প্রশ্ন
আসসালামুআলাইকুম,হুজুর।
আমি মোঃ শাহিন আলম। বাড়ি সিংড়া,নাটোর।
২০১৫ সালের প্রথম দিকে পারিবারিকভাবে একটা মেয়ের সাথে আমার কাবিন করে রাখা হয়।
কাবিন হয় মেয়ের বাড়িতে। অনেক লোকজনের উপস্থিতিতে তা সম্পন্ন হয়। আমার কাছ থেকে সাইন নেয়া হয় ও পরে কনের কাছ থেকে সাইন নেয়া হয়।
কাবিন করার ৪-৫ মাস পরে ইজাব কবুলের মাধ্যমে আমাদের বিয়ে হয়।
ইজাব- কবুলের সময় আমার কিছু দেনমোহর বাকি ছিলো,বিয়ের অনুষ্ঠানে আমি এবং আমার স্ত্রী আলাদাভাবে অনেক স্বর্ণালংকার উপহার হিসেবে পাই,আলাদা ভাবে। অতিথিদের কাছ হতে।
আমার স্ত্রীরগুলো তার কাছেই থাকে এবং আমারগুলোও তাকে দিয়ে দেই দেনমোহর হিসেবে।
আমার বাকি দেনমোহর এর চেয়ে যে স্বর্ণালংকার স্ত্রীকে দেই তার মূল্য অনেক বেশি ছিলো। বিয়ের কিছুদিন পরে ব্যবসায় লস এবং আমার মায়ের ক্যান্সারের কারনে আমাদের আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ হয়।
তখন থেকে আমার শ্বশুর বাড়ির লোকজন আমার স্ত্রীকে চাপ দিতে থাকে,আমাকে ছেড়ে দেবার জন্য, আমার স্ত্রীকে ত্যাজ্য করার হুমকি দেয়,এবং আমার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে শ্বশুর বাড়ির লোকজন। তারপরও আমার স্ত্রী আমার কাছেই থাকে। আলহামদুলিল্লাহ,আমাদের দাম্পত্য জীবন ছিলো খুবই ভালোবাসাময়।
কিছুদিন আগে আমার স্ত্রী তার বাড়ি যায়। কয়েক দিন পর শুনতে পাই, আমার স্ত্রী আমাকে তালাক দিয়েছে, কাবিননামার ১৮ নং ধারার ক্ষমতাবলে।
তালাকের নোটিশে লেখা ছিল যে, কাবিননামার ১৮/১৯ নং ধারাবলে তালাকে তাফয়ীজ হিসেবে স্বামীকে তিন তালাক প্রদান করলাম।
আমি স্ত্রীর কাছ থেকে জেনেছি যে, তাকে জোরপূর্বক তালাকনামায় সাইন করানো হয়।
আমি তালাকের নোটিশ পাইনি বা সই করিনি। কাবিনের সময় (ইজাব,কবুলের ৪/৫ মাস আগে), ১৮ নং ধারা সম্পর্কে কাজী সাহেব আমাকে কিছু বলেনি। আমি পরে শুনেছি,আমার স্ত্রী বা সাক্ষীরাও এ বিষয়ে কিছু শোনেনি।
সম্ভবত কাজী সাহেব, পরে এটি পূরণ করে। আমার এক আলেম বন্ধু আমাকে বলে “”কাবিন করার সময় তোমার স্ত্রীর তুমি স্বামী ছিলে না, তাই তোমার নিজেরই, স্ত্রীকে তালাক দেবার অধিকার ছিলো না, তুমি তখন (ইজাব কবুলের ৫ মাস আগে) এই অধিকার তাকে দিলেও কাজ হতো না, আর তুমিতো জানোই না (তালাকের ক্ষমতা দেবার কথা), তাই তালাক হয়নি।””এই কথা, আমার স্ত্রীকে বললে, সে বলে “এক মৌলভীর কাছে সে শুনেছে, তালাক হয়ে গেছে।” এখন আমার
প্রশ্ন ১। আমাদের কি তালাক হয়েছে?
২। আমার দেনমোহর কি আদায় হয়েছে?
দয়া করে,উত্তর দেবেন।
আমি আমার এই ঘটনার বিস্তারিত পয়েন্ট গুলো লিখছি।
১ আমার কাবিন নামা বিয়ের অর্থাৎ ইজাব কবুলের ৪/৫ আগে লেখা হয়।
২ কাবিন নামা লেখার সময় আমি আমার স্ত্রীকে (যদিও তখন সে আমার ইচ্ছে ছিল না) তালাক দেওয়ার অধিকার আছে কিনা এ বিষয়ে কেউ আমাকে প্রশ্ন করেনি।
৩ পরবর্তীতে আমি আমার স্ত্রী এবং কাবিন নামা লেখার সময় উপস্থিত ছিলেন তাদের কাছ থেকে শুনেছি কাবিন নামার 17 এবং 18 নং ধারা সম্বন্ধে কেউ কিছু শুনেনি।
৪ সম্ভবত কাজী সাহেব কাবিননামায় সই নেবার পরে ১৭ এবং ১৮ নং ধারা পূরণ করে। বা আমার শ্বশুর অনেক পরে এই ধারা গুলো পূরণ করে নেয়।
৪ বিয়ের পর আমি আমার স্ত্রীকে তালাক দেবার কোন অধিকার দেইনি।
৫ যখন আমার স্ত্রী স্বামী তালাক করে আমি তার কোনো নোটিশ পাইনি বা তালাকের কাগজে আমি সই করেনি।
৬ আমার কাছে কাবিননামা নেই!
এখন এই বিষয়ে আমাকে সঠিক মাসআলা দিয়ে সাহায্য করলে চির কৃতজ্ঞ থাকব।
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
আপনার উপরোক্ত বিবরণ অনুপাতে আপনার স্ত্রী তালাকপ্রাপ্তা হয়নি। অনেকগুলো কারণেই এ তালাক সম্পন্ন হয়নি।
১- তালাকের অধিকার স্ত্রীকে প্রদানই করা হয়নি। কাবিননামায় সাইন নেবার পর কাজী কর্তৃক তালাক প্রদানের অধিকার প্রদানের দ্বারা তালাকের অধিকার প্রদান হয় না।
২-বর কনের উপস্থিতিতে শুধুমাত্র কাগজে সাইন করার দ্বারা বিবাহ সম্পন্ন হয় না। যেহেতু বিবাহই হয়নি, তাই কাবিননামা হিসেবে তালাকের অধিকার দেবার সুযোগই নেই।
৩- জোরপূর্বক তালাকের কাগজে সাইন করালেই তালাক হয়ে যায় না।
৪- স্ত্রী স্বামীকে তালাক দিতে পারে না। বরং নিজের উপর তালাক পতিত করতে পারে। কিন্তু উপরোক্ত বিবরণে স্ত্রী স্বামীকে তালাক প্রদান করেছে। তাই এ তালাক হয়নি।
উপরোক্ত ৪ কারণের একটি কারণ পাওয়া গেলেই তালাক হয়নি। সুতরাং আপনার স্ত্রী আপনারই বাকি আছে। আপনার স্ত্রীকে অন্যায়ভাবে শ্বশুর শ্বাশুরীর আটকে রাখা শরয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে সম্পূর্ণরূপে নাজায়েজ ও হারাম।
স্বর্নালংকার প্রদানের সময় যদি দেনমোহর হিসেবে প্রদান বলে স্ত্রীকে দেয়া হয়ে থাকে, তাহলে তা যদি নির্ধারিত দেনমোহর পরিমাণ হয়ে থাকে, তাহলে মোহরানা আদায় হয়ে গেছে।
كُلُّ كِتَابٍ لَمْ يَكْتُبْهُ بِخَطِّهِ وَلَمْ يُمِلَّهُ بِنَفْسِهِ لَا يَقَعُ بِهِ الطَّلَاقُ إذَا لَمْ يُقِرَّ أَنَّهُ كِتَابُهُ كَذَا فِي الْمُحِيطِ (الفتاوى الهندية، كتاب الطلاق، الفصل السادس فى الطلاق بالكتابة-1/379، المحيط البرهانى، كتاب الطلاق، الفصل السادس فى ايقاع الطلاق بالكتاب-4/486، تاتارخانية، كتاب الطلاق، الفصل السادس فى ايقاع الطلاق بالكتاب-3/380)
قوله: ولا بكتابة حاضر فلو كتب تزوجتك فكتبت قبلت لم ينعقد، بحر، والأظهر أن يقول: فقالت قبلت الخ، إذا الكتابة من الطرفين بلا قول لا تكفى ولو فى الغيبة (رد المحتار، كتاب النكاح، مطلب التزوج بإرسال كتاب-4/73)
لَا يَنْعَقِدُ بِالْكِتَابَةِ مِنْ الْحَاضِرَيْنِ فَلَوْ كَتَبَ تَزَوَّجْتُك فَكَتَبَتْ قَبِلْت لَمْ يَنْعَقِدْ (البحر الرائق، كتاب النكاح-3/148)
رجل اكره بالضرب والحبس ان يكتب طلاق امرأته فلانة بنت فلان طالق لا تطلق امرأته لان الكتابة اقيمت مقام العبارة باعتبار الحاجة ولا حاجة ههنا (فتاوى قاضيخان على هامش الهندية، كتاب الطلاق، فصل فى الطلاق بالكتابة-1/472، الفتاوى الهندية-1/379، التاتارخانية-3/380
ومحله المنكوحة واهله زوج عاقل بالغ مستيقظ (الدر المختار مع رد المحتار-4/431، مجمع الانهر-2/4، النهر الفائق-2/310
وفي رد المحتار- وأنواعه ثلاثة : تفويض ، وتوكيل ، ورسالة وألفاظ التفويض ثلاثة : تخيير وأمر بيد ، ومشيئة . (رد المحتار-كتاب الطلاق، باب تفويض الطلاق-4/452
ومن بعث إلى إمرأته شيئا، فقالت: هو هدية وقال هو من المهر فالقول لوله، من غير المهيا للأكل، لأنه المملك، فكان أعرف بجهة التملك الخ (تبيين الحقائق، كتاب النكاح، باب المهر، امدادية-2/581، زكريا-2/581، هداية، كتاب النكاح، باب المهر-2/337)
المهر لا يكون إلا ما هو مال، أو مايوجب تسليم مال (تاتارخانية-4/159، رقم-583)
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক ও প্রধান মুফতী-তা’লীমুল ইসলাম ইনস্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
ইমেইল– [email protected]