লেখক– মুনাজিরে ইসলাম মাওলানা মুহাম্মদ আমীন সফদর ওকাড়বী রহঃ
অনুবাদঃ লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
ফিরক্বায়ে জামাআতে গুরাবায়ে আহলে হাদীসের একটি ব্যক্তি মাসউদ আহমাদ ১৩৯৫ হিজরীতে একটি নতুন ফিরক্বা প্রতিষ্ঠা করলেন। যার নাম রেখেছেন “জামাআতুল মুসলিমীন”। আর নিজেই উক্ত ফিরক্বার আনুগত্ব করা ফরজ ইমাম বনে যান। তিনি দাবি করেন যে, “মানুষের যাপিত জীবনে সামনে আসা সকল মাসআলার সমাধান শুধুমাত্র কুরআন ও সহীহ সরীহ গায়রে মুআরিজ তথা বৈপরীত্বহীন হাদীস করবো”।
কিন্তু উক্ত দাবিতে তার মিথ্যুক হওয়ার বিষয়ের দ্বিপ্রহরের সূর্যের চেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে গেছে।
আমার বিভিন্ন রিসালার মাঝে প্রায় পাঁচ শত এমন প্রশ্ন প্রকাশিত হয়েছে, যার প্রমাণ শুদু কুরআন ও হাদীস থেকে চাওয়া হয়েছে। কিন্তু সেসবের কোনটির জবা না ফিরক্বায়ে আহলে হাদীসের কোন উপদলীয় ফিরক্বা এর জবাব কুরআন ও হাদীস থেকে দিতে পেরেছে। না ফিরক্বায়ে আহলে হাদীসের ফিরক্বা গুরাবায়ে আহলে এর জবাব দিতে পেরেছে। না মাসউদী ফিরক্বার আনুগত্ব করা ফরজ ইমামকে অনেক আত্মমর্যাদা দেয়া হয়েছে, যেন এর জবাব দেয়া হয়, কিন্তু বিলকুল বোবা বনে গেছে।
গুরাবায়ে আহলে হাদীসের একাধিক ব্যক্তিকে বলা হয়েছে যে, আপনারা সকল গরীব মিলে আপনাদের ইমাম থেকে এসবের জবাব আনিয়ে দিন। কিন্তু কেউ কেউ খুবই হতাশাজনক জবাব দিয়ে বলেছেঃ “আরে! এর কোন জবাব না তার কাছে, না সে এর জবাব দিতে পারবে!”
কেউ কেউতো মুখ লুকানোর মাঝে নিজের মঙ্গল মেনে নেয়। সে আর দ্বিতীয়বার বড় গলায় কথা বলাই বন্ধ করে দিয়েছে। যখন কুরআন ও হাদীসের ব্যাপারে তার অজ্ঞতা প্রমাণিত হয়ে গেল, তখন সে তার কল্যাণ এতেই মনে করে যে, “চোখ বন্ধ করে রাখ, তাহলে মনে হবে কিছুই হয়নি” টাইপের।
কিছু কিছু প্রশ্ন নিজেও করতে শুরু করে দেয়, যাতে করে উক্ত প্রশ্নের জবাব না দেয়ার বাহানা বানাতে পারে যে, উক্ত ব্যক্তি আমার প্রশ্নের জবাব দিতে পারেনি। তাই আমি কেন তার প্রশ্নে জবাব দিব?
এটাতের গোনাহের উপর গোনাহের দৃষ্টান্ত। আমি তার কাছে কুরআন ও হাদীস জানতে চেয়েছি। অথচ সে বাহানা বানিয়ে বলছে, সে ও কুরআন ও হাদীস জানতে চেয়েছে, তাকে না জানানোর কারণে সে মানুষকে কুরআন হাদীস জানাচ্ছে না। এটা কেমন কথা? অন্য কেউ কুরআন হাদীস না জানালে সেও কেন কুরআন হাদীসের প্রচারক দাবি করে তা থেকে বিরত থাকবে? খুব ভাল জবাব দিয়েছে আমীরে ফিরক্বায়ে মাসউদী। একেই বলে মুর্খের রাজা।
প্রশ্নের অধিকার কার?
সর্ব প্রথম এটা ফায়সালা করা দরকার যে, প্রশ্ন করার অধিকার কার? এটা বুঝার জন্য জরুরী হল, প্রশ্নের উদ্দেশ্য নিয়ে চিন্তা করা। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ এমন লোকও আসবে, যারা বলবে যে, আমাদের জন্য আল্লাহর কিতাবই যথেষ্ঠ। এতে যা হালাল বলা হয়েছে, তাকে হালাল আর যাকে হারাম বলা হয়েছে তাকে হারাম বিশ্বাস কর।
রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ খবরদার! গাধা হারাম।
এর দ্বারা বুঝা গেল যে, তার দাবি ছিল যে, কুরআনে কারীমে প্রতিটি হালাল ও হারাম বস্তুর কথা উল্লেখ আছে। আমরা যখন তার কাছে প্রশ্ন করি যে, গাধা খাওয়া হারাম হওয়া কুরআন থেকে দেখাও। কুকুর, বানর খাওয়া হালাল বা হারাম হওয়া কুরআন থেকে দেখাও। শকুন ও চিল হালাল বা হারাম হওয়া কুরআন থেকে দেখাও।
কিন্তু সে কখনোই তা দেখাতে পারবে না। তাহলে আমাদের প্রশ্নাবলী যেমনিভাবে তার দাবিকে ভুল প্রমাণিত করে দিয়েছে যে, প্রত্যেক হালাল ও হারামের উল্লেখ কুরআনে কারীমে স্পষ্টভাবে উল্লেখ নেই।
সুতরাং পরিস্কার বুঝা যাচ্ছে, অন্য কোন উৎসের সন্ধান করতে হবে। যাতে এসব প্রশ্নের জবাব স্পষ্ট উল্লেখ আছে। আর সেটি হল সুন্নতে রাসূল। সেই সাথে প্রশ্নগুলো যৌক্তিক এবং উদ্দেশ্যযুক্ত। কিন্তু যদি উক্ত ব্যক্তি এমন প্রশ্ন আমাদের দিকে পাল্টা করে যে, আমিতো এসবের জবাব কুরআন থেকে দেখাতে পারিনি, তাই তুমিই কুরআন থেকে এসব প্রশ্নের জবাব দেখাও।
তাহলে তার এ প্রশ্ন করাটা নিজের অপারগা ও অজ্ঞতার স্বীকারোক্তির সাথে সাথে উদ্দেশ্যহীন এবং ভুল। কেননা, আমরা কখন এ দাবি করেছি যে, প্রত্যেকটি হালাল-হারাম সংক্রান্ত বিষয় কুরআনে স্পষ্ট রয়েছে?
ঠিক একইভাবে পাঁচশতের মত যেসব প্রশ্ন আমি গায়রে মুকাল্লিদদের কাছে করেছি, তার উদ্দেশ্য হল যে, “কুরআন ও হাদীস থেকে তারা সকল মাসআলার সমাধান পেশ করতে পারবে বলে যে দাবি করে থাকে সেটি মারাত্মক ভুল ও বাতিল।” আমার এ উদ্দেশ্যটি দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট। কারণ, এ সকল ফিরক্বা মিলেও আমার প্রশ্নগুলোর জবাব সরাসরি কুরআন ও হাদীস থেকে দেখাতে পারবে না। শুধু তাই নয়, এখনতো তাদের মাঝের অনেক লোকের মাঝে এ অনুভূতিও হয়ে গেছে যে, ইজমা ও কিয়াসকে মানা ছাড়া অনেক প্রশ্নের জবাব তাদের পক্ষে দেয়া সম্ভব নয়। এ কারণে তারা এসব প্রশ্নের জবাব আমাদের কাছে উল্টো জানতে চেয়ে বলছে যে, তোমরা এসবের জবাব কুরআান ও হাদীস থেকে স্পষ্ট দেখাও।
এরকম উল্টো প্রশ্ন করাটা নিজেদের মতবাদের অসারতার স্বীকার করার সাথে সাথে আমাদের মতবাদ সম্পর্কে চূড়ান্ত অজ্ঞতার পরিচায়ক। কেননা, আমরা আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতের মতে শরয়ী দলীল হল, চারটি। যথা-১- কুরআন। ২-সুন্নতে রাসূল। ৩- ইজমা। ৪- কিয়াস। এ চারটির মাঝে সকল মাসআলার সমাধান বিদ্যমান রয়েছে।
ইলমী অজ্ঞতা
মাসউদী ফিরক্বা প্রতিষ্ঠাতার কুরআন ও হাদীসতো দূরে থাক বেচারারতো দ্বীন ও ফিরক্বা এবং মাযহাবের উদ্দেশ্য সম্পর্কেও কোন ধারণা নেই। অথচ এসব পরিভাষা মুসলমান খাস-আম সবাই স্বাভাবিকভাবে জানে। সকল নবীদের দ্বীনই এক। {আল কুরআন ৪২: ১৩-১৪}যার নাম হল ইসলাম। এ দ্বীনী নামের কারণে আহলে ইসলামকে মুসলিমীন বলা হয়। ইয়াকুব আঃ ও তাদের সন্তানদের মুসলিম থাকার উপর তাকীদ দিয়েছেন। {আল কুরআন- ২:১৩৩} সেই সাথে মুসা আঃ এর হাওয়ারীয়্যীন তথা সহযোগীদেরও মুসলিম বলা হয়েছে। {আল কুরআন-৫:১১}
এছাড়া তাদেরকে মুসলিম ছাড়াও বনী ইসরাঈল, আহলে কিতাব, তারপর ইহুদী, নাসারাও কুরআনে বলা হয়েছে।
এর দ্বারা বুঝা যাচ্ছে যে, এ ফিরক্বা প্রতিষ্ঠাতার দাবি যে, মুসলিম ছাড়া আর কোন পার্থক্য নির্ণয়কারী নাম রাখা যাবে না বলাটা কুরআন সম্পর্কে অজ্ঞতা ছাড়া আর কিছু নয়।
ফিরক্বা
ইসলাম হল দ্বীন। যে ব্যক্তি দ্বীনকে গ্রহণ করেনি সে ব্যক্তি বেদ্বীন এবং কাফের। দ্বীনে ইসলামে প্রবিষ্ট হওয়ার পর রাসূল সাঃ এর ভবিষ্যতবাণী অনুপাতে ফিরক্বা সৃষ্টি হয়েছে। তাদের মাঝে মুক্তিপ্রাপ্ত জামাত হল, যারা “মা আনা আলাইহি ওয়া আসহাবিহী” এর পথে চলে, যাদের বলা হয় আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআত।
পুরো দুনিয়ায় ইসলাম কুরআন, সুন্নত এবং ইসলামী ফিক্বহের মাধ্যমে বিস্তৃত হয়েছে। ইসলামের মাঝে সুবিশাল দল [সাওয়াদে আজম] রয়েছে। যাদের সাথে অবস্থান করার তাকীদ রাসূল সাঃ দিয়েছেন। যারা কতিপয় আক্বিদায় এ সুবিশাল দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে, তাদের বিদআতি ফিরক্বা বলা হয়। যেমন জাবরিয়া, কাদরিয়া ইত্যাদি।
যেমনিভাবে ইসলাম শব্দটি কুফরীর বিপরীতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে, এমনিভাবে আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআত আহলে বিদআত এর বিপরীতে ব্যবহৃত হয়। {সহীহ মুসলিম-১/১১}
রাসূল সাঃ ১১ হিজরীতে আর হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাঃ ৪৪ হিজরীতে কুরআনের তাফসীর করতে গিয়ে বলেছেন যে, “যাদের চেহারা কিয়ামতের দিন আলোকিত হবে, তারা আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআত, আর যাদের চেহারা কিয়ামতের ময়দানে কালো হবে, তারা হল আহলে বিদআত এবং খারেজী”। {আদ দরুরুল মানসূর-২২০}
ইমাম ইবনে সিরীন রহঃ যার মৃত্যু ১১০ হিজরীতে তিনিও এ দলের নাম আহলে সুন্নত বলেছেন, আর এ দলের বিপরীত দলকে আহলে বিদআত বলেছেন। {সহীহ মুসলিম-১/১১}
ইমাম হাসান বসরী রহঃ যার ব্যাপারে মাসউদী ফিরক্বার প্রতিষ্ঠাতা লিখেছে “ইমাম হাসানতো সারা জীবন সাহাবাগণের মাঝে কাটিয়েছেন। শুধু সাহাবাগণকে দেখেছেন তাই নয়, বরং তাদের সোহবতের সৌভাগ্য এবং ছাত্র হয়ে অনেক কিছু শিখিছেন। একই সময়ে তার সাথে তিনশতের মত সাহাবী ছিলেন। {খুলাসায়ে তালাশে হক-২৭}
হাসান বসরী রহঃ বলেছেনঃ সুন্নতের মাসলাক হল, সীমা লঙ্ঘণ এবং সীমা সংকোচন মুক্ত, অর্থাৎ সাম্যতাপূর্ণ মাসলাক হল আহলে সুন্নত। فن اهل السنة كانوا اقل الناس فيما مضى তথা এ কারণেই প্রথম প্রথম আহলে সুন্নত অনেক কম ছিল। {সুনানে দারেমী-১/৬৩}
ইমাম আজম আবু হানীফা রহঃ [মৃত্যু-১৫০ হিজরী] স্বীয় সন্তানকে অসিয়ত করে বলেনঃ আহলে সুন্নত থেকো। {ওসায়া ইমামে আজম}
তিনি আহলে সুন্নাতের আক্বিদার উপর পৃথক গ্রন্থ “আলফিক্বহুল আকবর” রচনা করেছেন। ইমাম মুয়াবিয়া জরীর রহঃ কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, সুন্নী কাদের বলে? তিনি জবাবে বলেনঃ যিনি ইমাম আবু হানীফা রহঃ কে মোহাব্বত করে সেই ব্যক্তি সুন্নি। আর যে ব্যক্তি তার প্রতি বিদ্বেষ রাখে সে ব্যক্তি বেদআতি। {আলখাইরাতুল হিসান}
ইবনে হাযম শাহরাস্তানী এবং শায়েখ জিলানী রহঃ তাদের কিতাবে ঐ ব্যক্তিদের আহলে বিদআত বলেছেন, যারা জান্নাতী দল আহলে সুন্নতের কতিপয় আক্বিদা বিরোধী মত পোষণ করে থাকে।
আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, তারাও আহলে বিদআতের বিপরীত আহলে সুন্নত শব্দ ব্যবহার করতেন। কিন্তু মাসঈদী ফিরক্বার প্রতিষ্ঠাতা পুরো উম্মতের খিলাফ আহলে সুন্নাতের ব্যবহার আহলে ইসলামের বিপরীত করতে শুরু করে দেয়। আর জান্নাতী দল আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতকে গায়রে মুসলিম বলতে থাকে। শুধু তাই নয় আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতকেও একটি ফিরক্বা বলতে থাকে।
চার মাযহাব
ফিরক্বা প্রতিষ্ঠাতা অজ্ঞতার অন্ধকারে হাতড়ে বেড়ায়। তাই আসল হাকীকত বুঝার ক্ষমতা তার নেই।
মাযহাব অর্থ হল রাস্তা। যা গন্তব্য পর্যন্ত পৌঁছার জন্য হয়ে থাকে। এ হিসেবে এ শব্দটি ফিরক্বা শব্দটির সম্পূর্ণ বিপরীত অর্থবোধক। কারণ ফিরক্বা হল সেটি, যা গন্তব্য থেকে সরিয়ে দেয়, আর মাযহাব হল তা, যা গন্তব্যে পৌঁছে দেয়। মাযহাব ও ফিরক্বাকে এক বলাটা দিন আর রাতকে এক বলা, আলো আর অন্ধকারকে এক বলা, সাদা ও কালোকে এক বলা, ঠান্ডা আর গরমকে এক বলা, গোনাহ আর নেকীকে এক বলা, এবং সুন্নত ও বিদআতকে এক বলার মতই মুর্খতা।
কিন্তু কী করা যাবে? মুর্খতা মাসঊদী ফিরক্বার সকল সদস্যের কাছে গর্বের বিষয়। না জানে ওরা দ্বীনের অর্থ, না ফিরক্বার। আর না জানে মাযহাবের অর্থ। তাদের প্রধানকে বারংবার চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে যে, এ তিন শব্দ তথা দ্বীন, মাযহাব এবং ফিরক্বার জামে মানে তথা পূর্ণাঙ্গ একটি সংজ্ঞা কুরআন ও হাদীস থেকে বের করে দেখাও। কিন্তু সে তা না দেখাতে পেরেছে, না কিয়ামত পর্যন্ত দেখাতে পারবে ইনশাআল্লাহ।
শরয়ী দলীলসমূহ
সমস্ত আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতের ইজমা এবং ঐক্যমত্ব হল যে, শরীয়তের দলীল ক্রমান্বয়ে চারটি। যথা ১-কিতাবুল্লাহ। ২-সুন্নতে রাসূল। ৩-ইজমা। ৪-কিয়াস।
ফিরক্বা প্রতিষ্ঠাতা এবং তার অন্ধ মুকাল্লিদরা ইজমা এবং কিয়াসকে শরয়ী দলীল হওয়াকে অস্বিকার করে দিল। যেমনিভাবে নামধারী আহলে কুরআনরা সুন্নত শরয়ী দলীল হওয়াকে অস্বিকার করে দিয়েছে।
তাদের কারো অস্বিকারকরণ কোন শরয়ী দলীলের উপর ভিত্তিশীল নয়। বরং পুরোটাই স্বীয় মতপূজার উপর ভিত্তিশীল। সে শুধুমাত্র আল্লাহ ও রাসূল সাঃ এর অনুসরণের উল্লেখ কুরআন ও হাদীসের উদ্ধৃতিতে পেশ করেছে। ব্যাস, এতটুকুই। তার কাছে আর কিছুই শরয়ী দলীল হতে পারে না।
আল্লাহ তাআলার অনুসরণ
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেনঃ
اتَّبِعُوا مَا أُنزِلَ إِلَيْكُم مِّن رَّبِّكُمْ وَلَا تَتَّبِعُوا مِن دُونِهِ أَوْلِيَاءَ ۗ قَلِيلًا مَّا تَذَكَّرُونَ [٧:٣
তোমরা অনুসরণ কর, যা তোমাদের প্রতি পালকের পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে এবং আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য সাথীদের অনুসরণ করো না। আর তোমরা অল্পই উপদেশ গ্রহণ কর। {সূরা আরাফ-৩}
রাসূল সাঃ এর অনুসরণ
قُلْ إِن كُنتُمْ تُحِبُّونَ اللَّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللَّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ ۗ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ [٣:٣١
বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমাকে অনুসরণ কর, যাতে আল্লাহ ও তোমাদিগকে ভালবাসেন এবং তোমাদিগকে তোমাদের পাপ মার্জনা করে দেন। আর আল্লাহ হলেন ক্ষমাকারী দয়ালু। {সূরা আলে ইমরান-৩১}
ইজমায়ে উম্মত
وَمَن يُشَاقِقِ الرَّسُولَ مِن بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُ الْهُدَىٰ وَيَتَّبِعْ غَيْرَ سَبِيلِ الْمُؤْمِنِينَ نُوَلِّهِ مَا تَوَلَّىٰ وَنُصْلِهِ جَهَنَّمَ ۖ وَسَاءَتْ مَصِيرًا [٤:١١٥
যে কেউ রসূলের বিরুদ্ধাচারণ করে, তার কাছে সরল পথ প্রকাশিত হওয়ার পর এবং সব মুসলমানের অনুসৃত পথের বিরুদ্ধে চলে, আমি তাকে ঐ দিকেই ফেরাব যে দিক সে অবলম্বন করেছে এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব। আর তা নিকৃষ্টতর গন্তব্যস্থান। {সূরা নিসা-১১৫}
ফায়দা
আকাবীরে উলামায়ে কেরামগণ এ আয়াত দ্বারা এ মাসআলা বের করেছেন যে, ইজমায়ে উম্মতের বিরুদ্ধবাদী এবং অস্বিকারকারী জাহান্নামী। অর্থাৎ ইজমায়ে উম্মতকে মানা ফরজ। হাদীসে এসেছে যে,
عن ابن عمر قال قال رسول الله صلى الله عليه وآله لا يجمع الله هذه الامة على الضلالة ابدا وقال يد الله على الجماعة فاتبعوا السواد الاعظم فانه من شذ شذ في النار
হযরত ইবনে ওমর রাঃ থেকে বর্নিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ আল্লাহ তাআলা এ উম্মতকে কখনোই ভ্রষ্টতার উপর ইজমা তথা ঐক্যমত্ব করবেন না। তিনি আরো বলেনঃ আল্লাহ তাআলার [রহমাতের] হাত জামাআতের উপর। তাই তোমরা [ইসলামিক আদর্শের] বড় দলের অনুসরণ কর। কেননা, যারা একাকী হয়ে যায়, সে একাকী জাহান্নামী হবে। {মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস নং-৩৯১, ৩৯৬}
মুজতাহিদের অনুসরণ
وَاتَّبِعْ سَبِيلَ مَنْ أَنَابَ إِلَيَّ ۚ [٣١:١٥
যে আমার অভিমুখী হয়, তার পথ অনুসরণ করবে [তাকলীদ করবে]। {সূরা লুকমান-১৫}
মুজতাহিদগণ গায়রে মানসূস বিষয়ে আল্লাহ ও তার রাসূল সাঃ এর দিকে মনোনিবেশ করেছেন, সেসবের হুকুম বের করে সাবীল তথা মাযহাব বানিয়েছেন, তথা সংকলিত করেছেন। গায়রে মুজতাহিদগণকে মাসায়েলে ইজতিহাদিয়্যাতে তাদের মাযহাবের অনুসরণ করার হুকুম দেয়া হয়েছে।
মাসঈদী ফিরক্বা প্রতিষ্ঠাতা দুটি বিষয়ের অনুসরণের কথা উল্লেখ করেছে। বাকি দু’টি ছেড়ে দিয়েছে। ইহুদীদের মত কিতাবের কিছু অংশে ঈমান এনেছে আর কিছু অংশ ছেড়ে দিয়েছে।
কিতাবুল্লাহ ও সুন্নততে মানার জন্য ফিরক্বা প্রতিষ্ঠাতা সিহাহ সিত্তাহ ছেড়ে দিয়ে মুস্তাদরাকে হাকেমের দিকে ভেগেছে। অথচ আবু দাউদ ২য় খন্ডের ৯ নং পৃষ্ঠায় এবং ইবনে মাজায় রাসূল সাঃ এর ফরমান বিদ্যমান ছিল যে,
عن عبد الله بن عمرو بن العاص أن رسول الله صلى الله عليه و سلم قال ” العلم ثلاثة وما سوى ذلك فهو فضل آية محكمة أو سنة قائمة أو فريضة عادلة “
হযরত আব্দুল্লাহ বিন আমর বিন আস রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ ইলম হল তিনটি। এছাড়া যা আছে তা অতিরিক্ত। ১- মুহকাম আয়াত। ২-সুন্নতে কায়েমাহ। ৩-ফরীজায়ে আদেলাহ।
আয়াতে মুহকামা তথা কিতাবুল্লাহ তিলাওয়াত হিসেবে মুতাওয়াতির তথা নিরবচ্ছিন্ন সূত্রে এসেছে।
সুন্নতে কায়েমাহ ও আমল হিসেবে মুতাওয়াতির। আর মুতাওয়াতির বিষয় কোন সূত্রের প্রতি মুখাপেক্ষি হয় না। যেমনিভাবে সূর্য সাক্ষ্যির মুখাপেক্ষি নয়। বরং যে খবরে ওয়াহিদ প্রথম শতাব্দিতে খবরে ওয়াহিদ ছিল, তারপর তা দ্বিতীয় শতাব্দি কিংবা তৃতীয় শতাব্দিতে এসে মাশহুর হয়ে গেছে। তাও সনদের প্রতি মুখাপেক্ষি নয়। যেমন চতুর্দশী চাঁদ কারো সাক্ষ্যে প্রতি মুখাপেক্ষি নয়।
এ ভুমিকাটি বুঝার পর মাসঊদী ফিরক্বার ওয়াসওয়সার জবাবগুলো খেয়াল করুন।
ওয়াসওয়াসা নং-১
রাসূল সাঃ কি আহলে হাদীস, হানাফী, শাফেয়ী মালেকী বা হাম্বলী ছিলেন?
জবাব
আহলে হাদীস আর আহলে কুরআন এ দুটি ফিরক্বা ইংরেজের আমলে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। ফিরক্বাকে মাযহাবের সাথে গণ্য করা মুর্খতার প্রমাণবাহী। আহলে ইসলামের কিতাবের মাঝে চার মাযহাবের কথাই পাওয়া যায়। এ চার মাযহাবের উসূল ও ফুরূয়ের উপর কিতাব পাওয়া যায়। এমনকি ফিরক্বা প্রতিষ্ঠাতা নিজেই স্বীকার করেছে যে, আহলে হাদীস প্রথম জমানায় মুহাদ্দিসদের বলা হতো। যা আহলে সরফ, আহলে নাহু আর আহলে মানতেকের মত একটি ইলমী তবক্বা ছিল। কোন মাযহাবী ফিরক্বা ছিল না।
হ্যাঁ, ইংরেজ আমলের সময় এ ফিরক্বার নাম চলে আসে। যারা লা-মাযহাব। হয়তো কাল ফিরক্বা প্রতিষ্ঠাতা এ ওয়াসওয়াসাও বাজারে ছেড়ে দিবেন যে, রাসূল সাঃ আহলে সরফ, আহলে নাহু বা আহলে মানতিক ছিলেন?
এবার বুঝুন! হানাফী, শাফেয়ী, মালেকী আর হাম্বলী কী?
যাদের সঠিক তারতীবও ফিরক্বা জানে না। চার ইমাম এমনকি সকল মুজতাহিদগণের ঘোষণা হল যে, القياس مظهر لا مثبت তথা কিয়াস মাসআলা বানায় না, বরং কিতাবুল্লাহ ও সুন্নতের মাঝে লুকায়িত মাসআলাকে শরয়ী মূলনীতির আলোকে প্রকাশ করে দেয়। যেমন কুপ খননকারী পানি সৃষ্টি করে না, বরং সে আল্লাহর সৃষ্টি করা লুকায়িত পানিকে প্রকাশ করে দেয়।
এবার মাসঊদী ফিরক্বা প্রতিষ্ঠাতা মুজতাহিদীনদের শরীয়ত প্রণেতা বলাটা এমনি মুর্খতা যে, যেমন কুপ খননকারীকে কুপের পানির স্রষ্টা বলে মন্তব্য করা।
তো যখন ইয়িম্মায়ে কেরামগণ কুরআন হাদীসের লুকায়িত মাসায়েলকে প্রকাশিত করেছেন, তখন তাদের ইজতিহাদকৃত মাসায়েলের উপর আমল করা মূলত কুরআন ও সুন্নতের উপরই আমল করা। যেমন কুপের পান করা মানে আল্লাহর সৃষ্টিকৃত পানিই পান করা।
খোদ ফিরক্বা প্রতিষ্ঠাতারও একথা জানা আছে। তাইতো তিনি লিখেছেন যে, “এতে কোন সন্দেহ নেই যে, চার ইমামগণ যে মূলনীতির উপর মাসায়েলের ভিত্তি রেখেছেন, সেসব মূলনীতি সুন্নত। কেননা, তারা মাসায়েলকে কুরআন ও হাদীসের আলোকে সমাধান করেছেন। আর কুরআন ও হাদীস ছেড়ে অন্য কারো বক্তব্যকে তারা দলীল বানাননি। এমনকি তাকে দলীলও মনে করেননি। তাই তাদের পদ্ধতিটি সুনিশ্চিতভাবে সুন্নত ছিল, এবং তারা চারজনই হকপন্থী ছিলেন। {খুলাসায়ে তালাশে হক-৮৮}
পরিস্কারভাবে স্বীকার করে নিয়েছে যে, ফুক্বাহাগণ বর্ণিত মাসায়েল কুরআন ও হাদীসেরই মাসায়েল। কেননা, তাদের উসূল তথা মূলনীতি সুন্নতের উপর ভিত্তিশীল ছিল। যেমন গণীতের সূত্র দ্বারা যে উত্তর পাওয়া যায়, সেটিকে গণীতই বলা হয়, প্রশ্ন সমাধানকারীর নিজস্ব সিদ্ধান্ত বলা হয় না।
এবার প্রশ্ন হল, এসব মাসায়েল যা মূলত কুরআন ও সুন্নতের মাসায়েল, তা কি রাসূল সাঃ এর জমানায় বিদ্যমান ছিল কি না?
সুনিশ্চিতভাবে তা বিদ্যমান ছিল। পার্থক্য শুধু এতটুকু যে, সেসময় এর নাম এটি ছিল না যে, একে ফিক্বহে হানাফীর মাসায়েল বলা হবে। যেমন কুরআনে পাক সাত কিরাতে রাসূল সাঃ এর জমানায় বিদ্যমান ছিল। কিন্তু সে সময় তা কারী আসেমের কিরাত কিংবা কারী হামযার কিরাতের নামে ছিল না। ঠিক তেমনি সিহাহ সিত্তার সহীহ হাদীস সমূহ রাসূল সাঃ এর জমানায় বিদ্যমান ছিল। কিন্তু সে সবকে সেই জমানায় বুখারী বা মুসলিম ইত্যাদি গ্রন্থের হাদীস বলে উদ্ধৃত করা হতো না।
ফিক্বহকে যদি শুধু এ কারণে অস্বিকার করা হয় যে, এসব নাম রাসূল সাঃ এর জমানায় ফিক্বহে হানাফী ছিল না, তাহলে কুরআনকেও অস্বিকার করা আবশ্যক হয়, কারণ রাসূল সাঃ এর জমানায় কুরআন কারী আসেমের কেরাতের নামে ছিল না। সেই সাথে সিহাহ সিত্তার হাদীসকেও অস্বিকার করা আবশ্যক হয়, কারণ রাসূল সাঃ এর জমানায় সিহাহ সিত্তার হাদীস বলা হতো না।
মাসঈদী ফিরক্বাপন্থীরা সহীহ হাদীস বা কুরআনের আয়াত দ্বারা এ পার্থক্য নির্ণিত করে দাও, যাতে একথা রয়েছে যে, কুরআন মানার জন্য সাত কারীর নাম কুরআনে থাকা জরুরী নয়। সিহাহ সিত্তা মানার জন্য সিহাহ সিত্তার নাম কুরআন ও হাদীস থেকে দেখানো জরুরী নয়, কিন্তু ফিক্বহ মানার জন্য ফক্বীহদের নাম কুরআন ও হাদীসে দেখানো জরুরী!
চোর ধরা পড়েছে
মূলত ফিক্বহ অনুসরণ করার আদেশ কুরআনে কারীমের ইবারত এবং অর্থ হিসেবে মুতাওয়াতির হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। অথচ ফিরক্বা প্রতিষ্ঠাতা মুতলাকানভাবে ফিক্বহকেই অস্বিকার করে বসেছে। সেই সাথে কুরআনের সেসব আয়াত এবং হাদীসকে অস্বিকার করে দিয়েছে।
আমরা তাদের কাছে জানতে চেয়েছিলাম যে, একটি আয়াত বা হাদীস পেশ করা, যেখানে আল্লাহ তাআলা বা রাসূল সাঃ ফিক্বহ অনুসরণ করতে নিষেধ করেছেন। কিয়ামত পর্যন্ত ইনশাআল্লাহ তা পেশ করতে পারবে না। আর যদি ফিক্বহকে মেনে থাকে, তাহলে নিজেদের উসূলে ফিক্বহ ও ফুরূয়ে ফিক্বহের জামে তথা পরিপূর্ণ কিতাব পেশ করুন। এটাও তাদের সামর্থ নেই।
নিজেদে এ চুরিকে লুকানোর জন্য উল্টো প্রশ্ন করে বসল। যেমন কোন কুরআন অস্বিকারকারী বলে যে, তোমরা কারী আসেমের কুরআন পড়, তোমরা মুহাম্মদ সাঃ এর কুরআন পড় না। কারী আসেমের নাম কুরআনে দেখাও, নতুবা আমি তোমার কুরআন মানি না।
কিংবা কোন মুনকিরে হাদীস তথা হাদীস অস্বিকারকারী একথা বলে যে, তোমরা অনারবী বুখারীর হাদীস মান, আরবের মুহাম্মদের হাদীস মানো না। তোমরা কোন হাদীসের মাঝে অনারবী বুখারীর নাম দেখাও। নতুবা আমি হাদীস মানবো না।
সাবাস! মাসঊদী ফিরক্বা প্রতিষ্ঠাতা দ্বীনের ব্যাপারে অজ্ঞতার কারণে কী সুন্দর ওয়াসওয়াসা দাঁড় করিয়েছে, যার ফলে খোদ কুরআন হাদীসের প্রমাণই মুশকিল হয়ে গেছে। চমৎকার গবেষণা করেছেন ফিরক্বা প্রতিষ্ঠাতা সাহেব।
ওয়াসওয়াসা নং-২
আল্লাহ তাআলা কি চার মাযহাব তথা আহলে হাদীস, হানাফী, শাফেয়ী, মালেকী ও হাম্বলী মাযহাবের কোন একটির অনুসরণের হুকুম দিয়েছেন?
জবাব
জি হ্যা, যেমন আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে ঘোষণা দিয়েছেন যে, তোমরা কুরআন পড় যতটুকু তোমাদের কাছে সহজ হয়। তো আমরা বর্তমানে কারী আসেম কুফীর মুতাওয়াতির কিরাতের কুরআন পড়ি। এছাড়া আল্লাহ তাআলার এ আদেশ পালনের আর কোন সুযোগই নেই।
এমনিভাবে আল্লাহ তাআলা আদেশ দিয়েছেন যে, মুনীব তথা যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার দিকে মনোনিবেশ করেছে তার অনুসরণ করতে, আর এ উপমহাদেে হানাফী মাযহাব ছাড়া আর কোন মুনীবের মাযহাব আমল হিসেবে মুতাওয়াতির নয়, তাই হানাফী মাযহাব মানা ছাড়া এখানে আল্লাহ তাআলার এ আদেশ পালনের আর কোন পদ্ধতিই নেই।
আপনিই বলুন, রাসূল সাঃ কি বুখারী মুসলিম ইত্যাদি কিতাবের হাদীস মানার আদেশ দিয়েছেন? রাসূল সাঃ কি করাচির ১৩৯৫ হিজরীতে প্রতিষ্ঠিত বিদআতি ফিরক্বাতে শামিল হওয়ার হুকুম দিয়েছেন?
স্পষ্ট হাদীস দ্বারা জবাব দিন।
ওয়াসওয়াসা নং-৩
হযরত ঈসা আঃ দ্বিতীয়বার দুনিয়াতে আগমণ করার পর কি তিনি আল্লাহ তাআলার কাছ থেকে অবতীর্ণ দ্বীনের উপর আমল করবেন, না চার মাযহাবের কোন এক মাযহাবের অনুসরণ করবেন?
উত্তর
একথাতো সুনিশ্চিত যে, ঈসা আঃ মাসঈদী ফিরক্বার মত লা-মাযহাবী হবেন না। তিনি কুরআন হাদীসে বর্ণিত মাসায়েলে কুরআন হাদীসের আর, গায়রে মানসুস মাসায়েল তথা ইজতিহাদী মাসায়েলে তিনি নিজেই মুজতাহিদ ও সাহেবে মাযহাব হবেন। তবে কতিপয় বুযুর্গের কাশফ দ্বারা জানা যায় যে, ঈসা আঃ এর ইজতিহাদ হযরত আবু হানীফা রহঃ এর ইজতিহাদের মুয়াফিক হবে। আর কাশফ কোন আয়াত বা হাদীসের মুখালিফ নয়। আল্লাহ তাআলা থেকে বর্ণিত ইসলাম যা মৌলিকভাবে কুরআন ও হাদীসে বর্ণিত। আর শাখাগতভাবে কুরআন হাদীসের আলোকে ইজমা ও কিয়াস দ্বারা পরিস্ফুটিত।
যখন তুমি নিজেই স্বীকার করেছে যে, চার ইমামের মাসায়েল কুরআন ও হাদীস থেকেই গৃহিত, তখন ঈসা আঃ কে আল্লাহ তাআলার অবতির্ণীত বস্তুর উল্টো অবস্থানে রাখা শুধু মুর্খতাই নয়, বরং নির্লজ্জতাও বটে। রাসূল সাঃ বলেছেন, নির্লজ্জ ব্যক্তি যা ইচ্ছে তাই করতে পারে।
অভিযোগ করার আগে, আমাদের দাবিটি ভাল করে বুঝে নেয়া দরকার। ইজতিহাদী মাসায়েলে মুজতাহিদের উপর ইজতিহাদ করা ওয়াজিব। আর গায়রে মুজতাহিদের উপর তাকলীদ আর গায়রে মুকাল্লিদের উপর তাজীর তথা শাস্তি আবশ্যক। হযরত ঈসা আঃ এর মুজতাহিদ হওয়ার দ্বারা একথা আবশ্যক করে না যে, সকল জাহিল ব্যক্তিও মুজতাহিদ হয়ে বসে যাবে।
ওয়াসওয়াসা নং-৪
ঈসা আঃ দ্বিতীয়বার দুনিয়াতে আসার পর তাকে মুসলিম বলা হবে? না আহলে হাদীস, হানাফী, শাফেয়ী, হাম্বলী বা মালেকী, দেওবন্দী, বেরেলবী, সুন্নি বা শিয়া বলা হবে?
উত্তর
ইসলাম আঃ মুসলিম হওয়ার অর্থ কখনোই এ অর্থে নয় যে, তিনি গায়রে মুকাল্লিদ হবেন। না তিনি মাসঈদী ফিরক্বা প্রতিষ্ঠাতার উপর ঈমান আনাকে ফরজ মনে করবেন। এ ওয়াসওয়াসার সাথে মুর্খতার সাথে মিথ্যারও আশ্রয় নেয়া হয়েছে। তাহলে কি হানাফী, শাফেয়ী, মালেকী, হাম্বলী ও দেওবন্দীগণ কি মুসলিম নয়? এমন ওয়াসওয়াসা যে, যেমন করাচির মাসঊদী ফিরক্বাকে পাকিস্তানী বলা হবে না করাচি?
যেমনিভাবে করাচিকে পাকিস্তানের বাহিরে মনে যারা করে তারা মুর্খ এবং মিথ্যুক। কিন্তু এর চেয়েও বড় মিথ্যুক এবং মুর্খ ঐ ব্যক্তি, যারা হানাফী, শাফেয়ী, মালেকী, হাম্বলীদের গায়রে মুসলিম মনে করে। শুধু তাই নয় তাদের গায়রে মুসলিম যারা বলছে, তারা নিজেই কুরআন ও হাদীসের দৃষ্টিতে গায়রে মুসলিম।
ওয়াসওয়াসা নং-৫
আল্লাহ তাআলা কুরআনে কারীমে আমাদের নাম মুসলিমীন রেখেছেন।{সূরা হজ্ব-৭৮}
আল্লাহ তাআলা নাম রাখার পরও কি কোন বিভক্তিমূলক দলের নাম রাখা যায়? এমনটি করা কি শরীয়ত বিকৃতি নয়?
উত্তর
আল্লাহ তাআলা ১৩৯৫ হিজরীতে করাচিতে মাসঈদের বানানো বিদআতি ফিরক্বার নাম কোথাও গায়রে মুকাল্লিদ অর্থবোধক মুসলিমীন রাখেননি।
যেমনিভাবে কাদিয়ানীদের শহর “রাবওয়াহ” এর নাম আল্লাহ তাআলা কখনোই রাখেননি। যদিও কুরআনে কারীমের দ্ইু স্থানে “রাবওয়াহ” শব্দ বিদ্যমান আছে, কিন্তু কাদিয়ানীদের “রাবওয়াহ” এর সাথে কুরআনের রাবওয়াহ শব্দের ন্যুনতম কোন সম্পর্ক নেই।
এমনিভাবে মাসঈদী ফিরক্বা যা কাদিয়ানীদের রাবওয়াহ এরও পরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তাদের সম্পর্কে কুরআনের মুসলিমীন শব্দের সাথে কি করে হতে পারে?
মুসলিম নামের পর দ্বিতীয় কোন পার্থক্য নির্ণয়কারী নাম রাখা যাবে না, একথা কুরআন ও হাদীসের কোথাও নেই। এটাকে নিজের পক্ষ থেকে নিষেধ করা শরীয়ত বিকৃত করা ছাড়া আর কিছু নয়। যেমনিভাবে ইহুদীদের পুরোহিত ও সন্নাসীরা নিজেদের পক্ষ থেকে হালাল ও হারাম সাব্যস্ত করতো, ঠিক তেমনি এ ফিতনা প্রতিষ্ঠাতা শুধুমাত্র নিজের পক্ষ থেকে এটাকে নাজায়েজ বলছে। যা সুষ্পষ্টরূপে শরীয়ত বিকৃতি সাধন বৈ কিছু নয়।
কুরআনে কারীমের মাঝে ইয়াকুব আঃ এর বংশধরদের মুসলিম বলার সাথে সাথে আহলে কিতাব, ইহুদী, নাসারা বলে আখ্যায়িত করেছে।
এসব নাম মুসলিমের সাথে নাম না ভিন্ন?
হ্যাঁ, তবে কুরআনে কারীমের ৯:১০ এ রয়েছে যে, ফেরাউন নিজেকে “আনা মিনাল মুসলিমীন” বলেছে। সে এ নাম রাখার পর নিজের আর কোন নাম রাখেনি। তাহলে মাসঈদ সাহেবের পথিকৃত ফেরাউন ছাড়া আর কেউ নয়।
মাসঊদ সাহেব কি কুরআন ও হাদীস থেকে একথা প্রমাণিত করতে পারবেন যে, ফেরাউন মৃত্যুর সময় নিজেকে মুসলিমীন বলার পর নিজের আর কোন দ্বীনী নাম রেখেছে? মাসঈদ সাহেব! আপনি একা নন, আপনার আরো বড় সাথি রয়েছে। যেমন মুনাফিকীনদের আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে মুসলিমীন বলে সম্বোধন করেছেন।
قُولُوا أَسْلَمْنَا وَلَمَّا يَدْخُلِ الْإِيمَانُ فِي قُلُوبِكُمْ ۖ [٤٩:١٤
তোমরা বল আমরা মুসলিমীন। কেননা, তোমাদের অন্তরে ঈমানই নেই। {সূরা হুজুরাত-১৪}
দেখুন! এরা হল, আপনাদের পথিকৃত মুসলিমীন। যাদের অন্তরে ঈমান ছিল না। আপনাদের ব্যাপারেও রাসূল সাঃ ভবিষ্যৎবাণী করে গেছেনঃ
عن علي قال : قال رسول الله صلى الله عليه و سلم : ” يوشك أن يأتي على الناس زمان لا يبقى من الإسلام إلا اسمه ولا يبقى من القرآن إلا رسمه مساجدهم عامرة وهي خراب من الهدى علماؤهم شر من تحت أديم السماء من عندهم تخرج الفتنة وفيهم تعود “
হযরত আলী রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ ইসলাম আর মুসলিমীন নাম ছাড়া তাদের মাঝে আর কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। আর কুরআনের লিখিত শব্দ ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। মসজিদ আবাদ হবে দেখা যাবে, কিন্তু তা হেদায়াত শূণ্য হবে। [মাসঊদীদের মসজিদ দেখে রাসূল সাঃ এর এ বাণী স্পষ্ট মনে পড়ে] এসব মুসলিমীনের উলামা আসমানের নিচে সবচে’ বেশি মন্দ-কর্মী হবে। তাদের থেকে ফিতনা বের হবে, আবার তাদের কাছেই ফিরে আসবে। {শুয়াবুল ঈমান লিলবায়হাকী, হাদীস নং-১৯০৮, মেশকাতুল মাসাবীহ, হাদীস নং-২৭৬, কানযুল উম্মাল, হাদীস নং-৩১৫২২}
মাসঈদ সাহেব যিনি মুসলিমীনদের মৌলবী। তার কাছে এ হাদীসের আলোচ্য বিষয়ের উপর সামান্যতম সংশয় থাকার কথা নয়।
কি আপনার নিকট সমস্তা ফুক্বাহা, মুহাদ্দিসীন এবং মুসলিম শাসকবৃন্দ যাদের উল্লেখ রয়েছে তাবাক্বাতে হানাফিয়্যা, তাবাক্বাতে শাফিয়িয়্যাহ, তাবাকাতে মালিকিয়্যাহ এবং তাবাকাতে হানাবেলাতে, তারা সবাই গায়রে মুসলিম? বুখারী শরীফে কতিপয় তাবেয়ীগণকে উসমানী আর একদলকে আলীয়ী বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তারা সবাইও গায়রে মুসলিম?
ওয়াসওয়াসা নং-৬
এক নবীর উম্মত হওয়া হিসেবে কি সকল উম্মতীদের নাম, আহলে হাদীস, হানাফী, শাফেয়ী, মালেকী, হাম্বলী, দেওবন্দী, বেরেলবী, সুন্নি, শিয়া ইত্যাদি হতে পারে?
উত্তর
এক আল্লাহর এক কুরআনের যেমন সাত কিরাত। তার মাঝের প্রতিটি কিরাতই পূর্ণাঙ্গ কুরআন। ঠিক তেমনি চার মাযহাবের মধ্য থেকে কোন একটি মাযহাবের অনুসরণ করা পুরো সুন্নতের উপরই আমল করা। যেমন সাত কিরাতকেই কুরআন বলা হয়, তেমনি সকল হানাফী, সকল শাফেয়ী, সকল হাম্বলী ও মালেকীদের উম্মতে মুহাম্মদীই বলা হয়। তবে ১৩৯৫ হিজরীর মাসঊদী ফিরক্বা রাসূল সাঃ কে ছেড়ে দিয়ে মাসউদ আহমদের অনুসরণকে আবশ্যক বিশ্বাসকারীরা সুনিশ্চিতভাবে এ উম্মত থেকে বেরিয়ে গেছে।
ওয়াসওয়াসা নং-৭
মাযহাবে খামসা তথা, হানাফী, শাফেয়ী, হাম্বলী, মালেকী ও আহলে হাদীস মাযহাব কি রাসূল সাঃ এর উপর নাজিল হয়েছিল?
উত্তর
যেখানে আপনি নিজেই স্বীকার করেছেন যে, চার ইমাম তাদের মাসআলা কুরআন ও হাদীসের আলোকে সমাধান করেছেন। আর তাদের মতামতগুলো সুন্নত এবং হক। তাহলেতো এসব আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে নাজিলকৃত বিষয়ের ব্যাখ্যাই হচ্ছে। আহলে হাদীসতো লা-মাযহাবী তথা ধর্ম-বিচ্যুত।
ওয়াসওয়াসা নং-৮
মাযহাবে খামসার সমষ্টি কি ইসলাম? নাকি প্রতিটি মাযহাব আলাদা আলাদা পূর্ণাঙ্গ ইসলাম?
উত্তর
চার মাযহাবের উপমা হল, কুরআনের সাত কিরাত। প্রতিটি কিরাতই পূর্ণাঙ্গ কুরআন। তেমনি প্রত্যেক মাযহাব পূর্ণাঙ্গ সুন্নত। আপনার এ সকল ওয়াসওয়াসা কুরআন ও সুন্নতের উপর ভিত্তিশীল নয়, বরং শিয়াদের থেকে চুরি করা। যদি আপনি চুরি প্রমাণিত হলে, হাত কাটাতে রাজি হন, তাহলে আমরা এর প্রমাণ উপস্থাপন করে দিব।
ওয়াসওয়াসা নং-৯
যদি মাযহাবে খামসার সমষ্টি ইসলাম হয়, তাহলে আল্লাহর নির্দেশ তথা “তোমরা ইসলামের মাঝে পরিপূর্ণভাবে প্রবিষ্ট হও [সূরা বাকারা-২০৮}” আয়াতের নির্দেশ হিসেবে এক মাযহাবের অনুসারীরা অন্য মাযহাবের অনুসরণ কেন করে না? শুধু একাংশের উপর কেন আমল করে?
উত্তর
আপনার এ ওয়াসওয়াসাটিও কিতাব ও সুন্নাহ এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে নাজিলকৃত বিষয়ের উপর নির্ভরশীল নয়, তবে শিয়াদের থেকে চুরিকৃত। যেমনিভাবে সাত কিরাতে কুরআন পড়া সকলের উপর জরুরী নয়, শুধু এক কিরাতে কুরআন তিলাওয়াত করলে, পুরো কুরআনের তিলাওয়াতের সওয়াব পাওয়া যায়।
আপনার মত মুর্খ ব্যক্তিরা হয়তো বলবে যে, এক কিরাতে কুরআন পড়লে কুরআনের একাংশ পড়া হল, আর বাকি ছয় অংশকে বাদ দিয়ে দেয়া হল।
মুর্খ সাহেব! রাসূল সাঃ এর রাস্তায় উঠার চারটি পথ। যদি এক রাস্তা দিয়ে উঠার দ্বারা উদ্দেশ্য পূর্ণ হয়ে যায়, তাহলে আরেক রাস্তা অনুসরণের প্রয়োজন কি? এক্ষেত্রে বলা যে, চার রাস্তায় পরিপূর্ণভাবে না চললে সে মূল উদ্দিষ্ট রাস্তা উঠতে পেরেছে বলে ধর্তব্য হবে না বলাটা মুর্খতা আর কি?
যে ফিরক্বার প্রতিষ্ঠাতার এতটুকু আকল নেই, এ ফিরক্বার অনুসারীদের কী অবস্থা?!
ওয়াসওয়াসা নং-১০
যদি এ মাযহাবে খামসার মাঝে পরিপূর্ণ দ্বীনে ইসলাম নিহিত। তাহলে কি রাসূল সাঃ এর পাঁচটি ইসলাম নাজিল হয়েছিল? নাকি একটি?
উত্তর
লক্ষ্য কুরুন! এ ওয়াসওয়াসারও কুরআন ও হাদীসের সাথে কোন সম্পর্ক নেই। বরং শিয়াদের থেকে চুরিকৃত। বলুনতো, যদি প্রতিটি কিরাতই পরিপূর্ণ কুরআন, তাহলে কি রাসূল সাঃ এর উপর সাত কুরআন নাজিল হয়েছিল? না এক কুরআন?
আপনি নিজেই চার মাযহাবকে হক স্বীকার করেছেন। তাহলে এ হকতো রাসূল সাঃ এর উপরই নাজিল হয়েছিল তাই নয়কি?
ওয়াসওয়াসা নং-১১
বর্তমানে একজন গায়রে মুসলিম ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পর এ মাযহাবে খামসার মধ্য থেকে কুরআন মাযহাব গ্রহণ করবে? সে কোন ফিরক্বার অন্তর্ভূক্ত হবে? যেন সে পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবিষ্ট হতে পারে?
উত্তর
এ ওয়াসওয়াসটিও কুরআন ও সুন্নতের উপর ভিত্তিশীল নয়। পাদ্রি ফান্ডার এবং সুয়ামী দয়ানন্দ থেকে চুরিকৃত। আপনার একজন ব্যক্তির ফিকির। অথচ এ উপমহাদেশে কোটি কাফের মুসলিম হয়েছে। তারা সাত কিরাতের মাঝে শুধুমাত্র এক কিরাত তথা কারী আসেমের কিরাতকেই গ্রহণ করেছে। কেননা, এ উপমহাদেশে কেবলমাত্র কারী আসেমের কিরাতই তিলাওয়াত হিসেবে মুতাওয়াতির ছিল। আর চার মাযহাবের মধ্য থেকে শুধু হানাফী মাযহাব গ্রহণ করেছে, কারণ এ উপমহাদেশে শুধু হানাফী মাযহাবই আমল হিসেবে মুতাওয়াতি ছিল। আর পুরো দুনিয়ার মুসলমানগন তাদের পাক্কা ও সাচ্চা মুসলমান হিসেবে মেনে নিয়েছে। আপনি নিজেও পাক্কা ও সাচ্চা মুসলমান হতে চাইলে সুন্নি হানাফী হয়ে যান।
ওয়াসওয়াসা নং-১২
যে মুসলমানরা এ মাযহাবে খামসাকে স্বীকার করে না। বা এর মাঝের একটিকে স্বীকার করে না, তারা কি কাফের? নাকি তার দ্বীনের মাঝে কোন অসম্পূর্ণতা রয়ে যাবে?
উত্তর
এ ওয়াসওয়াসাটিও কিতাব ও সুন্নতের উপর ভিত্তিশীল নয়। শিয়াদের থেকে চুরিকৃত। ইমাম তাহতাবী রহঃ বলেনঃ “যারা চার মাযহাব থেকে বাহিরে থাকবে, তারা বিদআতি এবং দোযখী”। শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দেসে দেহলবী রহঃ বলেনঃ “এ দেশে ইমাম আবূ হানীফা রহঃ এর তাকলীদ করা ওয়াজিব। আর এর থেকে বেরিয়ে যাওয়া হারাম। এ দেশে যে ইমাম সাহেব তাকলীদ না করবে, সে যেন রাসূল সাঃ এর শরীয়তের রশি নিজের কাঁধ থেকে ফেলে দিয়ে বেকার এবং অকর্মণ্য রয়ে গেল। {আল ইনসাফ}
আপনিও বলুন যে, যে ব্যক্তি মাসউদ সাহেবের উপর ঈমান না আনে, সে আপনাদের নিকট কাফের নাকি না?
ওয়াসওয়াসা নং-১৩
সুনানে আবু দাউদের একটি সহীহ হাদীসে রয়েছে যে, রাসূল সাঃ তার উম্মত তিহাত্তর অংশে বিভক্ত হয়ে যাবে মর্মে ভবিষ্যৎবাণী করেছেন। যার মাঝে বাহাত্তর দল জাহান্নামী হবে। একটি দল হবে জান্নাতী। জান্নাতী সেই দলটি কারা হবে?
উত্তর
জনাব! আপনি রাসূল সাঃ এর হাদীসকে কখনো আবু দাউদের হাদীস, কখনো বুখারী বা মুসলিমের হাদীস, কখনো মুস্তাদরাকে হাকীমের হাদীস লিখে চলছেন। রাসূল সাঃ কি কখনো স্বীয় হাদীসকে অনারবীদের দিকে নিসবত করে বুখারীর হাদীস, মুসলিমের হাদীস, কিংবা আবু দাউদের হাদীস বলেছেন?
যদি বলে থাকেন, তাহলে কুরআন ও হাদীস দ্বারা প্রমাণ পেশ করুন।
যদি তিনি তা না বলে থাকেন, তাহলে আপনি এ শরীয়ত বিকৃতি কেন শুরু করে দিলেন?
আপনি যদি আবু দাউদের হাদীসের সাথে তিরমিজীর হাদীসটিও দেখে নিতেন, তাহলে নাজাতপ্রাপ্ত জামাতের ব্যাপারে আপনার সন্দেহ হতো না। রাসূল সাঃ সেই নাজাতপ্রাপ্ত দলের ব্যাপারে স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন যে, তারা হল, ما انا عليه واصحابى তথা যারা রাসূল সাঃ এবং তার সাহাবীদের মত ও পথের উপর চলবে।
তাহলে রাসূল সাঃ এর সুন্নত এবং সাহাবায়ে কেরাম রাঃ এর জামাআতের অনুসারী ব্যক্তিরাই নাজাতপ্রাপ্ত সাব্যস্ত হচ্ছে। সে হিসেবে নাম হয়েছে আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআত। সুতরাং নাজাতপ্রাপ্ত দল হল আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআত।
যেমনিভাবে রাসূল সাঃ এবং সাহাবাগণের কুরআনকে আহলে সুন্নতের সাত কারীগণ সংকলিত করেছেন। আর তার মাঝে যে কিরাত যে দেশে মুতাওয়াতির হয়েছে, উক্ত দেশে উক্ত কিরাতে কুরআন তিলাওয়াত করা মানেই হল, নবী ও সাহাবীদের কুরআন তিলাওয়াত। ঠিক তেমনি রাসূল সাঃ এর সুন্নতকে আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতের চার ইমামগণ সংকলিত করেছেন। তাদের মাঝে যার মাযহাব যে দেশে আমল হিসেবে মুতাওয়াতি হবে, তার উপর আমল করাই হল, রাসূল সাঃ এবং সাহাবীগণের তরীকার উপর আমল করা। ১৩৯৫ হিজরীতে করাচিতে প্রতিষ্ঠিত নতুন প্রতিষ্ঠিত বিদআতি ফিরক্বাটি কি করে নাজাতপ্রাপ্ত দল হতে পারে?
ওয়াসওয়াসা নং-১৪
মাযহাবে খামসা তথা হানাফী, শাফেয়ী, মালেকী, হাম্বলী ও আহলে হাদীস মাযহাব কি রাসূল সাঃ এর জমানায় ছিল?
উত্তর
১৩৯৫ হিজরীতে আহলে হাদীস ফিরক্বার পেট থেকে প্রসব হওয়া ফিরক্বায়ে মাসঈদী সুনিশ্চিতভাবে রাসূল সাঃ এর জমানায় ছিল না। রাসূল সাঃ সাহাবাগণ আহলে সুন্নত ছিলেন। {ইবনে কাসীর}
আর তাদের মুখালিফ কিছু মুনাফিক ছিল। তারপর তাবেয়ীগণের জমানা থেকে আজ পর্যন্ত আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতের বিপরীত ছিল আহলে বিদআত। যাদের মাঝের একটি হল মাসঈদী ফিরক্বা।
ওয়াসওয়াসা নং-১৫
রাসূল সাঃ উল্লেখিত ফিরক্বার মধ্য থেকে কোন ফিরক্বার সাথে সম্পর্ক রাখতেন? যদি কোন বিশেষ ফিরক্বার সাথে সম্পর্ক রেখেই থাকেন, তাহলে এ আয়াত দ্বারা উদ্দেশ্য কি?
إِنَّ الَّذِينَ فَرَّقُوا دِينَهُمْ وَكَانُوا شِيَعًا لَّسْتَ مِنْهُمْ فِي شَيْءٍ ۚ [٦:١٥٩
নিশ্চয় যারা স্বীয় ধর্মকে খন্ড-বিখন্ড করেছে, এবং অনেক দল হয়ে গেছে, তাদের সাথে আপনার কোন সম্পর্ক নেই। {সূরা আনআম-১৫৯}
উত্তর
পূর্ণ হাদীস যেহেতু আপনার জানা নেই, তাই আপনি এ বোকামীসূলভ ওয়াসওয়াসটি প্রচার করছেন। ফিরক্বা সম্পর্কিত হাদীসটিতে রাসূল সাঃ আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতকে নাজাতপ্রাপ্ত দল সাব্যস্ত করেছেন। আর দল কতিপয় আক্বিদায় তাদের বিরোধীতা করে তাদেরকে ফিরক্বা সাব্যস্ত করেছেন।
আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতের দ্বীনের মাঝে সাহাবায়ে কেরামের মত কোন পার্থক্য নেই। হ্যাঁ, ইজতিহাদী মতভিন্নতা সাহাবায়ে কেরামদের মাঝেও ছিল। তেমনি চার ইমামের মাঝেও রয়েছে। এ ইজতিহাদী মতভিন্নতা সম্পর্ক এ হাদীসের ফিরক্বার সাথে কিছুতেই নয়।
মাসঈদী ফিরক্বা প্রতিষ্ঠাতা যেহেতু নিজেই মতভেদের প্রচারক তাই তিনি মতভিন্নতা! মতভিন্নতা বলে চিল্লিয়ে বেড়ান। আর উম্মতের মাঝে নতুন নতুন মতভিন্নতা সৃষ্টি করে চলেছেন।
তার একথা বুঝা উচিত যে, মতভিন্নতাতো কুরআনে কারীমের আয়াতের মাঝেও বিদ্যমান। মতভিন্নতা হাদীসের মাঝেও রয়েছে। ইজতিহাদী মতভিন্নতা সাহাবায়ে কেরামের মাঝেও ছিল। উসূলে হাদীসের মাঝে মুহাদ্দিসীনে কেরামেরও মতভিন্নতা রয়েছে। কোন হাদীসের সহীহ বা জঈফ হওয়ার ব্যাপারে মুহাদ্দিসীনে কেরামের মাঝেও রয়েছে মতভিন্নতা।
এই সকল মতভিন্নতাকেতো ফিরক্বা প্রতিষ্ঠাতা সাহেব সহ্য করে নিয়েছেন। এ সকল বিষয়ে বিভক্তির আয়াত তিলাওয়াত করে না।
সেই সাথেই নিজেই ১৩৯৫ হিজরীতে নতুন একটি ফিরক্বা বানিয়েছে, এ নতুন ফিরক্বা বানানোর সময় তার বিভক্তির আয়াতটি স্মরণে নেই। যেমনিভাবে মুনকিরীনে কুরআন তথা কুরআন অস্বিকারকারী যদি মতভিন্নতাপূর্ণ কোন আয়াত বা হাদীস পায়, তাহলে সেটিকে কুরআন হওয়াকেই মতভেদপূর্ণ প্রয়োগ করে। আর মুনকিরীনে হাদীসরা সেটিকে হাদীসই হওয়াটাই মতভেদপূর্ণ প্রচার করতে থাকে। আর সাহাবী অস্বিকারকারীরা সাহাবাগের মতভেদের উপর আর মুনকিরীনে আহলে বাইতেরা আহলে বাইতের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করার অপচেষ্টা করে থাকে।
“বক্তব্যকে স্বীয় স্থান থেকে সড়িয়ে ফেলে” আয়াতের উপর আমল করে তারা আয়াত ও হাদীসকে বেঠিক স্থানে ব্যবহার করে থাকে।
মাসঈদী ফিরক্বা প্রতিষ্ঠাতা নিজেই স্বীকার করে যে, মতভিন্নতা দুই প্রকার। যথা-১-শত্রুতাবশত। যা অভিশপ্ত। ২-ইজতিহাদী।
এ কারণেই সে তার স্বীয় তাফসীর গ্রন্থ তাফসীরে আজীজের ১ নং খন্ডের ৭৫১ খন্ডে লিখেছেঃ “মতভিন্নতা মানুষের একটি স্বভাবজাত বিষয়। তা মনের অজান্তেই হয়ে যায়”।
তারপর লিখেছেনঃ “ইজতিহাদী মতভিন্নতাতো আমলের মাঝে হতেই পারে। আর এটা সহনীয়। ইমামগণের মতভিন্নতা ইজতিহাদী ছিল। সেই সাথে তা ছিল শুধু আমলী বিষয়ে। {খুলাসা তালাশে হক-৬৬}
এ কেমন হালাত মাসঈদ সাহেবের? চার ইমামকে সঠিকও মানে, আবার বিরুদ্ধে অপপ্রচারও করে থাকে!
মতভিন্নতার উপমা
নামাযের মাঝে কিবলার দিকে মুখ করা নামাযের শর্তের অন্তর্ভূক্ত। এক ব্যক্তি শহরে রয়েছে। তার চোখের সামনে রয়েছে হাজারো মসজিদের মেহরাব। যার দ্বারা তার কিবলা ভাল করেই বুঝে আসছে। হাজারো নামাযী ব্যক্তি কিবলামুখী ফিরে নামায পড়তে দেখতে পাচ্ছে। কিবলা দিক নির্ণয়কারী লাখো মানুষ বিদ্যমান রয়েছে যারা বলে দিবে যে, কিবলা এখান থেকে পশ্চিম দিকে। এত পরিস্কার অবস্থানের পরও যদি কেউ পশ্চিম রেখে পূর্বের দিকে ফিরে নামায পড়ে, তাহলে তার এ মতভিন্নতা জিদ এবং বক্রতা ছাড়া আর কিছু নয়। এরকম মতভিন্নতার বদনামই করা হয়েছে কুরআন ও হাদীসের মাঝে।
কিন্তু চার ব্যক্তি এমন এক জঙ্গলে রয়েছে যে, সেখানে না আছে কোন মসজিদ। না আছে কোন নামাযী ব্যক্তি। না কোন ব্যক্তি আছে যে কিবলার দিকটি নির্ণয় করে দিবে। আসমানও মেঘাচ্ছন্ন, যার ফলে তারাকারাজীও চোখে পড়ছে না। এরকম ব্যক্তি কী করবে? তার ক্ষেত্রে শরয়ী হুকুম হল, সে চিন্তা-ভাবনা করে প্রবল ধারণা যেদিকে হবে সেটিকেই কিবলা নির্ধারণ করে নামায পড়ে নিবে।
এ চিন্তা-ভাবনা করার মাঝে তাদের মাঝে যদি মতভিন্নতা হয়ে যায়। ফলে চারজন চারদিকে ইজতিহাদ করে নামায পড়ে নিল। নামায পড়ার পর জানতে পারল যে, তাদের একজন পশ্চিম দিকে, আরেকজন পূর্ব দিকে, আরেক জন দক্ষিণ দিকে আর অপরজন উত্তর দিকে ফিরে নামায পড়েছে। তাহলে এ চারজনের মাঝে সুনিশ্চিতভাবে একজন ব্যক্তিই কেবল কিবলামুখী হয়ে নামায পড়েছে। আর বাকি চারজনই কিবলামুখী হয়ে নাামায পড়েনি।
কিন্তু তারপরও এ চারজনের নামাযই সহীহ হয়েছে মর্মে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা উক্ত চারজনের নামাযই সঠিক বলে ঘোষনা দিয়েছেন। কিন্তু মাসঈদ সাহেব তাদের উপর বিভক্তির আয়াত ফিট করে তাদের উপর কুফরীর ফাতওয়া জারি করে দিলেন!
যেন আল্লাহ তাআলাকে বুঝাচ্ছে যে, তোমার শরীয়ত মোতাবিক কিবলামুখী হয়ে নামায পড়া হালাল। আর কিবলার দিকে পিঠ দিয়ে নামায পড়া হারাম। এ দুই নামাযের মাঝে হালার ও হারামের পার্থক্য। তারপরও আপনি কি করে উভয় নামাযকে গ্রহণীয় করে নিলেন?
আল্লাহ তাআলার ফরমান হল যে, তাদের সামর্থে এর চেয়ে বেশি কিছু করার ছিল না। তাই আমি আমার রহমাতে তাদের চারজনের নামাযই কবুল করে নিয়েছি। তুমি কোন আহমক হে! যে আমার এবং আমার বান্দার মাঝের বিষয়ের মাঝে নাক গলায়? দূর হ শয়তান!
ওয়াসওয়াসা নং-১৬
রাসূল সাঃ জামাআতুল মুসলিমীনের সাথে অন্তর্ভূক্ত থাকার আদেশ দিয়েছেন। [বুখারী, হাকেম] আর ফিরক্বা থেকে পৃথক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।
উত্তর
জামাআতুল ইসলাম দ্বারা দুটি উদ্দেশ্য বলে আহলে ইসলামগণ বলেছেন। যথা-
১-দ্বীনী মাসাআলে ইজমা।
২-সিয়াসী তথা রাজনৈতিক মাসআলায় মুসলিম খলীফাদের অনুসরণ।
আলহামদুলিল্লাহ! আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতগণ সর্বদাই ইজমাকে মেনে থাকে। আর ইসলামী খলীফাদের মাঝে অধিকাংশই সুন্নি হানাফী ছিলেন। আব্বাসী খিলাফত প্রায় পাঁচশত বছর যাবত প্রতিষ্ঠিত ছিল। সেসময় অধিকাংশ বিচারক ও মুফতী ছিল হানাফী। সালজুকী এবং খারজামীরা প্রায় চারশত বছর যাবত খলীফার মসনদে ছিল। এদের সবাই ছিল সুন্নী হানাফী। সেসময় বাইতুল্লাহে চারটি জায়নামায রাখা হতো।
উসমানী খিলাফত প্রতিষ্ঠিত ছিল প্রায় সাড়ে চারশত বছর। তারা সবাই ছিলেন সুন্নি হানাফী। সে সময়ও চারটি জায়নামাযের সাথে চার প্রকার বিচারকও নিয়োগ দেয়া হয়।
“জামাআতুল মুসলিমীন ও তার ইমামদের মান্য কর” হাদীস দিয়ে এ ফিরক্বা প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ লোকদের ধোঁকা দিচ্ছে। এ হাদীসকে ইমাম বুখারী, ইমাম মুসলিম, ইমাম আবু দাউদ এ তিনজনই কিতাবুল ফিতান তথা ফিতনার অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন।
আবু দাউদে এর পর হাদীস এসেছে, لَوْ أَنَّ رَجُلًا نَتَجَ فَرَسًا، لَمْ تُنْتَجْ حَتَّى تَقُومَ السَّاعَةُ তথা কোন ব্যক্তি যদি ঘুড়ির বাচ্চা প্রসব করাতে থাকে, তাহলে প্রসব সম্পন্ন হওয়ার আগেই কিয়ামত এসে যাবে। {সুনানে আবু দাউদ-২/৫৮৩, হাদীস নং-৪২৪৭}
মাসউদ সাহেবের জমানায় কি ঘুড়ি বাচ্চা প্রসব করেনি?
আফসোস! হাদীসের অপব্যাবহারের ক্ষেত্রে মাসউদ সাহেব ইহুদীদেরও পিছনে ফেলে দিয়েছেন। ইমাম মুসলিম রহঃ সহীহ মুসলিমে এ বিষয়ে আরো বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন, যথা- يَكُونُ بَعْدِي أَئِمَّةٌ لَا يَهْتَدُونَ بِهُدَايَ، وَلَا يَسْتَنُّونَ بِسُنَّتِي، وَسَيَقُومُ فِيهِمْ رِجَالٌ قُلُوبُهُمْ قُلُوبُ الشَّيَاطِينِ فِي جُثْمَانِ إِنْسٍ
তথা আমার পর এমন ইমাম ও আমীর হবে, যারা আহলে সুন্নতের অন্তর্ভূক্ত হবে না, তাদের মাঝে এমন লোক হবে যারা দেখতে হবে মানুষের মত কিন্তু মনের দিক থেকে হবে পশুর মত। {সহীহ মুসলিম২/১২৭, হাদীস নং-১৮৪৭}
মাসউদ সাহেব! ভাল করে বুঝে নিন! হাদীসের জামাআতুল মুসলিমীন হল আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআত। আর আহলে সুন্নতের বিরোধিতা করে জামাআতুস শয়তান অস্তিত্বে আসবে।
আপনারা কেউ যদি আহলে সুন্নতের বিরোধী আহলুশ শয়তান দেখতে চান তাহলে নর্থ নাজিমাবাদ করাচির কাউসার নিয়াজীর কলোনীতে চলে আসুন!
ওয়াসওয়াসা নং-১৭
কোন ফিরক্বা জামাআতুল মুসলিমীন? যাদের সাথে মিলে থাকতে হবে?
উত্তর
আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআত। যাদের রাসূল সাঃ প্রথম থেকেই নাজাতপ্রাপ্ত জামাত বলে ঘোষণা দিয়েছেন। ১৩৯৫ হিজরীর বিদআতি ফিরক্বা কিছুতেই উদ্দেশ্য নয় রাসূল সাঃ এর বলা জামাআতুল মুসলিমীন দ্বারা।
বরং এ মাসউদী ফিরক্বার প্রতিষ্ঠাতা এ হাদীসের সবচে’ বড় অস্বিকাকারী। কারণ, রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, যদি জামাআতুল মুসলিমীনের ইমাম না পাওয়া যায়, তাহলে বলা হয়েছে, সবার চেয়ে আলাদা হয়ে যেতে, এবং গাছের শিকড়ের সাথে মিলে মারা যেতে।
১৩৯৫ হিজরীর আগে মাসউদ সাহেবের খেয়ালেও জামাআতুল মুসলিমীন ছিল না। না ছিল এর দফতর। না কোন লেখা, না আমীর। তাহলে সে সময় তাদের জন্য উচিত ছিল কোন গাছের শিকড়ের সাথে ঝাপ্টে ধরে মরে যাওয়া।
রাসূল সাঃ একথা কোথাও বলেননি যে, জামাআতুল মুসলিমীন নামে কোন সংগঠন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এ কারণে এ লোক স্পষ্টতই রাসূল সাঃ কে অস্বিকারকারী। আমীরুল মুসলিমীন নয়। বরঞ্চ মুসলিম শরীফের পরবর্তী বর্ণনার একটিতে এই এসেছে যে,
مَنْ أَتَاكُمْ وَأَمْرُكُمْ جَمِيعٌ عَلَى رَجُلٍ وَاحِدٍ، يُرِيدُ أَنْ يَشُقَّ عَصَاكُمْ، أَوْ يُفَرِّقَ جَمَاعَتَكُمْ، فَاقْتُلُوهُ
তথা যদি কোন ব্যক্তি আসে এমতাবস্থায় যে, তোমরা সবাই এক ব্যক্তির সাথে ঐক্যমত্ব হয়ে আছো, [যেমন এ উপমহাদেশে সবাই ইমাম আবু হানীফা রহঃ কে ইমাম মেনে হাজার বছর যাবত একত্রিত হয়ে আছে] যে তোমাদের জামাআতে মাঝে বিভক্তি সৃষ্টি করতে চায়, তাহলে তাকে হত্যা করে ফেল। {সহীহ মুসলিম-২/১২৮, হাদীস নং-১৮৫২}
রাসূল সাঃ নির্দেশতো হল, তাকে হত্যা করে ফেলা। অথচ সে বলছে তাকে অনুসরণ করছে।
ওয়াসওয়াসা নং-১৮
যে ব্যক্তি জামাআতুল মুসলিমীনের সাথে সম্পর্ক না রাখবে, সে ব্যক্তি কি মুস্তাদরাকে হাকীমের নি¤েœর বর্ণনার আলোকে মুমিন হবে?
উত্তর
জামাআতুল মুসলিমীনতো মূলত আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআত। সুতরাং যারা তাদের সাথে সম্পর্ক না রাখবে, তারাতো অবশ্যই বিদআতি এবং জাহান্নামী হবে। জামাআতুল মুসলিমীন দ্বারা উদ্দেশ্য মাসউদ সাহেবের বিদআতি ফিরক্বা নয়। যা ১৩৯৫ হিজরীতে সৃষ্টি হয়েছে। যার আমীন নিজেই ১৩৯৫ হিজরীর আগ পর্যন্ত নিজেই ছিল মুশরিক। তারপর ১৩৯৫ হিজরীতে এসে সকল দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গাছের শিকড় আঁকড়ে ধরার বদলে কৃত্রিম জামাআতুল মুসলিমীন বানিয়ে নিয়েছে। সেই সাথে মুসলমানদের মাঝে এক নতুন ফিতনার জন্ম দিয়েছে। এর ব্যাপারেই রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছিলেন যে, শরিরের দিক থেকে হবে মানুষ কিন্তু মনের দিক থেকে হবে শয়তান।
ওয়াসওয়াসা নং-১৯
যে ব্যক্তি সহীহ বুখারী এবং সহীহ মুসলিমের হাদীস অনুপাতে সকল ফিরক্বা থেকে আলাদা হয়নি, সে কি রাসূল সাঃ এর ফরমানের নাফরমান হয়নি? অথচ রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন যে, যে ব্যক্তি আমার নাফরমানী করল, সে যেন [জান্নাতে প্রবেশ হতে] অস্বিকার করে দিল।
উত্তর
আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআত সূচনালগ্ন থেকেই সকল ফিরক্বা থেকে আলাদা। রাসূল সাঃ এর সুন্নত এবং সাহাবায়ে কেরামরে জামাআতের সাথে সম্পৃক্ত। বুখারী, মুসলিম ও আবু দাউদের হাদীস আহলে সুন্নতের নিকট বর্তমান জমানার সাথে সম্পৃক্ত নয়, বরং তা কিয়ামতের পূর্বমুহর্তের সাথে সম্পৃক্ত।
কিন্তু মাসউদ সাহেব এ হাদীসের সাথে নাফরমানী করে নিজের এবং নিজের ফিরক্বার জন্য সর্বদার জন্য জান্নাতকে হারাম করে দিয়েছে। কেননা, তাদের জন্য সকল ফিরক্বা থেকে পৃথক হয়ে গাছের শিকড় ধরে বসে থাকার কথা। নতুন আর কৃত্রিম জামাআতুল মুসলিমীন বানানোর হুকুম ছিল না।
হ্যাঁ, তওবার দরজা এখনো খোলা আছে। যদি নিজের বিদআতি ফিরক্বা ছেড়ে, আর সকল বিদআতি ফিরক্বা থেকে আলাদা হয়ে জান্নাতী জামাআতুল মুসলিমীন আহলে সুন্নত ওয়াল জামআতের সাথে শরীক হয়ে যায়, তাহলে আশা করা যায় যে, তার গোনাহ আল্লাহ তাআলা মাফ করে দিবেন।