লাঠি দিয়ে প্রাণীকে ভাগিয়ে দেয় তাহলে কোন সমস্যা নেই। {মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক-২/২৬২}
২০৭
হযরত সাঈদ বিন জুবাইর রহঃ নফল নামাযে পানি ইত্যাদি পান করতেন। হযরত তাওস ও এটাকে জায়েজ বলতেন। {মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক-২/৩৩৩}
২০৮
জারজ সন্তান নামাযের ইমাম হতে পারে। {মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক-২/৩৯৬-৩৯৭}
২০৯
রাসূল সাঃ এর জমানায় মসজিদে নববী কাঁচা ছিল না পাকা?
২১০
রাসূল সাঃ মসজিদে নববীর নাম মসজিদে কুদস রেখেছিলেন? না মসজিদে মুবারক? না মসজিদে আহলে হাদীস?
২১১
আল্লামা ওহীদুজ্জামান সাহেব লিখেছেনঃ হযরত আলীরাঃ মসজিদের মেহরাব দেখলে তা ভেঙ্গে ফেলতেন। মসজিদে মেহরাব বানানো খেলাফে সুন্নত। এখন অধিকাংশ লোকেরা এটাকে গ্রহণ করে নিয়েছে ইল্লা মা’শাআল্লাহ। আহলে হাদীসদের এক জামাত কিছু মসজিদ সুন্নতের মুতাবেক বানিয়েছে। যাতে না মিম্বর আছে না মেহরাব। {লুগাতুল হাদীস-৪৪, কিতাবুল হায়া}
২১২
হাদীস দ্বারা জানা যায় যে, রাসূল সাঃ এর জমানায় মসজিদের ফ্লোর কাঁচা ছিল। কপালে মাটি লেগে যেত। মসজিদ পাকা করার কথা হাদীসে এসেছে?
২১৩
রাসূল সাঃ কি মসজিদে ফ্লোরমেট ও কার্পেট বিছাতেন?
২১৪
রাসূল সাঃ মসজিদে কয়টি মিনার বানিয়েছিলেন? আর এর উচ্চতা ছিল কতটুকু?
২১৫
রাসূল সাঃ মসজিদের সাথে কতগুলো ইস্তেঞ্জাখানা ও গোসলখানা বানিয়েছিলেন?
২১৬
রাসূল সাঃ মসজিদে অজুর স্থান কেমন বানিয়েছিলেন?
২১৭
রাসূল সাঃ মসজিদে কোন ধরণের পাখা লাগিয়েছিলেন?
২১৮
রাসূল সাঃ বলেছেন যে, প্রতিটি বাজনাতে শয়তান আছে। মসজিদে বাজনাওয়ালা ঘড়ি লাগানোর হাদীসে কী হুকুম বিদ্যমান?
২১৯
রাসূল সাঃ এক মুদ পরিমাণ পানি দিয়ে অজু করতেন। এর চেয়ে বেশি পানি ব্যবহার করা কি অপচয় নাকি না? একটু বুঝে শুনে বলুনতো।
২২০
রাসূল সাঃ এক সা পানি দিয়ে গোসল করতেন। গোসলের সময় এর চেয়ে বেশি পানি ব্যবহার করা কি অপচয়ের অন্তুর্ভূক্ত? নাকি না?
২২১
মুদ এবং সা’ এর পরিমাণ আমাদের প্রচলিত ওজন অনুযায়ী হাদীস দ্বারা কতটুকু প্রমাণিত?
২২২
কুরআন ও হাদীসে সাধারণ স্থান ও মসজিদের মাঝে কী কী পার্থক্য আছে?
২২৩
রাসূল সাঃ এর জমানায় মসজিদ কতটুকু আলোকিত করা হতো? বর্তমানে এর চেয়ে বেশি আলোকিত করা কি জায়েজ?
২২৪
রাসূল সাঃ এর জমানায় হাবশীরা মসজিদে খেলাধোলা করত, আপনাদের মসজিদে এ সুন্নত জিন্দা আছেতো?
২২৫
রাসূল সাঃ জুতাকে দুুই পায়ের মাঝে রাখার হুকুম দিয়েছেন। যে ব্যক্তিরা মসজিদের বাইরে জুতা রাখে, বা মসজিদের সামনে বা মুসল্লিদের সামনে রাখে তারা এ হাদীসের খেলাফ আমল করে না?
২২৬
হাদীসে যেমন এসেছে যে, من رغب عن سنتى فليس منى তথা যে ব্যক্তি আমার সুন্নত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় সে আমার [উম্মতের] অন্তর্ভূক্ত নয় বলে বক্তব্য এসেছে, তেমনি কি من رغب عن حديثى فليس منى তথা যে ব্যক্তি আমার হাদীস থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, সে আমার [উম্মতের] অন্তর্ভূক্ত নয় মর্মে কোন হাদীস এসেছে?
২২৭
যেমন হাদীসের মাঝে من احب سنتى فقد احبنى তথা যে ব্যক্তি আমার সুন্নতকে ভালবাসলো সে আমাকে ভালবাসলো মর্মে হাদীস এসেছে তেমনি কি من احب حديثى فقد احبنى তথা যে ব্যক্তি আমার হাদীসকে ভালবাসলো সে আমাকে ভালবাসলো এমন হাদীস এসেছে?
২২৮
হাদীসে যেমন عليكم بسنتى তথা তোমাদের উপর আমার সুন্নতের অনুসরণ আবশ্যক মর্মে আদেশ এসেছে, তেমন কি عليكم بحديثى তথা তোমাদের উপর আমাদের হাদীস আবশ্যক একথাও এসেছে?
২২৯
যেমন সুন্নতের উপর আমল করার ফযীলত একশত শহীদের সমমানের বলে হাদীসে এসেছে, তেমনি কি হাদীসের উপর আমল শত শহীদের সওয়াব হবে মর্মে এসেছে?
২৩০
যেমন হাদীসে সুন্নত ও হাদীসের আলাদা আলাদা হওয়ার কথা এসেছে, তেমনি কি হাদীসে হাদীস ও সুন্নত এক একথাও এসেছে?
২৩১
সহীহ মুসলিমের ১ম খন্ডের ১০নং পৃষ্ঠায় হাদীসের নাম নিয়ে গোমরাহকারী ফেতনাবাজদের মিথ্যুক ও দাজ্জাল বলা হয়েছে। কোন সহীহ হাদীসে কি সুন্নতের উপর আমলকারীদেরও এমন বলা হয়েছে?
২৩২
শায়েখ আব্দুল কাদীর রহঃ এর লিখা গুনিয়াতুত তালেবীনের এক হাদীসে শয়তানের বাচ্চার নাম “হাদীস” এসেছে। হাদীসের নাম নিয়ে সমাজে বিশৃংখলাকারী সে শয়তানের বাচ্চা কারা?
২৩৩
হাদীসে ইজমার অস্বিকারকারীকে গোমরাহ এবং জাহান্নামী বলা হয়েছে। কোন হাদীসে কি ইজমা মান্যকারীদের গোমরাহ ও জাহান্নামী বলা হয়েছে?
২৩৪
যেমন কুরআন ও হাদীসে ফিক্বহের প্রশংসা এসেছে, তেমনি কোন আয়াত বা হাদীসে কি ফিক্বহের নিন্দাবাদ এসেছে?
২৩৫
হাদীস অস্বিকারকারীরা অনেক প্রশ্ন উত্থাপন করে থাকে। যেমন তারা বলে যে, [মাআজাল্লাহ] হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, রাসূল সাঃ এর কথা ও কাজে বিপরীতমুখীতা আছে। এসব বিপরীতমুখীতাকে নিজের কিয়াস তথা যুক্তি দিয়ে নয় হাদীস দিয়ে জবাব দিন, যাতে হাদীসের প্রতি মানুষে খারাপ ধারণা না হয়।
রাসূল সাঃ এর হুকুম ছিল যে, প্রাকৃতিক প্রয়োজন করার সময় কিবলামুখী হওয়া বা সেদিকে পিঠ দেয়া নিষেধ। অথচ রাসূল সাঃ নিজেই কেবলামুখী হয়ে প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণ করেছেন।
যুক্তি তথা কিয়াস নয় হাদীস দিয়ে এ প্রশ্নের জবাব দিন।
২৩৬
রাসূল সাঃ এর হুকুম ছিল যে, তিনটির কম পাথর দিয়ে ইস্তেঞ্জা করবে না। কিন্তু তিনি নিজেই দুই পাথর দিয়ে ইস্তেঞ্জা করেছেন।
২৩৭
রাসূল সাঃ স্ত্রীর গোসল করা পানির অবশিষ্টাংশ দিয়ে গোসল করতে নিষেধ করেছেন। অথচ তিনি নিজেই বিবির গোসলের অবশিষ্ট পানি দিয়ে গোসল করেছেন।
২৩৮
রাসূল সাঃ বারবার বলেছেন যে, আগুনে পাকানো খাবার খেলে অজু ভেঙ্গে যায়, অথচ তিনি নিজে পাকানো গোস্ত খেয়ে অজু করতেন না।
২৩৯
রাসূল সাঃ এর হুকুমতো এই ছিল যে, গোসল ফরজ হওয়া ব্যক্তি অজু করে শুইবে, কিন্তু তিনি নিজেই অজু ছাড়াই শুয়ে যেতেন।
২৪০
রাসূল সাঃ ফরজ নামায আলোকিত অবস্থায় পড়তে আদেশ দিতেন, অথচ তিনি নিজে অন্ধকারেই ফজরের নামায পড়তেন।
২৪১
রাসূল সাঃ আসরের নামাযের পর নামায পড়তে নিষেধ করেছেন। অথছ তিনি নিজেই নামায পড়তেন।
২৪২
রাসূল সাঃ লোকদের নামাযে এদিক সেদিক তাকাতে নিষেধ করতেন, অথচ তিনি নিজেই চোখের কোণা দিয়ে এদিক সেদিক তাকাতেন।
২৪৩
রাসূল সাঃ জানাযার সাথে সওয়ার হয়ে যেতে নিষেধ করেছেন। কিন্তু তিনিই ঘোড়ার উপর সওয়ার হয়ে গিয়েছেন।
২৪৪
রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন যে, যে ব্যক্তি রোজা অবস্থায় সিঙ্গা লাগাবে, তার রোজা ভেঙ্গে যাবে, অথচ তিনি নিজেই সিঙ্গা লাগিয়েছেন।
এ সকল মাসআলাগুলো তিরমিজীতে বিদ্যমান। এ সকল প্রশ্নের জবাব সহীহ সরীহ হাদীস দিয়ে দেয়া সহীহ হাদীসের উপর আমল করার দাবিদার গায়রে মুকাল্লিদ তথা কথিত আহলে হাদীসদের জিম্মায় আবশ্যক।
২৪৫
রাসূল সাঃ যেভাবে স্বীয় সাহাবীদের আহলে কুরআন বলে সম্বোধন করেছেন {সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-১১৭০, সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-৪৫৩, ২৮২}
ঠিক এভাবে কোন সহীহ হাদীসে সাহাবাগণকে এভাবে আহলে হাদীস বলা হয়েছে?
২৪৬
মৌলবী সানাউল্লাহ সাহেব এবং মৌলবী এনায়েতুল্লাহ আসরী মির্যায়ী তথা কাদিয়ানীদের পিছনে নামায পড়া জায়েজ বলতেন। {ফায়সালায়ে মক্কা-৩৬} নিজেরা পড়তেনও নামায। এটি কোন হাদীসের উপর আমল?
২৪৭
রাসূল সাঃ বনু কুরায়জার রাস্তায় আসর নামায আদায়কারী এবং তরককারী দুই দলের কোন দলের ইজতিহাদকে ভুল বলে আখ্যায়িত করেন নি। কোন দলের উপর প্রশ্নও তোলেন নি তারা কেন এটা করেছে?
গায়রে মুকাল্লিদরা কোন হাদীসের উপর নির্ভর করে মুজতাহিদগণকে শয়তান বলে থাকে?
২৪৮
রাসূল সাঃ এর হাদীস অনুযায়ী মুজতাহিদের প্রতিটি অবস্থায়ই সওয়াব পায়, ভুল করলে একটি আর সঠিক হলে দুইটি। এমতাবস্থায় মুজতাহিদদের গালি দেয়া কোন হাদীসের উপর আমল?
২৪৯
মৌলবী মুহাম্মদ ইউসুফ গায়রে মুকাল্লিদ সাহেব “হাকীকাতুল ফিক্বহ” এ বলেছেন যে, গর্দান মাসাহ করা বেদআত। আর এ সংক্রান্ত হাদীস জাল। হেদায়া-১/১৮, ১৯৩}
অথচ একথাটি সম্পূর্ণ মিথ্যাচার। কেননা, হেদায়াতে একথা বিলকুল নেই।
২৫০
হাকীকাতুল ফিক্বহের ১৯৪ পৃষ্ঠায় লিখেছেন যে, পাগড়ির উপর মাসাহ করা জায়েজ আছে। হেদায়া-১/১০] অথচ হেদায়ার আসল ইবারতে আছে যে, لا يجوز المسح على العمامة তথা পাগড়ির উপর মাসাহ করা জায়েজ নেই।
তাহলে হেদায়ার নামে এ মিথ্যাচার কেন?
২৫১
হাকীকাতুল ফিক্বহের ২০০ নং পৃষ্ঠায় লিখেছেন যে, একবার মাটিতে হাত মেরে তায়াম্মুম করার বর্ণনা সহীহাইন তথা বুখারী মুসলিমে অনেক বর্ণিত। এবং তা সহীহ। [হেদায়া-১/১৪২, শরহে বেকায়া-৮৭] আর ২০১ নং পৃষ্ঠায় লিখেছেন যে, তায়াম্মুম এর মাঝে দুই বার হাত মারার হাদীস জঈফ ও মওকূফ। [হেদায়া-১/১৪২, শরহে বেকায়া-৫৬] হেদায়া ও শরহে বেকায়ার নামে লেখা সব ক’টি কথাই মিথ্যাচার। বরং হেদায়াতে লেখা আছে যে, তায়াম¥ুমে দুইবার হাত মাটিতে মারতে হবে। একবার চেহারার জন্য আরেকবার উভয় হাতের জন্য। এটাই রাসূল সাঃ এর ফরমান।
তারপর তিনি হাকীকাতুল ফিক্বহের ৩২ নাম্বার পৃষ্ঠায় লিখেছেন যে, রাসূল সাঃ এর সর্বদার আমল অন্ধকার অবস্থায় ফজর নামায পড়াই ছিল। [হেদায়া-১/২৯২] অথচ হেদায়ার মূল আরবী ইবারত হল- ويستحب الإسفار بالفجر لقوله عليه السلام اسفروا بالفجر فانه اعظم للاجر অর্থাৎ ফর্সা হওয়া অবস্থায় ফজর নামায পড়া মুস্তাহাব, কেননা, রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ “তোমরা ফজরকে ফর্সা হলে আদায় কর, কেননা এটাই অধিক সওয়াবের কারণ”।
তিনি আরো লিখেছেন যে, “তারজী’ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। [হেদায়া-১/২৯২}
অথচ হেদায়াতে ঠিক এর উল্টোটি লিখা আছে। হেদায়াতে লিখা হল- لا ترجع فيه لنا انه لا ترجيع فى المشاهير অর্থাৎ আজানে তারজী’ নেই। কেননা, মাশহুর হাদীসে তারজী’ প্রমাণিত নয়।
তিনি আরো লিখেছেন যে, ইকামত হল একবার একবার করে। [শরহে বেকায়া] অথচ শরহে বেকায়ার মূল আরবীতে আছে যে, ইকামত হল আজানের মত। কেননা, ফেরেস্তা আজান ও ইকামত একইভাবে শিখিয়েছেন।
এভাবে একের পর এক মিথ্যা রেফারেন্স দিয়ে ভরে রেখেছেন তিনি হাকীকাতুল ফিক্বহ নামক মিথ্যা সর্বস্ব বইয়ে। দ্বীন প্রচারের নামে এত মিথ্যাচার আরো কেউ করেছে কি না চিন্তার বিষয়।
এরকম অসংখ্যা মিথ্যচারের ভাগাড় হল গায়রে মুকাল্লিদ আলেম মৌলবী মুহাম্মদ ইউসুফ এর লেখা “হাকীকাতুল ফিক্বহ”। আরো কিছু মিথ্যাচারের নমুনা দেখুনঃ

হাকীকাতুল ফিক্বহের মিথ্যাচার

২৫২
সেজদায়ে সাহু উভয় দিকে সালাম ফিরানোর পর করবে। [হেদায়া-১/৫৮৪, শরহে বেকায়া-১৩৯] ২৫৩
এক সালামের পর সেজদায়ে সাহুকারী বেদআতি। [হেদায়া-১/৫৮৫]

এ সকল কিছুই মিথ্যা কথা। আপনি নিজে উক্ত কিতাব উঠিয়ে দেখলে অবাক হয়ে যাবেন। কিভাবে এমন জঘন্য মিথ্যাচার করা হয়েছে ওসব কিতাবের নাম নিয়ে। অথচ এসব বক্তব্যের সম্পূর্ণ উল্টো হেদায়া ও শরহে বেকায়ায় লিখা আছে। এরকম মিথ্যা কথা নিসবত এসব গ্রহণযোগ্য কিতাবের দিকে করে সাধারণ জনগণকে ধোঁকা দেয়ার এক জঘন্য খেলায় মত্ত হয়েছেন তিনি।
আরো লিখেছেন যে, তারাবীহের মাঝে ২০ রাকাতের হাদীস দুর্বল। [হেদায়া-১/৫৬৩, শরহে বেকায়া-১৩৩] ২৫৪
তারাবীহের ৮ রাকাতের হাদীস সহীহ। [শরহে বেকায়া-১৩৩] ২৫৫
বেতেরের সাথে তারাবীহ এগার রাকাত প্রমাণিত। [হেদায়া-১/৫৬৩, শরহে বেকায়া-১৩৩] ২৫৬
তারাবীহ ৮ রাকাত সুন্নত আর ২০ রাকাত মুস্তাহাব। [শরহে বেকায়া-১৩৪] এ সব ক’টি বক্তব্য স্পষ্ট মিথ্যাচার। এসব কিতাবে শুধু ২০ রাকাত তারাবীহের কথাই উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ কি নির্লজ্জভাবে এসব কিতাবের দিকে নিসবত করে মিথ্যাচার করা হয়েছে।
২৫৭
হাকীকাতুল ফিক্বহে আরো লিখা হয়েছে যে, ফজরের ফরজের পর সুন্নত পড়া যায়। [হেদায়া-১/৫৪২, শরহে বেকায়া-৮৪] এটাও এসব কিতাবের দিকে নিসবত করা সুষ্পষ্ট মিথ্যাচার। আরবী হেদায়া ও শরহে বেকায়ায় এমন কোন বক্তব্য নেই।
আরো লিখেছেন যে, ফজরের সুন্নত পড়ে ডান কাৎ হয়ে শুইবে। [হেদায়া-১/৫৪১] একদম মিথ্যা কথা। হেদায়ার আরবী কিতাবে এর নাম-গন্ধও নেই।
আমরা সাধারণ গায়রে মুকাল্লিদ ভাইদের কাছে অনুরোধ করি এরকম মিথ্যাচার কেন করলেন আপনাদের পথিকৃত গায়রে মুকাল্লিদ আলেমরা? উপরে বর্ণিত নামায সম্পর্কিত মাসায়েলগুলোর কুরআন ও সহীহ হাদীস ভিত্তিক জবাব দিতে কোন দিন কি দিতে পারবে গায়রে মুকাল্লিদ তথা কথিত আহলে হাদীস নামধারীরা? যদি না দিতে পারেন, তাহলে আপনাদের কুরআন ও সহীহ হাদীস ভিত্তিক নামাযের মিথ্যা স্লোগান বর্জন করে কুরআন হাদীসের আলোকে মুজতাহিদ ইমামদের বের করা নামায পদ্ধতি অনুসরণ করুন। আর জাতিকে প্রোপাগান্ডা, বিভ্রান্তি ও অপপ্রচারের হাত থেকে রক্ষা করুন।

0Shares

আরও জানুন

বাউল সম্প্রদায় সম্পর্কে একথাগুলো কি আমরা জানি?

সংগৃহিত  আমরা জানি না লালন আসলে কে? লালন ছিলেন বাউল সম্প্রদায়ের গুরু।আমরা কি জানি কারা …

No comments

  1. সুন্দর হয়েছে। জাযাকাল্লাহ

Leave a Reply to হুসাইন আহমদ Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *