প্রচ্ছদ / ইতিহাস ও ঐতিহ্য / প্রসঙ্গ মুয়াবিয়া রাঃ ‘তুলাক্বা’ বিষয়ক পর্যালোচনা

প্রসঙ্গ মুয়াবিয়া রাঃ ‘তুলাক্বা’ বিষয়ক পর্যালোচনা

আবূ মুয়াবিয়া লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

অভিযোগকারীরা তুলাক্বা বিষয়টি এমনভাবে বর্ণনা করে যে, মনে হয় এটি বুঝি একটি ঘৃণিত এবং লাঞ্ছনার বিষয়। যাদের ব্যাপারে তুলাক্বা হবার কথা বর্ণিত হয়েছে, তাদেরকে নিকৃষ্ট ও ঘৃণিত হিসেবে পেশ করে থাকে।
সেই হিসেবে হযরত আমীরে মুয়াবিয়া রাঃ কে তালীক্ব বিন তলীক্ব বলে গালমন্দ করে থাকে।
উত্তর
এ বিষয়টি বুঝতে হলে আমাদের প্রথমে জানতে হবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন সময়ে, কী পরিস্থিতিতে, কাদেরকে উদ্দেশ্য করে এ বাক্যটি দ্বারা সম্বোধন করেছেন। সাহাবায়ে কেরাম ‘তুলাক্বা’ শব্দটিকে অপমানজনক ও লাঞ্ছনাকর মনে করতেন কি? তুলাকা সম্বোধিত ব্যক্তিরা কি নেতৃত্বের আসনে আসীন হবার যোগ্যতা রাখে না?

اننم الطلقاء বাক্য দ্বারা উদ্দেশ্য কারা?

অষ্টম হিজরীর রমজান মাসে মক্কা বিজয়ের সময় কা’বার দরজা পাশে তাশরীফ আনেন। সেখানে বেশ কিছু নির্দেশনা জারী করেন। এর মাঝে একটি নির্দেশ এই ছিল যে, ‘হে কুরাইশ অধিবাসীরা! আল্লাহ তাআলা তোমাদের থেকে জাহিলী যুগের অহংকার, তাকাব্বুরী এবং পিতৃপুরুষ নিয়ে গর্ব করাকে বিদূরিত করে দিয়েছেন। সমস্ত মানুষ আদম আলাইহিস সালামের বংশধর। আর আদম মাটির সৃষ্টি। তারপর এ আয়াত তিলাওয়াত করলেন: يا ايها اناس انا خلقناكم من ذكر وانثى…… তারপর বললেন, হে কুরাইশের! তোমাদের কী ধারণা, আমি তোমাদের সাথে কি আচরণ করবো? লোকেরা বলল, আপনি উত্তম আচরণ করবেন। কেননা, আপনি দয়ালুও ভদ্র এবং দয়ালু ও ভদ্রঘরের সন্তান। তারপর নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, اذهبوا انتم طلقاء অর্থাৎ তোমরা যাও, তোমাদের ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে। [সীরাতে ইবনে হিশাম-২/৪১২]

ইবনে কাসীর রহঃ এ বিষয়ে লিখেছেনঃ

ثم قال يا معشر قريش! ما ترون انى فاعل فيكم؟ قالوا خيرا اخ كريم وابن اخ كريم، قال اذهبوا فانتم الطلقاء (البداية والنهاية-4/301)

অর্থাৎ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, হে কুরাইশ দল! তোমাদের কী ধারণা আমি তোমাদের সাথে কী আচরণ করবো? তারা বলল, আপনি আমাদের সাথে উত্তম আচরণ করবেন, কারণ আপনি দয়ালু ভাই এবং দয়ালু ব্যক্তির সন্তান। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যাও, তোমাদের ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে। [আলবিদায়া ওয়াননিহায়া-৪/৩০১]

তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, উসমান বিন তালহা কোথায়? (উসমান বিন তালহা কাবা ঘরের চাবি সংরক্ষণের দায়িত্বে ছিল)। তাকে ডাকা হল। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে কবার চাবি প্রদান করে বললেন, اليوم يوم بر ووفاء অর্থাৎ আজ দয়া ও দায়িত্বপালণের দিন। (প্রতিশোধ ও শাস্তি দেবার দিন নয়) [আলবিদায়া ওয়াননিহায়া-৪/৩০১]

ইবনে খালদুন রহঃ উক্ত ঘটনা নিম্নোক্ত শব্দে লিখেছেনঃ

ثم من على قريش بعد ان ملكهم يومئذ وقال اذهبوا فانتم طلقاء واسلموا (تاريخ ابن خلدون-3/5)

অর্থাৎ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেদিন কুরাইশদের উপর কর্তৃত্ব নেবার পর অনুগ্রহ প্রকাশ করে বলেন, যাও, তোমাদের ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে, ইসলাম গ্রহণ করে নাও। [তারীখে ইবনে খালদুন-৩/৫]

তুলাক্বা দ্বারা উদ্দেশ্য কারা?

নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বক্তৃতা দিচ্ছিলেন, তখন মক্কার কুরাইশদের একাধিক গোত্র উপস্থিত ছিল। তাদেরকে উদ্দেশ্য করেই নবীজী ভাষণটি দিয়েছিলেন। কোন নির্দিষ্ট গোত্র বা নির্দিষ্ট ব্যক্তি উদ্দেশ্য ছিল না। সে সময় নবীজীর সামনে অনেক গোত্রের লোকেই উপস্থিত ছিল। যেমন বনু তামীম, বনু আদী, বনু মাখযুম, বনু খুযাইমা, বনু আসাদ, বনু নাওফেল, বনু যুহরা, বনু হাশেম, বনু আব্দুশ শামস তথা বনু উমাইয়া ইত্যাদি গোত্র উপস্থিত ছিল।

এই সকল গোত্রের অধিবাসীদের ব্যাপারে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম اذهبوا انتم طلقاء অর্থাৎ তোমরা যাও, তোমাদের ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে বলে ঘোষণা দেন।

এছাড়া উক্ত বক্তৃতায় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বারবার ‘হে কুরাইশ গোত্র’ বলে সম্বোধন করেছেন। যা পরিস্কার প্রমাণ করে যে, নবীজীর ‘তুলাক্বা’ বলে সম্বোধনটা নির্দিষ্ট পরিবার বা নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করে ছিল না। বরং আমভাবে কুরাইশ গোত্র উদ্দেশ্য ছিল।

উলামায়ে কেরামগণ লিখেছেন যে, এ সময় প্রায় দুই হাজার মানুষ সে সময় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। তাদের মাঝে অনেক শ্রেষ্ঠ শ্রেষ্ঠ কীর্তিমান সাহাবাও ছিলেন। যেমন, হারিছ বিন হিশাম রাঃ, সাহল বিন আমর রাঃ, সাফওয়ান বিন উমাইয়া রাঃ, ইকরিমা বিন আবি জাহাল রাঃ, ইয়াযিদ বিন আবী সুফিয়ান রাঃ, হাকীম বিন হাযাম রাঃ, আবু সুফিয়ান বিন হারেছ বিন আব্দুল মুত্তালিব রাঃ, ইতাব বিন উসাইদ রাঃ, মুয়াবিয়া বিন আবী সুফিয়ান রাঃ প্রমূখ।

এ সমস্ত সাহাবাগণ মক্কা বিজয়ের সময় ইসলাম গ্রহণ করেন। তাদের ইসলাম নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবুল করেন। [মিনহাজুস সুন্নাহ-২/২০২]

এছাড়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চাচাতো বোন, হযরত আলী রাঃ এর বোন উম্মে হানী বিনতে আবী তালিব রাঃ ও এ সময় তথা মক্কা বিজয়ের সময় মুসলমান হন। এবং তিনিও নবীজীর বলা ‘তুলাক্বা’ দের অন্তর্ভূক্ত হন। [তারীখুল খামীছ-১৬৩, ২৭১]

সুতরাং শুধুমাত্র বনু উমাইয়ার কতিপয় ব্যক্তি যেমন, আবু সুফিয়ান রাঃ, মুয়াবিয়া রাঃ, ওলীদ বিন উকবা রাঃ, আব্দুল্লাহ বিন সা’দ বিন আবী ছারাহ প্রমূখগণকে ‘তুলাক্বা, তুলাক্বা’ বলে ঘৃণা ছড়ানো কিছুতেই জায়েজ হবে না।

তাছাড়া ‘তুলাক্বা’ শব্দটি শুধুমাত্র ক্ষমা ঘোষণার শব্দ। এটি কোন তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যতা বা অপমানজনক কোন শব্দ নয়, যা দিয়ে মানুষের মাঝে তাদের ব্যাপারে ঘৃণা ও বিদ্বেষ বিস্তার করা যায়। এ শব্দটি সাহাবা জমানায় কোন অপমানজনক শব্দও ছিল না। না কেউ এ শব্দটিকে তাচ্ছিল্য বা অপমানের জন্য কেউ ব্যবহার করতেন।

তুলাক্বা এর অবস্থান

সাহাবা বিরোধী দলের কাছে এটি খুবই গুরুত্ববহ যে, যারা তুলাক্বা তারা যেমন খিলাফতের যোগ্য নয়, তেমনি আর কোন পদে আসীন হবারও যোগ্যতা রাখেন না।

যেন তাদের অভিযোগকারীদের কথা হল, ইসলামের সমাজ ব্যবস্থায় তুলাকাগণের কোন মাকাম ও মর্যাদাই নেই। তারা কোন প্রকার পদ ও পদবী গ্রহণের যোগ্যতাই রাখেন না। তাদেরকে মুসলমানগণ সর্বদাই তুচ্ছ ও তাচ্ছিল্যের দৃষ্টিতেই দেখতো। ইসলাম ও মুসলমানদের মাঝে তাদের সম্মান ও ইজ্জত নেই। তারা সর্বাদাই লাঞ্ছিত ও ঘৃণিত শ্রেণী হিসেবে চি‎হ্নিত।

সাহাবা বিদ্বেষী অভিযোগকারীদের উপরোক্ত অভিযোগের জবাবে কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করতে চাই। যদ্দারা সকলের কাছেই তুলাক্বা সম্পর্কিত উপরোক্ত অভিযোগের জবাব বুঝে আসবে ইনশাআল্লাহ। আলাদাভাবে কোন কিছু বলার প্রয়োজন হবে না আশা করি।

রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা বিজয়ের পর আত্তাব বিন আসীদ রাঃ, যিনি তুলাক্বার অন্তর্ভূক্ত ছিলেন, তাকে মক্কা মুকাররমার ওয়ালী এবং হাকেম নিযুক্ত করেন। [আখবারে মক্কা লিলফাকেহী-২/১৩১, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৭০৮, মিনহাজুস সুন্নাতিন নাবাবিয়্যাহ-২/২০২]

হযরত আবু সুফিয়ান বিন হারব রাঃ। যিনি তুলাক্বাদের অন্তর্ভূক্ত ছিলেন। সেই সাথে বনু উমাইয়্যাহ এর নেতৃস্থানীয় ছিলেন। তাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একাধিক দায়িত্ব প্রদান করেছেন।

যেমন-

ক)

কাবীলায়ে বনী ছাকীফ এর “লাত” নামের এক মূর্তি ভাঙ্গার জন্য তাকে দায়িত্ব প্রদান করে প্রেরণ করেন । [তারীখে ইবনুল ওয়ারিদী-১/১২৭, আলবিদায়া ওয়াননিহায়া-৮/৪৮]

وَلما دخل الْمَدِينَة قدم عَلَيْهِ وَفد الطَّائِف فِي ثَقِيف وَأَسْلمُوا وسألوه أَن يدع اللات الَّتِي كَانُوا يعبدونها لَا يَهْدِمهَا إِلَى ثَلَاث سِنِين فأبي فنزلوا إِلَى شهر فَأبى وسألوه أَن يعفيهم من الصَّلَاة فَقَالَ: ” لَا خير فِي دين لَا صَلَاة فِيهِ ” فَأَجَابُوا وَأرْسل مَعَهم الْمُغيرَة بن شُعْبَة وَأَبا سُفْيَان بن حَرْب فهدما اللات (تاريخ ابن الواردى-1\127)

وَبَعَثَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَعْدَ إِسْلَامِ أَهْلِ الطَّائِفِ هُوَ وَأَبُو سُفْيَانَ بْنُ حَرْبٍ فهدما اللات، (البداية والنهاية-8\48)

খ)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাজরানের আমেল ও হাকেম হিসেবে হযরত আবূ সুফিয়ান বিন হারব রাঃ কে প্রেরণ করেন। [আনসাবুল আশরাফ লিলবালাজুরী-১/৫২৯, আলজাওহারাহ ফী নাসাবিন নাবিয়্যী ওয়া আসহাবিহিল আশারাহ লিলবুররী-১/৩৯, সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-৩৯৩৬]

عَنْ عَائِشَةَ , قَالَتْ: بَعَثَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَبَا سُفْيَانَ عَلَى نَجْرَانَ الْيَمَنِ عَلَى صَلَاتِهَا وَحَرْبِهَا وَصَدَقَاتِهَا (سنن الدر قطنى، رقم-3936)

تُوُفِّيَ رَسُول اللَّه صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وأربعة من بني أمية عماله: عتاب ابن أسيد عَلَى مكة، وأبان بن سعيد بن العاص عَلَى البحرين، وخالد بن سعيد عَلَى صنعاء، وَأَبُو سفيان بن حرب عَلَى نجران (أنساب الأشراف للبلاذرى-1\529)

وشهد أبو سفيان حصار الطائف مع النبيِّ عليه السلام، ورمي بسهم بها ففقأ عينه، وفقئت عينه الأخرى يوم اليرموك. واستعمله النبيُّ صلى الله عليه وسلم على نجران، (الجوهرة فى نسب النبى وأصحابه العشرة للبرى-1\39)

হযরত ইয়াযিদ বিন আবূ সুফিয়ান রাঃ। যিনি আবূ সুফিয়ান রাঃ এর বড় ছেলে এবং হযরত মুয়াবিয়া রাঃ এর বড় ভাই ছিলেন। তাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বনী ফারাছ এর সাদাকা উসূল করার জন্য আমেল নিযুক্ত করেন। [মিরআতুজ যামান ফী তাওয়ারীখিল আ’য়ান-৫/৩০০]

يزيد بن أبي سفيان بن حرب

كُنيته أبو خالد، وأمُّه زينب بنت نَوفل، من بني فراس بن غَنْم ، وهو من الطبقة الرابعة ممّن أسلم يوم الفتح، وكان أفضلَ أولاد أبي سُفيان، ويقال له: زيد الخير. شهد مع النبي -صلى اللَّه عليه وسلم- حُنينًا، وأعطاه مئة من الإبل، وأربعين أُوقيّة، ولم يزل رسول اللَّه -صلى اللَّه عليه وسلم- يَذكره بخير، واستعمله على صدقات بني فراس بن غَنْم؛ لأن يزيد منهم (مرآة الزمان في تواريخ الأعيان لابن الجوزى-5\300)

এছাড়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইয়াযিদ বিন আবি সুফিয়ান রাঃ কে তাইমা অঞ্চলের আমীর নিযুক্ত করেছেন। [আলমাহবার-১/১২৬, আলওয়াফি বিলওয়াফিয়াত-১/৮১]

و (أبو سفيان) بن حرب أمره على/ نجران. و (يزيد) بن أبى سفيان على تيماء (المحبر لابى البغدادى-1\126)

وَولي يزِيد بن أبي سُفْيَان بن حَرْب على تيماء (الوافى بالوافيات-1\81)

এছাড়া মুয়াবিয়া বিন আবি সুফিয়ান রাঃ। যিনিও তুলাক্বাদের অন্তর্ভূক্ত ছিলেন। তাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্যান্য কাতিবে ওহীগণের সাথে ওহী লিখক ও নবীজীর পত্র লিখকের আসনে আসীন করেন। [তাকরীবুত তাহযীব-১/৩৫৭, আলবিদায়া ওয়াননিহায়া-৮/১১৮, আলইছতিয়াব-৩/৩২৫, শিয়াদের লিখিত বই “ইবনু আবীল হাদীদ”-১/২৩৮, তারীখুল ইসলাম, ইমাম যাহাবীকৃত-২/৩১৮, মুসনাদে আহমাদ-১/৩৩৫, মাযমাউয যাওয়ায়েদ-৯/৩৫৭, আলইসাবাহ-৩/৩৯৩]

হযরত মুয়াবিয়া রাঃ এর বিষয়ে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একাধিক দুআ এবং ভবিষ্যৎবাণীও করেছেন। যেমন-

ক)

عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ أَبِي عَمِيرَةَ الْأَزْدِيِّ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ ذَكَرَ مُعَاوِيَةَ، وَقَالَ: ” اللهُمَّ اجْعَلْهُ هَادِيًا مَهْدِيًّا وَاهْدِ بِهِ “

আবদুর রহমান ইবনু আবী উমাইরাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি রাসূল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবী ছিলেন; নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মু’আবিয়া (রাযিঃ)-এর জন্য দু’আ করেনঃ “হে আল্লাহ! তুমি তাকে অন্যকে সঠিক পথ প্রদর্শনকারী ও মাহদী তথা হেদায়াতপ্রাপ্ত বানাও এবং তার মাধ্যমে (মানুষকে) সৎপথ দেখাও। [মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৭৮৯৫, সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-৩৮৪২, আলমু’জামুল আওসাত, হাদীস নং-৬৫৬, আলমু’জামুল কাবীর লিততাবরানী, হাদীস নং-২২৫২]

হাদীসের সকল বর্ণনাকারীগণ সিক্বা। [তা’লীকে মুসনাদে আহমাদ লিশুআইব আলআরনাউত, বর্ণনা নং-১৭৮৯৫]

সুতরাং বুঝা গেল যে, হযরত মুয়াবিয়া রাঃ শুধু নিজে হেদায়াতপ্রাপ্ত নন। বরং অন্যদের হেদায়াতেরও মাধ্যম।

খ)

হযরত ইরবাজ বিন সারিয়া রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু ইরশাদ করেছেন:

«اللَّهُمَّ عَلِّمْ مُعَاوِيَةَ الْكِتَابَ وَالْحِسَابَ وَقِهِ الْعَذَابَ»

হে আল্লাহ! তুমি মুয়াবিয়াকে কুরআন ও হিসাব বিজ্ঞানের জ্ঞান দান কর, এবং তাকে আযাব থেকে রক্ষা কর। [সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদীস নং-১৯৩৮, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৭১৫১, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৭২১০]

হযরত মোল্লা আলী রহঃ বলেন,

وَلَا ارْتِيَابَ أَنَّ دُعَاءَ النَّبِيِّ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – مُسْتَجَابٌ، فَمَنْ كَانَ هَذَا حَالَهُ كَيْفَ يُرْتَابُ فِي حَقِّهِ، (مرقاة المفاتيح، كتاب المناقب والفضائل، باب جامع المناقب-9\4022، رقم-6244)

এতে কোন সন্দেহ নেই যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দুআ সুনিশ্চিতভাবেই কবুল হয়। সুতরাং যে ব্যক্তি বিষয়ে উপরোক্ত দুআ করা হয়েছে, তার ব্যাপারে, তাঁর মকবূল হওয়ার বিষয়ে কোন প্রকার সন্দেহ করার সুযোগ নেই। [মিরকাতুল মাফাতীহ-৯/৪০২২]

গ)

হযরত আমর বিন সাঈদ তার দাদার সূত্রে বর্ণনা করেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অযুরত অবস্থায় মুয়াবিয়া রাঃ কে বললেন,

” يَا مُعَاوِيَةُ، إِنْ وُلِّيتَ أَمْرًا فَاتَّقِ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ وَاعْدِلْ “، قَالَ: فَمَازِلْتُ أَظُنُّ أَنِّي مُبْتَلًى بِعَمَلٍ لِقَوْلِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى ابْتُلِيتُ

হে মুয়াবিয়া! যদি তোমাকে আমীরের দায়িত্ব দেয়া হয়, তাহলে আল্লাহকে ভয় করবে এবং ন্যায়নিষ্ঠ আচরণ করবে।

মুয়াবিয়া রাঃ বলেন, তখন থেকেই আমার ধারণা হয় যে, নবীজীর একথার প্রেক্ষিতেই আমি এ দায়িত্বপ্রাপ্ত হবো, এবং অবশেষে তা’ই হল। [মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৬৯৩৩, আলবিদায়া ওয়াননিহায়া-৮/২০, তারীখে দামেশক-৫৯/১০৭, সিয়ারু আলামিন নুবালা-৩/১৩১]

এ হাদীসের বর্ণনাকারীগণ সিক্বা। [শুয়াইব আলরাউনত, মুসনাদে আহমাদ, বর্ণনা নং-১৬৯৩৩ এর টিকা]

ঘ)

عَنْ شَدَّادِ بْنِ أَوْسٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مُعَاوِيَةُ أَحْلَمُ أُمَّتِي وَأَجْوَدُهَا»

হযরত শাদ্দাদ বিন আউস থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আমার উম্মতের মাঝে মুয়াবিয়া সবচে’ বেশি সহনশীল ও সহিষ্ণু। [আসসুন্নাহ লিআবি বকর বিন খাল্লাল, বর্ণনা নং-৭০১, তারীখুল খুলাফা-১/৪১, মুসনাদুল হারেছ, বর্ণনা নং-৯৬৫, তারীখে দামেশক লিইবনে আসাকীর-১৩/৩৬৫]

উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে একথা পরিস্কার যে, তুলাক্বা বলে যাদের ঠাট্টা বিদ্রুপ করা হয়। যাদের কোন সম্মান ইজ্জত নেই বলে প্রচার করা হয়, তাদের রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কতোটা মূল্যায়ন করতেন।

বিভিন্ন স্থানের আমীর, আমেল নিযুক্তিকরণ, সেই সাথে ভরপুর প্রশংসা করার মাধ্যমে অভিযোগকারীদের মুখে যেন নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেন ছাই নিক্ষেপ করে দিয়েছেন।
এরপরও যারা শুধুমাত্র তুলাক্বা বলে মহান সাহাবীদের বিরুদ্ধে কথা বলে, তাদের হৃদয় অন্ধ ছাড়া আর কী’ হতে পারে?

আল্লাহ তাআলা এসব সাহাবা বিদ্বেষী থেকে উম্মতকে হিফাযত করুন।

তুলাক্বাগণ খেলাফতের যোগ্য নন?

হযরত আমীরে মুয়াবিয়া রাঃ এর শানে অভিযোগকারীরা খুব জোর দিয়ে অভিযোগও করে থাকেন যে, কতিপয় সাহাবাগণের মতে তুলাক্বাগণ খেলাফতের যোগ্য নয়।
যেমন হযরত আব্দুর রহমান বিন গানাম আশআরী রাঃ এর একটি বক্তব্য পাওয়া যায়।
সেটি হল, وهو من الطلقاء اللذين لا تجوز لهم الخلافة অর্থাৎ আমীরে মুয়াবিয়া রাঃ তুলাক্বার অন্তর্ভূক্ত। যাদের জন্য খেলাফত জায়েজ নয়। তথা যারা খেলাফতের যোগ্য নয়।

আব্দুর রহমান বিন গানাম রাঃ এর উক্ত মন্তব্যটি নিম্নোক্ত ঘটনায় উল্লেখ রয়েছে।

ঘটনাটি হল, হযরত আলী রাঃ এর খিদমাতে হযরত মুয়াবিয়া রাঃ এর পক্ষ থেকে আবূ হুরায়রা রাঃ এবং আবু দারদা রাঃ দূত হিসেবে যান। যখন তারা সেখান থেকে ফিরছিলেন। তখন হিমসের এক স্থানে তাদের উভয়ের সাথে আব্দুর রহমান বিন গানাম রাঃ এর সাথে সাক্ষাৎ হয়।

তাদের সাথে আব্দুর রহমান বিন গানাম রাঃ আলাপ করেন। আলাপকালে বলেন, আশ্চর্য ব্যাপার। তোমাদের জন্য এটা কিভাবে উচিত যে, তোমরা হযরত আলী রাঃ কে আহবান করছো যেন তিনি খেলাফত বিষয়ে শুরা কায়েম করেন? অথচ তোমরা জানো না যে, হযরত আলী রাঃ এর হাতে মুহাজিরীন, আনসার এবং আহলে হিযাজ ও আহলে ইরাক বাইয়াত করে নিয়েছে? যারা হযরত আলী রাঃ এর বাইয়াতের উপর সন্তুষ্ট হয়ে গেছে, তারা তাদের থেকে উত্তম যারা হযরত আলী রাঃ এর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেনি।

মুয়াবিয়া রাঃ শুরা বিষয়ে কথা বলার কে? অথচ সেতো তুলাক্বা এর অন্তর্ভূক্ত। যাদের জন্য খেলাফত জায়েজ নেই। তিনি এবং তার পিতা আহযাবের সর্দারদের অন্তর্ভূক্ত।

আব্দুর রহমান বিন গানাম রাঃ যখন এ কথাগুলো বললেন, তখন তারা উভয়ে তাদের কর্ম তথা দূতের দায়িত্ব পালন বিষয়ে অত্যান্ত লজ্জিত হলেন এবং তারা তাদের কাজ থেকে ফিরে আসলেন।

এ ঘটনা দ্বারা বুঝা গেল যে, হযরত মুয়াবিয়া রাঃ খেলাফতের যোগ্য নয়।

উত্তর

হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ ও হযরত আবূ দারদা রাঃ এবং আব্দুর রহমান বিন গানাম রাঃ এর বিষয়ে আলোচিত উক্ত গল্প ও মন্তব্যটি আসলে পুরোপুরি বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। এর কোন ভিত্তিই নেই।

হযরত আবু দারদা রাঃ। যাকে উক্ত ঘটনার একজন প্রত্যক্ষ ব্যক্তি বলা হচ্ছে। তিনি যে সময়কারের ঘটনা বলা হচ্ছে এর অনেক আগেই ইন্তেকাল করেছেন।

কারণ, আলোচিত ঘটনাটি হযরত আলী রাঃ এর বাইয়াত গ্রহণের অনেক পরের ঘটনা। আর হযরত আবূ দারদা যার আসল নাম উয়াইমির বিন আমের রাঃ। তিনি হযরত উসমান রাঃ এর শাহাদাতের দুই বছর আগেই ইন্তেকাল করেছেন।

এটাই বিশুদ্ধ কওল। যিনি হযরত উসমান রাঃ এর ইন্তেকালের দুই বছর আগেই মারা গেছেন, তিনি কী করে হযরত আলী রাঃ এর বাইয়াত গ্রহণের পর উক্ত আলোচিত ঘটনায় উপস্থিত হলেন?

ইবনে আব্দিল বার যদিও তার কিতাব আলইসতিআবে উক্ত ঘটনা উল্লেখ করেছেন। কিন্তু তা উল্লেখ করার পর তা যে ভ্রান্ত সেদিকেও ইংগিত করে দিয়েছেন।

ক)

ইবনে আব্দিল বার রহঃ তার আলইসতিআবে লিখেন:

والاكثر والأشهر والاصح عند اهل الحديث أنه توفى فى خلافة عثمان بعد ان ولاه معاوية قضاء دمشق (الاستيعاب لابن عبد البر-3\117)

মুহাদ্দিসগণের নিকট অধিক, প্রসিদ্ধ এবং সবচে’ বিশুদ্ধ কথা হল, আবু দারদা রাঃ হযরত উসমান রাঃ এর খেলাফতের জমানায় ইন্তেকাল করেছেন। যে সময় মুয়াবিয়া রাঃ কে উসমান রাঃ দামেশকের গভর্ণর নিয়োগ করেন। [আল ইসতিআব-৩ৎ১১৭]

আরেক স্থানে বলেন,

والصحيح أنه مات فِي خلافة عثمان،

বিশুদ্ধ কথা হল, হযরত আবূ দারদা রাঃ হযরত উসমান রাঃ এর খেলাফতকালে ইন্তেকাল করেন। [আলইসতিআব-৪/১৬৪৬]

আরেক স্থানে বলেন,

وتوفي فِي خلافة عُثْمَان قبل قتل عُثْمَان بسنتين (الاستيعاب لابن عبد البر-4\1648)

আবু দারদা রাঃ উসমান রাঃ এর খেলাফতের জমানায় তার ইন্তেকালের দুই বছর আগেই ইন্তেকাল করেন। [আল ইসতিআব-৪/১৬৪৮]

খ)

ইবনে আছীর জাযারী রহঃ তার কিতাব উসদুল গাবায় ইবনে আব্দিল বারের কিতাব আলইসতিআবে বর্ণিত হযরত আব্দুর রহমান বিন গানাম রাঃ এর ঘটনা উদ্ধৃত করার পর মন্তব্য করেন:

قلت: الَّذِي ذكره أَبُو عُمَر من معاتبة عَبْد الرَّحْمَن أبا الدرداء وأبا هُرَيْرَةَ عندي فِيهِ نظر، فإن أبا الدرداء تقدمت وفاته عن الوقت الَّذِي بويع فِيهِ عليّ فِي أصح الأقوال، (اسد الغابة-3\384، دار الفكر بيروت، 3\482، دار الكتب العلمية)

আব্দুর রহমান বিন গানাম রাঃ এর আবু দারদা রাঃ ও আবূ হুরায়রা রাঃ কে তিরস্কার করার ঘটনা, যা ইবনে আব্দিল বার উল্লেখ করেছেন, আমার নিকট এ বিষয়ে আপত্তি আছে। কেননা, যে সময় হযরত আলী রাঃ এর খেলাফতের বাইয়াত হয়েছে এর অনেক আগেই আবু দারদা রাঃ এর ইন্তেকাল হয়ে গেছে। বিশুদ্ধ কথা এটাই।

[উসদুল গাবাহ-৩/৩৮৪, দারুল ফিকির বাইরুত, ৩/৪৮২, দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ]

গ)

মুহাক্কিকীন উলামাগণ একথাই প্রাধান্য দিয়েছেন যে, হযরত উসমান রাঃ এর খেলাফতের সময় তার ইন্তেকালের দুই বছর আগেই আবু দারদা রাঃ ইন্তেকাল করেছেন।
দেখুন:

১) কিতাবুল জমা’ বাইনা রিজালিস সাহিহাইন-১/৪০৫।

২) আলইসাবাহ-৩/৪৬।

৩) তাহযীবুত তাহযীব-৮/১৭৬।

সুতরাং বুঝা গেল যে, হযরত মুয়াবিয়া রাঃ এর বিষয়ে উদ্ধৃত উক্ত ঘটনা ও উক্তিটি একটি বানোয়াট ও ভিত্তিহীন কথা। এতে কোন সন্দেহ নেই।

যদি মেনেও নেই যে, আবূ দারদা রাঃ হযরত আলী রাঃ এর বাইয়াতের জমানায় জিবীত ছিলেন। তবু আব্দুর রহমান গানাম রাঃ এর এই কথা যে, “তুলাক্বাগণের জন্য খেলাফত জায়েজ নেই” কথাটি ভিত্তিহীনই থাকে।
কেননা, একথা সর্বজন বিদিত যে, হযরত মুয়াবিয়া রাঃ এর সাথে হযরত হাসান রাঃ সন্ধি করেছেন। সেই সাথে হযরত হাসান রাঃ এবং হুসাইন রাঃ হযরত মুয়াবিয়া রাঃ এর হাতে খেলাফতের বাইয়াত নিয়েছেন। [শিয়াদের কিতাব রিজালকাশী-১০৪, আলইহতিজাজ, তাবরিসীকৃত-২/৮]

যদি তুলাক্বা হলেই তিনি খিলাফতের অযোগ্য হন। তার জন্য খেলাফত অবৈধ হয়, তাহলে হযরত হাসান রাঃ, হযরত হুসাইন রাঃ কিভাবে মুয়াবিয়া রাঃ এর হাতে খেলাফতের বাইয়াত হলেন? তখনতো একজন সাহাবীও উপরোক্ত কথা যে, তুলাক্বাদের জন্য খেলাফত জায়েজ নয় হবার কথা বলেননি।

এর মানে উক্ত কথাটি আসলে আব্দুর রহমান বিন গানাম রাঃ এর নয়। পরবর্তীতে কেউ সংযোগ করে দিয়েছে।
সুতরাং উপরোক্ত কথা ও ঘটনার কোন বাস্তবতাই নেই এটাই পরিস্কার প্রমাণ হয়।

আরো পড়ুন:

মুয়াবিয়া রাঃ বাগী বা বিদ্রোহী হবার কারণে ফাসিক ও জাহান্নামী?

হযরত মুয়াবিয়া রাঃ এর জন্য হযরত উসমান রাঃ এর খুনের কিসাসের দাবি করা কি অন্যায় ছিল?

প্রসঙ্গ আমীরে মুয়াবিয়া রাঃ ইতিহাসের ইতিহাস পর্যালোচনা

0Shares

আরও জানুন

কুরআনে আউজুবিল্লাহ ও পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের কথা নেই?

প্রশ্ন আস্সালামু আলাইকুম। ‍হুজুর, আমাদের এক ভাই বলেন কুরআন পাকে নাকি আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *