প্রচ্ছদ / তালাক/ডিভোর্স/হুরমত / নেশাগ্রস্ত অবস্থায় অন্তসত্ত্বা স্ত্রীকে তালাক দিলে কি তা পতিত হয়?

নেশাগ্রস্ত অবস্থায় অন্তসত্ত্বা স্ত্রীকে তালাক দিলে কি তা পতিত হয়?

প্রশ্ন

আমি নেশাগ্রস্ত অবস্থায় মাতাল ও উত্তেজিত হয়ে অন্তসত্ত্বা স্ত্রীকে বেশ কয়েকবার তালাক বলেছি। দুইজন স্বাক্ষীগণের বাণী: সে তার স্ত্রীকে বেশ কয়েকবার ৩ তালাক এবং বাইন তালাক বলেছে। এখন আমার জানার বিষয় হলো: উপরোক্ত সূরতে স্বামী স্ত্রীর মধ্যকার বিবাহ কি বলবৎ আছে? নাকি তালাক হয়ে গেছে? এক্ষেত্রে ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক সমাধান জানিয়ে কৃতার্থ করবেন।

উত্তর

بسم الله الرحمن الرحيم

মাতাল অবস্থায় তালাক দিলেও তালাক পতিত হয়ে যায়। অন্তসত্ত্বা স্ত্রীকে তালাক দিলেও তা পতিত হয়ে যায়।   উপরোক্ত বিবরণ অনুপাতে স্ত্রীর উপর তিন তালাক পতিত হয়ে গেছে। তাই উক্ত স্ত্রীর সাথে ঘরসংসার করা জায়েজ নেই। সম্পূর্ণ আলাদা হয়ে যাওয়া আবশ্যক। স্ত্রী যেহেতু অন্তসত্ত্বা। তাই স্ত্রীর সন্তান প্রসব পর্যন্ত ইদ্দতকাল হিসেবে ধর্তব্য হবে। সন্তান প্রসবের পর উক্ত মহিলার যদি অন্য কারো সাথে বিবাহ হয়। সেখানে সহবাসসহ ঘরসংসার করা অবস্থায় কোন কারণে স্বামী মারা যায়, কিংবা দ্বিতীয় স্বামী তালাক প্রদান করে, তাহলে প্রথম স্বামী ইদ্দত তথা তিন হায়েজ শেষ হবার পর আবার উক্ত মহিলাকে বিবাহ করতে পারবে। এছাড়া দ্বিতীয় কোন পদ্ধতি নেই। দলীলসমূহ

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ” ثَلَاثٌ جِدُّهُنَّ جِدٌّ وَهَزْلُهُنَّ جِدٌّ: الطَّلَاقُ، وَالنِّكَاحُ، وَالرَّجْعَةُ “

হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তিন বিষয় এমন,যা ইচ্ছেকৃত করলে ইচ্ছেকৃত এবং ঠাট্টা করে করলেও ইচ্ছেকৃত বলে ধর্তব্য হয়। তা হল,তালাক,বিবাহ এবং তালাকে রেজয়ীপ্রাপ্তা স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিয়ে আসা। {সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-২০৩৯, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-২১৯৪}

فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا تَحِلُّ لَهُ مِن بَعْدُ حَتَّىٰ تَنكِحَ زَوْجًا غَيْرَهُ ۗ فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا أَن يَتَرَاجَعَا إِن ظَنَّا أَن يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ ۗ وَتِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ يُبَيِّنُهَا لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ [٢:٢٣٠]

তারপর যদি সে স্ত্রীকে (তৃতীয়বার) তালাক দেয়,তবে সে স্ত্রী যে পর্যন্ত তাকে ছাড়া অপর কোন স্বামীর সাথে বিয়ে করে না নেবে,তার জন্য হালাল নয়। অতঃপর যদি দ্বিতীয় স্বামী তালাক দিয়ে দেয়,তাহলে তাদের উভয়ের জন্যই পরস্পরকে পুনরায় বিয়ে করাতে কোন পাপ নেই। যদি আল্লাহর হুকুম বজায় রাখার ইচ্ছা থাকে। আর এই হলো আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা; যারা উপলব্ধি করে তাদের জন্য এসব বর্ণনা করা হয়। {সূরা বাকারা-২৩০}

وقال الليث عن نافع كان ابن عمر إذا سئل عمن طلق ثلاثا قال لو طلقت مرة أو مرتين فأن النبي صلى الله عليه و سلم أمرني بهذا فإن طلقتها ثلاثا حرمت حتى تنكح زوجا غيرك

হযরত নাফে রহ. বলেন,যখন হযরত ইবনে উমর রাঃ এর কাছে ‘এক সাথে তিন তালাক দিলে ‎তিন তালাক পতিত হওয়া না হওয়া’ (রুজু‘করা যাবে কিনা) বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলো,‎তখন তিনি বলেন-“যদি তুমি এক বা দুই তালাক দিয়ে থাকো তাহলে ‘রুজু’ [তথা স্ত্রীকে বিবাহ করা ছাড়াই ফিরিয়ে আনা] করতে পার। ‎কারণ,রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে এরকম অবস্থায় ‘রুজু’ করার আদেশ দিয়েছিলেন। ‎যদি তিন তালাক দিয়ে দাও তাহলে স্ত্রী হারাম হয়ে যাবে, সে তোমাকে ছাড়া অন্য স্বামী গ্রহণ করা পর্যন্ত। {সহীহ বুখারী-২/৭৯২, ২/৮০৩}

عن مجاهد قال كنت عند ابن عباس فجاء رجل فقال إنه طلق امرأته ثلاثا. قال فسكت حتى ظننت أنه رادها إليه ثم قال ينطلق أحدكم فيركب الحموقة ثم يقول يا ابن عباس يا ابن عباس وإن الله قال (وَمَنْ يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَلْ لَهُ مَخْرَجًا) وإنك لم تتق الله فلم أجد لك مخرجا عصيت ربك وبانت منك امرأتك

হযরত মুজাহিদ রহঃ. বলেন,আমি ইবনে আব্বাস রাঃ-এর পাশে ছিলাম। সে সময় এক ব্যক্তি ‎এসে বলেন-‘সে তার স্ত্রীকে তিন তালাক দিয়েছে। হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ চুপ করে রইলেন। আমি ‎মনে মনে ভাবছিলাম-হয়ত তিনি তার স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনার কথা বলবেন (রুজু করার হুকুম দিবেন)। কিছুক্ষণ ‎পর ইবনে আব্বাস রা. বলেন,তোমাদের অনেকে নির্বোধের মত কাজ কর;[তিন তালাক দিয়ে দাও!] তারপর ‘ইবনে ‎আব্বাস! ইবনে আব্বাস! বলে চিৎকার করতে থাক। শুনে রাখ আল্লাহ তা‘য়ালা বাণী-“যে ‎ব্যক্তি আল্লাহ তা‘য়ালাকে ভয় করে আল্লাহ তা‘য়ালা তার জন্য পথকে খুলে দেন। তুমিতো স্বীয় রবের নাফরমানী করেছো [তিন তালাক দিয়ে]। এ কারণে তোমার স্ত্রী তোমার থেকে পৃথক হয়ে গেছে। {সুনানে আবু দাউদ-১/২৯৯, হাদীস নং-২১৯৯, সুনানুল কুবরা লিলবায়হাকী,হাদীস নং-১৪৭২০,সুনানে দারা কুতনী,হাদীস নং-১৪৩}

عن مالك أنه بلغه أن رجلا قال لعبد الله بن عباس إني طلقت امرأتي مائة تطليقة فماذا ترى علي فقال له ابن عباس طلقت منك لثلاث وسبع وتسعون اتخذت بها آيات الله هزوا

হযরত ইমাম মালেক রহঃ এর কাছে এ বর্ণনা পৌঁছেছে যে, এক ব্যক্তি হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ এর ‎কাছে জিজ্ঞাসা করল-“আমি আমার স্ত্রীকে একশত তালাক দিয়েছি, এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কি? ‎তখন ইবনে আব্বাস রা. বলেন,তুমি যা দিয়েছ তা থেকে তিন তালাক তোমার স্ত্রীর উপর ‎পতিত হয়েছে,আর সাতানব্বই তালাকের মাধ্যমে তুমি আল্লাহ তা‘য়ালার সাথে উপহাস ‎করেছ। [মুয়াত্তা মালেক, পৃষ্ঠা: ১৯৯ হাদীস নং-২০২১]। ‎‎

عن مالك أنه بلغه أن رجلا جاء إلى عبد الله بن مسعود فقال إني طلقت امرأتي ثماني تطليقات فقال ابن مسعود فماذا قيل لك قال قيل لي إنها قد بانت مني فقال ابن مسعود صدقوا

হযরত ইমাম মালেক রহঃ এর কাছে এ বর্ণনা পৌঁছেছে যে,এক ব্যক্তি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ‎মাসউদ রাঃ এর দরবারে উপস্থিত হয়ে বলেন,আমি আমার স্ত্রীকে আট তালাক দিয়েছি। ‎হযরত ইবনে মাসউদ রাঃ বলেন,লোকেরা তোমাকে কি বলেছে? সে উত্তর দিল,তারা বলল ‎‘‘তোমার স্ত্রী ‘বায়ানা’ তালাক প্রাপ্ত হয়ে গেছে’’ তখন হযরত ইবনে মাসউদ রাঃ বলেন,তারা সত্য বলেছে। অর্থাৎ তিন তালাক পতিত হয়েছে। (মুয়াত্তা মালিক; পৃঃ-১৯৯, হাদীস নং-২০২২]

وَأُولَاتُ الْأَحْمَالِ أَجَلُهُنَّ أَن يَضَعْنَ حَمْلَهُنَّ ۚ وَمَن يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَل لَّهُ مِنْ أَمْرِهِ يُسْرًا [٦٥:٤]

গর্ভবর্তী নারীদের ইদ্দতকাল সন্তানপ্রসব পর্যন্ত। যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার কাজ সহজ করে দেন। [সূরা তালাক-৪]

عن الحسن أنه كان يقول: إذا طلق الرجل امرأته ثلاثا، وهى حامل، فلها عليه النفقة حرة كانت أو أمة (المصنف لابن أبى شيبة-10/83، رقم-18997)

عن هشام عن الحسن ومحمدا قالا: إذا كانت حاملا طلقها متى شاء (المصنف لابن أبى شيبة-9/513، رقم-18045)

وحل طلاقهن أى الآيسة والصغيرة والحامل (الدر المختار مع رد المحتار، زكريا-4/434، كرتاشى-3/232)

وطلاق الحامل يجوز (هداية-2/356)

عن عبد الله بن مقسم قال: سمعت سليمان بن يسار يقول: إن رجلا من آل البخترى طلق امرأته وهو سكران، فضربه عمر الحد، وأجاز عليه طلاقه (سنن سعيد بن منصور، باب ماجاء فى طلاق، دار الكتب العلمية بيروت-1/270، رقم-1106)

عن مالك أنه بلغه أن سعيد بن المسيب وسليمان بن يسار سئلا عن طلاق السكران؟ فقالا: إذا طلق السكران جاز طلاقه وإن قتل قتل به (المؤطا لإمام مالك، كتاب الطلاق، باب جامع الطلاق، النسخة الهندية-372، رقم-82)

ويقع طلاق كل زوج بالغ عاقل ولو تقديرا، بدائع: ليدخل السكران……. أو سكران ولو بنبيذ أو حشيش أو أفيون أو بنج زجرا، به يفتى (الدر المختار مع رد المحتار، زكريا-4/438-446، كرتاشى-3/235-240، الفتاوى التاتارخانية-4/394، رقم-6509)

شرب الخمر أو النبيذ طوعا حتى سكر وزال عقله، فطلاقه واقع عند عامة العلماء وعامة الصحابة (بدائع الصنائع، زكريا-3/158)

عن الشعبى فى طلاق الحامل يطلق عند الأهلة (مصنف عبد الرزاق-6/303، رقم-10933)

والله اعلم بالصواب

উত্তর লিখনে

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তা’লীমুল ইসলাম ইনস্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া ইসলামিয়া দারুল হক লালবাগ ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা: কাসিমুল উলুম আলইসলামিয়া, সালেহপুর আমীনবাজার ঢাকা।

পরিচালক: শুকুন্দী ঝালখালী তা’লীমুস সুন্নাহ দারুল উলুম মাদরাসা, মনোহরদী নরসিংদী।

শাইখুল হাদীস: জামিয়া ইসলামিয়া আরাবিয়া, সনমানিয়া, কাপাসিয়া, গাজীপুর।

ইমেইল[email protected]

0Shares

আরও জানুন

ইমামের সামনের সুতরা কি মাসবূক মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট?

প্রশ্ন ইমামের সুতরা মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট কি না? এবং ইমামের সুতরা মসবুক ব্যাক্তির জন্য যথেষ্ট …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *