প্রচ্ছদ / খাদ্য-দ্রব্য / সমুদ্রের বিষমুক্ত প্রাণী খাওয়ার হুকুম কী? হানাফী অনুসারী শাফেয়ী মাযহাবের মাসআলার উপর করতে পারবে না কেন?

সমুদ্রের বিষমুক্ত প্রাণী খাওয়ার হুকুম কী? হানাফী অনুসারী শাফেয়ী মাযহাবের মাসআলার উপর করতে পারবে না কেন?

প্রশ্ন

আসসালামু আলাইকুম,

আমার নাম ইমরান।

সামুদ্রের বিষ মুক্ত সব প্রাণী খাওয়া কি হালাল?

একজন বক্তা বললেন বিষ মুক্ত সব প্রাণী খাওয়াই হালাল। পরে আমি অনলাইনে একটু ঘাঁটাঘাটি করে দেখলাম অন্য মাজহাবে এটার অনুমোদন আছে এবং সহী দলীল ও আছে।

এখন আমার প্রশ্ন হল আমাদের মাজহাবে মাছ ব্যতিত অন্য প্রাণী না খাওয়ার কোন সহীহ দলীল আছে?

থাকলে একটু দিলে উপকৃত হতাম।

আর অন্য মাজহাবে যেহেতু মাছ ব্যতিত অন্য বিষ মুক্ত প্রাণী খাওয়া হালাল রয়েছে এবং তার সহীহ দলীল ও রয়েছে তাহলে আমি হানাফী মাজহাব পালন করে তা কেন খাইতে পারবনা,  তা জানালেও অনেক উপকার হত।

জাযাকাল্লাহ।

 

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

আমরা মাযহাব অনুসরণ এজন্যই করি যে, যেহেতু আমাদের ইজতিহাদী যোগ্যতা নেই। ইজতিহাদী যোগ্যতার মাঝে রয়েছে, কোন আমলটি রহিত আর কোন আমলটি পালনীয় তা নির্ধারণ করা। তাছাড়া নুসূসে শরইয়্যার হাকীকী অর্থ বুঝতে সক্ষম হওয়া।

যেহেতু তা বের করা ও বুঝার জন্য যেসব যোগ্যতা দরকার। তা আমাদের মাঝে নেই, তাই আমরা আমাদের কাছে যে মাযহাবের আমলগুলো সুন্নাহ ভিত্তিক হিসেবে আমাদের কাছে পৌঁছেছে, তা আমাদের জন্য মানা জরুরী।

এর বিপরীত আমলগুলো যেসব আমলগুলো আমলী সূত্রে পৌঁছেছে, তা সেখানকার মানুষদের জন্য মানা জরুরী।

যেমন বাংলাদেশে হানাফী মাযহাব ইসলাম আগমণের সাথে সাথে পৌঁছেছে। তেমনি শাফেয়ী মাযহাব মালয়েশিয়াতে প্রসিদ্ধ।

সেই হিসেবে মালয়েশিয়াতে তাদের মাযহাব অনুযায়ী মুফতীগণ ফাতওয়া প্রদান করবেন। আর সেই ফাতওয়া অনুপাতে তাদের দেশের লোকজন আমল করবে। আর আমাদের দেশের মুফতীগণ হানাফী মাযহাব অনুপাতে ফাতওয়া প্রদান করবে। আর সেই ফাতওয়া অনুপাতে এ দেশের মানুষের আমল করা জরুরী।

তাই বাংলাদেশে থেকে অন্য দেশে প্রচলিত মাযহাবের মুফতীর ফাতওয়া গ্রহণ উলামাগণের ইজমা মতে নিষিদ্ধ।

এ বিষয়ে আরব বিশ্বের প্রসিদ্ধ আলেম শায়েখ মুহাম্মদ বিন সালেহ আল উসাইমিন রহঃ বলেন,

فالعامي يجب عليه أن يقلد علماء بلده الذين يثق بهم، وقد ذكر هذا شيخنا عبد الرحمن بن سعدي رحمه الله، وقال: “العامة لا يمكن أن يقلدوا علماء من خارج بلدهم؛ لأن هذا يؤدي إلى الفوضى والنزاع”

অর্থ : সাধারণ মানুষের জন্য আবশ্যক হল নিজ দেশের আলিমদের তাকলীদ করা। এই বিষয়টি আমাদের উস্তায আব্দুর রহমান ইবনে সা‘দী রাহ. বলে গেছেন। তিনি বলতেন : সাধারণ মানুষের জন্য অনুচিত নিজ দেশের আলিমদের পরিবর্তে অন্য দেশের আলিমদের তাকলীদ বা অনুসরণ করা। কেননা এর দ্বারা লাগামহীনতা ও বিবাদ-বিসংবাদের সৃষ্টি হয়। [লিকাআতুল বাবিল মাফতুহ ১৯/৩২]

আরেক স্থানে বলেন,

…لأن فرضك أنت هو التقليد، وأحق من تقلد علماؤك، ولو قلدت من كان خارج بلادك أدى ذلك إلى الفوضى في أمر ليس عليه دليل شرعي… فالعامي يجب عليه أن يقلد علماء بلده الذين يثق بهم.

অর্থ : …নিশ্চয়ই তোমার কর্তব্য হল তাকলীদ করা। আর তোমার তাকলীদের সবচে বড় হকদার হল তোমার (দেশের) আলিমগণ। যদি তুমি তা না করে বাইরের দেশের আলিমদের তাকলীদ কর তবে তা লাগামহীনতা ও বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করবে। সুতরাং সাধারণ মানুষের কর্তব্য নিজ দেশের আলিমদের অনুসরণ করা। [লিকাআতুল বাবিল মাফতুহ ১৯/৩২, ইবনে উসাইমিনকৃত]

বিবাদ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হারাম। তাই নিজ দেশে প্রচলিত সুন্নাহ ভিত্তিক আমল বর্জন করে অন্য দেশে প্রচলিত আমল চালু করার প্রচেষ্টা করা নিষিদ্ধ। তাই হানাফী মাযহাব অধ্যুষিত বাংলাদেশে থেকে ভিন্ন দেশে প্রচলিত মাযহাব অনুযায়ী আমলের চেষ্টা করা সঠিক নয়। বরং ফিতনা সৃষ্টি করা। তাই তা নিষেধ।

ويحرم عليهم الخبائث

খাবায়েছকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। [সূরা আরাফ-১৫৭]

সমুদ্রের মাছ ছাড়া বাকি প্রাণীগুলো হানাফী ফক্বহীগণের মতে খাবায়েছের অন্তর্ভূক্ত। তাই তা ভক্ষণ করা নিষিদ্ধ।

قال: ولايؤكل من حيوان الماء إلا السمك، قال مالك – رحمه الله – وجماعة من أهل العلم بإطلاق جميع ما في البحر، واستثنى بعضهم الخنزير والكلب والإنسان، وعن الشافعي – رحمه الله -: أنه أطلق ذلك كله، والخلاف في الأكل والبيع واحد … ولنا قوله تعالى: {ويحرم عليهم الخبائث} [الأعراف: 157]، وما سوى السمك خبيث، ونهى رسول الله عليه الصلاة والسلام عن دواء يتخذ فيه الضفدع ونهى عن بيع السرطان“.

(قال: ولايؤكل من حيوان الماء إلا السمك) ش: أي قال القدوري – رحمه الله – في ” مختصره “: وقال الكرخي – رحمه الله-: كره أصحابنا كل ما في البحر إلا السمك خاصةً؛ فإنه حلال أكله إلا ما طفى منه فإنهم كرهوه. وقال شيخ الإسلام خواهر زاده: ويكره أكل ما سوى السمك من دواب البحر عندنا كالسرطان، والسلحفاة، والضفدع وخنزير الماء”. (البناية شرح الهداية  (11 / 604،  کتاب الذبائح، فصل فیما یحل اکله ومالایحل، ط: دارالکتب العلمیة، بیروت، لبنان)

) ويحرم عليهم الخبائث) [الأعراف: 157] والضفدع والسرطان والحية ونحوها من الخبائث”.(بدائع الصنائع (5 / 35)  کتاب الذبائح والصیود،  الماکول وغیر الماکول من الحیوانات، ط: سعید) 

الحيوان في الأصل نوعان: نوع يعيش في البحر، ونوع يعيش في البر، أما الذي يعيش في البحر فجميع ما في البحر من الحيوان يحرم أكله إلا السمك خاصةً؛ فإنه يحل أكله إلا ما طفا منه، وأما الذي يعيش في البر فأنواع ثلاثة: ما ليس له دم أصلاً، وما ليس له دم سائل، وما له دم سائل، فما لا دم له مثل الجراد والزنبور والذباب والعنكبوت والخنفساء والعقرب والببغاء ونحوها لايحل أكله إلا الجراد خاصةً، وكذلك ما ليس له دم سائل مثل الحية والوزغ وسام أبرص وجميع الحشرات وهو أم الأرض من الفأر والجراد والقنافذ والضب واليربوع وابن عرس ونحوها، ولا خلاف في حرمة هذه الأشياء إلا في الضب؛ فإنه حلال عند الشافعي رحمه الله تعالى”. (الفتاوى الهندية، كتاب الكراهية،  الباب الثاني في بيان ما يؤكل من الحيوان وما لايؤكل -5/289)

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক ও প্রধান মুফতী-তা’লীমুল ইসলাম ইনস্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

ইমেইল[email protected]

0Shares

আরও জানুন

ইমামের সামনের সুতরা কি মাসবূক মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট?

প্রশ্ন ইমামের সুতরা মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট কি না? এবং ইমামের সুতরা মসবুক ব্যাক্তির জন্য যথেষ্ট …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *