কুরআনের একটি আয়াত খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। আসলে সব আয়াতই গুরুত্বপূর্ণ। তবে গতকাল রাতে একটি আয়াত বারবার মনে পড়ছিল। আয়াতটি হলঃ “যারা সুদ খায়, তারা কিয়ামতে দন্ডায়মান হবে, যেভাবে দন্ডায়মান হয় ঐ ব্যক্তি, যাকে শয়তান আসর করে মোহাবিষ্ট করে দেয়।” (সূরা বাকারা ২৭৫)
শয়তান আসর করে মোহাবিষ্ট করে দেয় এর হাকীকত কী? জানা ছিল না। কিন্তু গতকাল এক মোহাবিষ্টকে দেখে এর হাকীকত পরিস্কার হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ।
মাহফিল ছিল কিশোরগঞ্জ জেলার হোসেনপুর থানার দক্ষিণ চরপুমদী জামে মসজিদে। যথা সময়ে উপস্থিত হই। কিন্তু ইন্তেজামের বিশৃঙ্খলার দরুণ বয়ানে বসতে হয় রাত সোয়া এগারটার পর।
এলাকায় প্রচুর পরিমাণ ভণ্ড পীরদের মুরীদান থাকায় মাজার ও কবরপূজার শিরকী কর্মকাণ্ড বিষয়ে দালীলিক আলোচনা পেশ করি। এতে অনেক ভণ্ড পীরের মুরীদানরা রুষ্ট হোন। কিন্তু শান্ত পরিবেশেই আলোচনা শ্রবণ করেন।
বারটার পর বয়ান করা আমার নীতি বিরুদ্ধ হওয়ায় সোয়া বারটার দিকে বয়ান ছেড়ে দেই।
কিন্তু উপস্থিত শ্রোতা, ইমাম খতীব এবং আয়োজকদের প্রবল অনুরোধে তারাবীহ বিষয়ে কিছু কথা বলতে রাজী হই। শ্রোতাদের তীব্র আগ্রহ ইচ্ছে না থাকার পরও আলোচনা শুরু করি।
প্রথমে শায়েখ আসাদুল্লাহ গালীব, মুযাফফর বিন মুহসিন এবং শায়েখ শহীদুল্লাহ খান মাদানীর কিতাব খুলে সবাইকে দেখালাম যে, আসলে ওরা তাহাজ্জুদ নামায মানে। তারাবীহ মানেই না। কিন্তু মানুষকে ধোঁকা দিতে তারাবীহ মানার দাবী করে। আর আট রাকাতের মতভেদ সামনে এনে তারাবীহ অস্বিকারকে ঢাকতে চায়।
গভীর মনযোগের সাথে কথাগুলো শ্রোতারা শুনতে ছিলেন।
কিন্তু হঠাৎ করে সামনে দেখে প্যান্ট শার্ট পরিহিত দাড়িওয়ালা এক যুবক দাঁড়িয়ে বলতে লাগলঃ হাদীসে তারাবীহের কথা নাই, হুজুর ভুল কথা বলছে।
আমি বললামঃ তারাবীহ না থাকলে গালীব, মুযাফফর, শহীদুল্লাহ সাহেবরা তারাবীর কথা লিখলেন কেন?
বলতে বলতে উপস্থিত শ্রোতারা তাকে ঘিরে ধরল। কঠিন একটা মার দেবার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ল সবাই।
সবাইকে অনুরোধ করলাম যেন তাকে মারধর করা না হয়। অনুরোধ না করলে লোকটা সেখানেই শক্ত মাইর খেতো।
লোকটাকে সরিয়ে নেয়া হল। সবাইকে শান্ত করতে আমি বললামঃ একে মারবেন না। এ ছেলের কোন দোষ নেই। আসলে এদের শায়েখ আকরামুজ্জামান বিন আব্দুস সালামেরা মাযহাব অনুসারীদের হত্যার ফাতওয়া দিয়ে এসব ছেলেদের উগ্র বানিয়েছে। লা মাযহাবী এসব অনুসারীরাই ৬৩ জেলায় বোম মেরে হানাফী মানুষদের হত্যা করেছে।
এই যুবকদের মাঝে হিংস্রতার বিজ এমনভাবে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে যে, উলামা, তুলাবা, ছোট, বড়, মুরব্বী সবার সাথেই দুর্ব্যাবহার করতে তাদের বাঁধে না।
মোহাবিষ্ট লোকটা চিল্লাচিল্লি করেই যাচ্ছে। কেউ থামাতে পারছে না।
আসলে এ যুবক হল স্থানীয় এক আওয়ামীলীগ নেতার শ্যালক। দুলাভাই নেতা সাহেব আবার শায়েখ আব্দুর রহমান ও বাংলা ভাইদের লা মাযহাবী মতাদর্শের অনুসারী। মূলত এ নেতাই উক্ত ঘটনার নাটের গুরু। শ্যালককে উস্কে দিয়ে বাহির থেকে তিনি সেল্টার দিচ্ছিলেন।
বললামঃ লোকটাকে মঞ্চে আনুন। দেখি সে কী বলতে চায়। তাকে মারবেন না। সে আমাদের ভাই। না বুঝে পাগলামী করছে।
মোহাবিষ্ট যুবককে মঞ্চে উঠানো হল। বললামঃ এবার আপনার কথা মাইকে বলুন। কী সমস্যা আপনার?
লোকটা বলতে লাগলঃ আমাদের একতাবদ্ধ থাকতে হবে। নাভির নিচে হাত বাঁধার দুটি হাদীস আছে। কিন্তু বুকের উপর হাত বাঁধার চারটি সহীহ হাদীস আছে।
তাকে থামিয়ে বললামঃ বুকের উপর হাত বাঁধার একটি সহীহ হাদীস দেখান।
বললঃ বুখারী দেন দেখাই।
তাওহীদ পাবলিকেশন্সের বাংলা বুখারী এগিয়ে দিলাম। দেখান।
হাত কাঁপতে লাগল লোকটার। কয়েক পৃষ্ঠা উল্টে বলে আমি কিতাব আনি নাই।
বললামঃ আপনি আনেননি তাতে কী? এখানেতো আছে দেখান এটা থেকে।
বললঃ আরেকদিন দেখাবো।
বললামঃ আজকে দেখাতে পারবেন না, তাহলে মাহফিলে চিল্লাচিল্লি করে পরিবেশ নষ্ট করলেন কেন?
এবার অপরাধীর মত মঞ্চ থেকে নেমে গেল মোহাবিষ্ট ভাইটা। অপরদিকে এসব ভিডিও করছিলেন একজন মাওলানা সাহেব। মোহাবিষ্ট লোকটার দুলাভাই নেতা সাহেব মাওলানা সাহেবের মোবাইল কেড়ে নিয়ে ভেঙ্গে ফেলল। দলীয় ক্ষমতা দেখিয়ে সবার সামনেই এ মাস্তানী করে লোকটা। এ নিয়ে লেগে যায় আরেক হট্টগোল।
যাইহোক। অবশেষে সবার কাছেই পরিস্কার হয়, আগে থেকেই উক্ত নেতার মাধ্যমে মাহফিল পণ্ড করতে আধা পাগল উক্ত শ্যালককে অন্য এলাকা থেকে আনা হয়েছে। কিন্তু আল্লাহর রহমাতে মুসল্লীদের সাফ হয়ে যায় যে, এরা শুধু বিশৃঙ্খলা করতে জানে, ফিতনা সৃষ্টি করতে জানে। কিন্তু কুরআন ও হাদীস বুঝে না।
আল্লাহ তাআলা তাদের সহীহ বুঝ দান করুন।
স্থানীয় কওমী উলামায়ে কেরাম এবং ধর্মপ্রাণ মুসল্লী এবং বয়োজেষ্ঠ আলেমে দ্বীন উক্ত মজমার সভাপতি মুফতী খলীলুর রহমান সাহেবের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সুন্দরভাবেই দুআর মাধ্যমে সমাপ্য হয়েছে মাহফিল। আল্লাহরই সকল প্রশংসা।