প্রশ্ন
আসসালামু য়ালাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ।
হযরত আমরা জানি যে, হাজ্জের সময় আরাফার ময়দানে নামাজকে জাময়ুত তাক্বদীম ও মুজদালিফায় জাময়ুত তাখির করতে হয়,কিন্তু নির্ধারিত ওয়াক্তেতো নামাজ আদায় করা ফরজ।
যেহেতু হুজুর (স): করেছেন তাই তাতে প্রশ্নহীন আনুগত্য করতে হবে এতে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই,আমার জিজ্ঞাসা হলো এর পেছনে কি কোনো কারণ রয়েছে যার কারণে কাজা করা হয়? জানালে অন্তর এতমিনান হবে । আল্লাহ তায়ালা আপনার খেদমতকে ভরপুর কবুল করুন ।
প্রশ্নকর্তা-আব্দুস সালাম ইবনু আবি হানিফা
রিজিওনাল ম্যানেজার,পিআরডিএফ বড়লেখা রিজিওন
ছাত্র,(সানাবিইয়াহ উলইয়া ২য় বর্ষ)
দারুল উলুম সুড়িকান্দি কউমি মাদরাসা,বড়লেখা,মৌলভীবাজার
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
অন্য ধর্মাবলম্বীদের উপাসনা এবং মুসলমানদের ইবাদতে একটি মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। সেটি হল, অন্য ধর্মাবলম্বীদের উপাসনা শুধু তাদের উপাসনালয়ে সীমাবদ্ধ। পার্থিব জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে কোন ধর্মেই পূর্ণাঙ্গ বিধিবিধান নেই।
ইসলাম ছাড়া কোন ধর্মেই চব্বিশ ঘন্টার জীবনের প্রতিটি মুহুর্তের বিধানাবলী বর্ণিত হয়নি। কেবল ইসলামই একমাত্র ধর্ম, যা মানুষের জন্ম থেকে নিয়ে মৃত্যু পর্যন্তের প্রতিটি মুহুর্তের বিধান স্রষ্টাকর্তৃক নির্ধারিত।
একজন মুসলমান একটি মুহুর্তের জন্যও রবের বিধানের বাহিরে চলার অনুমতি পায় না। প্রতিটি ক্ষণ তার মালিকের হুকুমের অনুগামী থাকতে হয়।
এর মূল কারণ হল,আমরা রবের ইবাদত করি। আর ইবাদত শব্দটি এসেছে “আব’দ” থেকে। যার অর্থ হল, বান্দা বা গোলাম।
একজন গোলাম চব্বিশ ঘন্টাই তার মনীবের অধীন থাকে। সে সর্বদাই মনীবের গোলাম। ঘুমালেও গোলাম। কাজ করলেও গোলাম। যে কোন অবস্থায়ই থাকুক সে গোলাম।
মনীব যা আদেশ করে একজন গোলামের জন্য তার সবই পালন করা আবশ্যক। কারণ জিজ্ঞাসা করার অধিকার গোলামের থাকে না। নিরঙ্কুশ আনুগত্বই একজন গোলামের প্রকৃত পরিচয়।
যেহেতু ইসলাম ধর্মের অনুসারী প্রতিটি মুসলিম রবের গোলাম। মালিক আল্লাহ রাব্বুল আলামীন। তাই তার প্রতিটি আদেশ মান্য করাই একজন প্রকৃত গোলাম বান্দার দায়িত্ব। এর হিকমত কী? কেন করতে বলা হল? ইত্যাদি জিজ্ঞাসা করার মৌলিক কোন অধিকারই বান্দার নেই।
নিঃসংকোচ আনুগত্বই প্রকৃত “আবদিয়্যাত” প্রকাশক।
নামায পাঁচ ওয়াক্ত কেন? তিন বা ছয় ওয়াক্ত নয় কেন? সেহরীর সময় শেষ হবার পর এক লোকমা খেলেও রোযা হয় না। আবার ইফতারের সময় শেষ হবার সাথে সাথেই ইফতার করা সবচে’ বেশি সওয়াবের কাজ বলা হল কেন?
যদি উপোষ থাকাই মাকসাদ হয়,তাহলে এক লোকমা খেলেতো আর পেট ভরে না, তবু কেন রোযা ভঙ্গ হয়? আর ইফতারীর সময় হলেই কেন খেয়ে ফেলতে হবে? দেরী করলে সমস্যা কী? বেশি সময় ক্ষুধার্ত থাকা হবে।
আসলে এসব কিছুর জবাব একটাই। আমাদের নিজের ইচ্ছেমত চলার নাম ইসলাম নয়। ইসলাম রবের আদেশ যথাযথভাবে পূর্ণ করার নাম।
তিনি যেভাবে বলেছেন সেভাবেই করা, যে সময় বলেছেন সে সময়ে করতে প্রতিটি বান্দা গোলাম বাধ্য। প্রশ্ন উত্থাপনের সুযোগ নেই। আর হিকমত জানারও কোন প্রয়োজন নেই। কারণ, গোলামের দায়িত্ব আদেশ পালন করা, হিকমত বা কারণের পিছনে ছুটার প্রয়োজনই তার নেই।
তাই নামায ওয়াক্ত মত আদায়ের নির্দেশ থাকার পরও আরাফার ময়দানে যোহর আসর একসাথে এবং মুযদালিফায় মাগরিব ইশা একসাথে পড়ার আদেশ কেন দেয়া হল? এ প্রশ্নটিই অযৌক্তিক।
এটি মানার নামই আবদিয়্যাত। মালিকের বিধান। তাই গোলাম বান্দার তা মানতে হয়। বিধানের ভিন্নতার মাধ্যমেই বান্দার নিরঙ্কুশ আনুগত্বের চিত্র ফুটে উঠে।
সহজ কথায়, মালিক রবের গোলামী প্রকাশ করতেই ভিন্ন নিয়মের আনুগত্বের আদেশ দেয়া হয়েছে। যার মাধ্যমে বান্দার আবদিয়্যাত প্রতিভাত হয়।
আরেকটি হিকমাত হল, আরাফার ময়দানের একটি মৌলিক মাকসাদ হল “অবস্থান করা”। দুই ওয়াক্তের নামায আলাদা আলাদা পড়লে, আজান, অযু ইত্যাদির প্রস্তুতিসহ সময় বেশি লেগে যায়।
তাই দুই ওয়াক্তের নামায এক আজানে পরপর পড়ার দ্বারা আরাফায় বেশি সময় অবস্থান করা যায়। এই হিকমতেও একসাথে দুই নামায পড়ার বিধান দেয়া হতে পারে।
হাজীদের মাগরিব নামাযের সময় হয় মুযদালিফায় পৌঁছার মাধ্যমে। এর আগে মাগরিবের সময়ই হয় না। শুধু সূর্য ডুবার দ্বারা সেদিন মাগরিবের সময় ধর্তব্য হয় না। বরং মুযদালিফায় পৌঁছা আবশ্যক মাগরিব সময় হবার জন্য।
আর আরাফা থেকে মুযদালিফায় রওয়ানা হলে সাধারণত ইশার সময়ের আগে পৌঁছা যায় না দূরত্ব ও ভীরের কারণে। তাই সেখানে মাগরিব ও ইশা একসাথে পড়ার আদেশ করা হয়েছে।
ان تعديم العصر على وقته لأجل محافظة الجماعة، أو لامتداد الوقوف، فعنده للأول وعندهما للثانى: لهما أن جواز الجمع للحاجة إلى امتداد الوقوف بدليل أنه لا جمع على من ليس عليه الوقوف، وأن الحاج يحتاج إلى الدعاء فى وقت الوقوف، فشرع الجمع لئلا يشتغل عن الدعاء (عناية مع الفتح، كتاب الحج، مصرى-2/470، زكريا-2/482)
فتوقتتا بازمان والمكان والوقت، فالزمان ليلة النحر، والمكان مزدلفة والوقت وقت العشاء (الدر مع الرد، كتاب الحج، مطلب فى إجابة الدعاء-3/526)
حتى لو وصل إلى مزدلفة قبل العشاء لا يصلى المغرب حتى يدخل وقت العشاء (غنية-88، جديد-164)
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা-জামিয়া ফারুকিয়া দক্ষিণ বনশ্রী ঢাকা।
ইমেইল– [email protected]