প্রচ্ছদ / মুফতি লুতফুর রহমান ফরায়েজীর কলাম / যথাযথ প্রস্তুতি ছাড়া বাতিল মতাদর্শীদের সাথে বিতর্কে না জড়াই! দ্বীনের উপকারের নামে অপকার না করি!

যথাযথ প্রস্তুতি ছাড়া বাতিল মতাদর্শীদের সাথে বিতর্কে না জড়াই! দ্বীনের উপকারের নামে অপকার না করি!

যথাযথ প্রস্তুতি ছাড়া বাতিল মতাদর্শীদের সাথে বিতর্কে না জড়াই! দ্বীনের উপকারের নামে অপকার না করি!


প্রসিদ্ধ বিদআতি আলেম মৌলভী এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী সাহেবের একটি ভিডিও ইউটিউবে পাওয়া যায়। যাতে তিনি মুসলিম থেকে খৃষ্টান হওয়া এক সাধারণ লোকের সাথে কথা বলছেন। যে ভিডিও তার নিজস্ব নামের ইউটিউব চ্যানেলে গর্বের সাথে আপলোড করা আছে।
কিন্তু ভিডিওটা কোন সাধারণ মানুষ দেখলে সত্যিই বিভ্রান্ত হবে। কারণ, এতে আব্বাসী সাহেবের প্রমাণিক অসহায়ত্ব পরিস্কারভাবে চোখে পড়ে।
যথাযথ প্রস্তুতি ছাড়া, খৃষ্টান মিশনারীদের কূটচাল এবং তাদের প্রমাণিক ভিত্তি সম্পর্কে না জেনে হুট করে বাহাসী মনোভাব নিয়ে তাদের সাথে কথা বলা খুবই বিপদজনক। যা অনেকের ঈমান হারানোর কারণ হতে পারে।
তাই এমন অপরিণামদর্শী কাজ করা থেকে বিরত থাকা জরুরী।


বাংলাদেশের আহমদিয়া মুসলিম জামাত নামধারী কাদিয়ানী কাফেরদের একটি ইউটিউব চ্যানেল আছে। সেই চ্যানেলে এক কাদিয়ানীর সাথে একজন মাওলানার বাহাস নামে একটি ভিডিও আপলোড করা। যাতে উক্ত মাওলানা উক্ত কাদিয়ানীর সামনে নিজের আকীদা বিশ্বাসকে দালিলীকভাবে প্রমাণ করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন।
যা নিতান্তই লজ্জার। সেই সাথে অনেকের মনে এ বিষয়ে সন্দেহ সংশয় তৈরী করার কারণ হতে পারে।


নাস্তিকদের সাথে আস্তিক কিছু অর্বাচিন ভাইদের প্রস্তুতি ছাড়া অতি উৎসাহী আলাপন এবং নাকানিচুবানীর নজীর কম নয়।

ভ্রান্ত ফিরক্বার সাথে প্রস্তুতিহীন কথোপকথন এবং অবশেষে লজ্জায় হক দলকে ডুবানোর উদাহরণ অনেক দেওয়া যাবে।

যেমন কোন নব্য শিয়া। আপনি তার সাথে আবেগের আতিশয্যে কথা বলতে চাচ্ছেন। তাকে হক পথে ফিরাতে চাচ্ছেন। কিন্তু প্রশ্ন হল, আপনি কতটুকু জানেন তাদের ব্যাপারে? শিয়াদের কয়টি কিতাব আপনি অধ্যয়ন করেছেন? শিয়া ফিতনার রদে লিখিত কতটি কিতাব আপনি মনযোগ সহকারে পড়েছেন? একবার খেয়াল করেছেন?
কাদিয়ানীদের সাথে মুনাজারা করতে চান। অনেক আগ্রহ। খুব জযবা। প্রশ্ন হল, কাদিয়ানীদের কয়টি কিতাব ও রচনাবলী আপনার সংগ্রহে আছে? তাদের বিপরীতে লেখা আমাদের আকাবিরদের কয়টি ইলমী বই আপনি পড়েছেন?
একই অবস্থা খৃষ্টাান মিশনারী এবং আহলে কুরআন ও লা-মাযহাবীসহ সকল ভ্রান্ত ফিরক্বা সম্পর্কে।

হককে উপস্থাপন করতে চান। হককে বিজয়ী করতে চান। সত্যকে প্রমাণ করতে চান। বাতিলকে দমাতে চান। খুবই ভাল কথা। খুবই প্রশংসার কথা। আমি আপনার এ মানসিকতাকে কোটিবার সালাম জানাই।

কিন্তু..
যাদের সম্পর্কে কথা বলতে যাচ্ছেন তাদের ব্যাপারে কতটুকু জানেন? তাদের লিখিত কী কী বই আছে? কতটি আপনি পড়েছেন? এসবের জবাবে কী কী বই লিপিবদ্ধ আছে আপনি জানেন কি? কিংবা আপনি মনযোগ সহকারে পড়েছেন কি? বিতর্ক কিভাবে করতে হয়? কথার মারপ্যাচ থেকে বাঁচার কৌশল কী?
এসব না জেনেই আবেগে যে, আপনি লাফ দিলেন, বিতর্ক বাহাসে লিপ্ত হয়ে গেলেন। সেজে গেলেন হকের স্বঘোষিত ঠিকাদার। সেক্ষেত্রে আপনার অপরিপক্কতার কারণে পরাজয়ের গ্লানীটা কি শুধু আপনার আমার পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকে? নাকি পুরো হক জামাতকেই কলংকিত করে দেয়?

ভাবুন। চিন্তা করুন। পড়াশোনার পরিধিকে বিস্তৃত করুন। যে ভ্রান্ত ফিরক্বা সম্পর্কে কাজ করতে চান। প্রথমে তাদের লিখিত গ্রন্থাবলী সংগ্রহ করুন। সেই সাথে এসবের জবাবে লিখিত গ্রন্থগুলোও একত্রিত করুন। এবার একজন বিজ্ঞ গবেষক আলেমের তত্বাবধানে মুতালাআ করুন। গভীরভাবে অপলব্ধি করুন ফিরক্বাটির আকীদা বিশ্বাস। তাদের দলীলের গভীরতা ও দুর্বলতা। সাজিয়ে নিন কিভাবে বলবেন। কিভাবে উপস্থাপন করবেন। যখন আপনার মনে হবে আপনি এ ফিরক্বা সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ওয়াকিফহাল হয়েছেন, তখন দুই রাকাত নামায পড়ে রব্বে কারীমের কাছে হককে বিজয়ী করার তৌফিক দানের দুআ করুন। তারপর নেমে পড়ুন ময়দানে। ইনশাআল্লাহ আপনার বিজয় অবশ্যাম্ভাবী।

কিন্তু পড়াশোনা ছাড়াই, প্রস্তুতি না নিয়ে অর্বাচিনের মত বাহাস বিতর্কের নামে বাগাড়ম্বরতায় লিপ্ত হবেন না। অনুরোধ করে বলি। হাত জোড় করে বলি! দ্বীনের উপকারের নামে অপকার করবেন না।

(মুফতি লুৎফুর রহমান ফরায়েজী)

0Shares

আরও জানুন

“রোহিঙ্গা” এটা কি উপহাস করার শব্দ? আপনার মনুষত্ব কোথায়??

রাস্তাঘাটে চলতে এখন মানুষের মুখে মুখে উপহাসচ্ছলে শুনতে পাই “ঐ রোহিঙ্গা! তুই কি রোহিঙ্গা নাকি?, …