প্রচ্ছদ / অপরাধ ও গোনাহ / নবীদের পবিত্র জীবনীর বিকৃত উপস্থাপনঃ প্রচারকারী টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ এখন ঈমানী দায়িত্ব!

নবীদের পবিত্র জীবনীর বিকৃত উপস্থাপনঃ প্রচারকারী টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ এখন ঈমানী দায়িত্ব!

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
প্রতিটি নবী মাসুম তথা নিষ্পাপ। যুগে যুগে নবী রাসূলদের আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পাঠিয়েছিলেন জাতির হেদায়াতের বার্তাবাহক হিসেবে। নবীদের জীবনীতে রয়েছে উম্মতের জন্য হেদায়াত ও জান্নাতপ্রাপ্তির পথ। পবিত্র কুরআন তা’ই তার পাতায় পাতায় পূর্ববর্তী নবীদের বিভিন্ন ঘটনা উদ্ধৃত করেছে।
কিন্তু মজার বিষয় হল, কুরআন জীবনী বলার ক্ষেত্রে খুবই সতর্কতার সাথে অপ্রয়োজনীয় অংশগুলো বাদ দিয়ে শুধু মূল বিষয়গুলোকে উপস্থাপন করেছে। যা প্রমাণ করে অপ্রয়োজনীয় বিষয় উপস্থাপন করা মাকসাদে এলাহী নয়। মানুষের হেদায়াতের জন্য যা উপকারী, তা পেশ করাই মহান রবের উদ্দেশ্য। কাহিনীর বাঁকে বাঁকে বিনোদনের খোরাক জোগানো রব্বে কারীমের উদ্দিষ্ট ছিল না।
হাদীসের মাঝেও কিছু প্রয়োজনীয় ইতিহাস আলোচিত হয়েছে। এছাড়া গ্রহণযোগ্য কিছু তারীখ ও সীরাতের কিতাবে এ সংক্রান্ত আলোচনা এসেছে। সেখানেও মাকসাদ বিনোদন নয়। বিষয়টির পূর্ণ অনুধাবনই উদ্দেশ্য।
নবীদের কাহিনীর নামে বাংলা ভাষায় অনেক বই রচিত হয়েছে। যা বাজারে রাস্তায়, ফুটপাথে বিভিন্ন যায়গায় কিনতে পাওয়া যায়।
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যার অধিকাংশই বিকৃত ও মনগড়া কাহিনী। বানোয়াট কিচ্ছা কাহিনী, অনির্ভরযোগ্য সূত্রের বর্ণনা একত্রিত করে চটকদার শিরোনামে বিক্রি চলছে ইউসুফ জুলেখা, বিবি হাজেরা, নবী সুলাইমান, আইউব নবীর কিচ্ছা, বাবা আদম, বিবি আছিয়া ইত্যাদি বই।
উলামাদের বয়ান ও লিখনীর মাধ্যমে এসব বইয়ের ব্যাপারে সচেতনতা তৈরী করার চেষ্টা করা হচ্ছে অনেক আগে থেকেই। যদিও যতোটা প্রয়োজন ছিল ততোটা হয়ে উঠেনি।
কিন্তু উক্ত বিষয়টি আরো ভয়াবহ রূপে এখন আবির্ভূত হয়েছে ফিল্মের সূরতে। কোন নবীর নামে গুগুলে বা ইউটিউবে সার্চ দিলেই পাওয়া যাচ্ছে তাদের নামে নির্মিত বিভিন্ন ছায়াছবি।
যাতে অশালীন পোশাকে উপস্থিত বিভিন্ন অভিনেত্রী অভিনেতাদের মাধ্যমে চিত্রায়িত নবীদের পবিত্র জীবন। যার অধিকাংশই বিকৃত ও কল্পনাপ্রসূত কাহিনীতে ভরপুর।
খোঁজ নিয়ে জানা গেল আরো ভয়াবহ তথ্য। এসব ফিল্ম ডিরেক্টর হয়তো খৃষ্টান নতুবা ইরানী শিয়া কাফির। অমুসলিমদের হাতে নির্মিত মুসলিমদের কিতাব কুরআনে বর্ণিত নবীদের কাহিনী কিভাবে অবিকৃত থাকতে পারে? একি সম্ভব?
আমাদের পর্যবেক্ষণে যা উঠে এসেছেঃ
এসব ফিল্ম দ্বারা কিছু ফাসিক অভিনেতাদের নবীদের নাম ভূমিকায় অবতীর্ণ করা হচ্ছে। অথচ উক্ত ফাসিকের চেহারায় সেই শ্রেষ্ঠ নবীদের চেহারার ছিটেফোঁটা ও নেই।
এর মানে এরকম ফাসিক ও কথিত সুন্দর চেহারার লোকটির নোংরা চেহারাকে নবীর চেহারা সাব্যস্ত করে মাসুম নবীদের কলংকিত করা হচ্ছে।
 
সমস্ত নবীগণ নিষ্পাপ মাসূম ছিলেন। তাদের সেই পূত পবিত্র ব্যক্তিসত্বার চরিত্র রূপদান করছে কতিপয় ফাসিক অভিনেতা। যাদের ব্যক্তিজীবন পাপ ও গোনাহে পূর্ণ। এসব ফাসিক ব্যক্তিরা অভিনয়ের প্রয়োজনে সাজছে নবী। কি জঘন্য ও ভয়াবহ ধৃষ্টতা। একজন ফাসিক পাপিষ্ঠ অভিনেতা নিষ্পাপ নবীদের নাম ভূমিকায় অভিনয় করে চরমভাবে নবীদের শানে গোস্তাখী করছে।
 
যারা আবু জাহাল ও আবু লাহাবের ভূমিকায় অভিনয় করবে, তারা গল্পের প্রয়োজনে আল্লাহ, নবীও সাহাবীদের গালাগাল করবে, দোষ বলবে, যা কোন মুসলমানের জন্য বলা জায়েজ নয়। যা সুষ্পষ্ট কুফরী।
ইহুদী ও খৃষ্টানদের বা ইরানী শিয়াদের নির্মিত এসব ফিল্ম অধিকাংশই বিকৃত তথ্য উপস্থাপন করে মানুষকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা করছে। কাল্পনিক কাহিনী ফেঁদে প্রকৃত ইতিহাসকে পাল্টে দেবারও ঘৃণ্য কর্ম পরিচালিত হচ্ছে এসব ছায়াছবির মাধ্যমে।
 
এছাড়া ইসলামের মহান বীর সৈনিকদের আদর্শিক জীবনীকে বিকৃত করে যৌন লিপ্সু চরিত্রে উপস্থাপন করা হচ্ছে কিছু কিছু ড্রামা সিরিজে।
 
অবাক হবার বিষয় হল, এসব বিকৃত ও অনেক ক্ষেত্রেই অশালীন ফিল্মগুলো আমাদের দেশীয় কিছু টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে অবলীলায় সম্প্রচারিত হচ্ছে। কোন বাঁধা ও প্রতিবাদ ছাড়াই দিনের পর দিন চলছে অনুষ্ঠানগুলো। আসহাবে কাহাফ, ইউসুফ জুলেখা, ইত্যাদি নামে চলছে প্রোগ্রাম। ইউরোপ বিজয়ী মুসলিম বিজেতা, উসমানী খিলাফতের বীর সিপাহসালার সুলতান সুলাইমানকে নারীলোভী হিসেবে দেখানো হচ্ছে “সুলতান সুলেমান” নামক সিরিয়ালে। সিডির বাজার সয়লাব নবীদের বিকৃত ইতিহাস নির্ভর খৃষ্টান ও ইরানী শিয়া নির্মিত মুভিতে।
ইসলাম ও মুসলমানদের বিভ্রান্ত করতে। সাধারণ মুসলমানদের কাছে ইসলামের প্রকৃত ইতিহাসকে বিকৃত করতে এটি একটি সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছু নয়। বিশেষ করে নবীদের জীবনীকে এভাবে জঘন্যভাবে উপস্থাপন করা, ফাসিক অভিনেতাদের দিয়ে নবীদের পবিত্র জীবনীকে রূপদান করা অমার্জনীয় অপরাধ। সুষ্পষ্ট ধর্ম অবমাননা।
দায়িত্বশীল উলামাগণকে এ বিষয়ে আশু পদক্ষেপ নেবার জন্য আহবান করছি।
দৃষ্টি আকর্ষণ করছি সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে।
বর্হিরাষ্ট্রে নির্মিত এসব বিকৃত মুভি বাংলাদেশে কিভাবে প্রবেশ করছে?
আমদানী রীতি অনুসরণ করা হচ্ছে কি?
নবীদের জীবনীর মত স্পর্শকাতর বিষয়গুলো যাচাই ছাড়াই একটি মুসলিম প্রধান দেশে কিভাবে সম্প্রচারের অনুমোদন দেয়া হচ্ছে?
ধর্ম বিকৃতি ও অবমাননার অভিযোগে দ্রুত এসব ফিল্ম সম্প্রচার বন্ধ করা হোক। রুখে দেয়া হোক এসব মুভির আমদানী।
প্রতিটি সচেতন মুসলিমের উচিত এ বিষয়ে আওয়াজ তোলার। প্রতিবাদী হওয়া। লিখনী বয়ান, বক্তৃতা, আন্দোলন ইত্যাদির মাধ্যমে  ধর্মাবমাননার এ জঘন্য কর্মের বিরুদ্ধে জনমত তৈরী করা। রুখে দেয়া এসব ফিল্মের সম্প্রচার।
0Shares

আরও জানুন

ক্যারাম বোর্ড খেলার হুকুম কি

প্রশ্ন ক্যারম খেলা কি জায়েজ? প্রশ্নকর্তা: মো.হুমায়ুন কবির শাবিব উত্তর بسم الله الرحمن الرحيم ক্যারাম বোর্ড …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *