প্রচ্ছদ / আকিদা-বিশ্বাস / ঢালাওভাবে আওয়ামিলীগ ও শাহবাগীদের নাস্তিক বলা যাবে কি?

ঢালাওভাবে আওয়ামিলীগ ও শাহবাগীদের নাস্তিক বলা যাবে কি?

প্রশ্ন

প্রশ্নকর্তাকামালহুসাইন

আবুধাবী Kamal

আসসালামুআলাইকুমওয়ারাহমাতুল্লাহ!

আজ  সারা দেশে একটি বিষয় খুব আলোচিত । জামাতশিবির শাহবাগের সবাইকে এবং যারা আওয়ামিলীগ সাপোর্ট করে তাদের নাস্তিক” বলে গালি দিচ্ছেআসলেই কি তারা সবাই নাস্তিক?

প্লিজ, এ বিষয়টি কুরআন ও হাদীসের আলোকে পরিস্কার করুন

Kamal Hossain

P.O. Box 2058 (NPCC)

Abu Dhabi, U.A.E.

জবাব

وعليكم السلام ورحمة الله وبركته

بسم الله الرحمن الرحيم

প্রথমেই এখানে কয়েকটি বিষয় বুঝতে হবে। তাহলো-

– মুসলিম কাকে বলে?

-কাফের কাকে বলে?

-মুরতাদ কাকে বলে?

-নাস্তিক কাকে বলে?

মুসলমান কাকে বলে?

রাসূল সাঃ হাদীসে মুসলমান হওয়ার পরিচয় দিয়েছেন। عن أنس بن مالك قال قال رسول الله صلى الله عليه و سلم ( من صلى صلاتنا واستقبل قبلتنا وأكل ذبيحتنا فذلك المسلم অনুবাদ-হযরত আনাস বিন মালিক রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-যে ব্যক্তি আমাদের মত নামায পড়ে, আমাদের কিবলাকেই কিবলা নির্ধারণ করে, এবং আমাদের জবাইকৃত পশু খায়, সে মুসলমান। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৩৮৪} অন্য হাদীসে রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন।

صلوا على كل ميت من أهل القبلة

অর্থাৎ তোমরা আহলে কিবলার উপর জানাযা নামায পড়বে। {সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-৯} প্রথম হাদীসটিতে তিনটি বিষয়কে যদিও মৌলিকভাবে মুসলমানিত্বের প্রমাণবাহী সাব্যস্ত করা হয়েছে।

আর দ্বিতীয় হাদীসে আহলে কিবলা তথা আমাদের কিবলা নির্ধারণ করলেই তাকে মুসলমান ধর্তব্য করে জানাযা পড়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এখানে প্রশ্ন হল আমাদের কিবলাকে কিবলা নির্ধারণ করা তথা আহলে কিবলা হওয়ার দ্বারা উদ্দেশ্য কি?

শুধু কিবলাকে নিজের কিবলা মনে করে সকল প্রকার গুমরাহী আক্বিদা রাখলেও ব্যক্তি মুসলমান থাকবে? বিষয়টি আসলে এমন নয়। একথার ব্যাখ্যা আছে। আহলে কিবলা বলতে কি অর্থ?

ফুক্বাহায়ে কেরাম এর ব্যাখ্যা করেছেন। মোল্লা আলী কারী রহঃ শরহুর ফিক্বহুল আকবারে “আহলে কিবলা” এর ব্যাখ্যায় লিখেন-

اعلم ان المراد باهل القبلة الذين اتفقوا على ما هو من ضروريات الدين كحدوث العالم وحشر الاجاد وعلم الله تعالى بالكليات والجزئيات وما اشبه ذلك من المسائل المهمات، فمن واذب طول عمره على الطاعات والعبادات مع اعتقاد قدم العالم ونفى الحشر او نفى علمه سبحانه وتعالى بالجزئيات لا يكون من اهل القبلة، وان المراد بعدم تكفير احد من اهل القبلة عند اهل السنة انه لا يكفر احد ما لم يوجد شيئ من امارات الكفر وعلاماته، ولم يصدر عنه شيئ من موجباته، (شرح الفقه الاكبر-189

ভাল করে জেনে রাখ যে, আহলে কিবলা দ্বারা উদ্দেশ্য হল ঐ ব্যক্তি, যে ঐ সকল আক্বিদাকে মান্য করে, যা দ্বীনের আবশ্যকীয় বিষয়। যেমন পৃথিবী সৃজিত বস্তু, কিয়ামত, হাশর-নশর, আল্লাহ তাআলার ইলম সমস্ত দেখা অদেখা বস্তুর উপর বিস্তৃত। এমন ধরণের অন্যান্য আক্বিদা।

যে ব্যক্তি সারা জীবন ইবাদত বন্দেগীতে কাটায়, কিন্তু এর সাথে পৃথিবী সৃজিত নয় বরং প্রাকৃতিক বলে বিশ্বাস করে, কিংবা কিয়ামতে মানুষের জীবিত হওয়াকে বা অথবা আল্লাহ তাআলার ইলম বিস্তৃত হওয়াকে অস্বিকার করে, তাহলে উক্ত ব্যক্তি আহলে কেবলার অন্তুভূক্ত নয়।

আর আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের মতে আহলে কেবলাকে কাফের না বলার দ্বারা উদ্দেশ্য এটাই যে, এসব ব্যক্তিদের মাঝে কাউকে ততক্ষণ পর্যন্ত কাফের বলা যাবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের থেকে এমন কোন কাজ সংঘটিত হয় যা কুফরীর আলামত বা কুফরকে আবশ্যক করে। (শরহুল ফিক্বহিল আকবার-১৮৯}

আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী রহঃ তার বিখ্যাত ফাতওয়া গ্রন্থ ফাতওয়া শামীতে উল্লেখ করেন-

لا خلاف في كفر المخالف في ضروريات الإسلام من حدوث العالم وحشر الأجساد ونفي العلم بالجزئيات وإن كان من أهل القبلة المواظب طول عمره على الطاعات كما في شرح التحرير (رد المحمتار، كتاب الصلاة، باب الإمامة، مطلب البدعة خمسة أقسام -2/300)

 আহলে কিবলার মধ্য থেকে যে ব্যক্তি দীর্ঘ জীবন পর্যন্ত ইবাদত বন্দেগীর করার পরও যদি পৃথিবী সৃজিত, সশরীরে হাশরের ময়দানে উঠতে হবে, বা আল্লাহ তাআলার জ্ঞান সর্বত্র বিস্তৃত এরকম আবশ্যকীয় দ্বীনী বিষয়কে অস্বিকার করে, তাহলে উক্ত ব্যক্তি যে, কাফের এতে কোন মতভেদ নেই। {ফাতওয়া শামী-২/৩০০}

শরহে আকাইদে নাসাফিয়্যাহ এর ব্যখ্যাগ্রন্থ নিবরাস গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে যে,

اهل القبلة فى اصطلاح المتكلمين من يصدق بضروريات الدين (الى قوله) فمن انكر شيئا من الضروريات (الى قوله) لم يكن من اهل القبلة، ولو كان مجاهد بالطاعات وكذالك من باشر شيئا من امارات التكذيب كسجدة الصنم ولاإهانة بامر شرعى والإستهزاء عليه فليس من اهل القبلة ان لا يكفر بارتكاب المعاصى ولا بانكار الامور الخفية غير المشهورة هذا ما حققه المحققون،

আহলে কিবলা মুতাকাল্লিমীন তথা আক্বায়িদবীদতের পরিভাষায় ঐ ব্যক্তিকে বলা হয়, যিনি দ্বীনের আবশ্যকীয় সকল বিষয়কে বিশ্বাস স্বীকার করেন।

জরুরিয়্যাতে দ্বীন তথা দ্বীনের আবশ্যকীয় বিষয়ের কোন একটিকেও যদি অস্বিকার করে তাহলে সে আহলে কিবলা নয়। যদিও সে ইবাদত বন্দেগীতে খুবই তৎপর হয়।

এমনিভাবে ঐ ব্যক্তি ও আহলে কিবলা নয়, যে কুফরী বা বাতিলের কোন একটি বিষয়ও করে থাকে, যেমন মুর্তিপূজা করা, অথবা শরয়ী কোন বিষয়কে ঠাট্টা করা, মজা করা, তাহলে এ ব্যক্তিও আহলে কিবলা নয়।

আর আহলে কিবলাকে কাফির না বলার দ্বারা উদ্দেশ্য হল, গোনাহ করার কারণে কোন আহলে কিবলাকে কাফের বলা হবে না। সাথে এমন বিষয়কে অস্বিকার করলেও কাউকে কাফের বলা যাবে না যা জরূরিয়্যাতে দ্বীন তথা দ্বীনের আবশ্যকীয় বিষয়ের অন্তর্ভূক্ত নয়। {নিবরাস}

উল্লেখিত আলোচনা দ্বারা একথাই প্রমানিত হল যে, আহলে কিবলা মানেই হল মুসলমান। আর আহলে কিবলা কাকে বলে? যিনি ইসলাম ধর্মের জরূরী বিষয়কে মান্য করেন। জরূরী বিষয়ের কোন একটিকেও অস্বিকার করেন না। উক্ত ব্যক্তির নাম মুসলমান।

প্রাসঙ্গিকভাবে একটি কথা জেনে রাখা উচিত যে, এখানে কালিমার উপর বিশ্বাসের কথা বলা হয়নি,তাহলে কি কালিমা বিশ্বাস না করলেও কি কেউ মুসলমান হতে পারবে?

আসলে এ প্রশ্নটি তাদের মনেই জাগবে, যারা উপরোক্ত আলোচনায় জরূরিয়্যাতে দ্বীন তথা দ্বীনের আবশ্যকীয় বিষয় মানে বুঝেন নি। দ্বীনের আবশ্যকীয় বিষয়ের মাঝে সর্ব প্রথম আবশ্যকীয় বিষয় হল কালিমা বিশ্বাস করা। তথা একথা বলা যে আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই, হযরত মুহাম্মাদ সাঃ আল্লাহ তাআলার বান্দা ও রাসূল।

কিছু জরূরিয়্যাতে দ্বীনের উদাহরণ খেয়াল করুন-

১-আল্লাহ একক।

২-আল্লাহ তাআলার সকল সিফাত সত্য।

৩-আল্লাহ তাআলা অনাদি, অনন্ত।

৪-সকল কিছুই আল্লাহ তাআলার সৃষ্টি।

৫-সব কিছুই আল্লাহ তাআলা অধীন।

৬-তার জ্ঞান সর্বত্র বিস্তৃত।

৭-তিনি সব জানেন, সব দেখেন। কোন কিছুই তার দেখার বাহিরে নয়।

৮-রাসূল সাঃ আল্লাহর প্রেরিত বান্দা।

৯-রাসূল সাঃ এর উপর নাজিলকৃত কুরআন সত্য।

১০-রাসূল সাঃ এর হাদীস সত্য।

১১-হাশর সত্য।

১২-কবরের আজাব সত্য।

১৩-জান্নাত-জাহান্নাম সত্য।

১৪-রাসূল সাঃ এর আগমনের পূর্বে আরো অনেক নবী রাসূল এসেছিলেন।

১৫-কুরআন ছাড়াও আরো আসমানী কিতাব ইতোপূর্বে নাজিল হয়েছিল, কিন্তু তা বর্তমানে রহিত ও বিকৃত।

১৬-রাসূল সাঃ সর্বকালের সর্বশেষ্ঠ সৃষ্টি।

১৭-তিনি সর্বশেষ নবী। তারপর কোন প্রকার নবী আর আসবে না।

১৮-রাসূল সাঃ নিষ্পাপ ছিলেন।

১৯-রাসূল সাঃ চরিত্রে সামান্যতম কোন দাগও নেই।

২০-সমস্ত সৃষ্টির মাঝে সবচে’ চরিত্রবান ও মর্যদাবান ব্যক্তিত্বের নাম মুহাম্মদ সাঃ ইত্যাদি।

এরকম আরো অনেক বিষয় জরূরিয়্যাতে দ্বীনের অন্তর্ভূক্ত। তাহলে এক কথায় আমরা মুসলমানের সংজ্ঞা বলতে চাইলে বলতে পারি যে, দ্বীনের আবশ্যকীয় সকল বিষয় মানার নাম মুসলমান। আর যেকোন একটিকে অস্বিকার করার দ্বারাই মুসলমানিত্ব থেকে বেরিয়ে যাবে।

কাফের কাকে বলে?

উল্লেখিত মুসলমান কাকে বলে? এর সংজ্ঞার দ্বারাই কাফের কাকে বলে তা জানা হয়ে গেছে।

তা হল-ইসলাম ধর্মের আবশ্যকীয় কোন একটি বিশ্বাসকে অস্বিকার করার নাম কুফরী। শুধু কালিমা পড়ে, তারপর রাসূল সাঃ এর আখলাক ও জীবনাচারকে অমান্য ও অবজ্ঞা করলেও কেউ মুসলমান থাকতে পারে না। যেমনটি আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে ঘোষণা দিয়েছেন-

فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُونَ حَتَّىٰ يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لَا يَجِدُوا فِي أَنْفُسِهِمْ حَرَجًا مِمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوا تَسْلِيمًا [٤:٦٥

অতএব,তোমার পালনকর্তার কসম,সে লোক ঈমানদার হবে না,যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে ন্যায়বিচারক বলে মনে না করে। অতঃপর তোমার মীমাংসার ব্যাপারে নিজের মনে কোন রকম সংকীর্ণতা পাবে না এবং তা হৃষ্টচিত্তে কবুল করে নেবে।{সূরা নিসা-৬৫}

সুতরাং বুঝা গেল যে, কাফের ঐ ব্যক্তি যে জরূরিয়্যাতে দ্বীনের মধ্য থেকে সর্বনিম্ন যে কোন একটি বিষয়কে অস্বিকার করে। বেশি করলে যে কাফের তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

মুরতাদ কাকে বলে?

মুরতাদ বলা হয় ঐ ব্যক্তিকে যে প্রথমে মুসলমান ছিল। তারপর ইসলামের যে কোন জরূরিয়্যাতে দ্বীন অস্বিকার করে কাফের হয়ে গেছে। উক্ত ব্যক্তির নাম মুরতাদ।

আর যে ব্যক্তি মুরতাদ সে কাফেরও হয়ে যায়।

এখানে একটি বিষয় বুঝে রাখতে হবে যে, কাফের মানেই মুরতাদ নয়। কিন্তু মুরতাদ মানেই কাফের।

পার্থক্যটা এজন্য যে, কোন ব্যক্তি প্রথমে মুসলমান না হয়ে যদি শুরুতেই ইসলামের আবশ্যকীয় কোন বিষয় অস্বিকার করে, তাহলে সে কাফের। কিন্তু মুরতাদ নয়।

কিন্তু যে ব্যক্তি মুসলমান থেকে তারপর কুফরী কাজ করে কাফের হয়, সে হল মুরতাদ। সাথে সাথে কুফরী কাজ করার দ্বারা কাফেরও।

মুরতাদের শাস্তি হল মৃত্যুদন্ড

মুরতাদকে প্রথমে ইসলামের দাওয়াত দেয়া হবে। যদি না মানে, তাহলে তাকে হত্যা করা হবে।

عن عائشة قالت : ارتدت أمرأة يوم أحد فأمر النبي صلى الله عليه و سلم أن تستتاب فإن تابت وإلا قتلت 

হযরত আয়শা রাঃ থেকে বর্ণিত। ওহুদ যুদ্ধে এক মহিলা মুরতাদ হয়ে যায়,তখন রাসূল সাঃ ইরশাদ করেন,তাকে তওবা করানো হোক,আর যদি তওবা না করে,তাহলে তাকে হত্যা করা হবে। {সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-১২১, সুনানে বায়হাকী কুবরা,হাদীস নং-১৬৬৪৫,মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক,হাদীস নং-১৮৭২৫,মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা,হাদীস নং-২৯৬০৭}

عن جابر أن امرأة يقال لها أم مروان ارتدت عن : الإسلام فأمر النبي صلى الله عليه و سلم أن يعرض عليها الإسلام فإن رجعت وإلا قتلت

হযরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ রাঃ থেকে বর্ণিত। উম্মে মারওয়ান নামের এক মহিলা মুরতাদ হয়ে গেলে রাসূল সাঃ আদেশ দেন যে,তার কাছে ইসলাম পেশ করতে,যদি সে ফিরে আসে তাহলে ভাল, নতুবা তাকে হত্যা করা হবে। {সুনানুল কুবরা লিলবায়হাকী,হাদীস নং-১৬৬৪৩,সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-১২২}

নাস্তিক কাকে বলে?

নাস্তিকতা বা এথিজম হল স্রষ্টার অস্তিত্বহীনতা। তথা একথার বিশ্বাস করা যে, স্রষ্টা বলতে কিছু নেই। আসমান, জমিন, গ্রহ-তারা সবই এমনিতেই প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্টি হয়েছে। এগুলোর কোন স্রষ্টা নেই। এক কথায় স্রষ্টার অস্তিত্বহীনতার বিশ্বাসের নাম নাস্তিক্যতা।

নাস্তিকতার অর্থ বুঝলে আমাদের অনেক বিষয় বুঝে আসবে।

যেমন-

১-

নাস্তিক মানেই কাফের। কারণ কাফের হওয়ার জন্য দ্বীনে ইসলামের যে কোন একটি আবশ্যকীয় বিষয় অস্বিকার করলেই হয়।

আর সেখানে নাস্তিক সেতো কোন কিছুই মানে না, তাই সে যে কাফের এটা বলার অপেক্ষা রাখে না।

২-

নাস্তিক মুরতাদ ও হতে পারে। কারণ কোন ব্যক্তি যদি মুসলমান ছিল প্রথমে, তারপর (আল্লাহ না করুন) স্রষ্টার অস্তিত্বহীনতায় বিশ্বাসী হয়ে যায়, তাহলে লোকটি নাস্তিক ও হল, সাথে সাথে মুরতাদও হল।

সেই সাথে কাফেরতো হলোই।

৩-

কাফের ও মুরতাদ হওয়ার জন্য নাস্তিক হওয়া জরূরী নয়। বরং নাস্তিক না হয়েও কাফের বা মুরতাদ হতে পারে।

কিন্তু নাস্তিক হলেই কাফের হয়ে যায়। যদি মুসলমানিত্ব থেকে নাস্তিকতার দিকে গেলে সাথে মুরতাদও হয়ে যায়।

এ বিষয়টি আরো ভাল করে বুঝতে হবে। কাফের হলেই তাকে নাস্তিক হতে হবে এমন শর্ত নয়। কারণ কাফের হল ইসলামের জরূরী বিষয়ের কোন একটি অস্বিকার করা।

আর নাস্তিক মানে হল স্রষ্টা অস্বিকার করা। তাহলে কোন ব্যক্তি ইসলামের জরূরী কোন বিষয়ের অস্বিকার করে যদি স্রষ্টা আছে মানে,তাহলে উক্ত ব্যক্তি কাফের, কিন্তু নাস্তিক নয়।

এ হিসেবে খৃষ্টান নাস্তিক নয়। নয় ইহুদীরাও। নয় হিন্দু বৌদ্ধরাও। কারণ তারা সবাই একজন স্রষ্টা আছেন মর্মে বিশ্বাস করে। কিন্তু তারা সবাই কাফের। কারণ তারা ইসলামের জরূরী বিষয় অস্বিকার করে।

কোন মুসলমানকে কাফের বলা জায়েজ নয়

যদি কোন ব্যক্তি ইসলামের জরূরী বিষয়কে মান্য করে, কিন্তু গোনাহগার। তাহলে উক্ত গোনাহের কারণে লোকটিকে কাফের বলা জায়েজ নয়। হারাম। কুরআন ও হাদীসে এ ব্যাপারে কড়া ধমকী এসেছে।

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا ضَرَبْتُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَتَبَيَّنُوا وَلَا تَقُولُوا لِمَنْ أَلْقَىٰ إِلَيْكُمُ السَّلَامَ لَسْتَ مُؤْمِنًا تَبْتَغُونَ عَرَضَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا فَعِنْدَ اللَّهِ مَغَانِمُ كَثِيرَةٌ ۚ كَذَٰلِكَ كُنْتُمْ مِنْ قَبْلُ فَمَنَّ اللَّهُ عَلَيْكُمْ فَتَبَيَّنُوا ۚ إِنَّ اللَّهَ كَانَ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرًا [٤:٩٤]

হে ঈমানদারগণ! তোমরা যখন আল্লাহর পথে সফর কর,তখন যাচাই করে নিও এবং যে,তোমাদেরকে সালাম করে তাকে বলো না যে, তুমি মুসলমান নও। তোমরা পার্থিব জীবনের সম্পদ অন্বেষণ কর,বস্তুতঃ আল্লাহর কাছে অনেক সম্পদ রয়েছে। তোমরা ও তো এমনি ছিলে ইতিপূর্বে; অতঃপর আল্লাহ তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন। অতএব, এখন অনুসন্ধান করে নিও। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের কাজ কর্মের খবর রাখেন। {সূরা নিসা-৯৪}

হাদীসে রাসূল সাঃ যে ব্যক্তি কাফের না তাকে কাফের বললে, সেই কুফরী নিজের দিকে প্রত্যাবর্তন করে মর্মে কঠোর হুশিয়ারী উচ্চারণ করেছেন-

عن أبي ذر رضي الله عنه أنه سمع النبي صلى الله عليه و سلم يقول ( لا يرمي رجل رجلا بالفسوق ولا يرميه بالكفر إلا ارتدت عليه إن لم يكن صاحبه كذلك 

হযরত আবু জর রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসুল সাঃ বলেছেন যে, তোমাদের কেউ যদি কাউকে ফাসেক বলে, কিংবা কাফের বলে অথচ লোকটি এমন নয়,তাহলে তা যিনি বলেছেন তার দিকে ফিরে আসবে। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৫৬৯৮}

কত মারাত্মক হুশিয়ারী, তাই কাউকে কাফের, মুশরিক, নাস্তিক বলার ক্ষেত্রে কঠোর সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।

কাফের বলার ক্ষেত্রে উসূল

আল্লামা মোল্লা আলী কারী রহঃ শরহে ফিক্বহুল আকবারে বলেন-

ان المسئلة المتعلقة بالكفر اذا كان له تسع وتسعون احتمالا للكفر واحتمال واحد فى نفيه فالاولى للمفتى والقاضى ان يعمل بالاحتمال النافى، لان الخطا فى ابقاء الف كافر اهون من الخطاء فى افناء مسلم واحد، (شرح الفقه الاكبر-199

কুফরী সম্পর্কিত বিষয়ে, যখন কোন বিষয়ে ৯৯ ভাগ সম্ভাবনা থাকে কুফরীর, আর এক ভাগ সম্ভাবনা থাকে, কুফরী না হওয়ার। তাহলে মুফতী ও বিচারকের জন্য উচিত হল কুফরী না হওয়ার উপর আমল করা।

কেননা ভুলের কারণে এক হাজার কাফের বেচে থাকার চেয়ে ভুলে একজন মুসলমান ধ্বংস হওয়া জঘন্য। {শরহু ফিক্বহুল আকবার-১৯৯}

সুতরাং কারো কোন কাজে সন্দেহ হলেই তাকে কাফের, মুরতাদ, নাস্তিক ইত্যাদি বলে প্রচার করা জায়েজ নয়। প্রথমে উক্ত বিষয়টি যাচাই বাছাই করে সত্যাসত্যি জেনে তারপর ফাতওয়া দিতে হবে।

কোন কাফেরকে মুসলমান বলাও জায়েজ নেই

যদি কোন ব্যক্তি ইসলামের জরূরিয়্যাতের কোন একটিকে অস্বিকার করার মাধ্যমে আসলেই কাফের হয়ে থাকে, তাহলে তাকে ব্যাখ্যা করে মুসলমান বানানোর ব্যার্থ চেষ্টা করা হারাম।

একাজ কিছুতেই জায়েজ নয়। এ ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে হুশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেন-

أَتُرِيدُونَ أَنْ تَهْدُوا مَنْ أَضَلَّ اللَّهُ ۖ وَمَنْ يُضْلِلِ اللَّهُ فَلَنْ تَجِدَ لَهُ سَبِيلًا [٤:٨٨

তোমরা কি তাদেরকে পথ প্রদর্শন করতে চাও,যাদেরকে আল্লাহ পথভ্রষ্ট করেছেন? আল্লাহ যাকে পথভ্রান্ত করেন,তুমি তার জন্য কোন পথ পাবে না। {সূরা নিসা-৮৮}

শেষ কথা

উল্লেখিত সুদীর্ঘ আলোচনা দ্বারা আশা করি এ বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে যে, কারা কাফের, কারা নাস্তিক, কারা মুরতাদ আর কারা মুসলিম।

কাদের কোন বিশেষণে বিশেষায়িত করা যাবে? আর কাকে করা যাবে না।

সুতরাং আওয়ামিলীগ হোক বা বিএনপি হোক, কিংবা জামাতে ইসলাম হোক, বা যেকোন দলের হোক না কেন, কিংবা শাহবাগী হোক, তাদের মাঝে যে ব্যক্তিই  যদি দ্বীনের যে কোন জরূরী বিষয়কে অস্বিকার করে, তাহলে উক্ত ব্যক্তি পূর্বে মুসলমান হয়ে থাকলে অস্বিকার করার দ্বারা মুরতাদ সেই সাথে কাফের হয়েছে।

আর আল্লাহর অস্তিত্বহীনতায় বিশ্বাসী হলে নাস্তিক ও কাফের হয়েছে।

আর যদি এমন না হয়ে থাকে, তাহলে সে মুসলমান হিসেবেই টিকে আছে। তাদের কাউকে নাস্তিক, মুরতাদ, কাফের বলা জায়েজ হবে না।

ঠিক তেমনি যাদের ব্যাপারে মুরতাদ হওয়ার বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়ে গেছে, বা নাস্তিকতার বিষয়টি স্পষ্ট, তাদের জোর করে রাজনৈতিক স্বার্থে মুসলমান পরিচয় দেয়া, মুসলমানদের মত আচরণ করা হারাম।

আল্লাহ তাআলা আমাদের সত্যকে সত্য, আর মিথ্যাকে মিথ্যা হিসেবে বুঝার তৌফিক দান করুন। আমীন।

والله اعلم بالصواب

উত্তর লিখনে

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালকতালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

ইমেইল- [email protected]

[email protected]

0Shares

আরও জানুন

ইমামের সামনের সুতরা কি মাসবূক মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট?

প্রশ্ন ইমামের সুতরা মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট কি না? এবং ইমামের সুতরা মসবুক ব্যাক্তির জন্য যথেষ্ট …

No comments

  1. m m abdullah makkah

    ধন্যবাদ ভাল একটি প্রশ্নের জবাব , এতে অনেকের শংসয় ূ দূর হবে , আর যাকে তাকে যেমন তেমন সময় অসময় কোন কাজের কারনে কাফের বা ফাসেক বলা ও ঠিক নয় ,

    হাদীসে রাসূল সাঃ যে ব্যক্তি কাফের না তাকে কাফের বললে, সেই কুফরী নিজের দিকে প্রত্যাবর্তন করে মর্মে কঠোর হুশিয়ারী উচ্চারণ করেছেন-

    عن أبي ذر رضي الله عنه أنه سمع النبي صلى الله عليه و سلم يقول ( لا يرمي رجل رجلا بالفسوق ولا يرميه بالكفر إلا ارتدت عليه إن لم يكن صاحبه كذلك

    হযরত আবু জর রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসুল সাঃ বলেছেন যে, তোমাদের কেউ যদি কাউকে ফাসেক বলে, কিংবা কাফের বলে অথচ লোকটি এমন নয়,তাহলে তা যিনি বলেছেন তার দিকে ফিরে আসবে। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৫৬৯৮} কত মারাত্মক হুশিয়ারী, তাই কাউকে কাফের, মুশরিক, নাস্তিক বলার ক্ষেত্রে কঠোর সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
    ধন্যবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *