প্রচ্ছদ / আহলে হাদীস / আহলে হাদীস নামধারীদের কাছে দলীল চাই [পর্ব-১]

আহলে হাদীস নামধারীদের কাছে দলীল চাই [পর্ব-১]

মূল- মুনাজিরে ইসলাম মাওলানা মুহাম্মদ আমীন সফদর রহঃ

অনুবাদ- লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

কথিত আহলে হাদীসরা কথায় কথায় আমাদের নামাযের নামাযের উপর অভিযোগ উত্থাপিত করে থাকে, বকবক করে বেড়ায় যে, আমাদের নামায দুর্বল হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। কিংবা কোন প্রমান নেই আমাদের নামায পড়ার পদ্ধতির। দ্বীন ধর্ম সম্পর্কে অজ্ঞ সাধারণ মুসলমানদের মনে নামায সম্পর্কে সৃষ্টি করে চলে ওয়াসওয়াসা। হাজার বছর ধরে পড়া নামায হচ্ছে না। তারা যে নামায বলছে সেটাই কুরআন হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নামায। আর অন্যরা যা পড়ছে তা কুরআন হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়।

বক্ষ্যমান প্রবন্ধে গায়রে মুকাল্লিদদের এ মিথ্যাচারের মুখোশ উন্মোচন করা হবে। তাদের নামায কোন পূর্ণাঙ্গ নামাযই নয় তাদের মূলনীতি অনুযায়ী। কারণ তাদের বক্তব্য অনুযায়ী কুরআন হাদীস ছাড়া অন্য কিছু দলিল হতে পারে না। সে হিসেবে নামাযের অসংখ্য মাসায়েল তারা প্রমাণ করতে পারবে না কুরআন হাদীস দ্বারা। ফলে তাদের নামায হয়ে যায় অপূর্ণাঙ্গ। এমনকি একটি পূর্ণাঙ্গ নামায শিক্ষার বইও তারা জাতিকে উপহার দিতে পারেনি ইংরেজ প্রতিষ্ঠিত এ দলটি। শুধু কিছু বিতর্কিত মাসআলার দলিল উপস্থাপন করেই পাড় পেয়ে যাওয়ার খেলায় মেতেছে বিভ্রান্তসৃষ্টিকারী এ ভাইয়েরা।
১-
গায়রে মুকাল্লিদ ভাইয়েরা আপনাদের নামাযের জন্য কি কি শর্ত? দয়া করে কুরআন হাদীস দ্বারা প্রমাণ করুন
আলফিক্বহু আলা মাজাহিবিল আরবাআতে চার মাযহাবের পূর্ণাঙ্গ নামাযের শর্তসমূহ সাবলীল ভাষায় ধারাবাহিকভাবে একের পর এক লিপিবদ্ধ করে দেয়া হয়েছে।
আমাদের নামাযের ৭ শর্তের কথা তালীমুল ইসলামের ৪৪ নং পৃষ্ঠায় স্পষ্টাক্ষরে বিদ্যমান। প্রতিটি মানুষই তা বুঝতে সক্ষম। সেই সাথে বেহেস্তী জেওরের মাঝেই স্পষ্ট ভাষায় নামাযের শর্তের কথা লিপিবদ্ধ আছে। প্রতিটি সাধারণ মানুষই যা পড়ে সহজে বুঝতে পারবেন।
আমাদের দাবি হল কথিত আহলে হাদীস বন্ধুরা তাদের নামাযের শর্ত কুরআন হাদীসের আলোকে জাতির সামনে উপস্থাপন করুন। নামায সহীহ হওয়ার জন্য কুরআন হাদীস দ্বারা কয়টি শর্ত?
২-
একথা সবাই জানে যে, চার ফিক্বহ সংকলিত হওয়ার পর সিহাহ সিত্তার কিতাব লিখা হয়েছে। তাই সিহাহ সিত্তার গ্রন্থ প্রণেতাদের উপর আবশ্যক ছিল ফিক্বহের কিতাবে উল্লেখিত নামাযের শর্তের বিরুদ্ধে হাদীস দ্বারা প্রতিবাদ করা ও সেসব শর্তকে বাতিল বলে প্রমাণ করা।
এ হিসেবে বর্তমান গায়রে মুকাল্লিদ তথা কথিত আহলে হাদীসদের উপর দায়িত্ব হল সিহাহ সিত্তার কিতাবের বরাত দিয়ে ফিক্বহের কিতাবের বর্ণিত নামাযের শর্তসমূহকে হাদীস বিরোধী বলে সাব্যস্ত করা, এবং একথা দেখানো যে, সিহাহ সিত্তার লেখকগণ নামাযের শর্ত বর্ণনাকারীদের বদ্বীন বলে আখ্যায়িত করেছেন কোন কোন স্থানে?
৩-
গায়রে মুকাল্লিদ ভাইয়েরা নিজেদের নামাযে গ্রহণযোগ্য ফরজসমূহ গ্রহণযোগ্য সিলেবাসে অন্তুর্ভূক্ত কিতাব থেকে দেখান!
সকল ফুক্বাহায়ে কেরাম তাদের নামায পদ্ধতি পূর্ণাঙ্গ বর্ণনা করেছেন। যা সিলেবাসভূক্ত হয় মাদরাসায় পড়ানোহয়। রুকন কয়টি? ওয়াজিব কয়টি? সুন্নাত কয়টি? মুস্তাহাব কয়টি? কোনটি ছেড়ে দিলে কি হুকুম? কোনটি ছেড়ে দিলে নামায ভেঙ্গে যায়, কোনটি ছেড়ে দিলে সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব হয়, কোনটি ছেড়ে দিলে কিছু হয় না ইত্যাদি বিস্তারিত বিবরণসহ কিতাব আছে। যা মাদরাসাসমূহের নিসাবে অন্তর্ভূক্ত। আমাদের কথিত আহলে হাদীস ভাইয়েরা তাদের নামায পদ্ধতির, শর্ত, ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নাত, মুস্তাহাবসহ কোনটি ছাড়লে কি হুকুম তা কুরআন হাদীস দ্বারা প্রমাণ সমৃদ্ধ একটি কিতাব উপুস্থাপন করুন যা তাদের দরসে নিজামীর অন্তুর্ভূক্ত। শুধুমাত্র একটি কিতাব।
৪-
কথিত আহলে হাদীস ভাইয়েরা প্রথমে স্বীয় কিতাব থেকে কুরআন হাদীস দিয়ে রুকন, ওয়াজিব, মুস—াহাব এবং এসব ছেড়ে দিলে নামাযে হুকুম কী হবে? তা বর্ণনা করার পর দয়া করে বলবেন-
ক) নামায সংক্রান্ত আমাদের সংজ্ঞা, হুকুম এবং আরকান ভুল হওয়ার বিষয়টি সহীহ, সরীহ ও বৈপরীত্বহীন হাদীস দ্বারা প্রমাণ করবেন।
খ) নিজেদের নামাযের বিভিন্ন অবস্থার সংজ্ঞা, হুকুম, আরকান হাদীস দ্বারা দেখাবেন। অথবা আরকান মান্যকারীদের মুশরিক, বেদআতি হওয়া প্রমাণ করে দেখাবেন।
৫-
ওয়াজিব কাকে বলে আমাদের সংজ্ঞা আমাদের মাদরাসার নিসাবী কিতাব তালীমুল ইসলামে স্পষ্টাক্ষরে বিদ্যমান। {তায়ালীমুল ইসলাম উর্দু-৩-১২৯-১২৮} আপনারাও ওয়াজিবের সংজ্ঞা স্বীয় নেসাবী কিতাব থেকে কুরআন হাদীসের ভিত্তিতে দেখান।
৬-
নামাযের ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নাত, মুস্তাহাব বিষয় সব ক’টি বিষয়কে কুরআন হাদীস দ্বারা বাতিল প্রমাণ করে দেখান, অথবা চারটিকেই কুরআ হাদীস দ্বারা প্রমাণ করে দেখান। নতুবা এ চারটি মান্যকারীকে বেদ্বীন হওয়া কুরআন হাদীস দ্বারা প্রমাণ করে দেখান।
৭-
আমরা হানাফীরা সুন্নাতে মুআক্কাদার সংজ্ঞা, প্রমাণ পদ্ধতি, তরককারীর হুকুম, এবং সুন্নাত কয়টি? এসব আমাদের দরসে নিজামীতে পঠিত কিতাব থেকে দেখাবো। যেমন- তালীমুল ইসলাম-৩/১৩০}
এবার কথিত আহলে হাদীস ভাইয়েরা তাদের ক্লাসের সিলেবাসে অন্তর্ভূক্ত কিতাব দিয়ে সুন্নাতের সংজ্ঞা, প্রমাণ, পদ্ধতি,তরককারীর হুকুম এবং সুন্নাত কয়টি? এসব কুরআন ও সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণ করে দেখাবেন। নতুবা আমাদের বর্ণিত সংজ্ঞা কুরআন হাদীস দ্বারা বাতিল ও শিরক বলে প্রমাণ করে দেখান।
৮-
আমরা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত হানাফীরা নামাযের মুস্তাহাব, সংজ্ঞা, পদ্ধতি, প্রমাণ, আদায়কারী ও তরককারীর হুকুম এবং মুস্তাহাবের পরিমাণ নিজেদের ক্লাসে পঠিত সিলেবাসভূক্ত কিতাব তালিমুল ইসলাম ৩/১৩০ নং পৃষ্ঠা থেকে দেখাব।
৯-
এবার কথিত আহলে হাদীস ভাইয়েরা আমাদের মুস্তাহাবের সংজ্ঞা, পদ্ধতি, প্রমাণ, আদায়কারী ও তরককারীর বিধান এবং সংখ্যা ইত্যাদিকে কুরআন হাদীস দ্বারা বাতিল বলে প্রমাণ করে দেখাতে হবে। আর মুস্তাহাবের সহীহ সংজ্ঞা, পদ্ধতি, প্রমাণ, সংখ্যা, আদায়কারী ও তরককারীর হুকুম কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে নিজস্ব সিলেবাসভূক্ত কিতাবে দেখাতে হবে।
১০
নামায ভঙ্গের কারণ কয়টি? কতগুলো বিষয় থেকে নামাযকে রক্ষা করা জরুরী? এসব জানা আবশ্যকীয় বিষয়। তাই হানাফীগণ নামায ভঙ্গের সংজ্ঞা, হুকুম, সংখ্যা স্বীয় নিসাবের কিতাব দিয়ে দেখাতে পারবে। {তালীমুল ইসলাম-৩/১৬৭}
১১
এবার গায়রে মুকাল্লিদ ভাইয়েরা আমাদের সংজ্ঞা, হুকুম এবং সংখ্যাকে ভুল প্রমাণ করবেন কুরআন ও সহীহ হাদীস দিয়ে। সেই সাথে নামায ভঙ্গের সঠিক সংজ্ঞা, হুকুম, সংখ্যা কুরআন ও সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণ করে তা স্বীয় নিসাবে অন্তর্ভূক্ত কিতাব দিয়ে দেখাবেন।
১২
আমরা নামাযের মাকরূহসমূহ, মাকরূহের সংজ্ঞা, প্রমাণ, হুকুম মাকরূহাতের সংখ্যা নির্ভরযোগ্য দরসী কিতাব থেকে দেখাতে পারবো। {তালীমুল ইসলাম-৩/১৬৯}
১৩
এবার কথিত আহলে হাদীস ভাইয়েরা আমাদের এ সংজ্ঞা, প্রামাণ, হুকুম এবং সকল মাকরূহাতকে কুরআন ও সহীহ হাদীস দ্বারা ভুল প্রমাণ করে দেখান। সেই সাথে মাকরূহাতের সঠিক সংজ্ঞা, সহীহ প্রমাণ, সহীহ হুকুম, এবং সহীহ সংখ্যা নিজেদের নির্ভরযোগ্য নিসাবী কিতাব দিয়ে দেখাবেন, সেই সাথে উল্লেখ করতে হবে কুরআন ও সহীহ হাদীসের কোথায় এসব আছে?
গায়রে মুকাল্লিদদের নামায কুরআন হাদীস দিয়ে প্রমাণিত নয়
১৪
এ আলোচনায় কথিত আহলে হাদীস ভাইয়েরা স্বীয় উসূল কুরআন ও সহীহ হাদীসই মান্য হিসেবে শুধু কুরআন ও সহীহ হাদীসই দলিল হিসেবে উপস্থাপন করতে পারবেন। এমন কোন নাম উচ্চারণ করতে পারবেন না যার নাম কুরআন ও হাদীসে নেই।
উসুলে ফিক্বহ, উসুলে হাদীস, উসূলে তাফসীর, আসমায়ে রিজাল, ও উসূলে জারাহ ও তাদীলের মধ্য থেকে কেবল সেসব কথাই উদ্ধৃত করতে পারবে, যা উক্ত বিশেষজ্ঞ কুরআন ও সহীহ হাদীস দ্বারা সাব্যস্ত করেছেন। নিজের অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান দিয়ে কোন কিছু আবিস্কার করে থাকলে তা দলিল হিসেবে যোগ্য হবে না। তাহলে কুরআন ও সহীহ হাদীসের উল্টো ব্যক্তির তাক্বলীদ হয়ে যাবে। যা তাদের ভাষায় শিরক।
১৫
যদি গায়রে মুকাল্লিদ বিতার্কিক নিজেদের নামাযের শর্ত, আরকান, সুনান, মুস্তাহাব্বাত, মাকরূহাত, মুফসিদাত, এবং বিধি-বিধান স্বীয় গ্রহনীয় নিসাবী কিতাব থেকে এবং কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে প্রমাণিত করে দেখাতে অপারগ হয়, তাহলে তার একথা লিখে দিতে হবে যে, সে তার নিজের নামাযের বিশদ বিবরণ নিজেদের গ্রহনীয় নিসাবী কিতাব থেকে, এবং কুরআন ও সহীহ হাদীস দিয়ে প্রমাণ করে দেখাতে অক্ষম।
আর নিজেদের দাবী তথা কুরআন হাদীসই মানে এ দাবীর ক্ষেত্রে মিথ্যুক প্রমানিত হয়েছে। এমনিভাবে হানাফীদের নামাযের শর্ত, রুকন, সুনান, মুস্তাহাব্বাত, মাকরূহাত, মুফসিদাত, তাদের সংজ্ঞা ও আহকামকে কুরআন হাদীসের বিপরীত প্রমাণ করতে অক্ষম হয়েছে। এবং তাদের এ দাবীর ক্ষেত্রে সে সম্পূর্ণ মিথ্যুক যে, হানাফীদের নামায কুরআন হাদীসের বিপরীত।
কথিত আহলে হাদীসরা যখন তাদের নামাযের বিশদ বিবরণ তাদের নিজস্ব সিলেবাসের কিতাব থেকে দিতে অক্ষম প্রমানিত। এখন তাদের নামাযের আমলী হালাতের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করি। তাদের উপর আবশ্যক হল, তাদের প্রতিটি মাসআলা সহীহ,সরীহ ও বৈপরীত্বহীন হাদীস দ্বারা প্রমানিত করবে।

২য় পর্ব

0Shares

আরও জানুন

ওয়েব সাইট পরিচালনা খরচ নির্বাহে সহযোগী হই!

السلام عليكم ورحمة الله وبركاته আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ! সম্মানিত মুসলিম ভাই ও বোনেরা! আপনাদের দুআর …

No comments

  1. আবুল কাশেম

    আসসালামু আলাইকুম । ধন্যবাদ । বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিয়মিত পোষ্ট চাই

  2. AZHARUDDIN MALLICK

    আমি এই ওয়েবসাইট থেকে কিছু লেখা প্রিন্ট করে নিজের কাছে ও বুন্ধুদের কাছে সংরক্ষণ করে রাখতে চাই যদি অনুমতি দেন ।

  3. আশরাফ, বগুড়া

    অনুমতি উন্মুক্ত। যে কেউ কপি-পেস্ট-প্রিন্ট-বই করতে পারে। দ্বীনের খাতিরে আমাদের বড়রা কাজ করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *