প্রচ্ছদ / ইতিহাস ও ঐতিহ্য / মুয়াবিয়া রাঃ মুআল্লাফাতে কুলূবের অন্তর্ভূক্ত ছিলেন?

মুয়াবিয়া রাঃ মুআল্লাফাতে কুলূবের অন্তর্ভূক্ত ছিলেন?

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

মুআল্লাফাতে কুলূব বলা হয়, ইসলামের শুরু যুগে নতুন মুসলমান বা এখনো মুসলমান হননি এমন প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ইসলামে আকৃষ্ট করার জন্য নবীজীর পক্ষ থেকে অনুদান প্রদানকে বলা হয়।

আসলে মুআল্লাফাতে কুলুব হল, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকে বিশেষ ইনআম। বিশেষ হাদিয়া। এটা কোন দোষণীয় বিষয় নয়।

মক্কা বিজয়ের পর মক্কার অনেক বড় বড় সর্দার ও নেতারা ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হন। তখন নবীজী তাদের তা’লীফে কুলূব তথা মন আকৃষ্টি করণার্থে বিশেষ হাদিয়া তোহফা প্রদান করেন।

এর মাধ্যমে নও মুসলিমরা এতে আরো বেশি করে ইসলামের প্রতি আকর্ষিত হন। তাদের সম্মান করা হয়। এর মাধ্যমে ইসলামের অনেক উপকার হয়।

বনু উমাইয়ার বেশ কিছু ব্যক্তি সেই মুআল্লাফাতে কুলুবের অন্তর্ভূক্ত ছিলেন। এর মাঝে আবু সুফিয়ান রাঃ, ইয়াযিদ বিন আবি সুুফিয়ান রাঃ এবং মুয়াবিয়া রাঃ এর নামও বলা হয়।

এক নাম্বার বিষয়তো হল, যদি মুয়াবিয়া রাঃ মুআল্লাফাতে কুলুবের অন্তর্ভূক্ত হয়েও থাকেন, তবু এটা কোন দোষনীয় বিষয় নয়। কারণ, এটা নবীজীর পক্ষ থেকে বিশেষ হাদিয়া। এটা গ্রহণে অপমান বা দোষণীয় হবার কিছুই নেই।

তবে মূল কথা হল, হযরত মুয়াবিয়া রাঃ মুআল্লাফাতে কুলুবের অন্তর্ভূক্তই ছিলেন না।

কারণ, বিশুদ্ধ কওল অনুপাতে তিনি মক্কা বিজয়ের আগেই মুসলমান হয়ে গিয়েছিলেন।

ইবনে হাজার আসকালানী রহঃ লিখেন:

معاوية ابن أبي سفيان صخر ابن حرب ابن أمية الأموي أبو عبد الرحمن الخليفة صحابي أسلم قبل الفتح وكتب الوحي

মুয়াবিয়া বিন আবি সুফিয়ান। খলীফা। সাহাবী। তিনি মক্কা বিজয়ের আগেই ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি ওহী লেখক ছিলেন। [তাকরীবুত তাহযীব-১/৫৩৭, রাবী নং-৬৭৪৪]

ইবনে আছীর জাযারী রহঃ এনেছেন:

إنه أسلم عام القضية، وَإِنه لقي رَسُول اللَّهِ صلى اللَّه عَلَيْهِ وسلم مسلما وكتم إسلامه من أبيه وأمه

মুয়াবিয়া রাঃ উমরাতুল কাযা এর সময় ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে মুসলমান অবস্থায় সাক্ষাৎ করেন। তিনি তার ইসলাম গ্রহণকে পিতা মাতা থেকে লুকিয়ে রাখেন। [উসদুল গাবাহ-৫/২০১, ৪/৪৩৩, তাহযীবুল আসমা ওয়াল লুগাত-২/১০১, রাবী নং-৫৮৮, আলইকদুস সামীন ফী তারিখি বালাদিল আমীন-৬/৯১, রাবী নং-২৪৭৮]

ইমাম কুরতুবী রহঃ লিখেন:

وَقَدْ عُدَّ فِي الْمُؤَلَّفَةِ قُلُوبُهُمْ مُعَاوِيَةُ وَأَبُوهُ أَبُو سُفْيَانَ بْنُ حَرْبٍ. أَمَّا مُعَاوِيَةُ فَبَعِيدٌ أَنْ يَكُونَ مِنْهُمْ، فَكَيْفَ يَكُونُ مِنْهُمْ وَقَدِ ائْتَمَنَهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى وَحْيِ اللَّهِ وَقِرَاءَتِهِ وَخَلَطَهُ بِنَفْسِهِ

মুআল্লাফাতে কুলূবের মাঝে মুয়াবিয়া রাঃ ও তার পিতা আবু সুফিয়ান রাঃ কে গণ্য করা হয়। অথচ মুয়াবিয়া রাঃ এর ক্ষেত্রে তা খুবই দূরবর্তী বিষয় যে, তিনি মুআল্লাফাতে কুলূবের অন্তর্ভূক্ত। তিনি কিভাবে মুআল্লাফাতের অন্তর্ভূক্ত হবেন? অথচ তার উপর নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওহী লেখা এবং পঠনের ব্যাপারে আস্থা রেখেছেন। এ বিষয়ে তাকে নিজের সাথে সম্পৃক্ত করেছেন। [তাফসীরে কুরতুবী-৮/১৮১, সূরা তাওবা, আয়াত নং-৬০ এর তাফসীর]

এখানে একটি বিষয় লক্ষ্যণীয় হল, মুআল্লাফাতে কুলুব বলে বিদ্রুপ শুধু বনু উমাইয়ার সাহাবীদের ক্ষেত্রেই করা হয়। অথচ মুআল্লাফাতে কুলুবের অন্তর্ভূক্ত এমন অনেক গোত্রের সাহাবীই ছিলেন। যেমন বনু আসাদ কবীলার হযরত খাদীজা রাঃ এর ভ্রাতুস্পুত্র হাকীম বিন হাযাম রাঃ, হযরত আলী রাঃ এর চাচাতো ভাই আবু সুফিয়ান বিন হারেছ বিন আব্দুল মুত্তালিব হাশেমী রাঃ ও মুআল্লাফাতে কুলূবের অন্তর্ভূক্ত।

তাহলে শুধুমাত্র বনু উমাইয়াকে মুআল্লাফাতে কুলূব বলে বিদ্রুপ করার মানে কি? এটা সংকীর্ণ মনস্কতা ছাড়া আর কী হতে পারে?

এ বিষয়ে আরো পড়ুন:

মুয়াবিয়া রাঃ বাগী বা বিদ্রোহী হবার কারণে ফাসিক ও জাহান্নামী?

হযরত মুয়াবিয়া রাঃ এর জন্য হযরত উসমান রাঃ এর খুনের কিসাসের দাবি করা কি অন্যায় ছিল?

প্রসঙ্গ আমীরে মুয়াবিয়া রাঃ ইতিহাসের ইতিহাস পর্যালোচনা

0Shares

আরও জানুন

কুরআনে আউজুবিল্লাহ ও পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের কথা নেই?

প্রশ্ন আস্সালামু আলাইকুম। ‍হুজুর, আমাদের এক ভাই বলেন কুরআন পাকে নাকি আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *