প্রচ্ছদ / আহলে হাদীস / কথিত আহলে হাদীসদের দ্বীন মক্কা মদীনাওয়ালা না মনগড়া?

কথিত আহলে হাদীসদের দ্বীন মক্কা মদীনাওয়ালা না মনগড়া?

লেখক– মুনাজিরে ইসলাম মাওলানা মুহাম্মদ আমীন সফদর ওকাড়বী রহঃ

অনুবাদঃ লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

মক্কা-মদীনাওয়ালা দ্বীন

এবার লোকটি বহুত পেরেশানীতে পরে যায়। কিন্তু আসল আলোচ্য বিষয় থেকে ভেগে অযথা বিষয় উপস্থাপন করা এ কথিত আহলে হাদীস দলের একটি বদগুণ। লোকটি বলতে শুরু করে দিল-“আমাদের দ্বীন মক্কা-মদীনাওয়ালা আর তোমাদের দ্বীন কুফাওয়ালা

আমি বললাম- আপনাদের বড় ভাই কথিত আহলে কুরআনও একথাই বলে যে, ‘তাদের দ্বীন হল মক্কা-মদীনাওয়ালা। যেহেতু কুরআনের কিছু সূরা মক্কায় আর কিছু মদীনায় অবতীর্ণ হয়েছে। এ কুরআনের বিপরীত সিহাহ সিত্তার কোন কিতাবই মক্কাবাসী বা মদীনাবাসী লিখেনি

আপনাদের বড় ভাই আহলে কুরআনের কথা আপনাদের বিপরীতে অধিক শক্তিশালী বলে মনে হয়।

আমি তাকে আরো বললাম-আপনারাতো মদীনা মনোয়ারায় খাইরুল কুরুনের তাবে তাবেয়ী মুজতাহিদ ইমাম মালিক রহঃ এর লিখা মুয়াত্তা মালিক হাদীসের কিতাবকে সিহাহ সিত্তা থেকে বের করে দিয়েছেন। অথচ কুফাবাসী এ কিতাবের রেওয়াতকে বর্ণনা করে থাকে। দেখুন ইমাম মুহাম্মদ রঃ এর মুয়াত্তা মুহাম্মদ। আশ্চর্য ইনসাফ আপনাদের! যারা মদীনার কিতাবকে বর্ণনা করে তাদের দ্বীন মদীনাওয়ালা নয়, অথচ যারা মদীনার কিতাবকে পিছনে রেখে দেয়, তারা হয়ে যায় মদীনাওয়ালা?!

মদীনাবাসীর সাথে বিরোধীতা

আপনাদের মতে অযুতে শুধু পাগড়ির উপর মাসাহ করা জায়েজ। {আর রওযাতুন নাদিয়্যাহ-১/৩৯}

অথচ ইমামে মদীনা ইমাম মালিক রহঃ বলেন-শুধু পাগড়ির উপর মাসাহ করা জায়েজ নয়। {মুয়াত্তা মালিক-২৩}

শুধু তাই নয়, ইমাম মালিক রহঃ বলেন-যে ব্যক্তি শুধু পাগড়ির উপর মাসাহ করবে তার নামায হবে না। {আল মুদাওয়ানাতুল কুবরা-১/১৬}

এবার দেখুন- মদীনাওয়ালারা আপনাদের অযুও সহীহ মানেন না, মানেন না আপনাদের নামাযও।

ইমাম মালিক রহঃ তায়াম্মুম করার পদ্ধতি এভাবে বর্ণনা করেছেন-

একবার মাটিতে হাত লাগিয়ে চেহারা মাসাহ করবে, তারপর দ্বিতীয়বার মাটিতে হাত লাগিয়ে উভয় হাতের কনুই পর্যন্ত মাসাহ করবে। {মুয়াত্তা মালিক-৪২}

কিন্তু আপনারা মদীনাবাসীর মত ছেড়ে দিয়ে বুখারার মত গ্রহণ করেছেন। একথা বলছেন যে, তায়াম্মুমে হাত শুধু কব্জি পর্যন্ত মাসাহ করবে। {বুখারী-১/৪৮}আর তায়াম্মুমের জন্য মাটিতে হাত শুধু একবার লাগাবে। {বুখারী-১/৫০}

ইমাম মালিক রহঃ এর মাযহাব হল-নামাযে হাত লটকানো হবে। আর আপনাদের মাযহাব হল রাসূল সাঃ সর্বদা হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠিয়ে তারপর ডান হাতের কব্জি দিয়ে বাম হাতের কনুইকে আঁকড়ে ধরে তারপর সীনার উপর রাখতেন।

এ মাযহাবটি না কোন হাদীস দ্বারা প্রমাণিত, না মদীনাবাসীর আমল।

আপনারা বলে থাকেন যে, যে মুসল্লি জোরে কেরাত পড়া নামাযে ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা না পড়ে, তার নামায হয় না।

অথচ ইমাম মালিক রহঃ বলেন- জোড়ে পড়া কিরাতের নামাযে ইমামের পিছনে মুক্তাদী সূরা ফাতিহা পড়বে না। {মুয়াত্তা মালিক-৬৮}

ইমাম মালিক রহঃ বলেন-মুক্তাদীরা আমীন বলবে, ইমাম আমীন বলবে না। একাকী নামাযে আমীন আস্তে বলাতে কোন সমস্যা নেই। {আল মুদাওয়ানাতুল কুবরা-১/৭১}

অথচ আপনাদের মাসআলা হল-ইমাম এবং মুক্তাদীরা জোরে জোরে আমীন বলবে। {দস্তুরে মুত্তাকী-১১১}

আর গুরাবায়ে আহলে হাদীস জামাতের ইমাম মুফতী আব্দুস সাত্তার বলেন যে, যেই অপরিণাদর্শী ফেতনাবাজ ব্যক্তি জোরে আমীন বলাকারীদের অপছন্দ করে তারা সুনিশ্চিত ইয়াহুদী। {ফাতওয়া আমীন বিল জিহর-৩৪}

ইমাম মালিক রহঃ  এর মাসলাক হল- মহিলারা নামাযে জড়োসরো হয়ে থাকবে, আর নিজের রান ও হাত খোলা রাখবে না। এক কথায় মহিলারা স্বীয় বৈঠক ও সেজদায় খুব মিলমিশ হয়ে জমে থাকবে। {আর রিসালা বহাওয়ালা নসবুল উমুদ-৫০}

অথচ আপনারা বলে থাকেন যে, মহিলা ও পুরুষের নামাযে কোন পার্থক্য নেই। {দস্তুরুল মুত্তাকী-১৫১, সালাতুর রাসূল-১৯০}

তারপরও কোন মুখ নিয়ে বলেন যে, আপনাদের দ্বীন মদীনাওয়ালা?

মুয়াত্তা মালিকের ৭ এবং ১৪৯ এর পৃষ্ঠার বর্ণনা দ্বারা স্পষ্ট যে, যে ব্যক্তি জামাতে এসে রুকুতে ইমামের সাথে শরীক হয়, সে উক্ত রাকাত পেয়েছে বলে ধর্তব্য হয়।

কিন্তু আপনারা বলে থাকেন যে, উক্ত রাকাত গণ্য হবে না। {উরফুল জাদী-২৬, নুজুল আবরার-১/১৩৩}

মুয়াত্তা মালিকের ১১১ পৃষ্ঠায় স্পষ্ট যে, ইমাম যদি ফজরের নামায পড়তে থাকে, তাহলে আগত মুসল্লি প্রথমে বেতের পড়তে পারেন।

কিন্তু গায়রে মুকাল্লিদরা আহলে মদীনার এ মাসআলাকে ভুল বলে থাকে। {সালাতুর রাসূল-৩৫১}

ইমাম মালিক রহঃ বলেন-তাকবীরে তাহরীমার পর রফয়ে ইয়াদাইন করাটা দুর্বল। তিনি আরো বলেন-আমি কোন রফয়ে ইয়াদাইনকারীকে চিনি না। {আল মুদাওয়ানা-১/৭১}

অথচ গায়রে মুকাল্লিদরা বক্তৃতা, লেখনি চ্যালেঞ্জবাজী করে এ মাসআলায় কিরূপ ধুম মাচিয়ে দিয়েছে!

১০

ইবনুল কাসেম রহঃ বলেন- ইমাম মালিক রহঃ এর নিকট জানাযার প্রথম তাকবীরের পর কোন তাকবীরে হাত উঠানো জায়েজ নয়। {আল মুদাওয়ানাতুল কুবরা-১/১৭৬}

অথচ আপনাদের শাইখুল ইসলাম মাওলানা সানাউল্লাহ সাহেব বলেন- জানাযার প্রতিটি তাকবীরের সাথে হাত উঠানো মুস্তাহাব। {ফাতওয়ায়ে সানাবিয়্যাহ-২/৫০}

১১

ইমাম মালিক রহঃ বলেন- জানাযার নামাযে কিরাত [কুরআন পড়া] আমাদের শহর [মদীনা তায়্যিবাহ]  এর মাঝে এর কোন আমল নেই। জানাযা কেবলই দুআ। আমি আমার শহরের ইলমওয়ালাদের এর উপরই পেয়েছি। {আল মুদাওয়ানাতুল কুবরা-১/১৭৪}

অথচ কথিত আহলে হাদীসরা বলে থাকে যে, ইমাম অথবা মুক্তাদী জানাযার নামাযে সূরায়ে ফাতিহা না পড়লে নামায বাতিল হয়ে যাবে। {ফাতওয়ায়ে ওলামায়ে হাদীস-৫/১৮৫}

১২

নামাযে জানাযা আস্তে আস্তে পড়া হবে এতে ওলামায়ে ইসলামের মাঝে কোন মতভেদ নেই। {শরহে মুসলিম লিন নববী-৩১১, আল মুগনী লি ইবনে কুদামা-২/৪৮৬}

কিন্তু পুরো উম্মতের বিপরীত গায়রে মুকাল্লিদদেন নিকট জানাযার নামায উঁচু আওয়াজে পড়া সুন্নাত। {ফাতওয়ায়ে সানাবিয়্যাহ-২/৫৬}

১৩

ইমাম মালিক রহঃ বলেন-আমি জানাযাকে মসজিদে রাখাকে মাকরুহ মনে করি। {আল মুদাওয়ানাতুল কুবরা-১/১৭৭}

কিন্তু গায়রে মুকাল্লিদরা বলে থাকে যে, মসজিদে জানাযার নামায পড়া সুন্নাত। আর একে অস্বিকার করা সুন্নাতের বিরোধীতা করা। {বালাগুল মুবীন-৫৫৩ বহাওয়ালা ফাতওয়া সাতারিয়া-১/৩১}

১৪

ইমাম মালিক রহঃ এক রাকাত বিতরের উল্লেখ করার পর বলেন- আমাদের এখানে এর কোন আমল নেই। বিতর কমপক্ষে তিন রাকাত। {মুয়াত্তা মালিক-১১০}

 

অথচ কথিত আহলে হাদীসরা বলে থাকে যে, তিন রাকাত বিতর পড়া জায়েজ নয়। {উরফুল জাদী-৩৩}

১৫

ইমাম মালিক রহঃ কুরআনের আয়াত দ্বারা প্রমাণ করেন যে, ঘোড়া খাওয়া হালাল নয়। {মুয়াত্তা মালিক-৪৯৩}

অথচ কথিত আহলে হাদীসরা কোথাও কোথাও ঘোড়া কুরবানী করে থাকে।

১৬

ইমাম মালিক রহঃ এর নিকট কুরবানীর দিন হল ৩দিন। {মুয়াত্তা মালিক-৪৯৭}

কিন্তু গায়রে মুকাল্লিদরা ৪র্থ দিনও কুরবানী করাকে জায়েজ বলে।

১৭

ইমাম মালিক রহঃ বলেন-আমি রমজানের পর শাওয়ালে ৬ রোজা রাখতে কোন আহলে ইলম আহলে ফিক্বহকে রাখতে দেখেন নি। আর পূর্বসূরীদের কেউ এ রোযা রেখেছেন মর্মে আমার কাছে সংবাদ আসেনি। বরং আহলে ইলম এটাকে মাকরুহ মনে করে। সেই সাথে এটাকে বেদআত হতে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করেন এ কারণে যে, মুর্খ ও সাধারণ লোকেরা এটাকে রমজান মাসের সাথে মিলিয়ে ফেলবে বলে। {মুয়াত্তা মালিক-২৫৬}

অথচ গায়রে মুকাল্লিদরা ইমাম মালিক রহঃ এর এ বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করে থাকে।

১৮

ইমাম মালিক রহঃ খেয়ারে মজলিসের হাদীসে লিখে বলেন- وليسلهذاعندناحدمعروفلاامرمعمولبهفيه (موطا-৬০৫) অর্থাৎ খেয়ারে মজলিসের আমাদের নিকট কোন সীমা নির্দিষ্ট নেই, নেই এর কোন আমলও আমাদের এলাকায়। {মুয়াত্তা মালিক-৬০৫}

অথচ গায়রে মুকাল্লিদরা এ ব্যাপারে বহুত শোরগোল করে থাকে।

১৯

মুয়াত্তা মালিক ৫১০ থেকে ৫২১ পর্যন্ত বর্ণনা দ্বারা একথা প্রমাণিত যে, ইমাম মালিক রহঃ এক বাক্যে তিন তালাক দিলে তিন তালাকই পতিত হওয়ার পক্ষে মত দেন।

অথচ একথা কথিত আহলে বিলকুল মানে না।

২০

২০ রাকাত তারাবীহের মাঝে ১৬ রাকাত নফল ইমাম মালিক রহঃ মানেন, অথচ একথা কথিত আহলে হাদীসরা একদম মানে না।

আমি বললাম-মদীনার সাথে না আপনাদের অযু মিলে, না তায়াম্মুম, না জানাযা, হালাল-হারাম এবং বিবাহ-তালাকের মাসআলায় আপনারা তাদের সাথে মতভেদ করেন। তারপর মানুষদের মিথ্যা কথা বলে বেড়ান যে, আপনাদের দ্বীন মদীনাওয়ালা?!

এরকম জঘন্য মিথ্যাচার করার সময় আপনাদের একবারও কি মনে হয় না যে, একদিন আল্লাহ তাআলার দরবারে প্রতিটি কথার জবাব দিতে হবে। সেখানে না চলবে কোন ক্ষমতা না ধোকাবাজি! এখনো তওবার দরজা খোলা। আল্লাহ তাআলার রহমত গোনাহগারদের ডেকে ডেকে বলে যে, আস! তওবা করে নাও।

 

মদীনা ও কিতাব

আমি সে কথিত আহলে হাদীসকে বললাম- পূর্ণ দ্বীনের উপর আপনাদের একটি কিতাবও না মক্কায় লিখা হয়েছে, না মদীনায়। আর কুফাতে দ্বীনে ইসলাম সে সকল সাহাবারাই নিয়ে এসেছেন যারা মক্কা মদীনায় ছিলেন।

আল্লামা আলাউদ্দীন হাসকাফী রহঃ মদীনা মনোয়ারায় রওযা পাকে বসে একটি পূর্ণাঙ্গ কিতাব “আদ দুররুল মুখতার”লিখেছেন। সে কিতাবে তিনি লিখেন-‘মোটকথা, কুরআন পাকের পর ইমাম আবু হানীফা রহঃ রাসূল সাঃ এর অনেক বড় একটি মোজেজা। আর এর সবচে’বড় দলিল এটাই যে, সারা দুনিয়ায় তার মাযহাবই সবচে’বেশি প্রচারিত।

আর দ্বিতীয় দলিল হল এই যে, ইমাম আবু হানীফা রহঃ এমন কোন কথা বলেন নি, যা কোন না কোন ইমামের মাযহাব হয়নি। অর্থাৎ সকল ইমামরা তার থেকে ফায়দা নিয়েছেন।

তৃতীয় দলিল হল-ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর সময়কাল থেকে আজ পর্যন্ত ইসলামী রাষ্ট্রে বাদশাহী এবং আদালতী ফায়সালার দায়িত্ব তারই মুকাল্লিদের হাতে রয়েছে।

আল্লামা শামী রহঃ এর ব্যাখ্যায় বলেন-খেলাফতে আব্বাসীয়া যার রাজত্বের সময়কাল প্রায় ৫শত বৎসর ছিল, তাদের মাঝের অধিকাংশ বিচারক, মাশায়েখ তথা শাইখুল ইসলাম হানাফী ছিল। যেমন ইতিহাস গ্রন্থগুলো এর জ্বলন্ত সাক্ষ্য বহন করছে। এমনিভাবে সাজলুকী ও খাওয়ারজামী সকল বাদশাহ ছিল হানাফী। এমনকি খেলাফতে উসমানীও হানাফী ছিল। তাদের বিচারক ছিল হানাফী, অর্থাৎ ইবনে আবেদীন শামী রহঃ এর সময়কাল পর্যন্ত ৯শত বৎসরের ইসলামী খিলাফত হানাফীদের দ্বারা পরিচালিত ছিল। হযরত শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দেসে দেহলবী রহঃ ও বলেন-সকল শহর, সকল রাষ্ট্রের বাদশাহ হানাফী ছিল, এবং বিচারক ও অধিকাংশ মাদরাসা ও অধিকাংশ সাধারণ মানুষ ছিল হানাফী। {কালিমাতে তায়্যিবাত-১৭৭} অর্থাৎ সকল শহর ও রাষ্ট্রে বাদশাহগণ হানাফী, অধিকাংশ বিচারক, অধিকাংশ শিক্ষক এবং অধিকাংশ সাধারণ মুসলমান হানাফী ছিল।

মোটকথা- দ্বিতীয় শতাব্দী থেকে ১৪ তম শতাব্দীর মাঝে প্রায় ১২শত বৎসর হারামাইন শরীফাইনের খাদিম হানাফী ছিল, তারপর আজ পর্যন্ত হাম্বলী। তাহলে আহলে কুরআন আর আহলে হাদীসদের আল্লাহ তাআলা কখনো রাজত্ব দিয়ে হারামাইন শরীফাইনের খিদমাত করার সুযোগ দেননি। এ দু দলের রাজত্বতো দূরে থাক, এদের প্রতিষ্ঠাও এ মুবারক শহরে হয়নি।

মাওলানা সানাউল্লাহ এর সত্য স্বীকার

গায়রে মুকাল্লিদদের শাইখুল ইসলাম ২০ শে অক্টোবর ১৯৩৩ ঈসাব্দে একটি ঘোষণা নিজেদের ফেরক্বাবাজী মুখপত্র “আহলে হাদীস”পত্রিকায় প্রকাশ করে। তাতে তিনি লিখেন-“মুসলমান ভাইয়েরা! [গায়রে মুকাল্লিদরা] অধিকাংশ মানুষ জানে যে, মাওলানা আহমাদ সাহেব দেহলবী সাত আঠ বছর যাবত মদীনায় অবস্থান করছেন। তিনি সেখানে পৌঁছার পর সে পবিত্র শহরে বসবাসকারী কাউকেই আহলে হাদীসের অনুসারী পান নি। এ জামাতের কোন মাদরাসাও ছিল না, ছিল না কোন দাওয়াতী কাজ। সেখানে এ জামাতের কোন কার্যক্রমই ছিল না, ছিল না কোন নামও। এমন মনে হচ্ছিল যে, এ জামাতের কার্যক্রম থেকে কয়েক শতাব্দী যাবত রাসূল সাঃ এর মদীনা শহর বঞ্চিত। এ অবস্থা দেখে তার মনে অনেক কষ্ট লাগে। খুবই আফসোস লাগে যে, ইসলামের মারকায ও দরবারে নবী সাঃ, যাতে সারা দুনিয়ার মুসলমানরা একত্রিত হয়, সেখানে কোন আহলে হাদীস নামধারী, এবং মাযহাবে আহলে হাদীসের কোন মুবাল্লিগ নেই?! কতটা লজ্জাজনক কথা! সুন্নাতের দাবিদার! অথচ পবিত্র সুন্নাতধারীর গৃহ মদীনা তায়্যিবায় সে দাবিদারদের কোন নাম নিশানাই নেই! আফসোস! ইন্নালিল্লাহ!

এভাবেই ওদের প্রথম মাদরাসা ‘মাদরাসায়ে দারুল হাদীস মুহাম্মদিয়া’১২ ই রবিউল আউয়াল ১৩৫২ হিজরীতে শুরু হয়। এর প্রতিষ্ঠা হলেন আব্দুল হক নুনারী [পূর্ব আহমদপুর]।

এর দ্বারা এ বিষয় স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, যেমন কাদিয়ানী ফেতনা, পারভেজী ফেতনা আরব দেশে পাক ও হিন্দ থেকে ঢুকেছে ঠিক তেমনি গায়রে মুকাল্লিদিয়্যাত ফিতনাও পাক ও হিন্দ থেকেই ঢুকেছে আরবে।

যেমন কাদিয়ানী ও আহলে কুরআনের এ দাবি বাতিল যে, তাদের দ্বীন হেজাযী, এমনিভাবে গায়রে মুকাল্লিদদের দাবি “তাদের দ্বীন মক্কা মদীনা থেকে এসেছে”এটাও চরম পর্যায়ের ইতিহাস বিকৃতি সাধন।

আমি লোকটাকে বললাম- আপনাদেরতো মক্কা মদীনার সাথে এতটুকু সম্পর্ক নেই, যতটুকু মুর্তির সম্পর্ক আছে মক্কা মদীনার সাথে। কারণ মুর্তি মক্কা মদীনার না হলেও মক্কা মদীনা থেকেতো বের হয়েছে অন্তত।

আমি তাকে আরো বললাম- আপনি কি ইসলামের ইতিহাসের প্রথম সাড়ে ১৩ শতাব্দীর মাঝে কোন মুসলিম খলীফা, কোন মুসলমান বিচারক, কোন একজন মসজিদে হারামের ইমাম বা মসজিদে নববীর ইমাম, হারামাইন শরীফাইনের কোন ব্যক্তিকে সনদসহ ঐতিহাসিক তথ্য প্রমাণে গায়রে মুকাল্লিদ প্রমাণ করতে পারবেন? এতটুকু প্রমাণ করে দেখান যে, লোকটার মাঝে ইজতিহাদ করার যোগ্যতাও ছিল না, সেই সাথে কারো তাক্বলীদও করে নি। বরং সে গায়রে মুকাল্লিদ ছিল। ইজতিহাদকে ইবলিসের কাজ, আর মুজতাহিদ ও তাক্বলীদকে শিরক বলেছেন।

একটি প্রমাণ পেশ করুন। স্রেফ একটি প্রমাণ।

0Shares

আরও জানুন

বাউল সম্প্রদায় সম্পর্কে একথাগুলো কি আমরা জানি?

সংগৃহিত  আমরা জানি না লালন আসলে কে? লালন ছিলেন বাউল সম্প্রদায়ের গুরু।আমরা কি জানি কারা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *