প্রচ্ছদ / প্রশ্নোত্তর / মিরাস সম্পর্কিত বেশ কয়েকটি মাসআলা এবং বন্টনের মূলনীতি প্রসঙ্গে

মিরাস সম্পর্কিত বেশ কয়েকটি মাসআলা এবং বন্টনের মূলনীতি প্রসঙ্গে

প্রশ্ন

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ,

শ্রদ্ধেয় মুফতি সাহেব, দয়া করে নীচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দানে বাধিত করবেন।

প্রশ্ন:

১. জীবিত অবস্থায় যদি কেউ তার সম্পদ ওয়ারিসদের মধ্যে শরীয়তের বিধান ব্যতিরেকে তার ইচ্ছানুযায়ী কম-বেশী বন্টন করে তবে কি সেটা শরীয়তের দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য হবে? যেমন কারো কয়েকজন ছেলে-মেয়ের মধ্যে সে কাউকে হয়তো একটু বেশী পছন্দ করে বা তার বাধ্যগত তাই তাকে সম্পদের অংশ কিছুটা বেশী দিল।

২. এক ব্যক্তির স্ত্রী, মা-বাবা, ১ ভাই, ২ বোন, ২ ছেলে ও ৩ মেয়ে আছে। এমতাবস্থায় তার সম্পদের বন্টন কিভাবে হবে?

অথবা

স্ত্রী, মা-বাবা, ২ ভাই, ১ বোন ও ৩ মেয়ে আছে । এমতাবস্থায় তার সম্পদের বন্টন কিভাবে হবে??

অথবা

স্ত্রী, মা-বাবা, ২ ভাই, ৩ বোন আছে । এমতাবস্থায় তার সম্পদের বন্টন কিভাবে হবে??

অথবা

স্ত্রী, মা-বাবা ও ২ ছেলে-মেয়ে আছে । এমতাবস্থায় তার সম্পদের বন্টন কিভাবে হবে??

অথবা

স্ত্রী ও মা-বাবা আছে । এমতাবস্থায় তার সম্পদের বন্টন কিভাবে হবে??

অথবা

শুধু মা-বাবা, ২ ভাই-বোন ও ১ মেয়ে আছে । এমতাবস্থায় তার সম্পদের বন্টন কিভাবে হবে??

৩. মিরাস বন্টনের সময় কি কোন ধারাবাহিকতা অবলম্বন করতে হবে? যেমন, প্রথমে মা-বাবাকে দিতে হবে তারপর যা বাকী থাকে তা থেকে স্ত্রীকে দিতে হবে তারপর বাকী অংশ থেকে ছেলেকে বা মেয়েকে ইত্যাদি-ইত্যাদি নাকি যাকে খুশী আগে পরে দিতে পারবে?

আসলে মিরাস বন্টনের মূলনীতিটা জানালে উপকৃত হতাম। সাধারণত দেখা যায় এক-এক অবস্থায় বন্টনের নীতি এক এক রকম হয়ে থাক। তাই সহজে বুঝে আসে না।

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

প্রশ্ন করার আগে যদি কষ্ট করে আমাদের ওয়েব সাইটের মিরাস সংক্রান্ত অন্যান্য প্রশ্নোত্তরগুলো পড়ে নিতেন, তাহলে এ প্রশ্নের অনেকগুলো প্রশ্ন করার আপনার প্রয়োজন হতো না। তাই অনুরোধ থাকবে পরবর্তীতে যেকোন বিষয়ের প্রশ্ন করার আগে উক্ত বিষয়ে কোন সমাধান দেয়া আছে কি না? তা আগে দেখে নিন। তারপর যদি দেখেন সমাধান নেই, তাহলেই কেবল প্রশ্ন করুন। একই বিষয়ের একাধিক প্রশ্নের মেইল দেখা আমাদের জন্য কষ্টকর হয়ে যায়। দুঃখিত কষ্ট নিবেন না।

১ নং প্রশ্নের জবাব

ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করার আগে সুস্থ্য থাকা অবস্থায় যদি আত্মীয়দের মাঝে সম্পদ বন্টন করে যায় শরীয়তের মিরাসী পদ্ধতি অনুসরণ না করে, আর তাতে তিনি কাউকে ঠকানো বা কারো ক্ষতি সাধন ইচ্ছে না করেন, তাহলে কমবেশি করে বন্টন করলেও তা কার্যকরও হবে। সেই সাথে জায়েজও হবে। যেমন দুই ছেলের মাঝে এক ছেলে বিত্তশালী। আরেকজন গরীব। তাই লোকটি গরীব ছেলেকে বেশি সম্পদ দিল আর ধনীকে কম দিল। তাহলে এতে কোন সমস্যা নেই। এটি জায়েজ আছে।

وفى الهندية- لا بأس به اذا لم يقصد به الاضرار وان قصد به الاضرار سوىبينهم وهو المختار- (الفتاوى الهندية ٤/٣۹۱

 وفى الردالمحتار- لو وهب رجل شيأ لأولاده فى الصحة واراد بفضيل البعض على البعضز………….عن ابى حنيفة لابأس به اذا كان التفضيل لزيادة فضل له فى الدين وان كان سواء يكره(ردالمحتار )١٢/٦٠٨

তথ্যসূত্র

১-ফাতওয়া আলমগীরী-৪/৩৯১

২-ফাতওয়া শামী-১২/৬০৮

৩-ফাতহুল বারী-৫২১৪

৪-ফাইজুল বারী-৩/৩৬৮

৫-আহসানুল ফাতওয়া ৭/২৫৬

৬-ফাতওয়া রহিমীয়া ৯/৩১৪

৭-ফাতওয়া মুফতী মাহমুদ ৯/২৪৮

৮-ইমদাদুল ফাতওয়া ৩/৪৭০

৯-কেফায়াতুল মুফতী ৭/১৮০

১০-ফাতওয়ায়ে মাহমুদিয়া ১৬/৪৯৬

২ নং প্রশ্নের জবাব

এ প্রশ্নের জবাব জানার জন্য প্রথমে আপনি প্রশ্নে যেসব আত্মীয়ের কথা উল্লেখ করেছেন, তারা মৃত থেকে কতটুকু পান? কখন পান? কখন বঞ্চিত হন? এ তিনটি অবস্থা সম্পর্কে পরিস্কার ধারণা থাকতে হবে। তাহলে আপনি নিজেই কে কতটুকু পাবে তা বের করে নিতে পারবেন। নিচে কে কতটুকু কখন পায় তা উদ্ধৃত করা হল।

আপনার প্রশ্নে উল্লেখিত আত্মীয় স্বজনগণ হলেন,

১-  স্ত্রী।

২-  মা।

৩- বাবা

৪-  আপন ভাই

৫-  আপন বোন।

৬- আপন ছেলে।

৭-  আপন মেয়ে।

এবার শরীয়ত নির্ধারিত তাদের অবস্থা খেয়াল করুন

স্ত্রীর অবস্থা দুটি

১-মৃত ব্যক্তির সন্তান না থাকলে স্ত্রী পাবে পূর্ণ সম্পত্তির চার ভাগের এক ভাগ। আর সন্তান থাকলে পাবে আট ভাগের এক ভাগ।

وَلَهُنَّ الرُّبُعُ مِمَّا تَرَكْتُمْ إِن لَّمْ يَكُن لَّكُمْ وَلَدٌ ۚ فَإِن كَانَ لَكُمْ وَلَدٌ فَلَهُنَّ الثُّمُنُ مِمَّا تَرَكْتُم ۚ مِّن بَعْدِ وَصِيَّةٍ تُوصُونَ بِهَا أَوْ دَيْنٍ ۗ [٤:١٢

স্ত্রীদের জন্যে এক-চতুর্থাংশ হবে ঐ সম্পত্তির, যা তোমরা ছেড়ে যাও যদি তোমাদের কোন সন্তান না থাকে। আর যদি তোমাদের সন্তান থাকে, তবে তাদের জন্যে হবে ঐ সম্পত্তির আট ভাগের এক ভাগ, যা তোমরা ছেড়ে যাও ওছিয়্যতের পর, যা তোমরা কর এবং ঋণ পরিশোধের পর।  {সূরা নিসা-১২}

মিরাসের হকদার হওয়ার ক্ষেত্রে মায়ের অবস্থা ৩টি

১-সম্পত্তির এক ছষ্ঠমাংশ বা ছয় ভাগের এক ভাগ পাবেন যদি মৃত ব্যক্তির এক বা একাধিক সন্তান বা সন্তানের সন্তান থাকে, বা মৃতের দুই বা ততোধিক ভাই/বোন থাকে।

২- আর যদি উপরোক্ত ব্যক্তিগণের কেউ না থাকে, তাহলে মা পাবেন পূর্ণ সম্পত্তির তিন ভাগের এক ভাগ তথা এক তৃতীয়াংশ।

৩-আর যদি মায়ের সাথে বাবাও থাকে, আর সেই সাথে স্বামী কিংবা স্ত্রী থাকে, তাহলে স্বামী বা স্ত্রীর অংশ দেয়ার পর বাকি সম্পত্তি থেকে তিন ভাগের এক ভাগ পাবেন মা।

فى السراجى فى الميراث- واما للام فاحوال ثلث، السدس مع الولد وولد الإبن وان سفل، او مع الإثنين من الاخوة والأخوات فصاعدا من اى وجه كان، وثلث الكل عند عدم هولاء المذكورين، وثلث ما بقى بعد فرض احد الزوجين، وذلك فى مسئلتين زوج وابوين وزوجة وابوين، (السراجى فى الميراث-17-18

বাবার অবস্থা তিনটি

১-শুধু ছয় ভাগের এক ভাগ পাবেন। যদি মৃত ব্যক্তির এক বা ততোধিক ছেলে বা ছেলেদের ছেলে থাকে।

২- যদি মৃত ব্যক্তির মেয়ে বা ছেলের মেয়ে থাকে, তাহলে পিতা সম্পত্তির প্রথমে ছয় ভাগের এক ভাগ পাবেন, তারপর বাকিদের মাঝে সম্পত্তি বন্টনের পর যদি কোন সম্পত্তি বেচে যায়, তাহলে উক্ত অতিরিক্ত সম্পত্তি পুরোটাই পিতা পাবেন।

৩- আর যদি মৃতের ছেলে বা মেয়ে কোন সন্তানই না থাকে, তাহলে পিতা শরীয়ত নির্ধারিত হকদারদের নির্ধারিত অংশ দেবার পর যত সম্পত্তি থাকবে, সকল সম্পত্তির মালিক হবেন।

اما الأب فله احوال ثلاث، الفرض المطلق، وهو السدس، وذلك مع الإبن وإبن الإبن وان سفل، والفرض والتعصيب معا، وذلك مع الإبنة او ابنة الإبن وان سفلت، والتعصيب المحض، وذلك عند عدم الولد وولد الإبن وان سفل، (السراجى فى الميراث-9-10

আপন ভাই-বোনদের অবস্থা

১-আপন বোন একজন হলে মৃতের সম্পত্তির অর্ধেক পাবে যদি মিরাসের অধিকারী আর কেউ না থাকে, সে যদি শুধু একা হকদার হয়ে থাকে।

২- আর যদি দুই বা ততোধিক বোন হয়, তাহলে পাবে তিন ভাগের দুই ভাগ।

৩-আর যদি ভাইয়ের সাথে বোনেরা আসে, তাহলে এক ভাই দুইবোনের সমান অংশ হিসেবে সম্পদ বন্টিত হবে। অর্থাৎ এক ভাই যা পাবে, দুই বোন তা পাবে। উদাহরণতঃ এক ভাই আর দুই বোন থাকলে, সম্পদ দুই ভাগে ভাগ করে, এক ভাগ পাবে, এক ভাই, আর বাকি এক ভাগ পাবে দুই বোন।

৪- আর যদি মৃতের শুধু মেয়ে থাকে, কোন ছেলে না থাকে, তাহলে মৃতের মেয়ে তার নির্ধারিত অংশ নেবার পর বাকি সম্পত্তি বোন পাবে। ভাই থাকলে ভাই পাবে। আর ভাই-বোন উভয়ে থাকলে এক ভাই দুই বোনের সমান হিসেবে সম্পদ বন্টন করে নিব।

৫- মৃতের ছেলে বা ছেলের ছেলে থাকলে কিংবা পিতা বা দাদা থাকলে আপন ভাই-বোন কিছুই পাবে না।

يَسْتَفْتُونَكَ قُلِ اللَّهُ يُفْتِيكُمْ فِي الْكَلَالَةِ ۚ إِنِ امْرُؤٌ هَلَكَ لَيْسَ لَهُ وَلَدٌ وَلَهُ أُخْتٌ فَلَهَا نِصْفُ مَا تَرَكَ ۚ وَهُوَ يَرِثُهَا إِن لَّمْ يَكُن لَّهَا وَلَدٌ ۚ فَإِن كَانَتَا اثْنَتَيْنِ فَلَهُمَا الثُّلُثَانِ مِمَّا تَرَكَ ۚ وَإِن كَانُوا إِخْوَةً رِّجَالًا وَنِسَاءً فَلِلذَّكَرِ مِثْلُ حَظِّ الْأُنثَيَيْنِ ۗ يُبَيِّنُ اللَّهُ لَكُمْ أَن تَضِلُّوا ۗ وَاللَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ [٤:١٧٦

মানুষ আপনার নিকট ফতোয়া জানতে চায় অতএব, আপনি বলে দিন, আল্লাহ তোমাদিগকে কালালাহ এর মীরাস সংক্রান্ত সুস্পষ্ট নির্দেশ বাতলে দিচ্ছেন, যদি কোন পুরুষ মারা যায় এবং তার কোন সন্তানাদি না থাকে এবং এক বোন থাকে, তবে সে পাবে তার পরিত্যাক্ত সম্পত্তির অর্ধেক অংশ এবং সে যদি নিঃসন্তান হয়, তবে তার ভাই তার উত্তরাধিকারী হবে। তা দুই বোন থাকলে তাদের জন্য পরিত্যক্ত সম্পত্তির দুই তৃতীয়াংশ। পক্ষান্তরে যদি ভাই ও বোন উভয়ই থাকে, তবে একজন পুরুষের অংশ দুজন নারীর সমান। তোমরা বিভ্রান্ত হবে আল্লাহ তোমাদিগকে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিচ্ছেন। আর আল্লাহ হচ্ছেন সর্ব বিষয়ে পরিজ্ঞাত। {সূরা নিসা-১৭৬}

واما للأخوات لاب وام، فاحوال خمس، النصف للواحدة، والثلثان للاثنتين فصاعدة، ومع الأخ لاب وام للذكر مثل حظ الأنثيين يصرن به عصبة لاستوائهم فى القرابة الى الميت، ولهن الباقى مع البنات او بنات الإبن لقوله عليه السلام- اجعلوا الأخوات مع البنات عصبة…….. وبنوا الأعيان والعلات كلهم يسقطون بالإبن وابن الإبن وان سفل (السرجى فى الميراث-15-17)

ছেলে ও মেয়ের মাঝে সম্পদ বন্টনের পদ্ধতি

মৃত ব্যক্তির যত ছেলে আর মেয়ে রেখে মারা যাক না কেন, তাদের মাঝে সম্পদ বন্টনের সর্ববস্থায় পদ্ধতি হল, এক ছেলে সমান সমান দুই মেয়ে। অর্থাৎ দুই মেয়ে যা পাবে, এক ছেলে তা পাবে।

يُوصِيكُمُ اللَّهُ فِي أَوْلَادِكُمْ ۖ لِلذَّكَرِ مِثْلُ حَظِّ الْأُنثَيَيْنِ ۚ [٤:١١

আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের সন্তানদের সম্পর্কে আদেশ করেনঃ একজন পুরুষের অংশ দু’জন নারীর অংশের সমান। {সূরা নিসা-১১}

উপরোক্ত সূরত জানার সাথে সাথে আরেকটি মূলনীতি জানা থাকা জরুরী। সেটি হল-

জরুরী মূলনীতি

মিরাস বন্টনের ক্ষেত্রে দুটি পার্ট আছে। এক পার্টের মাঝে রয়েছে তিনটি সংখ্যা। আরেকটি পার্টে রয়েছে তিনটি সংখ্যা।

প্রথম পার্ট

১-  নিসফ তথা অর্ধেক পাওয়ার দাবিদার থাকা।

২-  রুবু তথা চতুর্থাংশ পাওয়ার দাবিদার থাকা।

৩-  ছুমুন তথা অষ্টমাংশ পাওয়ার দাবিদা থাকা।

দ্বিতীয় পার্ট

১-  সুলুস তথা তিনভাগের একভাগ পাওয়ার দাবিদার থাকা।

২-  সুলুসান তথা দুই তৃতিয়াংশ পাওয়ার দাবিদার থাকা।

৩-  সুদুস তথা এক ছষ্ঠমাংশ পাওয়ার দাবিদার থাকা।

যদি প্রথম পার্টের নিসফ এর সাথে দ্বিতীয় পার্টের যে কোন একটি বা একাধিক সংখ্যার দাবিদার থাকে ওয়ারিসদের মাঝে, তাহলে বন্টন সূচনা করতে হবে ছয় দিয়ে।

আর যদি প্রথম পার্টের রুবুর দাবিদার থাকার সাথে সাথে দ্বিতীয় পার্টের এক বা একাধিক অংশ সংখ্যার দাবিদার থাকে, তাহলে বন্টন শুরু করতে হবে ১২ দিয়ে।

আর যদি প্রথম পার্টের ছুমনের হকদারের সাথে দ্বিতীয় পার্টের যে কোন এক বা একাধিক অংশিদার থাকে, তাহলে বন্টন সূচনা হবে ২৪ দিয়ে। {আসসিরাজী ফিল মীরাস-৮-৯}

উপরোক্ত মূলনীতির আলোকে আপনার প্রশ্ন করা সূরতগুলোর সমাধান করতে হবে। নিচে তা উদ্ধৃত করা হল।

প্রশ্ন

এক ব্যক্তির স্ত্রী, মা-বাবা, ১ ভাই, ২ বোন, ২ ছেলে ও ৩ মেয়ে আছে। এমতাবস্থায় তার সম্পদের বন্টন কিভাবে হবে?

উত্তর

আপন ছেলে থাকায় মৃতের ভাই-বোন কিছুই পাবে না।

প্রথমে পূর্ণ সম্পত্তিকে চব্বিশ ভাগে বিভক্ত করে পিতাকে চার ভাগ, মাতাকে চারভাগ আর স্ত্রীকে তিনভাগ প্রদান করা হবে। তারপর বাকি যতটুকু সম্পদ থাকবে, সেটিকে সাত ভাগ করে, তিন ভাগ তিন মেয়েকে আর বাকি চার ভাগের মাঝে দুই ভাগ এক ছেলে আর দুই ভাগ আরেক ছেলেকে দেয়া হবে।

প্রশ্ন

স্ত্রী, মা-বাবা, ২ ভাই, ১ বোন ও ৩ মেয়ে আছে । এমতাবস্থায় তার সম্পদের বন্টন কিভাবে হবে?

উত্তর

পিতা থাকায় আপন বোন কিছুই পাবে না।

পূর্ণ সম্পত্তিকে ২৭ ভাগে ভাগ করা হবে। এর মাঝে ১৬ভাগ পাবে তিন মেয়ে। পিতা পাবে চার ভাগ। মা পাবে চার ভাগ। আর স্ত্রী পাবে তিন ভাগ।

উল্লেখ্যঃ এ সুরতটিকে মিরাস শাস্ত্রের পরিভাষায় মাসআলায়ে মিম্বরিয়া বলা হয়, যেহেতু মিম্বরে বসা অবস্থায় হযরত আলী রাঃ এর সমাধান করেছিলেন। {সিরাজী ফিল মীরাস-৩২}

প্রশ্ন

স্ত্রী, মা-বাবা, ২ ভাই, ৩ বোন আছে । এমতাবস্থায় তার সম্পদের বন্টন কিভাবে হবে??

উত্তর

মৃতের পিতা থাকায় আপন ভাই ও বোন কিছুই পাবে না।

পূর্ণ সম্পত্তিকে চার ভাগ করে এক ভাগ পাবেন স্ত্রী। বাকি তিনভাগের এক ভাগ পাবেন মা। আর বাকি দুই ভাগ পাবেন পিতা।

প্রশ্ন

স্ত্রী, মা-বাবা ও ২ ছেলে-মেয়ে আছে । এমতাবস্থায় তার সম্পদের বন্টন কিভাবে হবে?

উত্তর

প্রথমে পূর্ণ সম্পদকে চব্বিশ ভাগে ভাগ করে তিন ভাগ স্ত্রীকে, চার ভাগ পিতাকে আর চার ভাগ মাকে দেয়া হবে। তারপর বাকি ১৩ ভাগ সম্পদকে তিন ভাগ করা হবে। তার মাঝে একভাগ দেয়া হবে মেয়েকে, আর বাকি দুই ভাগ দেয়া হবে ছেলেকে।

প্রশ্ন

স্ত্রী ও মা-বাবা আছে । এমতাবস্থায় তার সম্পদের বন্টন কিভাবে হবে?

উত্তর

পূর্ণ সম্পত্তিকে চার ভাগ করে এক ভাগ পাবেন স্ত্রী। বাকি তিনভাগের এক ভাগ পাবেন মা। আর বাকি দুই ভাগ পাবেন পিতা।

প্রশ্ন

শুধু মা-বাবা, ২ ভাই-বোন ও ১ মেয়ে আছে ।

উত্তর

পিতা থাকায় ভাইবোন কোন অংশ পাবে না।

এক্ষেত্রে পূর্ণ সম্পদকে ছয়ভাগে ভাগ করে তিন ভাগ দেয়া হবে মেয়েকে, পিতাকে দেয়া হবে দুই ভাগ আর মাকে দেয়া হবে একভাগ।

৩নং প্রশ্নের উত্তর

মিরাস বা উত্তারাধিকার একটি স্বতন্ত্র বিদ্যা। শুধুমাত্র একটি দু’টি মূলনীতি বলার দ্বারা এর পূর্ণাঙ্গ কোন ধারণা আপনি অর্জন করতে পারবেন না। এরজন্য প্রয়োজন একজন বিজ্ঞ আলেমের কাছে গিয়ে সরাসরি উক্ত বিষয়ে জ্ঞান লাভ করা।

মিরাসের সকল সূরতে সুনির্দিষ্ট মূলনীতির আলোকেই মাসআলার হুকুম একেক হয়, বন্টন পদ্ধতি পরিবর্তিত হয়। উক্ত বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ততা এবং জ্ঞানার্জন ছাড়া সহজে তা বুঝে আসার কথা নয়। তাই আপনি যদি উক্ত বিষয়ে বিস্তারিত বুঝতে চান, তাহলে অবশ্যই বিজ্ঞ একজন আলেম থেকে সরাসরি শিখে নিতে হবে। এ প্রশ্নোত্তরে মিরাসের পূণাঙ্গ অবস্থান বুঝানো প্রায় অসম্ভব।

জাযাকাল্লাহ।

والله اعلم بالصواب

উত্তর লিখনে

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

ইমেইল- ahlehaqmedia2014@gmail.com

lutforfarazi@yahoo.com

আরও জানুন

‘আমিতো অনেক আগেই তাকে তালাক দিয়েছি’ বলার দ্বারা কয় তালাক পতিত হয়?

প্রশ্ন আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতু। সম্মানিত মুফতি সাহেব, আমাদেরকে একটি বিষয় জানিয়ে বাধিত …

2 comments

  1. আল্লাহ আপনাদের খেদমতকে কবুল করুন এবং নাজাতের উসিলা করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আহলে হক্ব বাংলা মিডিয়া সার্ভিস