প্রশ্ন
বর্তমান সময়ে অনেককেই বলতে শুনা যায়, আমরা কুরআন ও হাদীস দেখে আমল করবো। প্রয়োজনীয় মাসআলা কুরআন ও হাদীস দেখে বের করে নিব। কোন বিশেষজ্ঞের অনুসরণের প্রয়োজন নেই।
তো আমার প্রশ্ন হল, কুরআন ও সুন্নাহ থেকে মাসআলা বের করা তথা ইজতিহাদ করার জন্য কি কি যোগ্যতা থাকা আবশ্যক? শুধুই কি অর্থ জানলেই ইজতিহাদ করা যায়?
বিনীত
নুরুল কবীর, ঢাকা।
উত্তর
সালাফের সময় থেকে এ পর্যন্ত অনেক আলিম এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। আল্লামা হামিদী (রহ.) ‘ইহকাম’গ্রন্থে, ইমাম গাজালী (রহ.) ‘আল-মুসতাফা’গ্রন্থে এবং ইবনে খালদুন (রহ.) ‘আল-মুকাদ্দিমা’য় এ বিষয়ে আলোচনা করেছেন।
ইজতিহাদ প্রসঙ্গে এ বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও একশ্রেণীর মানুষ এর কোন প্রয়োজনীয়তা বোধ করেনা। অথচ এ শর্তগুলো পূর্ণ করা ছাড়া কাহারো জন্য ইজতিহাদের ময়দানে অবতীর্ণ হওয়ার কোন অবকাশ নেই। দৃষ্টান্ত স্বরূপ বলা যায়, অযু হলো নামাজের শর্ত। কেহ যদি অযু ছাড়া নামাজ পড়ে তার নামাজ হওয়া তো দূরের কথা, এ নামাজই তার ধ্বংসের কারণ হবে। তদ্রুপ যোগ্যতা অর্জন না করে যে লোক ইজতিহাদে লিপ্ত হয়, তারও ধ্বংস অনিবার্য।
আল্লামা শাওকানী (রহ.) ইজতিহাদের যে শর্তাদি বর্ণনা করেছেন তা এখানে সংক্ষেপে উল্লেখ করা হল।
প্রথম শর্ত :
আরবী ভাষায় বুৎপুত্তি। নাহব, সরফ, বালাগাত ইত্যাদি শোস্ত্রে গভীর জ্ঞানের পাশাপাশি আরবী ভাষার রীতি ও উপস্থাপনা সম্পর্কেও বুৎপুত্তি থাকা জরুরী। কেননা, কুরআন ও সুন্নাহ, যা ইজতেহাদের মূল সূত্র তা আরবী ভাষায়।
দ্বিতীয় শর্ত :
উলুমুল কোরআন বিষয়ে পারদর্শিতা। বিশেষত রসূলুল্লাহ (স.), সাহাবা ও তাবেয়ীন থেকে বর্ণিত কোরআন মজিদের তাফসীর, আসবাবে নুজুল ও নাসিখ-মানসূখ সম্পর্কে বুৎপুত্তি থাকা অপরিহার্য।
তৃতীয় শর্ত :
উলুমুল হাদিস বিষয়ে পারদর্শিতা। উলুমুল হাদিসের পরিভাষা ও ইলমু আসমাইর রিজাল সম্পর্কে অবগতি এর অন্তর্ভুক্ত। এ ছাড়া বিদ্যমান উপকরণাদির মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট মাসআলার যত হাদিস সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা সম্ভব তা পরিপূর্ণভাবে থাকাও ইজতিহাদরে জন্য জারুরী।
ফিক্বহু আহলিল ইরাক ওয়া হাদিসুহুম গ্রন্থে মুজতাহিদ হওয়ার জন্য যেসব বিষয় থাকাকে আবশ্যক সাব্যস্ত করা হয়েছে তা নিম্নরূপ-
১-আরবী ভাষা সম্পর্কে প্রাজ্ঞতা। তথা আরবীর নাহু, সরফ, ফাসাহাত ও বালাগাত, বর্ণনাশৈলী, কাদীম আরবী পরিভাষা ইত্যাদি।
২- কুরআন সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞান। তথা কুরআনের নাসেখ, মানসূখ, শানে নুজুল, শাব্দিক ও অন্তর্নিহিত অর্থসহ পুরো কুরআনের আহকামের আয়াত নখদর্পনে থাকা।
৩- সুন্নাহ সম্পর্কে প্রাজ্ঞতা। তথা হাদীসের সনদ ও মতন সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা, শানে ওরূদ, নাসেখ মানসূখ, সনদের রাবীদের জীবনী মুখস্ত, রাবীদের ব্যাপারে ইমামদের মতামত, হাদীসটির ইতিহাস, এতদসংশ্লিষ্ট যাবতীয় বিষয়।
৪- ফিক্বহী মূলনীতি সম্পর্কে প্রাজ্ঞতা। তথা উসুল, ফুরু সম্পর্কে থাকতে হবে পূর্ণ প্রাজ্ঞতা।
৫- ইজমায়ে উম্মত সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞান থাকা।
৬- শরীয়তের মাকসাদ সম্পর্কে জ্ঞাত থাকা।
৭- স্বভাবজাত ফিক্বহী যোগ্যতা থাকা।
ডাক্তারী বই নিজে নিজে পড়ে ডাক্তারী করা যেমন মারাত্মক এর চেয়েও মারাত্মক হল কুরআন ও হাদীসের বাংলা অনুবাদ পড়ে ইজতিহাদের ময়দানে নামা।
হাতুরী ডাক্তার দ্বারা ক্ষতি হয় মানুষের দেহের। আর এসব হাতুরি মুজতাহিদের দ্বারা ক্ষতি হয় পুরো দ্বীনে ইসলামের।
আল্লাহ তাআলা আমাদের এমন অজ্ঞ অর্বাচিন নব্য মুজতাহিদদের ভয়ানক গবেষণার হাত থেকে মুসলিম উম্মাহের দ্বীন ও ঈমানকে হিফাযত করুন। আমীন।
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।