প্রশ্ন
Jahid Hasan
আসসালামু আলাইকুম,, অনেক ওয়াজে হুজুররা বিভিন্ন বুজুর্গ ব্যক্তি এবং পাপী ব্যক্তিদের মৃত্যু পরবর্তী আল্লাহর দরবারে হাজির হওয়া এবং তাদের বিচারের ঘটনা উল্লেখ করেন৷ এইসব ঘটনা কতটুকু নির্ভরযোগ্য? যেখানে কেয়ামতের পর বিচার দিবস শুরু হবে সেখানে হুজুরদের এই বয়ানগুলো কতটুকু যুক্তিযুক্ত??
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
নির্দিষ্ট কোন ঘটনা না বলে আমভাবে এর প্রশ্নের উত্তর দেয়া সম্ভব নয়।
কারণ, কাশফ ও কারামাতের নামে অনেক বানোয়াট ঘটনা সমাজে প্রচলিত আছে। যা ইলম কম থাকা বা তাহকীক না থাকায় অনেক ওয়ায়েজ তাদের বয়ানে এসব বলে থাকেন। যা ঠিক নয়।
তবে এর মানে এই নয় যে, এ সংক্রান্ত সব বর্ণনাই জাল বা বানোয়াট।
কারণ, কাশফ ও ইলহাম সত্য। এর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা অনেক সময় তার প্রিয় বান্দাকে গায়েবের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে অবগত করে থাকেন। তবে কাশফ ও ইলহাম শরীয়তের কোন দলীল নয়। কেবলি উক্ত ব্যক্তির একটি ফযীলত হিসেবে ধর্তব্য হয়।
প্রমাণ
১
আল্লামা আলূসী রহঃ লিখেছেনঃ
কখনো কখনো আল্লাহ তাআলা তার খাস বান্দাদের কাছে এমন কিছু হালাত প্রকাশিত করে দেন, ফলে উক্ত বস্তুটি আল্লাহ ওয়ালা ব্যক্তিটি দেখেন, যা সাধারণ লোকেরা দেখতে পায় না।[রূহুল মাআনী-২২/৩৮, সূরা সাজদা]
২
এমনিভাবে আল্লামা আলুসী রহঃ সূরা তাহরীমের ১১ নং আয়াতের অধীনে হযরত আয়শা রাঃ এর এর দুআ رَبِّ ابْنِ لِي عِنْدَكَ بَيْتًا فِي الْجَنَّةِ অধীনে লিখেনঃ
فكشف الله لها عن بيتها في الجنة
আল্লাহ তাআলা আয়শা রাঃ এর জান্নাতের ঘর কাশফের মাধ্যমে দেখিয়ে দেন।
দেখুন আল্লামা আলূসীকৃত -তফসীরে রূহুল মাআনী-২৮/৪৯৫।
ইবনুল জাওযী রহঃ কৃত- যাদুল মাছীর-৮/৮৫।
ইবনে কাছীর রহঃ কৃত-তাফসীরে ইবনে কাছীর-৮/১৯৮।
৩
লা-মাযহাবী বন্ধুদের নিজস্ব প্রকাশনী “তাওহীদ পাবলিকেশন্স” থেকে আক্বিদা বিষয়ক একটি বই প্রকাশিত হয়েছে। যার মূল লেখক হাফেজ বিন আহমাদ বিন আল-হাকামী। আর অনুবাদ করেছেন লা-মাযহাবী শায়েখ আব্দুল্লাহ শাহেদ মাদানী। বইটির নাম হল, ‘কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে দুই শতাধিক প্রশ্নোত্তরসহ নাজাতপ্রাপ্ত দলের আকীদাহ’।
উক্ত বইয়ে কারামত সত্য হবার প্রমাণ দিতে গিয়ে ২৮২ নং পৃষ্ঠায় ৩২২ নং টিকায় আনা হয়েছে “সারিয়ার সাথে উমার রাঃ এর কারামাতের বিস্তারিত বিবরণ এই যে, উমার রাঃ একদল সৈনিক পাঠালেন এবং সারিয়া নামক এক ব্যক্তিকে সেনাবাহীনীর আমীর নিযুক্ত করলেন। উমার রাঃ মদীনার মিম্বরে খুৎবারত অবস্থায় ইয়া সারিয়া! আল জাবাল! বলে উচ্চসরে ডাক দিলেন। সৈনিকদের দূত মদীনায় এসে বললেন, হে আমীরুল মুমিনীন! আমরা শত্রুদের মুকাবিলা করতে গেলে তারা আমাদেরকে পরাজিত করে ফেলে। তখন আমরা একজন লোককে চিৎকার করে বলতে শুনলামঃ ইয়া সারিয়া! আল জাবাল! অর্থাৎ হে সারিয়া পাহাড়ে আশ্রয় নাও। এতে আমরা সতর্কতা অবলম্বন করে পাহাড়ে আশ্রয় গ্রহণ করলাম। শত্রুদের আক্রমণের কবল হতে নিরাপদ হলাম। আল্লাহ তাআলা শত্রুদেরকে পরাজিত করলেন। [মাজমূআয়ে ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়া-১১/২৭৮]
খেয়াল করুন। শত মাইল দূরে সাহাবাগণ যুদ্ধ করছেন। সেই যুদ্ধ ময়দানে সাহাবাগণ পরাজিত হয়ে গেছেন। কি করবেন? বুঝতে পারছিলেন না। যুদ্ধের এ হালাত শত মাইল দূরে মসজিদের মিম্বরে বসা হযরত উমর রাঃ এর কাছে কাশফ হয়ে গেল। আর তিনি সেখান থেকেই প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিলেন। তা আবার যুদ্ধরত সাহাবীগণ শুনে কার্যকরও করলেন।
এ ঘটনা আমাদের লা-মাযহাবী বন্ধুগণ তাদের নিজেদের প্রকাশনী থেকে আকিদার কিতাবে নকল করেছেন। সেই সাথে শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়াও উক্ত কাশফের ঘটনাটি নকল করেছেন মর্মে পরিস্কার জানিয়েছেন।
বুঝা গেল, কাশফ ও ইলহাম বযুর্গানে দ্বীনের কারামত। এর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা তাদের অনেক সময় অনেক গায়েবের বিষয়ে জানান।
সুতরাং আমভাবে সকল কাশফ ও কারামত সম্পৃক্ত ঘটনাকে বাতিল বলার সুযোগ নেই। আবার সব ঘটনাকে সঠিক বলারও সুযোগ নেই।
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আমার লেখা “ফাযায়েলে আমল ও উলামায়ে দেওবন্দঃ আপত্তি ও খণ্ডন” বইটিতে পড়তে পারেন।
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।
ইমেইল– ahlehaqmedia2014@gmail.com