প্রশ্ন
assalamu alaikum…আমায় একটা মাসলা দিয়ে প্লিজ হেল্প করেন।খুব
দরকার…..আমার বিয়ের পর একটু প্রবলেম হচ্ছিল।শাশুড়ি খুব কথা শুনাত।বাবা
মা নিয়েও।আর জামাই কিছু বলত না।ওর মা জা বলে তাই।আমি ওকে কিছু বলতে
পারতাম না। আমাদের মাঝে অনেক কিছু নিয়ে ভুল বুঝাবুঝি বাড়িতেই থাকে। আমি
মোবাইল এ ম্যাসেজ এ আমার এএক আপুর সাথে শেয়ার করি।সেটা আমার জামাই দেখে
ফেলে।ওর মাও দেখে।রাগ করে আরও বেশি। এক সময় ফেব্রুআরি মাসের 20 তারিখ আমি
বাবার বাসায় চলে আসি।তারপর মার্চ মাসের 13 তারিখ আমার আব্বুকে নিয়ে
জামাই বাড়ি আসি।যেহেতু শেয়ার করে ভুল করেছি তাই মাফ চাইতে।কিন্তু ওর মা
খুব রাগ করে অপমান করে আমাদের তাড়িয়ে দেয়।আমার জামাই বলছিল ওকে নিয়ে যান
আম্মার রাগ পড়ুক তারপর আসলেই হবে।কিন্তু তারপর আর ওরা কোন যোগাযোগ করে
নি।আমি কল দিছি, ম্যাসেজ দিছি ওরা ধরেও নি। রিপ্লাই ও দেয় নি।আমি এপ্রিল
মাসের 23 তারিখ এক জুনিয়ার বোন কে দিয়ে কল করাই।তখন ও বলে আমি কি করব?
পাশ হতে ওর মা আমাকে বদমায়েস,, জানোয়ার, লোভী,,ছোট লোক এসব বলে খুব
বকে।কিনন্তু ও কিছুই বলে নাই।যদি ওর মায়ের আরও রাগ হয়। তাই এই ভয়ে।সেদিন
আমি খুব কষ্ট পাই।আর তারপর আমিও আর কল দেই নি। জুলাই মাস চলে আসে।আর ওরাও
যোগাযোগ করে নি।আমি তখন ভাবলাম ওরা চুপ তবে এভাবে কতদিন তাই আমি নিজেই
কাগজ সাইন করে পাঠিয়ে দেই। ওদের কিছুই জানাই ও নি যে আমি এটা করতে
যাচ্ছি।ওই টায় লিখা ছিল 1961 সনের মুসলিম পারিবারিক আইনের 8 নম্বর
অর্ডিন্যান্স এর 7(1) উপধারা মোতাবেক ই্সত্রি কতরিক স্বামীকে তালাকের
নোটিস।
আর ভিতরে লিখা ছিল আমি তালাকে তফউইজ দিবার ক্ষমতা বলে নিজ নফসের উপর আজ
এত তারিখ জুলাই 13 তারিখ তালাকে তফউইজ বাইন দিয়া উক্ত স্বামীর সাথে
বিবাহ বন্ধন ছিন্ন করিলাম। এই তালাকের নোটিশ জারি করলাম। দুই জন সাক্ষি
ছিল।
এই তালাক কি শরিয়াহ সম্মত হয়েছে??? মেয়ে কি তালাক দিতে পারে?? নাকি
জামাইয়ের কাছে চাইতে হয়??? আর ওই কাগজ ওদের কাছে যাওয়ার পর হতে আমার
জামাই খুব কান্নাকাটি করতেছে।বলে এটা কেমন করে হয়??? আমি মানি না মানি
না।আনি চুপ করে সারে ম তিন মাস ছিলাম বলেই তুমি এত বড় ডিশিসন নিলা
একবারও আমায় জানাবার দরকার মনে করলা না?? এ তালাক্ক হয় নি আমি মানি
না।আমি তোমাকে ছাড়ছি না।হাউমাউ করে কাদতেছে আর বলে আম্মার উপর রাগগ করে
তুমি আমাকে এত বড় শাসতি দিতে পার না।আমি চারমাস চুপ ছিলাম যেন আম্মাই
বলে যা বউ নিয়ে আয়।আমার ভুল হয়ে গেছে তোমার কোন খোজ নেই নি।আমি আমমাকে
খুশি করতে গিয়ে তোমায় অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছি।তাই বলে তুমি আমাকে
সারাজিবনের জন্যে ছেরে চলে যাওয়ার ডিসিশন নিতে পার না।আমায় মাফ করে দাও
প্লিজ।আর ওমন হবে না।আমি কি ছেড়ে দেওয়ার জন্যে বিয়ে করেছি? আমার মাথায় ও
চিন্তা আসেই নি কখনওই। আর এখন আমিও যেতে চাচ্ছি ওর কাছে।কারন আমিও ওকে
খুব ভালবাসি।
আচ্ছা কাবিন নামাতে লিখা ছিল 18 নম্বর ধারা তে লিখা ছিল জামাই বিবিকে
তালাক প্রদানের ক্ষমতা অর্পণ করিয়াছে।
কিন্তু এটা আমরা দুই জনের একজন ও জানতাম না।কাজি ওটা নিজে হতেই লিখে দিয়েছে।
আমার জামাই বলতেছে সে আমায় এই অধিকার কখনই দেয় নি।
এইবার আপিনি প্লিজ বলে দেন এই তালাক কি শরিয়াহ মতে জায়েজ হয়েছে???
আর এখন আমরা আবার ঘর করতে চাই তবে কি করতে হবে?????
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
প্রথমেই একটি কথা বুঝে নিন। সেটি হল এই যে, মাসআলা বলা হয়, প্রশ্নকারীর বর্ণনা অনুপাতে। প্রশ্নের শব্দের হেরফের ফাতওয়া পাল্টে যায়। তাই লিখিত বক্তব্য ছাড়া আমরা তালাক বিষয়ক ফাতওয়া প্রদান করি না।
যাইহোক, আপনার উপরোক্ত বক্তব্য অনুপাতেই নিচে সমাধান পেশ করা হচ্ছে। যদি আসল অবস্থা ভিন্ন হয়, তাহলে এর দায়দায়িত্ব আমাদের নয়।
আপনার বক্তব্য অনুপাতে যা বুঝা যাচ্ছে। তা হল এই যে,
১- আপনি আপনার স্বামীকে তালাকে তাফয়ীজ দিয়েছেন।
২-শব্দ ছিল এই যে, “আমি তালাকে তফউইজ দিবার ক্ষমতা বলে নিজ নফসের উপর আজ
এত তারিখ জুলাই 13 তারিখ তালাকে তফউইজ বাইন দিয়া উক্ত স্বামীর সাথে
বিবাহ বন্ধন ছিন্ন করিলাম। এই তালাকের নোটিশ জারি করলাম।”
৩-কাবিন নামার আঠার নং ধারায় স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে তালাকের অধিকার দেয়া আছে। তাতে স্বামীর সাইনও রয়েছে।
৪- তালাকের অধিকার প্রদান বিষয়ে স্বামী বা স্ত্রী কিছুই জানে না। স্বামী স্ত্রীর সম্পূর্ণ অজ্ঞতাসারে উপরোক্ত কাজটি করা হয়েছে।
এবার উত্তর খেয়াল করুন!
যদি স্বামী স্ত্রীকে বিবাহ করার সময় বা অন্য সময় নিজের উপর তালাক পতিত করার অধিকার প্রদান করে থাকে, তাহলে যে শর্তে তালাক পতিত করার অধিকার প্রদান করেছে, উক্ত শর্ত পাওয়া গেলে যত তালাকের অধিকার প্রদান করেছে, তা প্রদান করে নিলে স্ত্রীর উপর তালাক পতিত হয়ে গেছে।
যদি এক বা দুই তালাক প্রদান করে থাকে, তাহলে স্বামী স্ত্রী উভয়ে নতুন করে বিবাহ করে নিলেই হবে। আবার ঘর সংসার করতে পারবে।
আর যদি তিন তালাক প্রদান করে থাকে, তাহলে আর এক সাথে থাকতে পারবে না।
আর যদি স্ত্রীকে নিজের উপর তালাক প্রদানের অধিকার বিষয়ে স্বামী কিছুই না জানে। তাকে না জানিয়ে কাজী নিজের পক্ষ থেকে তালাকের অধিকার দিয়ে থাকে, তাহলে এর দ্বারা স্ত্রী নিজের উপর তালাক প্রদানের অধিকার পায় না।
সেই হিসেবে বিবাহের সময় কাবিন নামায় তালাকের অধিকার দেয়া সংক্রান্ত কোন বিষয় যদি স্বামী না জেনে থাকে, বরং কাজী নিজের পক্ষ থেকে তালাকের অধিকার দিয়ে থাকে, তাহলে এ অধিকার বলে স্ত্রী নিজের উপর তালাক পতিত করলে এর দ্বারা কোন তালাক পতিত হয়নি।তাই স্বামী স্ত্রী একসাথে বসবাস করতে কোন সমস্যা নেই।
এবার আপনি নিজেই নির্ণিত করে নিন আপনাদের অবস্থান কি? তালাক হয়েছে কি হয়নি?
সারমর্ম আবারো সংক্ষেপে বলে দিচ্ছি-
১-যদি স্বামীর অজ্ঞাতসারে কাজী নিজের পক্ষ থেকে স্ত্রীকে তালাক প্রদান করে থাকে, তাহলে উক্ত ক্ষমতাবলে স্ত্রী নিজের তালাক পতিত করতে পারে না। তালাক পতিত করলেও তালাক হবে না। সুতরাং আপনার স্বামী যদি তালাক দেবার অধিকার প্রদান বিষয়ে কিছুই না জানে, তাহলে আপনি নিজের উপর তালাক পতিত করার দ্বারা কোন তালাক হয়নি। আপনারা স্বামী স্ত্রী হিসেবে বাকি আছেন।
২
আর যদি তালাকের অধিকার দেবার কথা আপনার স্বামী জানতো, জেনেশুনেই কাবিন নামায় সাইন করে থাকে, তাহলে উপরোক্ত ধারায় যে শর্তে তালাকের অধিকার দেয়া হয়েছে, তা পাওয়া গেলে তালাক পতিত হয়ে গেছে।
আরেকটি বিষয়, সংসার জীবনে অনেক চড়াই উৎড়াই আসবে। শ্বাশুরীকে নিজের মা গ্রহণ করে নিন। ইনশাআল্লাহ অনেক অশান্তি দূর হয়ে যাবে। আর রাগ হলেই তালাকের মত ভয়াবহ সিদ্ধান্ত নেয়া শিশুসূলভ মানসিকতা। এসব থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হবে।
كُلُّ كِتَابٍ لَمْ يَكْتُبْهُ بِخَطِّهِ وَلَمْ يُمِلَّهُ بِنَفْسِهِ لَا يَقَعُ بِهِ الطَّلَاقُ إذَا لَمْ يُقِرَّ أَنَّهُ كِتَابُهُ كَذَا فِي الْمُحِيطِ (الفتاوى الهندية، كتاب الطلاق، الفصل السادس فى الطلاق بالكتابة-1/379، المحيط البرهانى، كتاب الطلاق، الفصل السادس فى ايقاع الطلاق بالكتاب-4/486، تاتارخانية، كتاب الطلاق، الفصل السادس فى ايقاع الطلاق بالكتاب-3/380)
فى الفتاوى الهندية-إذا كان الطلاق بائنا دون الثلاث فله أن يتزوجها في العدة وبعد انقضائها وإن كان الطلاق ثلاثا في الحرة وثنتين في الأمة لم تحل له حتى تنكح زوجا غيره نكاحا صحيحا (الفتاوى الهندية-1/472-473)
وفي رد المحتار- وأنواعه ثلاثة : تفويض ، وتوكيل ، ورسالة وألفاظ التفويض ثلاثة : تخيير وأمر بيد ، ومشيئة .
( قال لها اختاري أو أمرك بيدك ينوي ) تفويض ( الطلاق ) لأنها كناية فلا يعملان بلا نية ( أو طلقي نفسك فلها أن تطلق في مجلس علمها به ) مشافهة أو إخبارا ( وإن طال ) يوما أو أكثر ما لم يوقته ويمضي الوقت قبل علمها ( ما لم تقم ) لتبدل مجلسها حقيقة ( أو ) حكما بأن ( تعمل ما يقطعه ) مما يدل على الإعراض لأنه تمليك فيتوقف على قبول في المجلس لا توكيل ، فلم يصح رجوعه ، حتى لو خيرها ثم حلف أن لا يطلقها فطلقت لم يحنث في الأصح ( لا ) تطلق ( بعده ) أي المجلس ( إلا إذا زاد ) في قوله طلقي نفسك وأخواته ( متى شئت أو متى ما شئت أو إذا شئت أو إذا ما شئت ) فلا يتقيد بالمجلس ( ولم يصح رجوعه ) لما مر (رد المحتار-كتاب الطلاق، باب تفويض الطلاق-4/452
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।