প্রশ্ন
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, নাম – মুহাম্মাদ আকিব আনোয়ার রাহিন
ঠিকানা – টিলাগড়, সিলেট, বাংলাদেশ
শিয়া সম্প্রদায়ের লোকেরা হযরত মুয়াবিয়া (রাঃ) সম্পর্কে নিচের দুইটি বর্ণনা উল্লেখ করে ।
حدثنا يوسف بن موسى وأبو موسى إسحاق الفروي، قالا : حدثنا جرير بن عبد الحميد، حدثنا إسماعيل والأعمش، عن الحسن، قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : “إذا رأيتم معاوية على منبري فاقتلوه”. فتركوا أمره فلم يفلحوا ولم ينجحوا.
অর্থ: হযরত হাসান বসরী (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, “যখন তোমরা মুয়াবিয়াকে আমার মিম্বরে উঠতে দেখবে, তখন তাকে কতল করে দিবে।” – আনসাবুল আশরাফ (৫/১২৮)
حدثني إبراهيم بن العلاف البصري قال، سمعت سلاماً أبا المنذر يقول: قال عاصم بن بهدلة حدثني زر بن حبيش عن عبد الله بن مسعود قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : “إذا رأيتم معاوية بن أبي سفيان يخطب على المنبر فاضربوا عنقه“.
অর্থ: হযরত আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ صلَّى الله عليه وسلَّم বলেছেন, “যখন তোমরা মুয়াবিয়াকে আমার মিম্বরে ভাষণ দিতে দেখবে, তখন তার গর্দান মেরে দিবে।” [আনসাবুল আশরাফ (৫/১৩০)]
শিয়া সম্প্রদায়ের লোকেরা এইসব বর্ণনা কে সহিহ বলে । প্রশ্ন হচ্ছে, এইসব বর্ণনা কি সহিহ? নাকি জাল? ইমামদের মতামত কি?
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
আনসাবুল আশরাফসহ আরো কিছু গ্রন্থে এরকম বর্ণনা পাওয়া যায়। কিন্তু তা সনদের বিচারে ও যৌক্তিকতার নিরিখে জাল ও বানোয়াট হিসেবেই প্রমাণিত। এমন কোন হাদীসের বিশুদ্ধতার প্রমাণ নেই।
ইমাম বুখারী রহঃ তার কিতাবে এনেছেন:
وهذا مدخول لم يثبت،…… وهذا واه (التاريخ الأوسط لامام البخارى، مكتبة دار التراث – حلب , القاهرة، رقم-595-596، 1/135، تاريخ الصغير، طبع اول، قديم اله آباد-68-69)
বর্ণনায় উক্ত শব্দ জোরপূর্বক প্রবেশ করানো হয়েছে। যা প্রমাণিত হতে পারেনি। আরো বলেছেন: এ বর্ণনা ভিত্তিহীন। [আত তারীখুল আওসাত, ইমাম বুখারী রহঃ কৃত-৬৮-৬৯]
ইমাম বুখারী রহঃ আরো লিখেছেন:
قَالَ أَبُو بكر بن عَيَّاش عَن الْأَعْمَش أَنه قَالَ نَسْتَغْفِر الله من أَشْيَاء كُنَّا نرويها على وَجه التَّعَجُّب اتَّخَذُوهَا دينا وَقد أدْرك أَصْحَاب النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم مُعَاوِيَة أَمِيرا فِي زمَان عمر وَبعد ذَلِك عشر سِنِين فَلم يقم إِلَيْهِ أحد فيقتله وَهَذَا مِمَّا يدل على هَذِه الْأَحَادِيث أَن لَيْسَ لَهَا أصُول وَلَا يثبت عَن النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم خَبره على هَذَا النَّحْو فِي أحد من أَصْحَاب النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم (التاريخ الأوسط لامام البخارى، مكتبة دار التراث – حلب , القاهرة، رقم-599-600، 1/136)
আবু বকর বিন আইয়্যাশ রহঃ হযরত আ’মাশ রহঃ থেকে বর্ণনা করেন। হযরত আ’মাশ বলেছেন: ‘আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই! যেসব বর্ণনাকে আমরা আশ্চর্য বিষয় হিসেবে বর্ণনা করতাম, সেসব বিষয়কে দেখি এখন লোকেরা দ্বীন বানিয়ে বসেছে। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবাগণ হযরত উমর রাঃ এর সময়ে এবং পরে দশ বছর মুয়াবিয়া রাঃ কে আমীর হিসেবে পেয়েছে। কিন্তু কোন সাহাবীতো তাঁকে হত্যা করতে দাঁড়ায়নি।
যা প্রমাণ করে এসব হাদীসের তথা ‘মুয়াবিয়া রাঃ কে আমীর হতে দেখলে হত্যা কর’ সংক্রান্ত বর্ণনার কোন ভিত্তি নেই। সেইসাথে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ ধরণের কোন বর্ণনা কোন সাহাবী থেকে প্রমাণিত নয়। [তারীখুল আওসাত, ইমাম বুখারীকৃত-১/১৩৬]
ইমাম ইবনে কাসীর রহঃ লিখেছেন:
وَهَذَا الْحَدِيثُ كَذِبٌ بِلَا شَكٍّ، وَلَوْ كَانَ صَحِيحًا لَبَادَرَ الصَّحَابَةُ إِلَى فِعْلِ ذَلِكَ ; لِأَنَّهُمْ كَانُوا لَا تَأْخُذُهُمْ فِي اللَّهِ لَوْمَةَ لَائِمٍ (البداية والنهاية، ترجمة معاوي رضى الله عنه، دار هجر للطباعة والنشر والتوزيع والإعلان-11/434، دار إحياء التراث العربي-8/141، مطبعة السعادة – القاهرة-8/133)
এ হাদীস সন্দেহাতীতভাবে মিথ্যা। যদি এটি সহীহ হতো, তাহলে সাহাবাগণ এর উপর আমল করতে প্রতিযোগিতা করতেন। কেননা, সাহাবাগণ রাঃ দ্বীনের বিষয়ে কোন দোষারোপকারীর দোষারোপকে ভয় পেতেন না। [আলবিদায়া ওয়াননিহায়া, তরজমা হযরত মুয়াবিয়া বিন আবী সুফিয়ান-৮/১৩৩]
সুতরাং বুঝা গেল এসব বর্ণনা বানোয়াট ও জাল। এতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই।
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তা’লীমুল ইসলাম ইনস্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া ইসলামিয়া দারুল হক লালবাগ ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা: কাসিমুল উলুম আলইসলামিয়া, সালেহপুর আমীনবাজার ঢাকা।
পরিচালক: শুকুন্দী ঝালখালী তা’লীমুস সুন্নাহ দারুল উলুম মাদরাসা, মনোহরদী নরসিংদী।
শাইখুল হাদীস: জামিয়া ইসলামিয়া আরাবিয়া, সনমানিয়া, কাপাসিয়া, গাজীপুর।
ইমেইল– ahlehaqmedia2014@gmail.com