প্রশ্ন
আসসালামু আলায়কুম শেইখ,
আমি আপনার ahlehaqmedia থেকে নিয়মিত ফতওয়া পড়ি। আমার প্রশ্ন হলঃ
কিছু লোক বলে বুখারি মুসলিম ছাড়া কোন সহিহ হাদিস নেই। এ ব্যাপারে উক্ত মুহাদ্দিসগন নিজেরা কি বলেছেন। দয়া করে বলবেন, কোন লিঙ্ক থাকলে দিবেন।
জাযকাআল্লাহু খাইরান
সারওয়ার,
উত্তরা, ঢাকা
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
ইলমে হাদীস সম্পর্কে অজ্ঞ ব্যক্তি ছাড়া এমন হাস্যকর কথা কারো বলার কথা নয়। যদি উলুমে হাদীসের সাথে সামান্যতম সম্পর্কও কারো থাকে, সে এমন মুর্খতাসূলভ কথা বলতেই পারে না।
বুখারী মুসলিম ছাড়াও সহীহ হাদীসের উপর অনেক হাদীস গ্রন্থ রচিত হয়েছে। বুখারী ও মুসলিমের মূলনীতি অনুপাতে যেসব হাদীস সহীহ। এমন হাদীস যা ইমাম বুখারী ও মুসলিম আনেননি। কিন্তু তা বুখারী ও মুসলিমে আনা হাদীসের মতই সহীহ। এমন হাদীস একত্র করে “মুস্তাদরাক আলাস সহীহাইন” নামে আলাদা কিতাবও রচিত হয়েছে। যা এক সুবিশাল কিতাব। যে কিতাবে আট হাজার আটশত তিনটি হাদীস রয়েছে। যার কোনটিই বুখারী মুসলিমে বর্ণিত হয়নি।
এসব হাদীসকে সহীহ হওয়া থেকে বের করে দেয়া পাগলের প্রলাপ ছাড়া আর কী’ হতে পারে?
ইমাম বুখারী রহঃ নিজেই বলেছেনঃ
فَقَدْ رُوِّينَا عَنِ الْبُخَارِيِّ أَنَّهُ قَالَ: ” مَا أَدْخَلْتُ فِي كِتَابِي (الْجَامِعِ) إِلَّا مَا صَحَّ، وَتَرَكْتُ مِنَ الصِّحَاحِ لِحَالِ الطُّولِ
ইমাম বুখারী রহঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ আমি আমার কিতাবে [সহীহ বুখারীতে] সহীহ হাদীস ছাড়া অন্য হাদীস আনিনি। কিন্তু আমি অনেক সহীহ হাদীস আমার কিতাবের কলেবর বড় হবার শংকায় বাদ দিয়েছি। [মুকাদ্দিমায়ে ইবনুস সালাহ-১/১৯]
ইমাম মুসলিম বলেছেনঃ
وَرُوِّينَا عَنْ مُسْلِمٍ أَنَّهُ قَالَ: ” لَيْسَ كُلُّ شَيْءٍ عِنْدِي صَحِيحٌ وَضَعْتُهُ هَاهُنَا – يَعْنِي فِي كِتَابِهِ الصَّحِيحِ –
ইমাম মুসলিম থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেছেনঃ আমার কাছে “সহীহ” হিসেবে গণ্য সব হাদীসই আমার কিতাবে আনিনি। [মুকাদ্দিমায়ে ইবনুস সালাহ-১/২০]
এ বিষয়ে ইবনুস সালাহ রহঃ এর বক্তব্যটি প্রণিধানযোগ্যঃ
وَقَدْ قَالَ الْبُخَارِيُّ: ” أَحْفَظُ مِائَةَ أَلْفِ حَدِيثٍ صَحِيحٍ، وَمِائَتَيْ أَلْفِ حَدِيثٍ غَيْرِ صَحِيحٍ “، وَجُمْلَةُ مَا فِي كِتَابِهِ الصَّحِيحِ سَبْعَةُ آلَافٍ وَمِائَتَانِ وَخَمْسَةٌ وَسَبْعُونَ حَدِيثًا بِالْأَحَادِيثِ الْمُتَكَرِّرَةِ. وَقَدْ قِيلَ: إِنَّهَا بِإِسْقَاطِ الْمُكَرَّرَةِ أَرْبَعَةُ آلَافِ حَدِيثٍ،
ইমাম বুখারী বলেছেনঃ আমার এক লাখ সহীহ হাদীস মুখস্ত। আর দুই লাখ গায়রে সহীহ হাদীস মুখস্ত।
অথচ সহীহ বুখারীতে তাকরার [এক বর্ণনা একাধিকবার উল্লেখকরণ]সহ মোট হাদীস সংখ্যা হল,সাত হাজার, দুইশত পঁচাত্তরটা। আর কেউ বলেছেনঃ তাকরার ছাড়া হাদীস সংখ্যা হল চার হাজার। [মুকাদ্দিমায়ে ইবনুস সালাহ-১/২০]
আর তালীক ও তাকরারসহ হাদীস সংখ্যা হল নয় হাজার বিরাশিটি।
এখন প্রশ্ন হল, ইমাম বুখারী রহঃ বলেছেন, তার সহীহ হাদীসই মুখস্ত ছিল এক লাখ। বুখারীতে উল্লেখ আছে মাত্র নয় হাজার। তাও তাকরারসহ। বাকি একান্নবই হাজার সহীহ হাদীস গেল কোথায়?
এ প্রশ্নের জবাব এসব পণ্ডিতদের কাছে না থাকলেও আমাদের কাছে আছে। আমাদের কথা হল,ইমাম বুখারী ও মুসলিম রহঃ তাদের কিতাবে সহীহ হাদীস এনেছেন কথা সত্য। কিন্তু সব হাদীস আনার দাবীও করেননি। আনতে পারেনওনি। তা সম্ভবও নয়। তাহলে কিতাব আরো বিশাল বড় হয়ে যেতো।
বাকি সহীহ হাদীসগুলো,মুস্তাদরাকে হাকেম, সহীহ ইবনে আওয়ানা, সুনানে দারা কুতনী, সহীহ ইবনে হিব্বান, সহীহ ইবনে খুজাইমা, সুনানে তিরমিজী,সুনানে আবু দাউদ, জামে তিরজিমী, সুনানে নাসায়ী,সুনানে ইবনে মাজাহ,মুসনাদুল হুমায়দী, মুসনাদুল বাজ্জার, মুসনাদে আহমাদ,সুনানে কুবরা লিলবায়হাকী,সুনানে সুগরা লিলবায়হাকী,শুয়াবুল ঈমান, তাহাবী শরীফ, মুসনাদে ইবনুল জা’দ ইত্যাদি হাদীসের কিতাবসমূহে রয়েছে।
এসব কিতাবের সব হাদীসই সহীহ নয়। কিছু হাদীস জঈফ বা জালও আছে। কিন্তু অধিকাংশ হাদীসই সহীহ কিংবা হাসান।
বিস্তারিত জানতে হলে পড়ুন-
মুকাদ্দিমায়ে ইবনুস সালাহ১/১৯-২২।
ফাতহুল মুগীছ বিশরহি আলফিয়াতিল হাদীস-১/৪৬-৪৭।
তাদরীবুর রাবী-১/১০৪।
সুতরাং ইলমে হাদীসের প্রথম দিনের ছাত্রও জানে যে, বুখারী ও মুসলিমেই সহীহ হাদীস সীমাবদ্ধ মনে করা চরম পর্যায়ের মুর্খতা বৈ কিছু নয়।
ইমাম ইবনে কাছীর রহঃ এর একটি বক্তব্যের অনুবাদ দিয়ে এ আলোচনার ইতি টানছিঃ
ثم إن البخاري ومسلماً لم يلتزما بإخراج جميع ما يحكم بصحته من الأحاديث، فإنهما قد صححا أحاديث ليست في كتابيهما، كما ينقل الترمذي وغيره عن البخاري تصحيح أحاديث ليست عنده، بل في السنن وغيرها.
নিশ্চয় ইমাম বুখারী ও মুসলিম তারা সকল সহীহ হাদীসকে তাদের কিতাবে একত্র করাকে আবশ্যক করে নেননি। তারা উভয়ে এমন অনেক হাদীসকেই সহীহ বলেছেন, যা তাদের কিতাবে নেই। যেমন ইমাম বুখারী নিজেই সহীহ বলেছেন এমন অনেক হাদীস উল্লেখ করেছেন ইমাম তিরমিজী [ইমাম বুখারীর ছাত্র] ও অন্যান্য মুহাদ্দিসগণ।অথচ সেসব হাদীস ইমাম বুখারীর কিতাবে পাওয়া যায় না। বরং তা রয়েছে সুনান ও অন্যান্য গ্রন্থসমূহে।[ইখতিছারু উলুমিল হাদীস-১/২৫]
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।
ইমেইল– [email protected]