প্রচ্ছদ / আধুনিক মাসায়েল / সিগনেচার মাইন্ড ইনস্টিটিউটে এফিলিয়েট মার্কেটিং এবং প্রোডাক্ট প্রমোট করে কমিশন নেয়ার হুকুম কী?

সিগনেচার মাইন্ড ইনস্টিটিউটে এফিলিয়েট মার্কেটিং এবং প্রোডাক্ট প্রমোট করে কমিশন নেয়ার হুকুম কী?

প্রশ্ন

আসসালামু আলাইকুম।

আমার নাম আজিজুল্লাহ।

আমি চট্টগ্রাম থেকে বলছি।

হযরত আমার একটি প্রশ্ন ছিল, আশা করি উত্তর পাব।

আমার প্রশ্ন হচ্ছে আমি ফ্রিল্যান্সিং শেখার জন্য সিগনেচার মাইন্ড ইনস্টিটিউট নামে একটি প্রতিষ্ঠানে এডমিশন নেই, ওখানে এডমিশন নেওয়ার পরে জানতে পারি যে তাদের ফ্রীলান্সিং ছাড়াও আরো দুইটি সিস্টেম রয়েছে। যে সিস্টেমগুলোর কথা আমাকে আগে জানানো হয়নি,আমার কাছ থেকে গোপন করা হয়েছে।

সিস্টেমগুলো হচ্ছে,

(১) এফিলিয়েট মার্কেটিং:- মানে কাউকে ইনভাইট করে তাদের প্রতিষ্ঠানে জয়েন করা নো। যদি কাউকে তাদের প্রতিষ্ঠানের জয়েন করাতে পারি তাহলে ওখান থেকে সামান্য কিছু টাকা আমাকে দিবেন।

শর্ত হচ্ছে যেকোনোভাবে বুঝিয়ে-সুজিয়ে মানুষকে তাদের প্রতিষ্ঠানের অ্যাডমিশন করাতে হবে।

(২) প্রোডাক্ট প্রমোট:- এটা হচ্ছে তাদের নিজস্ব কিছু প্রোডাক্ট আছে, ওই প্রোডাক্টগুলো সেল করে দিতে পারলে ওখান থেকে কিছু টাকা দিবে।

আমি এলাকার একটি হুজুরের হুজুরের কাছ থেকে জিজ্ঞেস করলে উনি জানেন যে এই দুইটা সিস্টেমের মধ্যে একটাও জায়েজ নেই, দুইটাই হারাম। এখন আপনার মতামত আশা করছি।

জাযাকাল্লাহ হযরত!

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

যদি বিবরণ তাই হয়, যা প্রশ্নে বর্ণিত হয়েছে। আর কোন নাজায়েজ বিষয় সম্পর্কিত না থাকে। তাহলে হুকুম হল,

উক্ত প্রতিষ্ঠানের ফ্রিল্যান্স এর প্রশিক্ষণ কার্যকরী ও উপকারী হয়ে থাকে, তাহলে উপরোক্ত প্রতিষ্ঠানে অন্য কাউকে এডমিশন করিয়ে প্রতিষ্ঠান থেকে নির্ধারিত হারে টাকা নেয়া জায়েজ আছে।

তবে অবশ্যই তার পরিমাণ নির্ধারিত হতে হবে।

সেই সাথে উক্ত প্রতিষ্ঠানের পণ্য যদি গুণগত মানে উত্তীর্ণ ও মানসম্মত হয়। তাহলে ধোঁকা, প্রতারণা ও মিথ্যার আশ্রয় না নিয়ে পণ্য বিক্রির মাধ্যম হয়ে প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থ উপার্জন বৈধ হবে।

এক্ষেত্রেও কোন পণ্য বিক্রি করে দিতে পারলে কত টাকা পাবে তা নির্ধারিত থাকতে হবে।

তবে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম বা পণ্য যদি মানসম্মত না হয়, তারপরও অর্থ কামানোর জন্য কথার জালে মানুষকে আটকে তাতে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করা হলে এ উপার্জন হালাল হবে না।

وَلَمْ يَرَ ابْنُ سِيرِينَ، وَعَطَاءٌ، وَإِبْرَاهِيمُ، وَالحَسَنُ بِأَجْرِ السِّمْسَارِ بَأْسًا وَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ: ” لاَ بَأْسَ أَنْ يَقُولَ: بِعْ هَذَا الثَّوْبَ، فَمَا زَادَ عَلَى كَذَا وَكَذَا، فَهُوَ لَكَ ” وَقَالَ ابْنُ سِيرِينَ: ” إِذَا قَالَ: بِعْهُ بِكَذَا، فَمَا كَانَ مِنْ رِبْحٍ فَهُوَ لَكَ، أَوْ بَيْنِي وَبَيْنَكَ، فَلاَ بَأْسَ بِهِ ” وَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «المُسْلِمُونَ عِنْدَ شُرُوطِهِمْ»

ইবনু সীরীন, আতা, ইবরাহীম ও হাসান (রহ.) দালালীর মজুরীতে কোন দোষ মনে করেননি। ইবনু ‘আববাস (রাঃ) বলেন, যদি কেউ বলে যে, তুমি এ কাপড়টি বিক্রি করে দাও। এতো এতো এর উপর যা বেশী হয় তা তোমার, এতে কোন দোষ নেই। ইবনু সীরীন (রহ.) বলেন, যদি কেউ বলে যে, এটা এত এত দামে বিক্রি করে দাও, লাভ যা হবে, তা তোমার, অথবা তা তোমার ও আমার মধ্যে সমান হারে ভাগ হবে, তবে এতে কোন দোষ নেই। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মুসলিমগণ তাদের পরস্পরের শর্তানুযায়ী কাজ করবে। [সহীহ বুখারী-১/৩০৩]

سئل محمد بن مسلمة عن أجرة السمسار، فقال: أرجوا أنه لا بأس به،….. لكثرة التعامل (رد المحتار، كتاب الإجارة، مطلب فى اجرة الدلال-9/87، تاتارخانية-15/137، رقم-22462

وَلَا تَأْكُلُوا أَمْوَالَكُم بَيْنَكُم بِالْبَاطِلِ وَتُدْلُوا بِهَا إِلَى الْحُكَّامِ لِتَأْكُلُوا فَرِيقًا مِّنْ أَمْوَالِ النَّاسِ بِالْإِثْمِ وَأَنتُمْ تَعْلَمُونَ [٢:١٨٨]

তোমরা অন্যায়ভাবে একে অপরের সম্পদ ভোগ করো না। এবং জনগণের সম্পদের কিয়দংশ জেনে-শুনে পাপ পন্থায় আত্নসাৎ করার উদ্দেশে শাসন কতৃপক্ষের হাতেও তুলে দিও না। [সূরা বাকারা-১৮৮]

لَّعْنَتَ اللَّهِ عَلَى الْكَاذِبِينَ [٣:٦١

তাদের প্রতি আল্লাহর অভিসম্পাত করি যারা মিথ্যাবাদী। {সূর আলেইমরান-৬১}

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ غَشَّنَا فَلَيْسَ مِنَّا

হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ যে ধোঁকা দেয়, সে আমার উম্মতের অন্তর্ভূক্ত নয়। {মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-২৩১৪৭, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৬৪, সুনানে দারেমী, হাদীস নং-২৫৮৩, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-২২২৫, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৪৯০৫}

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তা’লীমুল ইসলাম ইনস্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

ইমেইল– ahlehaqmedia201[email protected]

0Shares

আরও জানুন

ইমামের সামনের সুতরা কি মাসবূক মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট?

প্রশ্ন ইমামের সুতরা মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট কি না? এবং ইমামের সুতরা মসবুক ব্যাক্তির জন্য যথেষ্ট …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *