লেখক– মুনাজিরে ইসলাম মাওলানা মুহাম্মদ আমীন সফদর ওকাড়বী রহঃ
অনুবাদঃ লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
মাওলানা
মুহাম্মদ আমীন সফদর রহঃ একবার মুখ দিয়ে উচ্চারণ করলেন মাওলানা। তখন এক কথিত আহলে হাদীস শোরগোল শুরু করে দিল-“তওবা! তওবা! আল্লাহ ছাড়া কাউকে মাওলানা ডাকা শিরক ও কুফরী”।
আমি বললাম-এই দেখুন “তাউযীহুল কালাম” এতে লিখা আছে যে, মাওলানা ইরশাদুল হক আসরী। তারপর লিখা মাওলানা আজীজ যুবাইদী। আর সালাতুর রাসূলে লিখা আছে-“মাওলানা মুহাম্মদ সাদেক শিয়ালকুঠি। মাওলানা মুহাম্মদ দাউদ গজনবী, মাওলানা মুহাম্মদ ইসমাঈল, মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ সানী, মাওলানা নূর হুসাইন গুজরাটি, মাওলানা আহমাদ দ্বীন, মাওলানা মুহাম্মদ গুন্ধলুয়ী। কি এ সবাই মুশরিক? একটু ভেবে চিন্তে ফাতওয়া দিন না। সে তৎক্ষণাৎ বলে বসল-“আমরা তাদের মানি না”।আমি বললাম-“আপনি কি তাদের মুসলমান মানে না, নাকি আহলে হাদীস মানে না?”
-আমি তাদের আল্লাহ ও রাসূল মানি না।
-আমিতো তাদের আল্লাহ ও রাসূল বলেতো উপস্থাপন করি নি। এরা আপনার গায়রে মুকাল্লিদ মাওলানা। কি আপনি তাদের নাম নিয়ে মুশরিক বলেন? তাদের কাছেতো কি মাওলানা বলা জায়েজ।
-তারা কি আল্লাহ নাকি যে, তাদের কথা মানতে হবে?
-কি আপনি আল্লাহ নাকি যে, আমি আপনার কথা মেনে বলব-“মাওলানা বলা শিরক?”
-আমিতো প্রত্যেক ঐ ব্যক্তিকে মুশরিক বলি যে, আল্লাহ ছাড়া কাউকে মাওলানা ডাকে।
-আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন- وَهُوَكَلٌّعَلَىمَوْلاهُঅর্থাৎ সে তার মনীবের উপর বোঝা (সূরা নাহল-৭৬) এখানে আল্লাহ তায়ালা গোলামের মনীবকে মাওলা বলেছেন। আল্লাহ তায়ালা কি তাহলে মুশরিক? [নাউজুবিল্লাহ]।রাসূল সাঃ হযরত যায়েদ বিন হারেসা রা. কে বলেছেন-انتاخوناومولاناঅর্থাৎ “তুমি আমার ভাই এবং মাওলানা”(বুখারী শরীফ-১/৫২৮)
বরং নবীজী সা. গোলামদের শিখিয়েছেন যেন গোলামরা তার মনীবকে বলে-“সাইয়্যিদী ওয়া মাওলায়ী”। (বুখারী শরীফ-১/৩৪৬)
ইমাম হাসান রাহ. কে মানুষ মাওলানা হাসান বসরী রহ. ডাকতো (তাহযীবুত তাহযীব-২/২৬৩, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া-৯/২৬৬, সিয়ারু আ’লামিন নুবালা-৪/৫৭৩)
কি আল্লাহ তায়ালা এবং তার রাসূল সাঃ এবং এ সকল লোক মুশরিক?
চুপ হয়ে গেল এবার লোকটি। তারপর আমি আবার আসল কথার দিকে এলাম। আপনাদের কাছে সহীহ হাদীসকে অস্বিকার করার জন্য আশ্চর্য ধরণের শর্ত রয়েছে। আপনাদের শায়েখুল কুল মিয়া নজীর হুসাইন সাহেব এক স্থানে লিখেছেন- যেহেতু প্রশংসাকারীরা যেসব বানোয়াট গল্প সনদহীনভাবে সহীহের ফযীলতের ব্যাপারে ইমাম আবু হানীফা থেকে বর্ণনা করেন, তা ইমাম আবু হানীফা রহঃ পর্যন্ত সহীহ নিরবচ্ছিন্ন [মুত্তাসিল] ও ধারাবহিক আমলের সাথে [মুসালসাল] পৌঁছে না। {মেয়ারে হক-১৯}
যখন একটি ঐতিহাসিক ঘটনার জন্য আপনাদের শাইখুল কুল তিনটি শর্ত আরোপ করেছেন, আর হাদীসের বিষয়তো ইতিহাস থেকে অনেক উপরে।
প্রথম শর্ত আরোপ করেছেন সহীহের। যার দ্বারা হাসান হাদীস বেরিয়ে গেছে। সকল হাসান হাদীসকে অস্বিকার করা হল।
দ্বিতীয় শর্ত হল মুত্তাসিল বলা হল। এর দ্বারা তালীকাত ও মুনক্বাতে’ ও মুরসাল হাদীস সবই বেরিয়ে গেল। সেই সাথে হাদীসের এসব প্রকারকে মানতে অস্বিকার করা হল।
তৃতীয় শর্ত হল মুসালসাল। অর্থাৎ সনদের প্রতিটি বর্ণনাকারী যতক্ষণ পর্যন্ত হাদীসের উপর ধারাবাহিক আমল প্রমাণিত না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত এ হাদীসের উপর আমল করা জায়েজ নয়। এ শর্তের দ্বারাতো হাজারের মাঝে এক হাদীসও আমলের যোগ্য বাকি থাকবে না।
আমি তাকে বললাম-আপনি কি এ তিন শর্ত কোন আয়াত বা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত করতে পারবেন? যেখানে রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেন-প্রত্যেক ঐ শর্ত যা কিতাবুল্লাহ এ নেই তা বাতিল। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-২৫৮৪, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৩৮৫০}
কিন্তু এ লোক কুরআন বা হাদীস থেকে এসব কিভাবে দেখাবে?
আমি তাকে বললাম-আপনাদের মসজিদে মতভিন্নতাপূর্ণ মাসআলার ব্যাপারে ঘোষণাপত্র লাগানো থাকে, যাতে স্পষ্ট ভাষায় শর্ত লিখা হয় যে, সহীহ, সরীহ, মারফু ও গায়রে মাজরুহ হাদীস দেখাতে হবে।
লক্ষ্য করুন- কাদিয়ানীরাও কিন্তু এ শর্তই লাগায় যে, রাসূল সাঃ পর কোন শরীয়তহীন নবী আসবে না, এ মর্মে সহীহ হাদীস দেখাও। আর সহীহ হাদীস দেখাও যে, হযরত ঈসা আঃ স্বশরীওে চতুর্থ আসমানে উঠিয়ে নেয়া হয়েছে।
এসব কথা বলে কাদিয়ানীরা খতমে নব্ওুয়ত ও ঈসা আঃ এর জীবিত থাকা এবং পুনরায় আগমন সম্বলিত সকল মুতাওয়াতির হাদীসকে অস্বিকার করে দেয়। যেহেতু যে শব্দ তারা চাচ্ছে তা রাসূল সাঃ থেকে বলাতে পারেনি, আর যে শব্দ রাসূল সাঃ খোদ বলেছেন সেটাও তারা মানবে না, যেহেতু তা সরীহ না। সেই সাথে মারফু শর্ত লাগিয়ে মাকতু, ও মওকুফ হাদীসকে অস্বিকার করে দেয়।
আপনি কি আপনাদের শর্ত অনুযায়ী তথা হাদীস সহীহ, সরীহ, মারফু ও গায়রে মাজরুহ হওয়ার শর্তে একটি হাদীস দেখান, যাতে বলা হয়েছে যে, শরীয়তের দলিল শুধুমাত্র হাদীস সহীহ, সরীহ, মারফু ও গায়রে মাজরুহ হওয়ার মাঝে সীমাবদ্ধ?
মোটকথা হল ওরা হাদীসের ক্ষেত্রে এমন এমন শর্ত আরোপ করে যে, কমপক্ষে ৯৫ পার্সেন্ট হাদীসই অস্বিকার হয়ে যায়।
রহিত হওয়া হাদীস
সমগ্র মুসলিম উম্মাহের ঐক্যমত্ব যে, রহিত হওয়া হাদীসের উপর আমল করা জায়েজ নয়। হযরত ইমাম আবু ইউসুফ রহঃ বলেন-
ليسعلىالعامىالعملبالحديثلعدمعلمهبالناسخوالمنسوخ
সাধারণ মানুষের জন্য হাদীসের উপর আমল করা জায়েজ নেই হাদীসের নাসেখ তথা রহিতকারী ও মানসুখ তথা রহিত সম্পর্কে জানা ব্যতিত। {মিয়ারুল হক-৩৯ বাহরুর রায়েকের বরাতে}
সাধারণ মানুষের জন্য ফুক্বাহাদের পথপ্রদর্শন ছাড়া হাদীসের উপর আমল করা জায়েজ নয়। কেননা তাদের নাসেখ মানসুখ সম্পর্কে কোন জ্ঞান নেই। এ কারণে ফুক্বাহাদের থেকে গবেষণা থেকে জেনে তারপর নাসেখ হাদীসের উপর আমল করবে, মানসুখ হাদীসের উপর আমল করবে না। কিন্তু আপনাদের শায়খুল কুল বলেন-যদি কোন ব্যক্তি নিজে গবেষণা করে কোন হাদীসের উপর আমল করে যদিও উক্ত হাদীসটি মানসুখ হয়ে থাকে, তাহলেও সে উক্ত হাদীসের উপর আমল করার কারণে গোনাহগার হবে না, সেই সাথে মানসুখ হওয়া হাদীসের উপর করার কারণে তার আমল বাতিলও হবে না, এবং পুনরায় তা আদায়ও করতে হবে না। {মেয়ারুল হক-৪১}
এবার দেখুন- আহলে সুন্নাতের উপর জিদ করে মানসুখ হাদীদের উপর আমল করারও অনুমতি প্রদান করা হল। এজন্যই আজকাল কথিত আহলে হাদীসদের পরিভাষায় মানসুখ হাদীসের উপর আমলকারীদের বলা হয় আহলে হাদীস, আর নাসেখ হাদীসের উপর আমলকারীদের বলা হয় আহলে রায়।
যা মনে চায়, তাতেই স্বীয় কারিশমা দেখান।
জিদ
লোকটি [কথিত আহলে হাদীস] বলতে লাগল-আহলে হাদীসরা জিদ করে না।
আমি বললাম-আপনার পড়াশোনা খুবই কম এবং সীমাবদ্ধ। কারণ-
[১]
আমাদের কাছে মাসআলা হল-নামাযী ব্যক্তির শরীর পাক থাকা নামায পড়ার জন্য শর্ত। নাপাক ব্যক্তি নামায পড়লে নামায হবে না। অথচ আপনাদের নওয়াব সিদ্দিক হাসান খান সাহেব শুধুমাত্র জিদের বশে এ সহীহ মাসআলাটিকে অস্বিকার করে দিয়েছেন। লিখেছেন-
پسمصلیبانجاستبدنآثمستنمازشباطلنيست (بدورالأهله-38)
অর্থাৎ শরীরে নাপাক [পায়খানা পেশাব] সহ হলেও সে গোনাহগার হবে, তবে তার নামায বাতিল হবে না, বরং হয়ে যাবে। {বুদুরুল আহিল্লাহ-৩৮}
বলুনতো এটাকে জিদ বলে না, তো কী বলে?
[২]
আমাদের মতে নামায সহীহ হওয়ার জন্য কাপড় পাক থাকাও শর্ত। কিন্তু এক্ষেত্রে জিদের বশবর্তী হয়ে এখানেও লিখে দেযা হয়েছে যে,
ہرکہدرجامہناپکنمازگزاردنمازشصحیحباشد (عرفالجادى-22)
অর্থাৎ যে ব্যক্তি নাপাক [যেমন হায়েজের রক্তে রঞ্জিত] কাপড় পরিধান করে নামায পড়ে তাহলে তার নামায সহীহ হয়ে যাবে। {আরফুল জাদী-২২}
[৩]
আমাদের মতে নামায সহীহ হওয়ার জন্য নামাযের স্থান পাক হওয়াও জরুরী। নাপাক স্থানে নামায হবে না। কিন্তু এটাকেও শুধুমাত্র জিদের বশে অস্বিকার করা হল। নওয়াব সিদ্দিক হাসান সাহেব লিখেন-
طهارت مكان واجب ست نہ شرط صحت نماز (عرف الجادى-21)
স্থান পবিত্র থাকা ওয়াজিব, কিন্তু নামায সহীহ হওয়ার জন্য শর্ত নয়। {আরফুর জাদী-২১}
[৪]
এমনিভাবে আমাদের মতে নামাযের সময় লজ্জাস্থানকে ঢেকে রাখা আবশ্যক। নতুবা নামায হবে না।
কিন্তু জিদের কারিশমা দেখুন, তিনি লিখেছেন-
ہرکہدرنمازعورتشنمایاںشدنمازشصحیحباشد (عرفالجادى-22)
অর্থাৎ নামায অবস্থায় যার লজ্জাস্থান খোলা থাকে তার নামায বিলকুল হয়ে যায়। {আরফুল জাদী-২২}
[৫]
এমনিভাবে নামায সহীহ হওয়ার জন্য শর্ত হল- নামাযের সময় হতে হবে। নামাযের সময় হওয়ার আগে নামায পড়লে হবে না।
অথচ কথিত আহলে হাদীসদের ফাতওয়ার কিতাবে লিখা হয়েছে যে,
“যদি আসরের পর ফুটবল খেলতে হয়, তাহলে আসরের নামায যোহরের সাথে পড়ে নিবে”।{ফাতওয়ায়ে সানায়িয়্যাহ-১/৬৩১}
[৬]
আমাদের মতে কাফেরের পিছনে নামায শুদ্ধ হয় না, কিন্তু নওয়াব অহীদুজ্জামান পরিস্কার ভাষায় লিখেছেন-
“কাফেরের পিছনে নামায পড়লে তা আর দোহরিয়ে পড়তে হবে না। {নুজুলুল আবরার-১/১০১}
আপনাদের শাইখুল ইসলাম মাওলানা সানাউল্লাহ সাহেব এর ফাতওয়া এটা ছিল যে, মির্যায়ীদের [কাদিয়ানী] পিছনে নামায পড়া জায়েজ আছে। শুধু তাই নয়, তিনি মির্যায়ীদের [কাদিয়ানী] পিছনে নামায পড়তেনও। {ফায়সালায়ে মক্কা-৩৬}
আর আপনাদের মুনাজিরে ইসলাম মাওলানা এনায়েতুল্লাহ আসরী ও মির্যায়ীদের পিছনে নামায পড়তেন।
ইসলামী ফিক্বহের বিরোধিতা
সে লোকটি [কথিত আহলে হাদীস] বলতে লাগল- ফিক্বহের বিরোধিতা কোন ধরণের কুফরী? ঊরং ফিক্বহের বিরোধিতাতো করাই উচিত। যেন মানুষ ফিক্বহ ছেড়ে দেয়।
আমি তাকে বললাম- ফিক্বহের মাসআলাতো কুরআন ও সুন্নাহ নির্ভর। তাহলে ফিক্বহ অস্বিকার করা মানেতো কুরআন ও সুন্নাহ অস্বিকার।
আমি তাকে আরো বললাম- আপনি আপনার মসজিদে এ জিহাদ শুরু করে দিন যে, ভাই! ফিক্বহের বিরোধিতা করতে হবে, তাই আসরের সময় খেলার সময়, তাই আসরের নামায পৌনে একটা সময় পড়ে নিন। নামাযের স্থানে পায়খানা লেপে নিন, আর শরীওে পেশাব দিয়ে মেখে নিন, কাপড়ে হায়েজের রক্তে রঙ্গীন করে পরিধান করুন, কিন্তু লজ্জাস্থান খোলা রাখুন, আর নামাযের ইমাম একজন কাফেরকে বানিয়ে নিন, তারপর নামাযের শুরুতে আর শেষে জোরে ধ্বনী তুলুন যে, “ফিক্বহের বিরোধিতা কোন কুফরী কাজ নয়, পা বাড়ান আর ফিক্বহের বিরোধিতায় অংশ নিয়ে উভয় জগতে সওয়াব অর্জন করুন, মাসলাকে আহলে হাদীস জিন্দাবাদ”।
নবীজী সাঃ এর বিরোধিতা
লোকটি [কথিত আহলে হাদীস] জোশের সাথে বলতে লাগল- “আপনারা নবীজী সাঃ এর কালিমা পড়েন, কিন্তু তার কথা মানেন না। বরং তার উল্টো ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর কথা মানেন”।
আমি তাকে বললাম-“একথাটিই আপনাদের বড় ভাই কথিত আহলে কুরআনরা আপনাদের ব্যাপারে বলে থাকে যে, ‘এ লোকেরা দাবী করে যে, তাদের খালেক তথা স্রষ্টা আল্লাহ, আর তারা হল তাঁরই বান্দা। অথচ খালিক আল্লাহর বিপরীত মাখলুক রাসূল সাঃ এর কথা মানে। কুরআনের বিরোধিতা আহলে হাদীসদের মূল প্রণোদনা। তারা তালাশ করে করে এমন সব হাদীসের উপর আমল করে যা কুরআন বিরোধী’।
আমি আপনার কাছে জানতে চাই যে, আপনি আমাদের উসুলে ফিক্বহ তথা ফিক্বহের মূলনীতির কিতাব থেকে একটি সনদসহ রেফারেন্স দেখান,যেখানে লেখা আছে যে, রাসূল সাঃ এর বিপরীত কোন ইমামের কথা মানা যায়। অথবা একটি হানাফী কিতাবের রেফারেন্স দিন, যাতে কোন ইমামে হানাফী একথা লিখেছেন যে, রাসূল সাঃ এর বক্তব্যতো এটা, কিন্তু আমি রাসূল সাঃ এর বক্তব্যের বিপরীত ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর বিপরীতমুখী বক্তব্য মানি। একটি রেফারেন্স দিন, অথবা মিথ্যা বলা থেকে বিরত থাকুন”।
লোকটি বলতে লাগল- “দেখুন! রাসূল সাঃ বলেছেন যে, ফাতেহা ছাড়া নামায হয়না, আর তোমরা এ হাদীসকে মান না। ইমাম আবু হানীফার কথা মান”।
আমি তাকে বললাম-“প্রিয় ভ্রাতা! এটাতো আপনার কথা, কোন হানাফী একথা লিখেনি যে, ‘আমরা এ মাসআলায় রাসূল সাঃ এর কথা মানি না, বরং ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর কথা মানি’।
আপনি স্বীয় কথার উপর রেফারেন্স দেখান, কোথায় একথা লিখা আছে?
আসল কথা শুনে রাখুন। এ মাসআলায় মূলত হানাফীরা পূর্ণ হাদীস মানে, আর গায়রে মুকাল্লিদরা মানে হল আধা। আর এটা কত বড় জুলুম যে, যে ব্যক্তি পূর্ণ হাদীস মানে তার নাম যুক্তিপূজারী, আর যে অর্ধেক হাদীস মানে তার নাম আহলে হাদীস!
এবার শুনুন! হুজুর সাঃ এর পূর্ণ হাদীস হল- ঐ ব্যক্তির নামায হয় না, যে ব্যক্তি সূরায়ে ফাতিহা এবং এছাড়া কুরআনের আর কিছু না পড়ে। দেখুন-
১-রাবী উবাদা রাঃ
# সহীহ মুসলিম- -১/১৬৯
# মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক-২/৯২
# সুনানে নাসায়ী-১/১৪৫
# সুনানে আবু দাউদ-১/১১৯
২-রাবী-আবু হুরায়রা রাঃ
# সুনানে আবু দাউদ-১/১১৮
# হাকেম-১/২৩৯
৩-রাবী-আবু সাঈদ খুদরী রাঃ
# মুসনাদে আহমাদ-৩/৩
# আবু দাউদ-১/১১৮
৪-রাবী-ইমরান বিন হুসাইন বিন আদী রাঃ
# আবু দাউদ-১৩০
৫-রাবী- আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ আল আনসারী রাঃ
# নসবুর রায়াহ-১/৩৬৫
৬– রাবী-আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাঃ
# আল কামেল-৫/২৯
৭-রাবী-হযরত আয়শা বিন আবু বকর রাঃ
# আল কামেল-৪/৩২
৮-রাবী- জাবের বিন আব্দুল্লাহ রাঃ
# মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা-১/৩৬
এ আট সাহাবীতো স্পষ্ট বর্ণনা করেন যে, যে যদি নামাযে সূরা ফাতিহা ও এছাড়া আরো কুরআন না পড়া হয়, তাহলে সে নামায হবে না। আর রাসূল সাঃ সূরা ফাতিহা পড়ার পর অন্য কিরাত পড়েছেন মর্মে মুতাওয়াতির সূত্রে হাদীস রয়েছে।
নামাযে কিরাত সম্পর্কীয় দু’টি অংশ মুতাওয়াতির সূত্রে হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। এক হল সূরা ফাতিহা পড়া, দ্বিতীয় হল সূরা ফাতিহার পর যেকোন সূরা পড়া, এছাড়া নামায হবে না মর্মে রাসূল সাঃ ঘোষণা দিয়েছেন।
এ কারণে আমরা কিরাতের এ দু’টি অংশকে একই হুকুম হিসেবেই মানি। তাই বলে থাকি যে, নামাযে সূরা ফাতেহা পড়াও ওয়াজিব। সূরা মিলানোও ওয়াজিব।
পক্ষান্তরে গায়রে মুকাল্লিদ তথা কথিত আহলে হাদীসরা বলে থাকে যে, নামাযে সূরা ফাতিহা পড়াতো ফরজ কিন্তু সূরা মিলানো জরুরী নয়।
এবার বলুনতো- এ মাসআলায় হাদীস কি হানাফীরা অস্বিকার করল না কথিত আহলে হাদীসরা?
রাসূল সাঃ এর হাদীস দ্বারা যখন একথা প্রমাণিত হল যে, সূরা ফাতিহার সাথে সূরা মিলানোও নামায সহীহ হওয়ার জন্য শর্ত, তখন আরেকটি বিষয় পরিস্কার হয়ে গেল। সেটা হল- এ হাদীসের সাথে মুক্তাদীর কোন সম্পর্কই নেই।
কারণ গায়রে মুকাল্লিদদের নিকটও মুক্তাদীর জন্য সূরায়ে ফাতিহার পর সূরা মিলানো শুধু নাজায়েজই নয় বরং হারাম। তাহলে কথিত আহলে হাদীসরা এ হাদীসে মুক্তাদীদের অন্তর্ভূক্ত করে হাদীসকেই অস্বিকার করল না?
কেননা, যদি এ হাদীসে মুক্তাদীও শামিল হয়, তাহলে তার উপর সূরা মিলানোও আবশ্যক হবে, অথচ গায়রে মুকাল্লিদ তথা কথিত আহলে হাদীসরা সূরা মিলানো মুক্তাদীর জন্য হারাম বলে থাকে। তাহলে কি দাঁড়াল?
একথাই সুষ্পষ্টরূপে প্রমাণিত হয় যে, এ ব্যাপারে বর্ণিত হাদীস হানাফীরা পরিপূর্ণ মানে, আর কথিত আহলে হাদীসরা অর্ধেক মানে। সেই সাথে একটি মিথ্যা কথাও প্রচার করে যে, তারাই শুধু হাদীস মানে, আর হানাফীরা হাদীস ছেড়ে দিয়ে ইমামের কথা মানে।
আল্লাহ তাআলা আমাদের মিথ্যা ও ওয়াসওয়াসা থেকে হিফাযত করুন।
মুক্তাদী
সে [কথিত আহলে হাদীস] বলতে লাগল- আপনারা কেন বলেন যে, মুক্তাদীর নামায ফাতিহা পড়া ছাড়াই হয়ে যাবে?
আমি বললাম- উপরোল্লিখিত ৮টি হাদীসে আপনাদের মতে মুক্তাদীরাও শামিল, তারপরও কেন বলেন যে, মুক্তাদীর নামায সূরা মিলানো ছাড়াই হয়ে যায়?
আমি তাকে আরো বললাম- আপনি আমাদের মাসলাক ভাল করে জানেনই না, শুনুন-যখন ইমাম জুমআর খুতবা পড়ে তখন সকল মুসল্লি চুপ থাকে, কেউ খুতবা পড়ে না। তবু নামায শেষে কেউ মুসল্লিদের একথা বলে না যে, যেহেতু ইমামের সাথে তুমি খুতবা পড়নি, তাই তোমার নামায খুতবাসহ হয়নি, বরং খুতবা ছাড়াই নামায পড়েছে। কারণ এখানে ইমামের খুতবাই মুক্তাদীর খুতবা হিসেবে ধর্তব্য হয়। ইমাম যখন খুতবা পড়ে, তখন সকল মুসল্লিদের পক্ষ থেকে খুতবা পড়া হয়ে যায়।
ঠিক তেমনি আমরা বলে থাকি যে, যখন ইমাম সাহেবে সূরা ফাতিহা এবং সূরা মিলায় তখন সেটা সকল মুক্তাদীদের পক্ষ থেকেই হয়ে যায়।
এ কথা আমরা এ কারণে বলে থাকি যে, যেহেতু রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন যে,
“যখন ইমামের সাথে নামায পড়বে তখন ইমামের কিরাতই মুসল্লিদের কিরাত হিসেবে সাব্যস্ত হবে”।
১-রাবী- জাবের বিন আব্দুল্লাহ রাঃ
# মুয়াত্তা মুহাম্মদ-৯৫
# মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা-১/৩৭৭
২-রাবী-আবু দারদা রাঃ
# সুনানে দারা কুতনী-১/৩৩২
৩-রাবী-আব্দুল্লাহ বিন শাদ্দাদ বিন হাদ রাঃ
# মুয়াত্তা মুহাম্মদ- ৯৮
৪- রাবী- আবু হুরায়রা রাঃ
# কিতাবুল কিরাত
সাহাবায়ে কেরাম এবং অনেক তাবেয়ীগণ এ হাদীস বর্ণনা করেছেন। আপনিও একটি হাদীস পেশ করুন যাতে বলা আছে যে, ইমামের কিরাত মুক্তাদির জন্য যথেষ্ট নয় মর্মে বর্ণিত। সেই সাথে কোন হানাফী কিতাবে একথা লেখা আছে যে, মুক্তাদীর নামায ফাতেহা ও সূরা মিলানো ছাড়া হয়ে যায়। যদি দেখাতে না পারেন, তাহলে মিথ্যা বলা থেকে তওবা করুন।
লোকটি তখন বলতে লাগল- “এসকল হাদীস কি সহীহ?”
আমি বললাম-আল্লাহ এবং রাসূল সাঃ এসকল হাদীসকে সহীহ বলেন নি, দুর্বলও বলেন নি, আমাদের আইয়িম্মায়ে সালাসা তথা তিন ইমাম একমত হয়ে একে গ্রহণ করে এ অনুপাতে ফাতওয়া দিয়েছেন। সুতরাং আমাদের তিন ইমামই এ হাদীস সমূহ সহীহ এ ব্যাপারে একমত।
হ্যাঁ, আপনি যদি আল্লাহ তাআলা বা রাসূল সাঃ থেকে এ হাদীস দুর্বল হওয়া প্রমাণিত করতে পারেন তাহলে আমরা আমাদের তিন ইমামের কথা ছেড়ে দিব। কিন্তু আপনি যদি চান যে, আপনার মত অযোগ্য ব্যক্তির কথায় আইয়িম্মায়ে সালাসার তাহকীক ছেড়ে দিয়ে আপনার মত অযোগ্য ব্যক্তির তাকলীদ করে নিব, তাহলে এমন তাকলীদ করতে আল্লাহর রাসূল সাঃ আমাদের নিষেধ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে-
إذاوُسِّدَالأمرُإلىغيرأهلهفانتظرالساعة
অনুবাদ-যখন অযোগ্য লোকেরা নাক গলাতে শুরু করে তখন কেয়ামত লুটে পরে। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৫৯}
বর্তমান সময়ে আপনাদের মত অযোগ্য লোকদের দ্বীনের ব্যাপারে নাক গলানোর কারণে দ্বীনে ইসলামের উপর কেয়ামত টুটে পড়ছে।
আল্লাহ তাআলা তার দ্বীনকে হিফাযত করুন।
জাঝাকাল্লাহ খাইর।